ডাল বিভ্রাট!

ডাল বিভ্রাট!


পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে। এক, যারা মনে করে ডাল কোনো খাবারই না এবং তারা পারতপক্ষে ডাল খায় না। দুই, যারা মনে করে ডাল মানুষের প্রধান খাবার এবং তাদের সমস্ত খাবারের সাথেই ডাল থাকা লাগে। আমার বন্ধু শংকর দ্বিতীয় দলে। শুধু যে দ্বিতীয় দলে সেটাই না, তাকে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও বলা যায় চোখ বন্ধ করে। ডাল জিনিসটা নিয়ে অদ্ভুত অবসেশন আছে শংকরের। তার পৃথিবী সম্পূর্ণ ডালময়।
তাকে যদি ফোন দিয়ে বলি, 'দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে আমার।'
সে প্রথম যে প্রশ্ন করবে সেটা হলো, 'কেন, ডালে লবন কম হইছে?'
যেন ডালে লবন কম হওয়া থেকে বড় কোনো সর্বনাশ এই পৃথিবীতে হতেই পারে না।
যদি বলি, 'না রে, বিশাল সর্বনাশ।'
- শিট, তাহলে কি লবন বেশি হইছে?
- ধুর, আমার লাইফই শেষ।
- মানে কি? খেতে বসে ডাল পাসনি?
.
এই হলো অবস্থা। শংকরকে যদি বলি, 'দোস্ত আমার ক্যান্সার হইছে।'
সে শান্ত গলায় বলবে, 'আচ্ছা, তারপর বল। বাসার সবাই কেমন আছে?'
কিন্তু যদি বলি, 'দোস্ত দুপুরে খেতে গিয়ে ডাল পাইনি।'
মুহুর্তে তার কণ্ঠস্বর চেঞ্জ হয়ে যাবে। চিৎকার দিয়ে বলবে, 'এ কী সর্বনাশ। তুই এক্ষুনি টেবিল থেকে উঠে পড়। যত দ্রুত সম্ভব। আমার বাসায় চলে আয়। তিন প্রকার ডাল রান্না হইছে। একসাথে খাবো।'
.
শংকর জীবনে একবারই প্রেমে পড়েছিলো এক মেয়ের। প্রেমপত্রে লিখেছিলো, 'তোমাকে প্রথমবার দেখেই মনে হয়েছে তুমি যেন এক প্লেট গরম ভাতের সাথে ঘন সোনামুগ ডাল। মেসের ডালের মত পাতলা ঠোট আর হোটেলের ডালের মত গাড় কাজল দেয়া ডালের বড়ার মত বড় বড় চোখে তুমি যেন ঠিক পরীস্থানের কোনো পরীর রান্না করা ডাল রেসিপি। আমার প্রিয় মসুরির ডালের কসম, তোমার সাথে সারাজীবন ডালের বাটি ভাগ করে নিয়ে একসাথে খেতে চাই।'
.
স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রেম আলোর মুখ দেখেনাই। আরেকবার মেসেঞ্জারে এক মেয়ের সাথে ভালোই চ্যাট এগিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু পরে নাকি মেয়েটা হুট করে কথা বন্ধ করে দেয়। শংকরকে কে বোঝাবে যে শুধুমাত্র ডাল টপিক নিয়ে খুব বেশিদিন কথা বলে যাওয়া কোনো মেয়েই পছন্দ করবে না। তাছাড়া কোনো সুন্দরী মেয়েকে মেসেঞ্জারে 'পাতলা ডাল' নিকনেম কেউ দেয়?
.
পরে ফ্যামিলির পছন্দে এরেঞ্জ ম্যারেজ হয় তার। সেই বিয়েও টিকেনি। বিয়ের আঠারো দিনের মাথায় সে বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিছে। বউ এর দোষ শংকর ডাল রান্না করে রেখে গেছিলো। বউ লবন চেখে দেখে ভেবেছে লবন বেশি হইছে, তাই পানি দিয়ে জ্বাল দিছে।
শংকর ডাল মুখে দিয়েই একবার শুধু বউ এর দিকে তাকাইছে। তারপর বের হয়ে পুরান ঢাকার সিরাজের দোকানে গিয়ে ডাল ভাত খেয়ে সোজা উকিলের কাছে গিয়ে ডিভোর্স পেপার রেডি করে এসেছে।
শংকরের মতে পুরান ঢাকায় সিরাজ হোটেলে সে লাইফের বেস্ট ডাল খেয়েছে। যেমন স্বাদ, তেমন গন্ধ, তেমনই লবন হলুদ পারফেক্ট পরিমানে দেয়া। যদিও একবারই সে সেই স্বাদ পেয়েছিলো৷ প্রতিবার নাকি অতো ভালো হয় না। কিন্তু আবারো কখনো হতে পারে সেই আশায় প্রতি সপ্তায় অন্তত একবার সিরাজ হোটেলে ডাল ভাত খায় সে।
.
বাংলাদেশের এমন কোনো হোটেল নাই যেখানে ডাল সে চেখে দেখেনি। ভাত খেতে বসলে মানুষ যেমন আগে ভাজা ভর্তা দিয়ে অল্প খেয়ে মাংস নেয়, শংকর তেমনি আগে মাছ মাংস দিয়ে অল্প ভাত খেয়ে পরে ডাল নেয়। ডাল তার খাবারের মেইন কোর্স। মরার পর শংকর স্বর্গে যাওয়া নিয়ে ভয়ে আছে। সে শুনেছে স্বর্গে নাকি মাছের কলিজা আর পাখির মাংস ভুনা পাওয়া যায়। ডাল পাওয়া যায় এমন কোনো তথ্য সে কোথাও পায়নি।
.
এই ডালের চক্করে দুইবার চাকরি চলে গেছে শংকরের। একবার সে অফিসের বস সহ পুরা স্টাফকে বাসায় ডালভাত খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে শুধু ডাল আর কাচালঙ্কা দিয়ে খেতে দিয়েছিলো। আরেকবার জাপানী ক্লায়েন্টের সাথে সোনারগা হোটেলে মিটিংয়ে গিয়ে প্রোডাক্টের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে তাদেরকে দেড় ঘন্টা ধরে বিভিন্ন প্রকার ডাল বিষয়ে জ্ঞান দিয়েছে। তারপর খাবারের অর্ডার ক্যানসেল করে জাপানী টিম নিয়ে পুরান ঢাকার সিরাজ হোটেলে ডাল আর রুটি খাওয়াতে নিয়ে গেছে।
এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় শংকর বললো, 'নাক চ্যাপ্টা জাপানীরা মানুষ হিসাবে খুব ভালো। পুরো এক বাটি ডাল এক চুমুকে খেয়ে বলেছে, নাইচ স্যুপ।'
তারপর নাকি তাদের একজন বমি করা শুরু করেছে। শংকর অত্যন্ত অবজ্ঞা নিয়ে বলেছে, 'হালারা সাপ ব্যাং খেয়ে মানুষ। ভালো জিনিস পেটে সইবে কিভাবে!'
.
এ তো গেলো চাকরি হওয়ার পর চলে যাওয়া। কিন্তু আরো কতগুলো চাকরি যে হতে হতেও হয়নি তার ইয়ত্তা নেই। মেধাবী স্টুডেন্ট শংকর, রেজাল্ট ভালো, লিখিত পরীক্ষাতেও ফার্স্ট সেকেন্ড হয়, কিন্তু ঝামেলা বাধে ঐ ভাইভাতে গিয়েই।
পরীক্ষক হয়তো প্রশ্ন করলো, 'তোমার হবি কি?'
শংকর হাসিমুখে জবাব দেবে, 'ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া।'
- না, কি খাবার প্রিয় জানতে চাইনি। তোমার অবসরে কি করতে ভালো লাগে?
- ডাল রান্না করতে ভালো লাগে। কারণ অন্যের রান্না ডাল আমি সাধারণত খেতে পারিনা। লবন হলুদ মশলা পরিমান মত হয় না। একেক ডাল রান্নার একেক নিয়ম। মসুর ডালে আপনি যতটুকু পানি দিবেন মাসকলাই এর ডালে ততটুকু পানি দিলে হবে? হবে না।
- ডাল রান্না ছাড়া অবসরে আর কি করেন?
- দোকান থেকে ডাল কিনে আনি। একদম ফ্রেশ দেশি ডাল না হলে আপনার ভালো লাগবে না। আজকাল তো কতধরনের চায়না, ইন্ডিয়ান ডাল পাওয়া যাচ্ছে। একদম স্বাদ নেই।
- আচ্ছা অন্য টপিকে যাই। আমাদের কোম্পানির জন্য আপনি এমন কি করতে পারবেন যা অন্য কেউ পারবে না?
- কোম্পানি এমপ্লয়িদের ফার্স্টক্লাস ডালভাত খাওয়াতে পারবো তিন বেলা। সাথে লেবু আর কাচালঙ্কা। উফ!
- আপনাকে বাবুর্চি পদের জন্য ডাকা হয়নি৷ মার্কেটিং ম্যানেজার পদের জন্য ডাকা হয়েছে। আচ্ছা বলুন, যদি কোনো ক্লায়েন্ট কোম্পানির পাওনা টাকা আটকে রেখে দেয় তো কিভাবে তার থেকে টাকা আদায় করবেন?
- ক্লায়েন্টকে দাওয়াত দিয়ে যত্ন করে সিরাজ হোটেলের স্পেশাল ভুনা ডাল দিয়ে তন্দুরি রুটি খাওয়াবো।
- এতে কি কাজ হবে বলে আপনার মনে হয়?
- অবশ্যই স্যার। একশো বার হবে৷ হতেই হবে। ডালের বড়ার কসম।
.
সঙ্গত কারণেই চাকরি হয় না শংকরের। কিন্তু সে কারণটা ধরতে পারে না। সে বোঝে না যে সে একজন অস্বাভাবিক মানুষ। সে বোঝে না, কোনো স্বাভাবিক মানুষ কখনো ডালের বড়ার কসম খায় না।
.
আমার ধারণা যদি কোনোদিন শংকরের ফাসির আদেশ হয় তো সে শেষ চাওয়া হিসাবে কয়েক পদের ডাল দিয়ে ভাত খেতে চাইবে।
.
সে এই জেনারেশনের ওপর রেগে আছে, কারণ এরা নাকি ডাল খেতে চায় না। খালি পিজা বার্গারের ধান্দায় থাকে।
তো একদিন আমাকে কল দিয়ে খুশি খুশি গলায় বলতেছে, 'দোস্ত সুসংবাদ। আজই খোজ পেলাম আমার ছোটভাই নাকি এলাকার কয়েক পোলার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে ডাল খায়। খবরটা শুনে এতো খুশি হইছি বলার মত না। বোকা ছেলেটা ভাবছে ডাল খাওয়া দেখলে কেউ ওদের রাগ করবে। আরে ডালই তো খাচ্ছিস, কোনো নেশা তো আর না।'
আমি আমতা আমতা করে বললাম, 'ঐ ডাল মানে নেশাই।'
- হ দোস্ত ঠিকই বলেছিস। ডালের থেকে বড় নেশা আর হয় না।
- আরে এই নেশা সেই নেশা না। এই ডাল মানে ফেনসিডিল।
.
আরেকদিন কল দিয়ে বলতেছে, 'ধুর, ওটা কোনো ডালের জাতই না। সেদিন রুটি দিয়ে খেয়ে দেখলাম। ঔষধের মত খেতে। মিষ্টি। না আছে লবন না হলুদ। ডাল হবে ঝাল ঝাল। মিষ্টি তো রসগোল্লাও হয়৷ ডাল নামের কলংক। আমার ছোটভাইরে বলে দিছি খাইলে মসুরি খা, মুগ খা, মাসকলাই খা, ফেনসিডিল নামের ডাল যেন আর না খেতে দেখি।'
- সিরিয়াসলি?
- কি?
- তুই ফেনসিডিল রুটি দিয়ে খাইছিস?
- হুম, শুধু শুধু টাকা নষ্ট। এক বোতল ষোলোশো টাকা। এই টাকায় সিরাজের হোটেলে এক মাস ডাল রুটি খাওয়া যাইতো।
.
তো এই হলো আমার বন্ধু শংকরের অবস্থা। আপনারা না দেখলে কোনোদিন বিশ্বাস করতে পারবেন না যে একটা মানুষ তিনবেলা ডাল খাচ্ছে। চব্বিশটা ঘন্টা ডাল নিয়ে ভাবছে এবং কথা বলছে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো। এর মধ্যেই ঘটলো ঘটনাটা।
.
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি অফিস থেকে ফিরে বেলকনিতে চা নিয়ে বসেছি। এমন সময় ফোন বাজলো।
ওপাশ থেকে শংকরের গলা, 'দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে।'
আমি ওর সর্বনাশ সম্পর্কে জানি। হাসলাম। বললাম, 'ডালে লবন কম হইছে?'
- না, তারচেয়েও ভয়াবহ।
- হাহা, লবন বেশি হইছে?
- না রে, আমার লাইফ শেষ।
- টেবিলে ডাল পাসনি? তুই কই? এটা কার নাম্বার?
- এসব কিছুই না। আমি থানাতে। আমি একটা খুন করে ফেলেছি। আমাকে বাঁচা প্লিজ।
.
ছুটে থানায় গেলাম। শংকর পুলিশ কাস্টডিতে। পুলিশ এবং শংকরের থেকে ঘটনা যা শুনলাম তা হলো ওর প্রমোশন হয়েছে। সেটা সেলিব্রেট করার জন্য এক বড় হোটেলে খেতে গিয়েছিলো। সেখানে ডাল অর্ডার করার পর ওয়েটার বলেছে, 'এসব নাই। ভালো কিছু অর্ডার করুন।'
শংকর রেগে গেছে, 'ডাল ভালো কিছু না?'
ওয়েটার বলেছে, 'আরে নাহ, ধুর, থার্ডক্লাস খাবার৷ রুচিশীল খাবারের মধ্যে ডাল পড়ে না।'
শংকর রেগে গিয়ে ওয়েটারকে খুন করে ফেলেছে।
.
আমি অবাক হই, 'এইটুকু বলায় একেবারে খুন করে ফেললি?'
- খুন তো করিনি।
- তাহলে?
- জাস্ট একটা ধাক্কা দিছি। এক ধাক্কায় দরজা দিয়ে বাইরে ফেলে দিছি। সে মরে গেলে আমার কি দোষ?
.
জানা গেলো রেস্টুরেন্টটা ছিলো সাত তলায়। শংকর সাত তলা থেকে ফেলে দিয়েছে ওয়েটারকে। আরো জানা গেলো সে মারামারির একপর্যায়ে বলেছিলো, 'ডালের বড়ার কসম তুই শেষ।'
ডালের বড়ার কসম খেয়ে ফেলার পর নাকি কিছু করার থাকে না৷ এই ভয়াবহ কসম না খেলে নাকি ঘটনা এতোদূর গড়াতো না।
ও হ্যা, সে আরো বলেছিলো, এক মায়ের ডাল খেয়ে থাকিস তো সামনে আয়।
- মায়ের দুধ শুনেছি, ডাল কি?
- আই মিন, মায়ের হাতের ডাল।
.
শংকরের কেস চলতেছে। সে জেলে আছে। এখনো রায় হয়নি। আমি মাঝে মাঝে দেখতে যাই। জিজ্ঞেস করি, কেমন আছিস? এখানে কেমন কাটছে?
সে বলে, সবই ভালো ছিলো শুধু সকালে ডাল দেয় না। রুটি আর সবজি খালি।
- আর দুপুরে?
- দুপুর আর রাতে ক্যান্টিন থেকে ডাল কিনে খেতে পারি। সমস্যা হয় না।
.
তারপর একদিন শংকরের ফাসির আদেশ হয়৷ ফাসি হয়েও যায়। কিন্তু একটা জিনিস শুনে আমরা ভীষণ অবাক হই। শেষ ইচ্ছা হিসাবে সে সিরাজ হোটেলের ডাল খেতে চায়নি। সে নাকি তার আঠারো দিন সংসার করা বউ পায়েলের জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে।
আমরা আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাই। এতোগুলো বছর পর তার বউ এর কথা মনে পড়লো? কেন মনে পড়লো? কি লেখা আছে সেই চিঠিতে? লাইফে প্রথমবার তাহলে ডালের থেকে ইম্পর্টেন্ট কিছু সে ভেবেছিলো!
.
আমরা ধারণা করেছিলাম পায়েল বৌদি আমাদেরকে চিঠিটা পড়তে দিবে না। হাজার হোক, ব্যক্তিগত জিনিস। কিন্তু সে আমাদের চিঠিটা পড়তে দেয়। আমরা পড়ে আরো অবাক হয়ে যাই।
.
চিঠিতে লেখা ছিলো-
.
'প্রিয় পায়েল,
কোনো একটা কারণে আমাদের একসাথে থাকা হয়নি। দোষ কার ছিলো সে কথায় যাবো না। ওসব ব্যাখা বিশ্লেষণ করে আর লাভ নেই আসলে। জেলের ভেতর আমার করার কিছুই ছিলো না। সারাদিন শুধু ভেবেছি। শুনলে অবাক হবা, ভাবনাগুলো ছিলো তোমাকে নিয়ে। তোমার সাথে আমার যা হয়েছিলো সেটা নিয়ে। এখন আমি জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে পৌছেছি। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে এতোদিন ভেবে আমি যা পেয়েছি সেই কথাটা বলে যাওয়া দরকার। পায়েল, তুমি আমার ডালে পানি দিয়ে জ্বাল দিয়েছিলে। সেটা যদি ঠান্ডা পানি না দিয়ে আগে থেকে পানি গরম করে সেই পানি দিতে, আর শেষে যদি দুটো শুকনো লঙ্কা ছেড়ে দিতে, তাহলে ডালটা খেতে আরো ভালো হতো!'
ইতি, শংকর।'
.
আর হ্যা, চিঠির শেষে পুনশ্চ দিয়ে লেখা ছিলো, শুকনা না পেলে কাচা লঙ্কা দিলেও হতো কিন্তু!

লেখা: সোহাইল রহমান
ছেলে থেকে মেয়ে হবার গল্প

ছেলে থেকে মেয়ে হবার গল্প


ডাক্তার সাহেব, আমি সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করে মেয়ে হয়ে যেতে চাই।'

বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মঈন অবাক হয়ে সামনে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখেন। ছেলেটার বয়স কত হবে? সাতাশ বা আটাশ?
জিজ্ঞেস করে, 'কি বললেন, মিস্টার...!'
- কামাল, কামাল হোসেন। নিজের নাম বলে ছেলেটা। বলে, যা বলেছি ঠিকই শুনেছেন।
- আপনি মেয়ে হয়ে যেতে চান?
- হ্যা চাই৷ আপনি বলেন কি কি করা লাগবে।

মঈন মাথা নাড়ে, 'যা ই করা লাগুক না কেন, সেটা আসলে আমার ডিপার্টমেন্ট না। আপনি ভুল ডাক্তারের কাছে এসেছেন। এটা প্লাস্টিক সার্জারির কাজ। আপনি একজন কসমেটিক সার্জনের কাছে যান।'
- আপনি পারবেন না?
- উহু, আমি মানুষের বুক স্পেশালিস্ট। ছেলে আর মেয়ের বুক দেখতে আলাদা তাই বলে এই না যে আমি আপনাকে মেয়ে বানাতে পারব৷ আমি বুকের ভেতরটা নিয়ে কাজ করি, বাইরে না।

'আচ্ছা ঠিক আছে, কামাল উঠে পড়তে চায়। তাহলে আমি একজন প্লাস্টিক সার্জনের সাথে যোগাযোগ করবো।'
- সে নাহয় করবেন, মঈনের কৌতুহল হয়। আমি কি জানতে পারি আপনি ঠিক কোন কারণে মেয়ে হতে চাচ্ছেন?

উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়ে কামাল। তার মুখে স্পষ্ট দুঃখের ছাপ পড়ে। অনেক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, 'আমি আসলে সিঙ্গেল।'
- তো?
- আমি আসলে অনেক বেশি সিঙ্গেল। এতো সিঙ্গেল কোনো মানুষ কখনো হয়নি এই দুনিয়ায়। আমি সাতাশ বছর ধরে সিঙ্গেল।
- আপনার বয়স?
- ছাব্বিশ বছর তিন মাস। মায়ের পেটের নয়মাস যোগ করে সাতাশ হয়। আপনি বিশ্বাস করবেন না ভাই, আমি একটামাত্র প্রেম করার জন্য লাইফে কি কি করেছি। কিন্তু পারিনি। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ লাজুক ছিলাম৷ কোনো মেয়ের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। দেখতেও ভালো না আমি। বিধায় কথা বলতে আসেনি কোনো মেয়েও। সবাই বলতো ভার্সিটিতে ওঠ, ঠিকই প্রেমিকা পাবি।
- তারপর?
- ভার্সিটিতে উঠে দেখলাম সব ভুল। ভার্সিটি শেষ হলো, তাও প্রেমিকা পেলাম না। সাহস করে তিনটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম, দুইজন মুখের ওপর না করে দিছে। কখনো কোনো মেয়েকে স্পর্শ করতে পারিনি লাইফে। হাতটাও ধরিনি, অন্যকিছু ধরা তো দূরের কথা। ফ্রাস্টেশন দূর করতে করতে বাম হাতের রেখা মুছে গেছে প্রায়। লোশন আর টিস্যু কোম্পানির মালিক গাড়ি বাড়ি করে ফেলছে শুধু আমার টাকা দিয়ে, কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আপনিই বলেন।
- আচ্ছা একটু আগে যে বললেন তিনজন মেয়েকে প্রপোজ করেছেন, দুইজন না বলেছে। তো আরেকজন?
কামাল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'সে সবার সামনে থাপ্পড় মেরে দিছে। সেদিনই জেদ উঠছে আমার। ডিসিশন নিছি এসব মেয়েদের পেছনে আর না৷ অনেক হইছে। কাউকে গুনব না আমি। নিজেই অপারেশন করে মেয়ে হয়ে যাব। তারপর নিজে নিজেকে স্পর্শ করব, ধরব, চুমু খাবো, যা খুশি করব। কেউ কিছু বলতে পারবে না। শালার মেয়ে মানুষের ধার কামাল আর ধারবে না।'

কথা শেষ করে রাগে কাপতে থাকে সে। মঈন তাকে শান্ত করায়। বলে, 'আচ্ছা আপনার যা খুশি তাই করবেন। আমি কি আপনার ফেসবুক আইডিটা পেতে পারি?
- কেন বলুন তো?
- যোগাযোগ রাখব। মেয়ে হওয়ার পর আপনাকে কেমন দেখায় সেটা দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে, এড করে নেন।

মঈনের মাথায় তখন অন্য চিন্তা এসেছে৷ সে কামালের জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চায়। একটা ছেলে এভাবে মেয়ে হয়ে যাবে, এটা কোনো কাজের কথা না।

আইডিয়াটা খুবই সহজ। মঈন একটা ফেক মেয়ে আইডি খুলে কামালকে 'হাই' লিখে নক দেয়।
কামাল সীন করে না। মঈন নক দিতেই থাকে। শেষমেশ একদিন রিপ্লাই আসে, 'কে আপনি? কি সমস্যা?'
মঈন স্মাইলি পাঠায়, 'আপনি আমাকে ইগনোর করছেন কেন? আমাকে কেউ ইগনোর করলে আমার খুব খারাপ লাগে জানেন!'
- তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কোনো মেয়ের প্রতি আমার আগ্রহ নাই৷
- ও আচ্ছাহ, গে আপনি? আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাকবেন। আপনার বয়ফ্রেন্ডকে আমার সালাম জানাবেন। বাই।
- ওয়েট, ওয়েট, আমি কোনো গে না৷ আমি স্ট্রেইট।
- তাহলে আমার সাথে কথা বলতে কি সমস্যা?
- কোনো সমস্যা নাই। বলেন।

এভাবেই আস্তে আস্তে কথা হতে থাকে দুজনের। কথা থেকে ভালোলাগা৷ ভালোলাগা থেকে প্রেম প্রেম। কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা জানায় না ঠিক, কিন্তু দুজনই বুঝতে পারে তারা আসলে প্রেমে পড়েছে। তাদের দেখা হওয়ার ডেট ঠিক হয় সামনের ভ্যালেন্টাইন ডে তে।

কথায় কথায় কামাল জানায়, 'আমি লাইফে একটা বড় ডিসিশন নিয়েছিলাম। তোমার সাথে পরিচয় হওয়াতে সেই ডিসিশন বাদ। আর দরকার হবে না।'

কামাল স্বীকার না করলেও মঈন বুঝতে পারে সে সেক্স চেঞ্জ অপারেশনের কথা বুঝাচ্ছে৷ কিন্তু এখন কামাল যদি মেয়ে না হয়ে যায় তো তাদের এই প্রেমের ভবিষ্যৎ কি? তারা দুইজনের একজনও গে না যে ছেলে ছেলে প্রেম চালাবে।

তখনই এক রাতে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে মঈন। সে ময়না হবে। মানে নিজেই সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করবে।
কামালের মত ফরেভার সিঙ্গেল সে না। মেয়ে মানুষ তার লাইফে বহু এসেছে। কিন্তু সবাই শুধু কষ্টই দিয়ে গেছে। প্রেমিকারা তাকে ছেড়ে বিসিএস ক্যাডার ধরেছে একের পর এক। এমন এক সময় আসছিলো যে ক্যাম্পাসে সবার দৃড় বিশ্বাস ছিলো, মঈনের সাথে প্রেম করলে বিসিএস ক্যাডার পাত্রের সম্বন্ধ আসা নিশ্চিত। মঈন এখন বুঝতে পারে, শেষেরদিকে এতো এতো মেয়ে তাকে ডেইলি প্রপোজ কেন করত। তাদের লক্ষ্য ছিলো ঐ বিসিএস ক্যাডারই।
পরে মঈনের বিয়েও হয়। দেড় বছরের মাথায় বউ ভেগে যায় আপন ছোট ভাইয়ের সাথে৷ কি লজ্জার কথা। হ্যা, সমস্যা মঈনের ছিলো৷ কলিকাতা হারবাল থেকে শুরু করে শক্তি প্রাশ হয়ে সানি লিওনের রেকমেন্ড করা লাভ ফরেভার সে খেয়ে দেখেছে। সংসারে অনাবিল সুখ শান্তিও এসেছে। কিন্তু তার না, তার ছোট ভাইয়ের। ওসব এডে যা দেখায় সবই আসলে ভুয়া।
এখন মেয়ে হয়ে সে চাইলেই কামালের সাথে সুখের সংসার করতে পারে। ইয়েস, দ্বিতীয়বার আর ভাবে না মঈন। ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নেয়।

এদিকে ভ্যালেন্টাইন ডে'ও চলে আসছে। তার আগেই মেয়ে হতে হবে মঈনের। হতে হবে মঈন থেকে আসল ময়না। ফেক আইডিটা তখন হয়ে যাবে রিয়েল।

বিখ্যাত কসমেটিক সার্জন মতিন হক বেশ বয়স্ক মানুষ। প্রায় ষাট ছুই ছুই বয়স। মঈন মেয়ে হতে চায় শুনে তিনি অবাক হন। বলেন, 'দেখুন মঈন সাহেব আপনি নিজেও ডাক্তার। আপনার জানার কথা যেসব পুরুষের দেহটা পুরুষ কিন্তু মনের দিক দিয়ে নারী, শুধুমাত্র তাদেরই অপারেশন করি আমরা। আপনি সুস্থ সবল পুরুষ আপনি এসবে কেন আসলেন?'
'প্রেমের কথা তো আর বলা যায় না। মিথ্যা এক আবেগী গল্প ফাদে মঈন। বলে, আমার স্ত্রী মারা গেছে ছোট্ট দুইটা মেয়ে রেখে৷ তাদের আসলে বাবার চাইতেও মায়ের আদর বেশি দরকার। তাই আমি নিজেই মা হয়ে যেতে চাই।'
- কিন্তু আপনি একটা বিয়ে করলেই তো পারেন।
- নাহ, সৎমা কখনো আপন হয়না। সে আমার মেয়েদের ভালোবাসবে না নিজের সন্তানের মত।
- আপনার ধারণা ভুল। এরকম অনেক নারীই আছে যারা সৎমা কনসেপ্টে বিশ্বাস করে না। তারা মা হতে চায় শুধু।
- আমি বিলিভ করিনা সেটা। তাছাড়া আমি স্ত্রী চাই না, আরেকটা বিয়েও করব না। শুধু ওদের মা চাই।
- আমাকে দুইটা সপ্তাহ টাইম দেন। আমি খুজে দিব। এমন মহিলা খুজে দিব যে আপনাকে বিয়ে না করেই আপনার সন্তানদের মা হবে।
- যদি না পারেন?
- না পারলে তখন আপনার অপারেশন করে দিব। টেনশনের কিছু নাই।
- ঠিক তো?
- অবশ্যই, মাত্র দুই সপ্তাহ নিব আমি। আপনার ঠিকানাটা দিন। কাউকে পেলে যোগাযোগ করব৷

মঈন নিজের কার্ড দেয়৷ বলে এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন।

মঈন বের হওয়ার পর কসমেটিক সার্জন মতিন হক বিষয়টা নিয়ে ভাবেন৷ তার স্ত্রী মারা গেছেন সেই বহুবছর আগে৷ একটা মাত্র সন্তান রেখে গেছিলেন, সেই মেয়েকেও বউ এর মা নিজের কাছে নিয়ে মানুষ করেছে। মেয়ে এখন স্বামীর সাথে অস্ট্রেলিয়া। খুব শখ ছিলো নিজ হাতে ছোট ছোট বাচ্চা মানুষ করবেন। আশা পূরণ হয়নি৷ স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসতেন বলে আরেকটা বিয়ের চিন্তা মাথাতেও আনেননি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। একটা অপারেশন করে বিয়ে ছাড়াই মা হিসাবে দুটো বাচ্চা মানুষ করতে পারেন চাইলে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কি চাওয়ার থাকে মানুষের? হ্যা, ডিসিশন নিয়ে নেন মতিন সাহেব। সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করে হয়ে যাবেন মহিলা। মতিন হক থেকে হবেন মতিয়া বেগম।

এদিকে কামাল আর মঈনের ভার্চুয়াল লাইফে আরেক ঘটনা ঘটে। কামাল সন্দেহ করে মঈনের খোলা ফেইক আইডি ময়না আসলে ছেলে। সে শিওর হতে পারে না, আবার ফেলেও দিতে পারে না।
সে দেখেছে ময়না নামের আইডিটা এমন কিছু পোস্টে কমেন্ট করেছে যেখানে শুধু ছেলেদেরই কমেন্ট করার কথা। যেমন একটা পেইজে গোপন অঙ্গ লম্বা ও শক্ত হওয়ার মালিশ জাপানি তেল বিক্রি করে। সেখানে ময়না কমেন্ট করেছে, 'ইনবক্সে নক দিয়েছি। চেক করেন।

হর্স মার্কা কস্তরি জাপানি তেল দিয়ে কি করবে একটা মেয়ে? ডিমের কোর্মা রান্না করবে?
শুধু এটাই না, আরো আছে। এক পেজের পোস্ট ছিলো কারা রিলেশনশিপে বেশি লয়্যাল হয়? মেয়ে লাভ, ছেলে ওয়াও।
সেখানে ময়না কেন 'ওয়াও' দিবে?

কামাল ময়নাকে জোরাজুরি করে ভ্যালেন্টাইন ডে না, সামনের সপ্তাহেই দেখা করতে হবে। ময়না ওরফে মঈন রাজি হয় না৷ আমতা আমতা করে। যা বোঝার বুঝে ফেলে কামাল। তার সাথে আবারো ধোকা হয়েছে। ময়নাকে ব্লক করে দিয়ে সেদিনই তার আগের ডিসিশনে ফিরে যায়। এক কসমেটিক সার্জনের কাছে গিয়ে অপারেশন করে মেয়ে হয়ে যায়। নিজের নাম রাখে কমলা।

কামাল ব্লক দিয়েছে দেখে মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয় মঈনের। সে অন্য আইডি থেকে কামালকে নক দিবে ভাবে৷ কিন্তু তার আগে মেয়ে হওয়াটা জরুরি। সে তখনই মতিন বাদে আরেক ডাক্তারের কাছে গিয়ে অপারেশন করে ফেলে। হয়ে যায় ময়না।

এদিকে মতিন সাহেব দুই সপ্তাহ টাইম নিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়েট করেন না। পরদিনই ডাক্তারের কাছে গিয়ে অপারেশন করে ফেলেন। হয়ে যান মতিয়া।

কমলা, ময়না, মতিয়া। তিনজন নারী। এই পুরুষশাসিত জালিম সমাজে তাদের আপন বলে কেউ নেই। বড় অসহায় তারা।

কামাল ওরফে কমলা এর মধ্যে সত্যিটা বুঝতে পারে৷ নিজের শরীর স্পর্শ করে কোনো মজাই সে পায় না৷ তার একজন পুরুষের দরকার পড়ে। কিন্তু মেয়ে হওয়ার পর তাকে দেখাচ্ছে হিজড়ার মত। কোনো ছেলেই আর পাত্তা দিবে না। তখনই মনে পড়ে ময়না আইডিটার কথা। সে নিশ্চিত ছিলো ময়না একজন ছেলে। আর ভালোবাসা যেহেতু তাদের মধ্যে ছিলো, তো সেই ছেলেটা তাকে মেনে নিতেও পারে।

ময়নাকে আনব্লক করে নক দেয় কমলা অর্থ্যাৎ কামাল। বলে, 'আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।'
- আমিও দেখা করতে চাই। কালই৷ আমারো তোমাকে কিছু বলার আছে। দেখা করেই বলব।'

কমলা ভাবে ময়না যে ছেলে এই কথাটাই তাকে বলতে চায়। মুচকি হেসে বলে, 'আচ্ছা ঠিক আছে।'

কথা হয় ময়না ওরফে মঈনের বাসায় দেখা করবে ওরা।

এদিকে সার্জন মতিন ওরফে মতিয়া কোনোভাবেই মঈনের পাত্তা পাচ্ছে না। খোজই নাই ছেলেটার। মঈনের দেয়া কার্ডের ঠিকানায় যে চেম্বার সেটা বন্ধ। হতাশ হয়ে পড়ে মতিয়া। তাহলে তার কি মা হয়ে বাচ্চা মানুষ করা হবে না? জীবন তাকে এই সামান্য সুযোগ দেবে না?

সে টাকা দিয়ে একটা গোয়েন্দা লাগায়। গোয়েন্দাকে মঈনের কার্ড দিয়ে বলে এই ছেলের বাসার ঠিকানা আমার চাই। তিন দিনের মধ্যে।

তিনদিন লাগে না। মাত্র একদিনেই ঠিকানা এনে দেয় গোয়েন্দা।

পরদিন, বিকাল চারটা।

সেজেগুজে কামালের জন্য অপেক্ষা করছে ময়না। কলিং বেল বাজে। ডোর হোল দিয়ে চেয়ে দেখে দুই রমনি দাঁড়িয়ে আছে। একজনের বয়স ষাটের কাছে। পরনে হালকা নীল শাড়ি। আরেকজন সাতাশ আটাশ বছরের হবে সর্বোচ্চ। গোলাপি সালওয়ার কামিজ পরা।

সে আস্তে আস্তে দরজা খোলে....!

(গল্প শেষ, এই গল্পের কোনো দ্বিতীয় পর্ব নেই)
লেখা: সোহাইল রহমান
যে দোষে আজ আমি অপরাধী - শেষ পর্ব

যে দোষে আজ আমি অপরাধী - শেষ পর্ব



জান্নাতির কোন উত্তর না পেয়ে আমি দরজার কাছে গেলাম কে এসেছে দেখার জন্য। আমি যেই ওখানে গেছি একে বারে চমকে গেছি। কারন দরজা খুলেই দেখি শান্তা। ওকে দেখে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। আবার কোনো সমস্যা বাধাবে না তো। অনেক কিছু হারিয়েছি ওর জন্য। আজ যা পেয়েছি যদি আবার হারাই।

- ভিতরে আসতে বলবি না ইয়াছিন। (শান্তা)
ওর কথায় চমকে গেলাম। কি করবো কিছু বুজতে পারছিলাম না।
- ভিতরে আসুন। (জান্নাতি)

- জান্নাতির এই রকম কথা শুনে অবাক হলাম। শান্তার সম্পর্কে সব জানার পরেও কেন ওকে ভিতরে আসতে দিচ্ছে। আরো অবাক হলাম যখন ওর পিছনে বাবা-মা, চাচা-চাচি, মাইশা, আর সাথে আসিক আর নিলাও আছে। মা, আর মাইশা তো জানে আমি এইখানে কিন্তু আমার পরিবারের সবাই কেমন করে জানলো! আসিকের ইশারাই বুজতে পারলাম ও সবাইকে নিয়ে এসেছে। সবাই ভিতরে এল। ভিতরে আসার পরেই...

- ইয়াছিন, আমাকে তুই ক্ষমা করে দে, তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তুই সেইদিন আমাকে বাঁচিয়েছিলি তারপরেও সবার কাছে মিথ্যা বলে তোকে দোষী বানিয়েছি। আমার জন্য এতগুলো বছর তুই সবার থেকে দুরে। আমার জন্য তোর জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আমি তোর সাথে যে অন্যায় করেছিলাম তার শাস্তি আমি পেয়েছি। আজ আমি জীবনের শেষ পর্যায়ে দাড়িয়ে। আমার ব্লাড ক্যান্সার। যেই দিন এটা ধরা পেরেছে সেই দিন আমি বুঝতে পেরেছি এটা তোর সাথে করা অন্যায়ের ফল। তারপর থেকে ৬ মাস ধরে তোকে খুজে চলেছি। অনেক খুজেছি। বিয়েতে তোকে দেখে কিছুটা চিনেছিলাম। তারপর আজ এই আশিক ভাইয়া বলল তুই ফিরে এসেছিস। তাই এলাম তোর কাছে ক্ষমা চাইতে। তুই ক্ষমা না করলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।

- আমাকেও ক্ষমা করে দে বাবা। আমি সেইদিন তোর কথা শুনতে চাই নি। সেইদিন যদি তোর কথা শুনতাম তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতো না। (বাবা)
- আমাদের ক্ষমা করে দে। আমাদের মেয়ের জন্য আজ তোর এই অবস্থা। (চাচা)
- ইয়াছিন আজ সবাই তাদের ভুল বুজতে পেরেছে। আর সময় নষ্ট করিস না। (আসিক)
- তুই সবাইকে বলেছিস আমি এইখানে আছি? (আমি)

- তোকে কষ্ট পেতে দেখলাম। আমার যে বন্ধু সবাইকে হাসাতো আজ সে হাসতে ভুলে গেছে। যে সব সময় কথা না বলে থাকতে পারতো না, আজ সে নিশ্চুপ। যে সব সময় আড্ডাকে মাতিয়ে রাখতো সে আজ তাকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে চাই। তাই সবাইকে সব কিছু বলে দেয়েছি। (আসিক)
- আজ যদি আসিক ভাইয়া না জানাতো তাহলে আমি কোন দিন সবাইকে সত্যিটা বলতে সাহস পেতাম না। এতদিন অনেক চেষ্টা করেছি সবাইকে সত্যিটা বলার কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি। ভয় পেতাম। কিন্তু আজ তোর খোজ জানার পর সেটা চলে গেছে। তাই আজ সবাইকে সত্যিটা বলে দিয়েছি। (শান্তা)


সবাই ক্ষমা চাওয়ার পরেও ভিতরে অভিমানটা রয়ে গেছে। এত গুলো বছর বিনা-অপরাধে শাস্তি পেয়েছি। যে দোষে আজ আমি অপরাধি এটা ভেবে আর অভিমান করে থাকব না। এমনিতে অনেক গুলো সময় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন অভিমান করে থাকলে আরো সময় নষ্ট হয়ে যাবে।

আমি দেখলাম আসলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে আর করতে চাই না। তাই সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। শান্তা আমার সাথে যে অন্যায় করেছিল ক্ষমা থেকে আর বড় কোন প্রতিশোধ হয়তো পৃথিবীতে আর নেই। সবাইকে নিয়ে আবার নতুন করে শুরু করবো।

-জান্নাতি, নিলা, আসিক, ওরা চলে গেল জান্নাতিদের বাড়ি আর আমরা চলে আসলাম আমাদের বাড়ি।

তিন দিন পর আমার আর জান্নাতির বিয়ে। বাড়িতে সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত, কিন্তু শান্তা ছাড়া। শান্তা সব সময় আমার পাশে থেকে। কাল আমাদের বিয়ে তাই আজ আমার পরিবার এবং জান্নাতির পরিবার সবাই একসাথে শপিং করতে এসেছি, শপিং শেষ করে সবাই যে যার বাড়ি গেলাম।

- আজ আমাদের বিয়ে হলো, বড় ধরনের অনুষ্ঠান না হলেও বেশ জাকজমক ভাবেই বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আমি এখন ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে সিগারেটের ধুয়া ওড়াচ্ছি....

আপনারা ভাবছেন বাসর রাতে এই কাজ কেন করছি! তো চলুন বিষয়টা জেনে আসি....

- আজ আমার সেই প্রিয় মানুষটার কথা খুব বেশি মনে পড়ছে, আমাদের কত স্বপ্ন ছিল এই রাতটিকে ঘিরে। কিন্তু আমি রাতটি ঠিক পেলাম শুধু প্রিয় মানুষটি নেই সে এখন অন্য কারো বুকে। কেমন আছো তুমি লিজা? হয়তো অনেক ভালো আছো? তোমার সাথে কাটানো অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে তাই না। জানো এই পাগল মনটা আজও তোমায় ভুলতে পারেনি। মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে তার কাছে কি তুমি সত্যি খুব সুখে আছো? সেকি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে। সেকি আমার মত করে তোমাকে পাগলামিতে মাতিয়ে রাখে। জানো এখন হাসতে ভুলে গেছি, আগের মত আর পাগলামি করি না। যেখানে থাকো ভালো থেকো, কোন অভিযোগ রাখিনি। শুধু মোনাজাতে বলতে চাই তুমি সুখে থেকো।

- তুই এখানে দারিয়ে আছিস? আর ওদিকে ভাবি কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে (ছোট বোন মাইশার কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো)
- উমম, হুম, তুই যা আমি আসছি।

আমি এখন বাসর ঘরের সামনে., ভাই আমি কি ভিতরে যাবো নাকি? আসলে প্রথম বিয়ে তো তাই কিছু বুঝতে পারছি না দ্বিতীয় বার ঠিক হয়ে যাবে।
.
- ঘরে ডুকলাম, দেখি বউ আমার ইয়ায়ায়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বিছানার মাঝে বসে আছে, আমাকে দেখে খাট থেকে নেমে এসে পা ধরে সালাম করে নিল।
- চলো দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করি । (আমি)
নামাজ পরে আমি শুতে যাবো তখনি বলতাছে,  
- আজ আমরা ঘুমাবো না (জান্নাতি)
- আমি তো রিতি মত অবাক এই মেয়ে বলে কি ঘুমাবে না কিন্তু কেন...?
- আমার অনেক দিনের স্বপ্ন এই রাতটা নিয়ে, আজ আমরা সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দিব (জান্নাতি)
- কিন্তু গল্প তো আমরা কালকের রাতেও করতে পারি...(আমি)
- আমি বলছি গল্প করব তো আজকেই গল্প করবো (এটা বলে খাট থেকে আমাকে টেনে বারান্দার বেলকুনিতে নিয়ে যায়)
ওমা একি এখানে এত সুন্দর করে কে সাজিয়েছে।

- ওই দিকে তাকিয়ে দেখেন চাঁদটিকে কত সুন্দর লাগছে, আমাদেরকে মিটি মিটি আলো দিয়ে রেখেছে।
- চাঁদ তুমি যেমন রাতকে ভালোবাস, আমিও তেমনি এক জনকে ভালোবাসি। আকাশ সমান ভালোবাসা নিয়ে আমি তার সামনে দারিয়ে আছি। তুমি চোখ খুলে দেখ ভালোবাসার সাগর নিয়ে দারিয়ে আছি আমি, কি বলবে না তুমি I love you too (জান্নাতি)

-তুমি কি হবে আমার বেঁচে থাকার হাসির কারন? তুমি কি হবে আমার ফুট ফুটে সোনার টুকরো মেয়ের আম্মু? তুমি কি হবে আমার আধার রাতের আলো? কথা গুলো শেষ করে জান্নাতিকে কোলে তুলে বেল্কুনি থেকে এনে বিছানায় ফেলে দিলাম।
.
- এই আপনি কি করছেন! উমমমউম্ম...
কথা শেষ করার আগেই জান্নাতির ঠোট আমার দখলে নিয়ে নিলাম, এভাবে দুজন হারিয়ে গেলাম ভালবাসার সাগরে। থাক না ওরা ওদের ভালোবাসা নিয়ে।ওদের জন্য না হয় আমরা একটু দোয়া করব।

<<<<<<<<<<<< সমাপ্ত >>>>>>>>>>
আরশিতার প্রশ্ন - পর্ব: ০৩

আরশিতার প্রশ্ন - পর্ব: ০৩

আরশিতার প্রশ্ন

ডাক্তার সিনহা আমাকে জানালেন গতকাল রাতে আরো একটা মেয়ে সুইসাইড করেছে। কোনো কারণ ছাড়া সুইসাইড? ভাবা যায়??

ওনার সাথে কথা শেষ করে যখন নিচে নামলাম, দেখলাম দারোয়ান করিম আরশিতাকে একটা চকলেট দিয়ে আরশিতার গাল স্পর্শ করছে। আরশিতাকে কি কি যেনো বলছে। আমার মনের ভিতরে সন্দেহ জাগলো।তারমানে কি করিম আরশিতার সাথে ওইসব? সাতপাঁচ কিছু ভাবতে পারছি না। আমার মনে হলো করিম সব নষ্টের মূল। মেজাজ প্রচন্ড গরম হলো। করিমের কাছে গিয়ে ওরে মাইর শুরু করলাম-
"শালা নিমকহারাম, কুত্তার বাচ্চা, তুই আমার মেয়ের সাথে এইসব"?
ইচ্ছামতো ওরে মাটিতে ফেলে মাইর দিচ্ছি। করিমের চিৎকার শুনে মিহি নিচে আসলো। আমাকে থামানোর চেষ্টা করলো। বললো-
"মেহরাব পাগল হয়ে গেছো তুমিইই? কি করছো এগুলো"?
মিহির দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকালাম। ভয় পেলো। আমার এতোটা রাগি চোখ আগে কখনো দেখেনি।
মিহি জানেওনা আরশিতা আমাকে কি প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেছে। মিহি জানেওনা আরশিতার ওই একটা প্রশ্নের কথা ভেবে আমি এখন রাতে ঘুমাতে পারিনা।

করিমের মুখে জোরে জোরে আরো কয়েকটা কিল মারলাম।
মাটিতে থাকা অবস্থায় করিম কান্না করতে করতে বললো-
-স্যার আমি কি করছি? আমারে মারিয়েন না স্যার। আরশিতা ম্যাডামের মতো আমার একখান মাইয়া আছে গ্রামে, নিজের মাইয়াটারে দেখিনা বহুদিন, তাই আরশিতা ম্যাডামরে দেখলে নিজের মাইয়াটার কথা মনে পড়ে, একটু আদর করতে মন ছায়। আমারে আর মাইরেন না স্যার"।
করিমের এই কথাটা শুনে আমি মাইর থামালাম। করিমের একটা মেয়ে আছে এটা আমি জানি, আগে বলেছিলো আমায়। তারমানে করিম আরশিতার সাথে এসব করবেনা। মেয়েকে দেখেনা বহুদিন, হয়তো এজন্যই আরশিতাকে একটু আদর করতে ইচ্ছা হইছে"।

করিমকে মাটি থেকে তুললাম। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। মাথা নিচু করে আস্তে করে বললাম-
"সরি করিম, আমার মাথা ঠিক নেই। টেনশনের মাথায় পাগলামি করে ফেলছি"।
আমার মাথা আসলেই ইদানিং ঠিক রাখতে পারছিনা। সারাদিন মাথাটা ভারী হয়ে থাকে। মনেহয় মাথার ভিতরে কিছু দৌড়াচ্ছে, পাগলের মতো কিছু একটা খুঁজছে, কিছু একটা।
ইদানিং মাঝেমাঝেই মনে হয় "আমি কি দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছি"??
মিহিকে দেখলাম আমার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। এই মেহরাব তার কাছে বড্ড অপরিচিত।
করিমের দিকে তাকালাম, দেখলাম কান্না করতে করতে শরীর মুছতেছে। আমি পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে করিমের হাতে দিলাম। বললাম-
"কয়েকটা দিন গ্রাম থেকে ঘুরে আসো, তোমার বাচ্চাটার সাথে সময় কাটাও"।
কথাটা শুনে করিম কান্না করতে করতে একটা হাসি দিলো। কান্নার মধ্যে হাসি, কি অদ্ভুত সুন্দর এই হাসি"।
.
.
করিমকে খুশি করে, আরশিতাকে স্কুলে পৌছে দিয়ে থানায় আসলাম। সকালের ঘটনা মাথা থেকে সরাতে পারছিনা। যদিও করিমকে শেষে খুশি করেছি, কিন্তু এভাবে মাইর দেওয়াটা একদম উচিত হয়নি। কি করবো? আরশিতার প্রশ্নটা মাথায় এমনভাবে গেঁথে গেছে, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল কিছুই বুঝতে পারছিনা৷ এমন সময়
কন্সটেবল আসিফ এসে বললো-
-স্যার পারমিশন দিলে একটা কথা জিজ্ঞাস করি"?
-হু বলো"।
-কয়েকদিন ধরে দেখছি আপনি অনেক টেনশনে আছেন। ভাবছিলাম হয়তো রেপ কেসটা নিয়ে টেনশনে আছেন, কিন্তু এখন তো সেটা শেষ হয়েছে। আপনার চেহারায় তারপরেও টেনশন দেখা যাচ্ছে। কি হয়েছে স্যার"?
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আসিফকে বললাম-
-আরে তেমন কিছুনা, ওসমানীনগর হসপিটাল থেকে কল এসেছে, ওইখানে না'কি সবাই কোনো কারন ছাড়া সুইসাইড করছে৷ তার উপর আবার আরশিতার~~~ আমি থামলাম"।
আসিফ হয়তো বুঝতে পেরেছে মেয়েকে নিয়ে কিছু একটা টেনশনে আছি।
আসিফ বললো-
-স্যার আপনি ইদানিং একটু বেশিই চাঁপ নিচ্ছেন। আর কতো কাজ করবেন? আজকে বিকালে ফ্যামিলির সাথে কোথাও ঘুরে আসুন। ভাললাগবে"।
কথাটা খারাপ বলেনি আসিফ।
আমি সত্যি ভীষণ টায়ার্ড। আমার কিছুটা শান্তি দরকার, স্বস্তি দরকার।
ঠিক করলাম আরশিতার স্কুল ছুটির পর ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসবো"।
.
.
ছুটির ঘন্টাখানেক আগেই আরশিতার স্কুলে গেলাম। ক্লাস চলছে।
জানালা দিয়ে উঁকি মারলাম, দেখলাম আরশিতার টিচার পলাশ একটা বাচ্চা মেয়েকে ওর কাছে ডেকে নিলো। মেয়েটার দিকে অন্যদৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো, কামুক দৃষ্টি বলা যায়। আমি বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে।
পলাশ প্রথমে মেয়েটার কাঁধে হাত দিলো, বাচ্চা মেয়েটা ভয় পাচ্ছে।
পলাশ আঙুল দিয়ে মেয়েটার ঠোঁট স্পর্শ করলো। তারপরে বুকে হাত দিলো। আমার মাথায় তখনো কিছু ঢুকছে না। বুঝতে পারছিনা পলাশ এসব কেনো করছে। এই ছেলেটাকে আমি বহুদিন থেকেই চিনি, অনেক ভালো ছেলে হিসাবেই জানি। কিন্তু এসব??
আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকলাম।
বাচ্চা মেয়েটা এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে কান্না শুরু করে দিছে। পলাশ এবার মেয়েটার দুই উরুর মাঝখানে হাত দিলো। ছিঃ।
উরুতে হাত রেখে বললো-
"আমার কাছে একটা জিনিষ আছে, ওটা খেলে তুমি অনেক মজা পাবে"।
কথাটা শুনা মাত্রই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তারমানে পলাশের কাছ থেকেই আরশিতা??
আর কিছু বুঝার বাকি নেই আমার। ক্লাসের ভিতরে গিয়ে পলাশের শার্টের কলার ধরে জোরে জোরে থাপ্পড় মারা শুরু করলাম।
"শালা শুওরের বাচ্চা। তুই না শিক্ষক। থুউউ তোর মুখে। এত খারাপ কিভাবে একটা মানুষ হতে পারে? একটা বাচ্চার সাথে?? থুউউউ"।
ক্লাসে থাকা বাচ্চাগুলোকে দেখলাম বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভয় পাচ্ছে। এখানে বাচ্চাদের সামনে পলাশকে কিছু করাটা ঠিক হবেনা। কুত্তার বাচ্চাটাকে থানায় নিয়ে আসলাম।

থানায় নিয়ে এসে পলাশের শার্ট খুলে ওর হাত বাঁধলাম। প্যান্টের বেল্ট খুলে অবিরাম ওর পিঠে মাইর শুরু করলাম।
থানার সবাই অবাক হয়ে আমাকে দেখছে, আজ পর্যন্ত কোনো আসামীকে এভাবে মারতে কেউ আমাকে আগে দেখেনি। মাইর থামালাম একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে। মেয়েটা বললো-
"ভাইয়া থামুন, ওরে মারিয়েন না আর"।মেয়েটাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি৷ মেয়েটার নাম রিয়া। আমাকে ভাই বলে ডাকে। মিহির ফ্রেন্ড, সেই সাথে ওর বড় পরিচয় হচ্ছে রিয়া এই লম্পট পলাশের স্ত্রী। মাইর থামিয়ে রিয়ার কাছে এসে বললাম-
-তুমি জানো পলাশ কি কি করেছে? তুমি জানো ও কতোটা খারাপ?? ছিঃ। আমার তো মুখে বলতেও ঘিন্না লাগছে"।
-আমি জানি ভাইয়া। সব জানি"।
রিয়ার কথা শুনে প্রচন্ড অবাক হলাম। রিয়া সব জানে? বললাম-
-তুমি সব জানো? তুমি জানার পরেও চুপ করে ছিলে? রিয়া, আমার তো এখন তোমাকে ঘিন্না লাগছে"।
-ভাইয়া এখানে পলাশের কোনো দোষ নেই, পলাশ পেডোফিলিয়াতে আক্রান্ত"।
ভ্রু কুঁচকে রিয়ার দিকে তাকালাম। বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞাস করলাম-
-পেডোফিলিয়া? এটা আবার কি"?
রিয়া মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। একদম চুপচাপ। নিঃশব্দ। হয়তো আমাকে কিভাবে বলবে বুঝতে পারছেনা, লজ্জা পাচ্ছে।
কিছু সময় পর বললো-
- পেডোফিলিয়া একটি মানসিক রোগ ভাইয়া, যারা শিশুদের প্রতি যৌনাকৃষ্ট হয়ে থাকে"।
এই প্রথম আমি এরকম রোগের নাম শুনছি। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। রিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, দেখলাম মেয়েটার বাম চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা পানি পড়ছে। কান্না জড়িত কন্ঠে রিয়া আবারো বললো-
- ভাইয়া লাস্ট ১বছর ধরে পলাশ আমার শরীরে একটাবারের জন্যেও ওইভাবে স্পর্শ করেনি। একজন স্ত্রীর কাছে এর চাইতে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে?
বাসায় ১১বছরের কাজের মেয়েটার শরীরে দেখতাম মাঝে মাঝেই হাত দিতো, তাকিয়ে থাকতো, আমি বুঝতে পারতাম এগুলো কোন টাইপ দৃষ্টি। কোনো মেহমান বাচ্চা নিয়ে আসলে পলাশ খেলার অজুহাতে বাচ্চাটার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতো। আমি বুঝতাম। সব বুঝতাম।
লজ্জা শরমে কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না, আবার সইতেও পারছিলাম না। তারপর এসব নিয়ে যখন কানাডায় থাকা আমার বড় আপির সাথে কথা বলি, তখন ওনি বলেন ওনার স্বামী মানে আমার জিজু ডাক্তার মাসুদের সাথে কথা বলতে। আমি জিজুর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এটা পেডোফিলিয়া। মানে শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ"।
কথাটা বলেই রিয়া আবার কান্না শুরু করলো। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক ঐ মুহুর্তে রিয়াকে কি বলবো বা আমার ঠিক কি করা উচিত আমি জানিনা"।
মোবাইলের রিংটা বেজে উঠলো, ডাক্তার সিনহার কল। ধরলাম। ওনি কিছু বলার আগেই আমি জিজ্ঞাস করলাম-
- আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, আপনাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে পেডোফিলিয়া বলতে কোনো রোগ আছে"?
- জ্বী পেডোফিলিয়া নামে একটা মানসিক রোগ আছে। এই ধরনের রোগীরা সাধারণত বাচ্চাদের প্রতি যৌনাকৃষ্ট হয়ে থাকে। অনেক আগে থেকে এই রোগটা থাকলেও ১৯৯৭ সালে এটাকে রোগ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়"।
- এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই"?
- হু আছে। কিন্তু আমাদের দেশে বা খুব বেশি দেশে এটার উন্নত কোনো চিকিৎসা নেই বললেই চলে। তবে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় পেডোফিলিয়ার খুব ভালো পূর্ণবাসনের পক্রিয়া চালু হয়েছে"।
- আচ্ছা ধন্যবাদ"। আমি পরে কল দিচ্ছি"।
ফোনটা কাটতে যাবো ঠিক এমন সময় ডাক্তার সিনহা আবারো বললেন-
- মেহরাব স্যার শুনুন, যেটার জন্য আপনাকে কল দিছি, একটু আগেও আমাদের হসপিটালে একটা মেয়ে সুইসাইড করেছে। অথচ তাকে আমরা আগামীকালকে রিলিজ করে দেওয়ার কথা ছিলো। আপনি প্লিজ কিছু একটা করুন। প্লিজ"।
ডাক্তার সিনহার কথা শুনে আমি কিছু সময় চুপ করে থাকলাম। বললাম-
- এই বিষয়ে আপনার সাথে একটু পরে কথা বলি"?
- ঠিক আছে"।

ফোনটা কেটে রিয়ার দিকে তাকালাম। মেয়েটা এখনো অবিরাম কান্না করে যাচ্ছে। রিয়াকে বললাম-
- কি করতে চাচ্ছো এখন"?
কান্না জড়িত কন্ঠে রিয়া বললো-
- ভাইয়া আমি কিচ্ছু জানিনা, জিজু বললো কানাডায় ওনাদের কাছে না'কি পলাশকে নিয়ে যেতে হবে। এই কয়দিনে ভিসার সব কাজ শেষ। এখন আগামী এক সপ্তাহের ভিতর টিকেট কনফার্ম করে পলাশকে নিয়ে আপুদের কাছে চলে যাবো। দেখি ওখানে গিয়ে কি হয়"।
রিয়ার চোখের পানিগুলো থামছেনা। থামার কথাও না। একটা নারীর কষ্ট এই পৃথিবীতে সবার বুঝার ক্ষমতাও নেই। আমি রিয়ার মাথায় হাত রেখে বললাম-
"পলাশকে নিয়ে যাও। চিন্তা করিওনা, সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন"।
রিয়া পলাশের হাতটা ধরে হাঁটা শুরু করলো। আমি ওদের চলে যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। কি অদ্ভুত আমাদের এই পৃথিবী।

ওরা চলে যাওয়ার পর কন্সটেবল আসিফ বললো-
"স্যার হসপিটালের বিষয়টা কি করবেন? কেউ এমনি এমনি কোনো কারণ ছাড়া সুইসাইড কেনো করবে? আমার তো কিছু গন্ডগোল লাগছে স্যার"।
আমি আসিফের দিকে তাকিয়ে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম-
"চলো, এবার তাহলে হসপিটাল থেকেই ঘুরে আসা যাক"।

আসছে হসপিটাল রহস্য....প্রতিদিন ভিজিট করে সাথেই থাকুন
আরশিতার প্রশ্ন - পর্ব: ০২

আরশিতার প্রশ্ন - পর্ব: ০২

আরশিতার প্রশ্ন

প্রত্যেকটা থানায় আরশিতার ছবি মেইল করে বললাম যাতে বাস স্ট্যান্ড, সবগুলো পয়েন্ট, চেক করে তারপর যেনো গাড়ি ছাড়ে। বাসার দারোয়ান করিমকে কল দিলাম, বললাম "আরশিতা বাসায় আসলে আমাকে আর মিহিকে যেনো তাড়াতাড়ি জানায়"।
আমার মাথায় কোনোকিছু কাজ করছিলো না। হুট করে কি হয়ে গেলো?
একদিকে আরশিতাকে খুজে পাচ্ছিনা, অন্যদিকে রেপ হওয়া মেয়েটার খুনিরাও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই মেয়েটাও কলেজের সামনে থেকে কিডন্যাপ হয়েছিলো।

কিছু ভাবতে পারছিনা আমি। টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা থেকে একটু পানি খেলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম ওই বুড়ো লোকটা আবারো এসেছেন, ওইদিন ও এসেছিলেন। লোকটার দিকে তাকালাম, স্পষ্ট দেখতে পেলাম বুড়ো লোকটার চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়ছে। ওইদিন আরশিতার করা প্রশ্নের টেনশনে কোনো কথা বলা হয়নি ওনার সাথে, যদিও এখনো আমার মাথায় হাজারটা টেনশন ঘুরছে। সবচাইতে বড় টেনশন তো আমার কলিজার টুকরা মেয়েটাকে খুজে পাচ্ছিনা, তারপরেও ওনার দিকে তাকিয়ে কেনো জানিনা খুব মায়া হলো।
চেয়ার থেকে উঠে ওনার কাছে গেলাম। বললাম-
-চাচা, কি সমস্যা আমাকে বলুন"?
ওনি চোখগুলো বাম হাত দিয়ে মুছলেন। চোখের পানিগুলো লুকানোর বৃথা চেষ্টা। কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন-
-আমার মাইয়াটারে ৩দিন ধইরা খুইজা পাইতাছিনা স্যার"।
কথাটা শুনে আমার বুকটা ধুক করে উঠলো। আরো একটা মিসিং কেস? কি হচ্ছে এসব?? প্রথমে একটা মেয়ে নিখোঁজ, তারপর রেপ, তারপর লাশ, এখন আরশিতা নিখোঁজ, সাথে ওনার মেয়েও। উফফফফ, আমি কিছু ভাবতে পারছিনা। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। চাচাকে জিজ্ঞাস করলাম-
-চাচা আপনার মেয়ে কিসে পড়ে? কোনো ছবি নিয়া আসছেন ওর"?
-বাজান ও তো কলেজে পড়ে। আমি পড়ালিখা কিছু করতে পারিনাই, আমার স্বপ্ন ছিলো মেয়েটারে উকিল বানামু, কিন্তু ওইদিন কলেজ থাইকা আমার মেয়ে আর ফিরে নাই। এইযে তার ছবি"। ছবিটা দেখিয়েই ওনি কান্না শুরু করলেন। আমি অসহায় একটা বাবার কান্না দেখতে থাকলাম। যদিও আমারো এখন ইচ্ছা করছে জোরে জোরে কান্না করতে, কিন্তু পারছিনা। চাচার কাধে হাত রেখে বললাম-
-আপনার মেয়েকে আমরা খুজে বের করবো, টেনশন করিয়েন না"।
এমন সময় মোবাইলের রিংটা বেঁজে উঠলো, দারোয়ান করিম কল দিছে। ধরলাম। করিম বললো-
"স্যার আরশিতা ম্যাডাম তো বাসায় আইছে মাত্রই"।
কথাটা শুনা মাত্র আমি তাড়াতাড়ি রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে।
.
বাসায় গিয়ে দেখি আরশিতা চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। ভীত চেহারা। আরশিতার কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে অনেকগুলো চুমু খেলাম। বললাম-
-আম্মু কোথায় গেছিলে স্কুল ছুটির পর? তুমি জানো পাপা তোমাকে না পেয়ে কতোটা টেনশনে ছিলাম"।
আরশিতা ভীত চেহারা নিয়ে বললো-
"আমি আমার ফ্রেন্ড রিফাতের সাথে খেলতে গেছিলাম পাপা"।
আমি বুঝতে পারলাম আরশিতা কিছু লুকাচ্ছে। আমার মেয়েটা এমন ই, সহজে কিছু বলতে চায়না"।
এই বিষয়ে ওর সাথে আর কোনো কথা বললাম না, ভাবলাম সময় হলে এমনিতেই সব জানা যাবে"।
.
পরেরদিন সকালে স্কুলে যেতে আরশিতার আবারো একিই আবদার "স্কুলে যাবোনা"।
মেয়েটা কি প্রতিদিন রেডি হওয়ার সময় এমন করে? কি জানি, মিহিই তো প্রতিদিন আরশিতাকে রেডি করায়। একপ্রকার জোর করেই আরশিতাকে রেডি করালাম, সত্যি বলতে মিহির অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
মিহিকে কল দিয়ে বললাম বাসায় চলে আসতে।
.
আরশিতাকে নিয়ে স্কুলে গেলাম।
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আরশিতা গাড়ি থেকে নামছেনা, আমার একটা হাত শক্ত করে ধরে আছে।
আরশিতার দিকে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৩টা ছেলের দিকে ভীত চেহারায় তাকিয়ে আছে। এই ভীত চেহারাটা আমি গতকালকেও আরশিতার মুখে দেখেছি। আরশিতার গালটা স্পর্শ করে বললাম-
-আম্মু কি হয়েছে? ভয় পাচ্ছো"?
আরশিতা ছেলেগুলোর দিকে ইশারা করে বললো-
-পাপা ওই মানুষগুলো অনেক খারাপ, অনেক পচা"।
কৌতূহল জাগলো মনের ভিতর। জিজ্ঞাস করলাম-
-ওরা কি করেছে মামনী"?
আরশিতা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো-
- গতকাল স্কুল ছুটির পর আমি আর আমার ফ্রেন্ড রিফাত, আর সুমা, আমরা ভূতদের নিয়ে কথা বলছিলাম।
আমি ওদের বললাম পাপা আমাকে বলেছে ভূত বলতে কিছু নেই।
ওরা হাসলো। রিফাত বললো ওদের বাড়ির পাশে যে জংগল আছে ওইখানে না'কি ভূত থাকে, আমাকে দেখাতে পারবে। আমি ভূত দেখার জন্য ওর সাথে গেলাম, সুমাও ছিলো আমাদের সাথে। জংগলের একটু ভিতরে যেতেই দেখলাম একটা ছোট টিনের ঘর থেকে একটা মেয়ে কান্না করছে। আমি ভীষণ ভয় পেলাম, রিফাত ও ভয় পাচ্ছিলো।
আমরা আস্তে আস্তে ঘরের কাছে গেলাম, গিয়ে দেখলাম এই ৩টা ছেলে একটা মেয়েকে অনেক মারছে, আর মেয়েটা অনেক কান্না করছিলো পাপা। আমরা ভয় পেয়ে সাথে সাথে ওইখান থেকে পালিয়ে আসি"।
আরশিতার কথাটা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করলো।
আরশিতা বললো "একটা মেয়েকে মারতে দেখেছে"।
তারমানে কি আরশিতা নোংরামি করতে দেখেছে? নোংরামিকে মারা বলছে?
সদ্য নিখোঁজ হওয়া মেয়েটাকে কি এই ছেলেগুলোই কিডন্যাপ করেছে? আরশিতা কি ওই বুড়ো চাচার মেয়েটাকেই দেখলো? রেপ হয়ে মারা যাওয়া মেয়েটার খুনিও কি এরাই?
স্বাভাবিক হয়ে আরশিতাকে বললাম-
"আম্মু তুমি স্কুলে যাও, ভয় পাওয়ার কিছু নাই। পাপা আছি'তো"।
আরশিতা গাড়ি থেকে নেমে স্কুলের ভিতর গেলো।

গাড়িতে থেকেই থানায় কল দিলাম। বললাম ৩-৪জন যাতে নরমাল পোশাকে স্কুলের সামনে আসে।
ওরা আসলো। আমরা ছেলেগুলোকে ফলো করা শুরু করলাম"।

সারাদিন ছেলেগুলো একদম নরমাল জীবন যাপন করছিলো, যেমনটা সবাই করে। কিন্তু লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে ওরা ৩জন একটা মুহুর্তের জন্য ও আলাদা হয়নি, বিষয়টা অদ্ভুত।
রাত ১০টার দিকে ওরা একটা বাইক নিয়ে জংগলের দিকে গেলো, আমরাও পিছু পিছু গেলাম। জংগলের অনেক ভিতরে ছোট একটা টিনের ঘর, যেমনটা আরশিতা বলছিলো। ছেলেগুলো ঘরের ভিতরে ঢুকলো, পিছন পিছন গিয়ে আমরাও ঘরের ভিতরে ঢুকলাম।
ঘরে ঢুকে দেখলাম ওই বুড়ো চাচার মেয়েটা বস্ত্রহীন অবস্থায় অচেতন হয়ে শুয়ে আছে। শরীর রক্তাক্ত।
বুঝতে বাকি রইলোনা কুত্তার বাচ্চাগুলো ওর সাথে কি কি করেছে।
কোনো কথা না বলেই আমি ওদের ৩জনের পায়ে গুলি করলাম। কয়েকটা লাত্তি মেরে বললাম-
-জানোয়ারের বাচ্ছারা, তোরা মানুষের ঘরে জন্ম নিছিস"?
৩টা ছেলেই পাগলের মতো হাসতে শুরু করলো। পায়ে গুলি লাগার পরেও কাউকে এভাবে হাসতে এই প্রথম দেখলাম। মনে মনে ভাবছি "ওরা কি সাইকো"? একটা ছেলে বললো-
-স্যার, আমরা সমাজের ভালা কাজ করতেছি"।
ছেলেটার কথা শুনে একদিকে অবাক হলাম অন্যদিকে প্রচন্ড রাগ হলো। বললাম-
-শালা কুত্তার বাচ্চা, রেপ করে মেয়েটার হাত পায়ের আঙুল কেটে খুন করা সমাজের ভালো কাজ"?
-স্যার আমরা যারে খুন করছি ওই মেয়েটা একটা বেশ্যা। কলেজে ৪০টা পোলার সাথে টাংকি মারে। এইযে আমাদের ৩জনরে দেখতেছেন না, আমরা ৩জন ছিলাম না,৪জন ছিলাম। সেই ছোট থাইকাই ৪জন ছিলাম জানে জিগার দোস্ত। ওই মেয়েটা আমাদের বন্ধুটারে ইউজ কইরা, ভালোবাসার লোভ দেখাইয়া, মায়ায় জড়াইয়া, ছাইড়া দিছে। আমার বন্ধুটা সহ্য করবার পারে নাই স্যার, সুইসাইড কইরা ফেলছে। মন ভাঙার কষ্টটা আপনি বুঝবেন না স্যার। আমার বন্ধুর মতো অনেক ছেলে সুইসাইড করবার চায়, শুধুমাত্র এসব বেশ্যা মেয়েদের মায়ায় জড়াইয়া। তাই আমরা ঠিক করছি দশ বারোটা পোলার সাথে টাংকি মারা কোনো মাইয়ারে আমরা এই দুনিয়ায় রাখমু না। আমার বন্ধুর মতো আর কাউরে মরতে দিমুনা। এইযে এই মাইয়াটারে দেখতাছেন না, এই মাইয়াও ওই টাইপের, অনেক পোলার জীবন নষ্ট করবো"।
ওদের কথা শুনে আমার এত্ত রাগ হলো, ইচ্ছা করছিলো এখানেই গুলি করে ৩টাকে মেরে দেই। মেয়েগুলো খারাপ হোক বা ভালো। ওদের রেপ করে, লজ্জাস্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, হাত পায়ের আঙুল কেটে, এরকম ভয়ংকর ভাবে মেরে ফেলার অধিকার তোদের কে দিছে"?
নিজের রাগটা কন্ট্রোল করলাম।
ওদেরকে থানায় রেখে আসলাম।
মেয়েটাকে ওসমানীনগর হসপিটালে নিয়ে যেতে বললাম। বুড়ো চাচাকেও ফোন করে বললাম যাতে ওনি হসপিটালে চলে আসেন।

ফোনটা রাখার সাথে সাথেই আমার কাছে একটা কল আসলো। আননোন নাম্বার। ধরলাম-
-হ্যালো পুলিশ অফিসার মেহরাব বলছেন"?
-জ্বী মেহরাব বলছি, কে আপনি"?
-স্যার আমি আপনাদের ওসমানীনগর নতুন হসপিটালটার হেড "ডাক্তার সিনহা"।
প্রচন্ড অবাক হলাম। ওসমানীনগর হসপিটাল? এই মেয়েটাকে আমি মাত্রই ওসমানীনগর হসপিটালে নিতে বলেছি। ওনি আবার বলা শুরু করলেন-
-স্যার আমাদের এইখানে লাস্ট ১সপ্তাহ ধরে অদ্ভুত সব কান্ড হচ্ছে। কোনো মেয়ে এখানে ভর্তি হলে তারা গলায় দড়ি দিয়ে সুইসাইড করছে। কোনো ছেলে ভর্তি হলে তারা নিজের ইচ্ছায় হাতের রগ কেটে, ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করছে। কোনো কারণ ছাড়াই। আমরা হসপিটালের সম্মানের জন্য এসব লুকিয়ে যাচ্ছিলাম। বুঝতেই তো পারছেন নতুন হসপিটাল"।
আমি ডাক্তারের কথা শুনে রীতিমতো ভয় পেলাম। মেয়েরা গলায় দড়ি দিচ্ছে? ছেলেরা হাতের রগ কেটে সুইসাইড করছে?? মাই গড। কি হচ্ছে এগুলো?
কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ডাক্তারকে বললাম-
-আমি আগামীকাল আপনার সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলতে চাই"।
-ঠিক আছে, সন্ধ্যায় চলে আসুন হসপিটালে"।
-হু ওকে"।
ফোনটা রেখে রেখে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসায় আসলাম। মনটা একটু হালকা লাগছিলো রেপ কেসটা সমাধান করে, কিন্তু ডাক্তারের কলটা আসার পর আরো একটা ভয়ংকর কেস চলে আসলো সামনে"।
রুমে ঢুকে দেখলাম মিহি চলে এসেছে। আমাকে দেখা মাত্রই বললো-
"তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও, টেবিলে খাবার দিচ্ছি"।
আমি কিছু সময় মিহির দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ কেনো জানিনা আমার মনে হলো আমি অনেক বছর পর মিহিকে দেখছি, আমার ভালোবাসার মানুষটাকে দেখছি।

খাবার খেতে খেতে বললাম-
-আরশিতা কি ঘুমিয়ে গেছে"?
-হু অনেক আগেই ঘুমিয়েছে, এই কয়দিনে আমার মেয়েটাকে একদম শুকিয়ে ফেলেছো"।
মিহির কথা শুনে ফিক করে হাসলাম। মায়েদের মনটা সবসময় এমন ই হয়।
খাবার শেষ করে বিছানায় শরীরটা দিতেই চোখ লেগে আসলো। দেখলাম আরশিতা আমাকে জিজ্ঞাস করছে
"পাপা তোমরা যেটা দিয়ে হিসু করো ওইটা কি কোনো বাচ্চাকে খাইয়েছো"?
আমি তাড়াতাড়ি চোখটা খুলে বিছানায় উঠে বসলাম। একটু পানি খেলাম। বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে মনে মনে বললাম "আরশিতার মাথায় এই প্রশ্নটা কিভাবে আসলো এটা না জানা অবধি আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবোনা। একদম না।

পরেরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য আরশিতা রেডি হলো। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুলগুলো ঠিক করছি, আরশিতা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ঠিক এমন সময় হসপিটাল থেকে আবারো কল আসলো, ডাক্তার সিনহার কল। আরশিতার সামনে এসব বিষয়ে কথা বলাটা একদম ঠিক মনে করলাম না। আরশিতাকে বললাম-
"মামনী তুমি গাড়ির কাছে গিয়ে অপেক্ষা করো, পাপা একটা ফাইল খুঁজে বের করে তারপর আসছি"।
আরশিতা নিচে গেলো। ডাক্তার সিনহা আমাকে জানালেন গতকাল রাতে আরো একটা মেয়ে সুইসাইড করেছে। কোনো কারণ ছাড়া সুইসাইড? ভাবা যায়??
ওনার সাথে কথা শেষ করে যখন নিচে নামলাম, তখন দেখলাম দারোয়ান করিম আরশিতাকে একটা চকলেট দিয়ে আরশিতার গাল স্পর্শ করছে। আরশিতাকে কি কি যেনো বলছে। আমার মনের ভিতরে সন্দেহ জাগলো। তারমানে কি করিম আরশিতার সাথে ওইসব?

শেষ পার্ট আসছে...
আরশিতার প্রশ্ন - পর্ব: ০১

আরশিতার প্রশ্ন - পর্ব: ০১

আরশিতার প্রশ্ন

বিছানায় বসে বসে চা খাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় আমার সাত বছরের বাচ্চা মেয়ে আরশিতা বললো-
"পাপা তুমি যেটা দিয়ে হিসু করো ওইটা কি কোনো ছোট মেয়েকে খাইয়েছো? ওটা খেতে কি চকলেটের মতো"?

আরশিতার মুখে কথাটা শুনে আমার বুকটা ধুক করে উঠলো৷ হাতে থাকা চায়ের কাপটা মাটিতে পড়ে গেলো। কি বললো আমার মেয়ে? আমি এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আরশিতার দিকে একবার তাকালাম, একটু আগে আমাকে কতো বড় প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেছে সেদিকে তার একটুও খেয়াল নেই। খুব মনোযোগ দিয়ে খেলা করছে।
আমি এই বিষয়ে ওর সাথে আর কোনো কথা বললাম না।
কিন্তু আরশিতার মনের ভিতর এই প্রশ্নটা আসলো কিভাবে?
আমি আমার মেয়েকে মোবাইল বা ল্যাপটপ স্পর্শ করতে দেইনা, তাই ইন্টারনেটে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আর এতোটুকু মেয়ে ইন্টারনেটের কি'ই বা বুঝে? তাছাড়া আমি আমার স্ত্রী মিহির সাথেও ওইধরনের কোনো নোংরামি করিনি, যেটা আরশিতা দেখে ফেলবে।
তাহলে কি মিহি অন্য কারো সাথে পরকীয়া করে? আরশিতা কি সেটা দেখে ফেলেছে?
ছিঃ ছিঃ। কি নোংরা কথা ভাবছি আমি। মাথা থেকে আরশিতার কথাটা সরানোর চেষ্টা করলাম।

পরেরদিন সকালে টেবিলে বসে চা খাচ্ছি, কিন্তু বারবার আরশিতার বলা কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এতোটুকু মেয়ের মনের ভিতর ওই টাইপের প্রশ্ন? কিভাবে সম্ভব??
আমাকে আনমনা দেখে মিহি জিজ্ঞাস করলো-
-আজকে থানায় তোমার কাজ নাই মেহরাব? অন্যদিন তো খুব তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যাও"।
মিহির দিকে একবার বিষ্ময় চোখে তাকালাম। বললাম-
-কেনো? আমি চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছো না'কি? আমি চলে গেলে ভালো হয়"?
-কি আজব কথাবার্তা। এমনভাবে বলছো কেনো"?
মিহির প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বের হয়ে গেলাম।

থানায় এসে কাজে একদম মন বসাতে পারছিনা। আমার সামনেই গতকাল রেপ হয়ে মারা যাওয়া একটা মেয়ের পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট পড়ে আছে। আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করছেনা সেটা খুলে দেখতে।
একটা বুড়ো লোককে দেখলাম কাঁদতে কাঁদতে কমপ্লেইন লিখাচ্ছে। অন্যদিন হলে নিজেই গিয়ে জিজ্ঞাস করতাম
"কি হয়েছে"?। কিন্তু আজকে আমার নিজের মনেই শান্তি পাচ্ছিনা। বারবার আরশিতার প্রশ্নটা কানে বাজছে।
আমার রীতিমতো মিহিকে সন্দেহ হচ্ছে। আমি জানি আমি উল্টাপাল্টা ভাবছি, কিন্তু মাথা থেকে কোনোভাবেই এসব নোংরা চিন্তাগুলো ফেলে দিতে পারছিনা।

বাসায় ফেরার সময় গেইটের কাছে এসে থামলাম। দারোয়ান করিমকে বললাম-
-আমি থানায় যাওয়ার পর বাসায় কে কে আসে"?
প্রশ্নটা শুনার জন্য করিম হয়তো প্রস্তুত ছিলোনা। মাথা নিচু করে বললো-
-কই কেউ আহেনা তো স্যার"।
আমি ঠাসসসস করে ওর গালে একটা থাপ্পড় মারলাম।
-সত্যি করে বল আমি থানায় যাওয়ার পর বাসায় কেউ আসে কি'না"?
বুঝতে পারলাম করিম রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। আমতা আমতা করে বললো-
-আপনে থানায় যাওয়ার পর, আর আরশিতা মামণি ইসকুলে যাওয়ার পরে দুইদিন একটা ছেলে আইছিলো ম্যাডামের লগে দেহা করতে"।
-ছেলে? কেমন ছেলে? বয়স কতো"?
-এই ধরেন স্যার ছব্বিশ পছিশ হইবো"।
কথাটা শুনে অনুভব করলাম হৃদপিণ্ডে ধড়াম ধড়াম আওয়াজ হচ্ছে। কেউ হাতুড়ি পিটা করছে। করিমকে জিজ্ঞাস করলাম-
-আরশিতা স্কুলে যাওয়ার পর তোর ম্যাডাম কি কখনো বাইরে যায়"?
- হ যায়তো স্যার, ম্যাডাম তো প্রায়ই একলা যাওয়োন আহোন করে"।
করিমের সাথে এই বিষয়ে আর কোনো কথা বাড়ালাম না। বাসায় এসে মিহির সাথেও ওইদিন আর কোনো কথা বলিনি"।

পরেরদেন সকালে নাস্তা করে বাসা থেকে বের হলাম। রাস্তার মোড়ে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি মিহি বের হয় কি'না দেখার জন্য।
ঘন্টাখানেক পর মিহি বের হলো। খুব সুন্দর করে সাজুগুজু করেছে।
একটা রিক্সা ডাক দিয়ে রিক্সায় উঠলো মিহি, আমিও পিছন পিছন একটা রিক্সা নিলাম।

একটা পার্কের কাছে গিয়ে মিহি রিক্সাটা থামালো। দেখলাম একটা যুবক ছেলে বসে আছে। হয়তো মিহির জন্য অপেক্ষা করছে। মিহি গিয়ে ওর কাছে বসলো৷ ছেলেটা মিহির হাত ধরা মাত্রই আমার মেজাজটা এত্ত বেশি খারাপ হলো, নিজের রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
ওদের কাছে গিয়ে প্রথমেই ছেলেটাকে দুই তিনটা কানের নিচে থাপ্পড় মারলাম।
মিহির চেহারা একদম ভীত হয়ে গেছে।
মিহির গালেও ঠাসস করে থাপ্পড় মারলাম। এই প্রথম, এই প্রথম আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার গায়ে হাত তুলছি৷ অবশ্য ভালোবাসার মানুষ বলতেও এখন লজ্জা লাগছে। মিহিকে ছোট করে একটা প্রশ্ন করলাম-
- তুমি এসব পাপ কাজ করছো করো। কিন্তু আরশিতার সামনে কেনো"?
মিহি কান্না করছে, অবিরাম কান্না করছে। একিই সাথে চেহারায় স্পষ্ট দেখতে পেলাম মিহি ভীষন অবাক হয়েছে। কান্না করতে করতে বললো-
-মেহরাব আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার কিছু করার ছিলোনা। রাহাত আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার সাথে দেখা করতে চাইতো। কিন্তু আমি ওর সাথে কোনো পাপ কাজ এখনো করিনি৷
আরশিতার সামনে করার তো কোনো প্রশ্নই আসেনা"।
বুঝতে পারলাম ছেলেটার নাম রাহাত।
কিন্তু আমি এখনো জানিনা ছেলেটা কিভাবে কিসের জন্য মিহিকে ব্ল্যাকমেইল করছে।
আমার মাথায় স্রেফ ৪টা কথা ঢুকলো।
"আমি নিরুপায়"
"আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে"
"পাপ কাজ এখনো করিনি"
"আরশিতার সামনে অবশ্যই না"।
এই ৪টা কথা আমাকে ঘুরেফিরে আমার মেয়ের প্রশ্নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
মিহিকে এসব করতে না দেখলে আরশিতার মাথায় ওই প্রশ্নটা আসলো কিভাবে???

মিহিকে জিজ্ঞাস করলাম-
-তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করে মানে? তুমি এই ছেলেকে কতোদিন ধরে চিনো"?
মিহি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো-
-ওর নাম রাহাত। ৪মাস আগে ওর সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয়। আমি ওরে ভালো একটা ফ্রেন্ড মনে করেছিলাম মেহরাব। বিশ্বাস করে আমার দুই একটা পিক দিছিলাম। আর এখন এগুলো ইডিট করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে দেখা করতে চায়"।
মিহির কথা শেষ হবার পর আমি কিছু বলার আগে ছেলেটা বললো-
-চার মাস না স্যার, চার বছর। চার বছর ধরে আমি মিহিকে ভালোবাসি। সেই কলেজ লাইফ থেকে। আমি'তো বেশি কিছু চাইনা স্যার, আমি শুধু মিহিকে প্রতিদিন একবার দেখতে চাই, ওর কন্ঠটা একটাবার শুনতে চাই"।
কথাটা শুনে মিহি অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো, বুঝতে পারলাম মিহি এসবের কিছুই জানেনা। একটা না বলা ভালোবাসার গল্প।
আমার মনে হলো "ছেলেটা তো ভালোবেসেছে, ওকে আর মারাটা ঠিক হবেনা"। ছেলেটাকে বুঝিয়ে বললাম-
"বিয়েটা তো উপরওয়ালার হাতে, কার সাথে কার বিয়ে হবে সেটা কেউই বলতে পারেনা। এখন যেহেতু মিহির বিয়ে হয়েই গেছে, তো তোমার উচিত এখন ও যেনো ভালো থাকে এটা দোয়া করা। ওকে আর ডিস্টার্ব না করা"।
আমার কথাটা শুনে ছেলেটা বুঝতে পারলো। আমি মিহিকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম"।

একে তো আমার মাথায় সারাদিন আরশিতার বলা কথাটা ঘুরপাক খেতে থাকে, তার উপর আবার মিহির এই কান্ড, আমি একদম নিতে পারছিলাম না এসব। মিহিকে ডাক দিয়ে বললাম-
-আমার মনে'হয় তুমি কিছুদিন তোমার বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসো। আমি কয়েকটা দিন একলা থাকতে চাই"।
মিহি কিছু সময় চুপ করে রইলো। তারপর বললো-
-আমি আরশিতাকেও সাথে করে নিয়ে যাই"?
-নাহ, আরশিতা আমার কাছেই থাকুক। এই কয়েকদিন আরশিতাকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা আমিই করবো"।
মিহি আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কোনোকিছু নিয়ে টেনশনে আছি।
কোনো কথা না বলেই রুমে চলে গেলো ব্যাগ গুছাতে"।

পরেরদিন সকালে আরশিতাকে রেডি করাচ্ছিলাম স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আরশিতা বললো-
-পাপা আমি স্কুলে যাবোনা"।
-কেনো মামনী? আজকে আম্মু রেডি করিয়ে দিচ্ছেনা বলে"?
-নাহ পাপা, তুমি তো বলেছো আম্মু এক দুইদিনের ভিতরে চলে আসবে।
কিন্তু পাপা পলাশ টিচারটা আমাকে অনেক মারে, আমি ব্যাথা পাই"।
আমি আরশিতার কপালে একটু চুমু খেলাম। বললাম-
-হোমওয়ার্ক না করে গেলে টিচার তো মারবেই, তাইনা? তারপরেও আমি পলাশ টিচারকে খুব করে বকে দিবো আজকে, ওনার কতো বড় সাহস ওনি পুলিশের রাজকন্যাকে মারেন।
কিন্তু হোমওয়ার্কটা ঠিকঠাক মতো করতে হবে। ঠিক আছে মামনী"?
আমার কথা শুনে আরশিতা হাসলো৷ একটা বাচ্চার হাসি, নিষ্পাপ হাসি, পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর হাসি।

আরশিতাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে থানায় গেলাম। বারবার মাথায় একটাই প্রশ্ন আসছিলো "এতোটা নিষ্পাপ আমার মেয়ে, এই নিষ্পাপ মেয়েটার মাথায় ওই প্রশ্নটা আসলো কিভাবে"?

সদ্য রেপ হয়ে মারা যাওয়া মেয়েটার ফাইল খুললাম, জানোয়ারের মতো মেয়েটাকে মেরেছে ওরা। প্রথমে রেপ, তারপর লজ্জাস্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত, হাত পায়ের আঙুল কাটা, উফফফ।
কতোটা যন্ত্রণার মৃত্যু। মেয়েটা নিখোঁজ হওয়ার ৫দিন পর আমরা মেয়েটার লাশ পাই।
কেসটা নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম। আমার মাথায় ই ছিলোনা আরশিতাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে হবে।

প্রায় আধঘন্টা দেরি হয়ে গেলো। তাড়াহুড়ো করে আরশিতার স্কুলে গেলাম। সব বাচ্চারা ইতিমধ্যেই চলে গেছে, আরশিতাকে কোথাও দেখতে পেলাম না। চারিদিক খুঁজলাম, আরশিতা নেই।
আরশিতার টিচার পলাশকে দেখলাম স্কুল থেকে বের হতে। দৌড়ে গেলাম ওনার কাছে। বললাম-
-পলাশ ভাই আরশিতা কোথায়"?
-আরে মেহরাব স্যার আপনি? আরশিতা কোথায় মানে কি? স্কুল তো ত্রিশ মিনিট আগেই ছুটি হয়ে গেছে। আর আজকে আপনি কেনো আসলেন? ভাবি কোথায়"?
আমি পলাশের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। স্কুল থেকে বের হয়ে আশপাশের সব দোকান খুঁজলাম, আরশিতা নেই।

আমার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। হুট করে আমার মনে হলো মিহি হয়তো আরশিতাকে নিয়ে গেছে, একরাত মেয়েকে দেখেনি হয়তো তাই। মিহিকে কল দিলাম-
-হ্যালো মিহি, আরশিতাকে তুমি নিয়া গেছো স্কুল থেকে"?
-মানে? তুমি না আমাকে বললে স্কুল থেকে আনা নেওয়া কয়েকদিন তুমি করবে"।
আমি বুঝতে পারলাম মিহি কিছুই জানেনা। মিহিকে আর কিছু বলতেও চাইলাম না, টেনশন করে মারা যাবে একদম।
মিহি ওপাশ থেকে চিল্লায়া উঠলো-
-মেহরাব আমার মেয়ে কোথায়য়য়"?
আমি চুপ করে রইলাম।
মিহি এবার কান্না করতে করতে আরো জোরে বললো-
-মেহরাব কথা বলোওওওওও। আরশিতা কোথায়য়য়"?
আমি আস্তে করে বললাম-
-আরশিতাকে খুঁজে পাচ্ছিনা মিহি। স্কুলে ওকে নিতে এসে দেখি আরশিতা নেই। তুমি চিন্তা করিওনা, আমি আরশিতাকে খুঁজে বের করবো"।
মিহি ওপাশ থেকে জোরে জোরে কান্না করতে থাকলো। আমি ফোনটা কেটে দিলাম।

তাড়াতাড়ি থানায় আসলাম। প্রত্যেকটা থানায় আরশিতার ছবি মেইল করে বললাম যাতে বাস স্ট্যান্ড, সবগুলো পয়েন্ট, চেক করে তারপর যেনো গাড়ি ছাড়ে। বাসার দারোয়ান করিমকে কল দিলাম, বললাম "আরশিতা বাসায় আসলে আমাকে আর মিহিকে যেনো তাড়াতাড়ি কল দেয়"।
আমার মাথায় কোনোকিছু কাজ করছিলো না। হুট করে কি হয়ে গেলো?
একদিকে আরশিতাকে খুজে পাচ্ছিনা, অন্যদিকে রেপ হওয়া মেয়েটার খুনিরাও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই মেয়েটাও কলেজের সামনে থেকে কিডন্যাপ হয়েছিলো"।


চলবে......
নন-ভার্জিন বউ বিয়ের কান্ড!

নন-ভার্জিন বউ বিয়ের কান্ড!


পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটা হলো, বিয়ের আগে মেয়ে ভার্জিন নাকি নন ভার্জিন এটা খুজে বের করা। আমার বন্ধু পলাশ এই জিনিসটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
.
এটুকু পড়েই আমার লিস্টের নারীবাদী বন্ধুরা ক্ষেপে যাবেন না প্লিজ। বাংলাদেশের আর দশটা পুরুষের মতন পলাশ বিয়ের জন্য ভার্জিন মেয়ে খুজতে নামেনাই। তার উদ্দেশ্য আলাদা। সে খুজছে পিওর একজন নন-ভার্জিন মেয়ে। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। পলাশ নিজে ভার্জিন। সেক্স বিষয়ে তার জ্ঞান ক্রিকেট বিষয়ে সাব্বির রহমানের জ্ঞানের কাছাকাছি। এখন মেয়ের যদি আগে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে পলাশকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারবে। তাছাড়া পলাশের মন অত্যন্ত নরম৷ মেয়ে ভার্জিন হলে বাসর রাতে অনেক ব্যাথা পাবে৷ পলাশ চায় না তার জন্য কোনো মেয়ে একটুও কষ্ট পাক।

তবে এগুলো সবই ঐচ্ছিক কারণ। প্রধান কারণ যেটা সেটা হলো, পলাশের হার্ট দূর্বল। সে রক্ত দেখতে পারে না। রক্ত দেখলেই তার ভীষণ মাথা ঘুরে৷ অজ্ঞানও হয়ে যায় কখনো কখনো। এখন পলাশ শুনেছে মেয়ে ভার্জিন হলে নাকি রক্ত বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন বাসর রাতে ঐ মুহুর্তে বর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কেমন না? পলাশ এই রিস্ক নিতে চায় না বলেই খুজছে এমন একজন মেয়ে, যে ভার্জিন না। তাছাড়া পলাশ অনেক ফ্রি মাইন্ডের। মেয়ে পাস্টে কি কি করেছে এসব নিয়ে একফোঁটাও মাথাব্যথা নাই তার। সে মনে করে মেয়েদের ভার্জিনিটি তার মনে, শরীরে না। পলাশের শুধু নন ভার্জিন মেয়ে হলেই চলবে।
.
প্রস্তাবনা শেষ, এবার মেয়ে দেখার পালা। দুই ফ্যামিলি সামনাসামনি বসা। সব কথাবার্তা শেষের পথে। পলাশ হাত উচু করলো। বললো, 'আমার একটা জিনিস জানার আছে।'
মেয়ের পিতা খুব আগ্রহী, 'অবশ্যই বাবা, অবশ্যই। কি জানতে চাও বলো।'
পলাশ আস্তে করে বললো, 'ইয়ে মানে আপনাদের মেয়ে কি ভার্জিন?'
.
মুহুর্তে মেয়ের বাপের চেহারা চেঞ্জ হয়ে গেল। প্রচন্ড রাগে কাপছেন। মুখ লাল হয়ে গেছে। চিৎকার দিয়ে বললেন, 'কি বললে এটা তুমি? কি বললে? আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করো তুমি? আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে? তুমি জানো আমরা কোন বংশ? আমার বাপ মোল্লা হাফিজুর রহমানের নাম শুনলে এখনো লোকে মাথা উচু করে কথা বলে না। আশি সালে পরপর দুইবার হজ্ব করে এসেছেন। তুমি সেই মোল্লাবাড়ির মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলো। তোমার সাহস কতবড়!'
পলাশ আমতা আমতা করে বললো, 'আমি তো আপনার বাবা মোল্লা হাফিজুর রহমান ভার্জিন কিনা জানতে চাইনি৷ উনি দুইবার হজ্ব করে আসলে সেটা উনার ব্যাপার। এর সাথে আপনার মেয়ে ভার্জিন হওয়া না হওয়ার কি সম্পর্ক সেটা তো বুঝলাম না। আপনার মেয়েকে ডাকুন। জিজ্ঞেস করে দেখি।'
.
তো স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার কথা ছিলো তাই হলো। কনেপক্ষ মেরে পলাশের মাথা ফাটিয়ে দিলো। দুইসপ্তাহ ফুল বেড রেস্ট।
.
দুই সপ্তাহ পর আবার নতুন মেয়ে দেখতে যাওয়া। এবার পলাশ আর আগের ভুল করেনি। মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলার জন্য পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সবাই বাইরে বসে আছি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন ওরা বের হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমের ভেতর থেকে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড়ের শব্দ হলো। দরজা খুলে পলাশ বের হয়ে আসলো মুখ ডলতে ডলতে। আহারে, বেচারা!
.
আরেকদিনের ঘটনা। মেয়ের নাম মুনিয়া৷ এইদিন রেস্টুরেন্টে মিট। বাসায় গেলে মাইর খেতে হয় বলে পলাশ রেস্টুরেন্ট বেছে নিয়েছে।
কথাবার্তার পর মুনিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, 'আচ্ছা আপনি কি ভার্জিন?'
মুনিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'ঐ ভিডিও এডিট করা।'
পলাশ অবাক হলো, 'মানে?'
- মানে জিসান আপনাকে কি বলেছে?
- জিসান কে?
- আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড। ও আপনাকে কি দেখিয়েছে সেটা বলেন।
- আমার কোনো জিসানের সাথে কখনো কথাই হয়নি, কিভাবে কি দেখাবে?
- তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেন যে আমি ভার্জিন কিনা?
- এটা তো এমনিই। বলেন না ভার্জিন কিনা আপনি।
মুনিয়া চোখমুখ শক্ত করে বললো, 'অবশ্যই আমি ভার্জিন। কোনো ছেলে কখনো আমার হাতও ধরেনি। কখনো প্রেমও করিনি আমি।'
- কিন্তু আপনি মাত্রই বললেন, জিসান আপনার এক্স।
- আরে ধুর, আমার পেছনে ঘুরতো। আমি কখনো পাত্তাই দেইনি।
- তাহলে আপনি ভার্জিন?
- হ্যা, হান্ড্রেড পার্সেন্ট।

মন খারাপ করে চলে এসেছে পলাশ। আমার কাছে দুঃখ করে বলতেছে, 'দেশটার কি যে হয়ে গেল দোস্ত। সব মেয়েই দেখি ভার্জিন।'

শেষমেশ একটা ভালো সম্বন্ধ খুজে আনলাম পলাশের জন্য। মেয়ে ডিভোর্সি। বিয়ের তিনমাসের মাথায় ডিভোর্স হয়। ছেলের আরেকটা সম্পর্ক আছে সেটা হঠ্যাৎ একদিন জেনে ফেলে মেয়েটা।
পলাশ খুব খুশি। তিনমাস সংসার যখন করেছে, নির্ঘাত আর ভার্জিন না।
কিন্তু পলাশের সে আশায় গুড়েবালি। মিট করে এসে হতাশ গলায় বললো, 'ঐ মেয়েও ভার্জিন রে।'
- কি বলিস? কে বললো?
- মেয়ে নিজেই বললো। বিয়ের পর নাকি বরকে কাছেই আসতে দেয়নি কখনো। হাতটা পর্যন্তও ধরতে দেয়নি।'
.
এরকম আরো কিছু মেয়ে দেখা হলো৷ কয়েকজায়গা আমরা খেলাম মাইর৷ কয়েক জায়গায় গালি। তবে সবখানেই একই ব্যাপার। মেয়ে ভার্জিন। এখন পর্যন্ত কোনো মেয়েই পলাশকে বলেনি যে সে ভার্জিন না। আর পলাশটাও গাধা। সে মেয়ের মুখে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। আমরা বুঝাইলেও বুঝে না।
.
ফাইনালি আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, আমার কাছে একটা ননভার্জিন মেয়ের খোজ আছে। প্রস্তাব পাঠিয়ে দেখ।
পলাশ খুশি হওয়ার সাথে সাথে অবাকও। বললো, 'তুই কিভাবে বুঝলি যে মেয়ে ভার্জিন না।'
- আরে আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।
- তো? তুই কি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেছিস সে ভার্জিন কিনা?
- আরে গাধা, জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আমি জানি।
- তুই কি সবজান্তা? মানুষের মনের খবর জেনে বসে আছিস?
- আরে ধুর, ওরে নিয়ে লিটনের ফ্লাটে গেছি কয়েকবার।
- তো? লিটনের ফ্লাটে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিস, সে ভার্জিন কিনা?
- না জিজ্ঞেস করিনি। অন্যকিছু করেছি।
পলাশ চোখমুখ শক্ত করে বললো, 'অন্যকিছু করলে হবে? জিজ্ঞেস করে দেখা উচিত ছিলো। আমি বুঝেছি তুই কি কি করেছিস, কিন্তু ওসব কাজে দেয় না।'
- মানে? কি করেছি আমি?
- ঐ যে ইউসি ব্রাউজারে নিউজ দেয়, যে দশটি লক্ষণে বুঝবেন মেয়ে ভার্জিন কিনা। ঐ লক্ষনগুলো মিলায় দেখছিস তো? ওসব নিউজ ভুয়া। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাবে না কখনোই এসব। একটাই উপায়, মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে সরাসরি।

তো পলাশ গেছিলো জিজ্ঞেস করতে। ফিরে এসে বললো, 'না রে দোস্ত, তোর এক্স গার্লফ্রেন্ডও ভার্জিন।'
আমি হাসলাম, 'তোকে মিথ্যা বলেছে।'
- উহু, শুধু শুধু একজন মিথ্যা কেন বলবে? সত্যিই বলেছে। বলেছে তোকে কোনোদিন হাতটাও ধরতে দেয়নি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, খুবই ভালো।
পলাশ আস্তে করে বললো, 'অন্য কিছু নাহয় বুঝলাম, কিন্তু হাতটাও ধরতে দেয় না কেন কেউ। হাত ধরলে কি সমস্যা?'
.
তো ফাইনালি পলাশ তার মনের মত মেয়ে পেয়েছে। সেই কাহিনী বলি। যে মেয়েকে দেখতে গেছিলো, সে নারীবাদী টাইপ।
পলাশ জিজ্ঞেস করেছে, 'আপনি কি ভার্জিন?'
মেয়ে রেগে গেছে। বলেছে, 'যদি ভার্জিন না হই, তো?'
- তো কি। কিছুনা।
- জানি তো। আপনাদের মত ফালতু পুরুষ আমার চেনা আছে।
পলাশ রিকুয়েস্ট করলো, 'প্লিজ বলেন না। আপনি ভার্জিন কিনা।'
মেয়ে আরো রেগে গেলো। রেগেমেগে বললো, 'আচ্ছা যান আমি ভার্জিন না। তো? এখন? আমাকে বিয়ে করবেন না, তাইনা?'
পলাশ খুশিতে হেসে ফেললো, 'কেন করব না? অবশ্যই করব।'
- আমি ভার্জিন না, তাতে আপনার কোনো সমস্যা নাই?
- উহু, অবশ্যই না। আমার কোনো সমস্যা নাই।

তো নারীবাদী মেয়েটা শুরুতে ভেবেছিলো, পলাশকে না করে দিবে। কিন্তু কথোপকথনের এই পর্যায়ে পুরোপুরি ইমপ্রেস হয়ে গেল। বাংলাদেশে কয়টা ছেলে আছে যে, নন-ভার্জিন মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হবে? এতো উদারও কোনো ছেলে হয়? বাহ!

বিয়েতে হ্যা বলে দিলো মেয়েটা। হ্যা বললো পলাশও। ধুমধাম করে বিয়ে হলো। আমরা খুব আনন্দ করলাম।

সব অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত। বাসায় এসে মাত্র ঘুমাইছি। এমন সময় ফোন বাজলো। রিসিভ করে খবর পেলাম, ঘটনা ঘটে গেছে। পলাশ অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে।

দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছে। আমার দিকে চেয়ে ক্লান্ত হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে বললো, 'তুই ঠিকই বলেছিলি দোস্ত। মেয়েরা আসলেই মিথ্যুক হয়।'
- মানে কি?
- মানে তোর ভাবী ভার্জিন ছিলো। আমার উপরে রেগে গিয়ে বলেছে ভার্জিন না।

আমি বাসায় চলে আসতেছি। পলাশের সিরিয়াস কিছু না। স্যালাইন ধরানো হয়েছে। সকালে ফিরতে পারবে বাসায়। নতুন বউ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে বেডের পাশে। পলাশের চোখেমুখে দুঃখ আর হতাশার চিহ্ন।
.
বউ ভার্জিন এই খবরে এতো হতাশ এই পৃথিবীতে কোনো পুরুষ সম্ভবত কখনোই হয়নি! আহারে, বেচারা!
স্ত্রীর সম্পর্কে সবার সামনে যে কথা কখনোই বলবেন না

স্ত্রীর সম্পর্কে সবার সামনে যে কথা কখনোই বলবেন না


মিতি ও রাসেলের বিয়ে হয়েছে পরিবারের সম্মতিতে। বিয়ের এক মাস পরেই মিতি আবিস্কার করলো রাসেল ভীষণ খুঁতখুঁতে। কেবল বাসাতেই নয়, বরং কোন আত্মীয় বা কলিগের বাসাতে গেলেও মিতির নানা দোষ নিয়ে আলোচনা করে ও সবার সামনেই। মিতির রান্না ভালো না, মিতি শুধু শপিং করে টাকা ওড়ায়, সারাক্ষণ ফোনে কথা বলে ইত্যাদি, এমনকি একদিন এক নারী কলিগের সামনে এতো বলেই বসলো, “ইশ! আমার বউটা যদি আপনার মত সুন্দর হতো! মিতির ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু কাউকে বলতেও পারে না ও! ওর শুধু মনে হয়, রাসেল তো তার স্বামী, সবার সামনে এভাবে ওর দোষ নিয়ে আলোচনা না করে, ও কি পারতো না শুধু মিতিকে একা একটু বুঝিয়ে বলতে!আর এতে তো রাসেলকে নিয়েও আত্মীয়রা হাসাহাসি করে। সেটাও ভালো লাগে না মিতির। সম্পর্কটা এভাবেই দিন দিন খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।পাঠক, রাসেল-মিতির ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র! কিন্তু এমনটা ঘটে প্রায়শই। তাই একটু খেয়াল রাখুন, নিজের স্ত্রী সম্পর্কে সবার সামনে কিছু বিষয় আলোচনা থেকে বিরত থাকুনঃ

১। আপনার রান্নার সাথে তো ওর রান্নার তুলনাই হয় নাঃ
কোথাও গেলেন, হতে পারে আত্মীয় বা কলিগের বাসায়। সেই ভদ্রমহিলা হয়তো অনেক ভালো রান্না করেন আর তা আপনার ভালোও লেগেছে। কিন্তু তাই বলে তার প্রশংসা করার জন্যে নিজের স্ত্রীর রান্নার সাথে তুলনা দিতে যাবেন না।আপনার স্ত্রীকে খাটো করে হয়তো আপনি অন্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন, কিন্তু আপনার জন্যে সব সময় ভালোবেসে খাবার তৈরী করার মানুষটি কি এতে কষ্ট পান না? যার প্রশংসা করছেন, তার প্রশংসাই করুন। অযথা নিজের স্ত্রীর wife সাথে তুলনা দিয়ে কেবল তাকে আপনি কষ্টই দেন না, বরং নিজেও নিজের অজান্তেই সামনের মানুষটির সামনে অনেকখানিই ছোট হয়ে যান!

২। ও ভীষণ ঝগড়াটেঃ মান অভিমান হোক বা মনোমালিন্য, দাম্পত্যে সবারই এমনটা থাকে। একটু আধটু ঝগড়া ঝাঁটি বরং সম্পর্ককে মজবুত করতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটি আপনার ও আপনার স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা সবার সামনে বলে স্ত্রীর ওপর দায় চাপাতে চান অনেকেই। যা আপনার সুন্দর মানসিকতার পরিচয় দেয় না।

৩। ইশ! আমার স্ত্রী যদি আপনার মতন হতোঃ অন্য কোন নারীর সামনে এ কথাটা বলছেন আপনি। এর ফলে প্রথমত আপনার স্ত্রী যে কী ভীষণ কষ্ট পান, তা কি আপনই জানেন? আর যাকে বলছেন, তিনিও আপনাকে একজন হীনমন্যতায় ভোগা অসুখী ব্যক্তি ভেবে করুণা ছাড়া আর কিছুই করবেন না।

৪। ও আগে পারতো এখন আর পারে নাঃ আপনার স্ত্রী হয়তো আগে গান গাইতেন, লেখালিখি বা নাচ করতেন। বিয়ের পর সাংসারিক ঝামেলায় হয়তো তার চর্চা নেই। কিন্তু তাই বলে সবার সামনে তার প্রতিভাকে ব্যর্থতায় ঢেকে দেবেন না। কেননা তিনি যা প্রতিভার অধিকারী তার চর্চা করলে আবারো পারবেন। তাই তার প্রতিভার সম্মান দিন।

৫। আমার স্ত্রী তো আপনার স্ত্রীর মত সুন্দরী নাঃ এটির মত নোংরা কথা জগতে দ্বিতীয়টি নেই। আপনার স্ত্রীর সামনেই যদি অন্য কোন নারীকে এ কথা বলার অভ্যাস থাকে। তবে এটি তো আপনার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ই আর সবার সামনে আপনাকে কিছুটা চারিত্রিক ত্রুটিসম্পন্ন হিসেবেও প্রমাণ করে।

৬। আমার বাসার বাইরে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতেই ভালো লাগেঃ এর মানে আপনি যাই দাঁড় করাতে চান না কেন, সবার সামনে এর একটাই মানে দাঁড়ায়, আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্যজীবনে সুখী নন। এ কথাটি আপনার মনেই রাখুন।৭। ওকে সব পোষাক মানায় নাঃআপনার স্ত্রী হয়তো অতিরিক্ত মোটা বা শুকনো। তাই বলে সবার সামনে তার ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা কি উচিত বলুন? আপনার স্ত্রীকে কোন বিশেষ পোষাক না মানালে তাকে সেটি ঘরেই বলুন। ব্যক্তিগত কথা সবার সামনে প্রচারের কোন মহিমা নেই।

৮। ওর চেয়ে ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে পারতাম আমিঃ “পারতেন তো করেন নি কেন?” শুধু আপনার স্ত্রীই নয়। এমন কথায় হাসবে অনেকেই। এতে আপনার নিজের অসম্মান ছাড়া আপনার স্ত্রীর কোন অসম্মান নেই। এসব কথা বলে যতটা না আপনার স্ত্রীকে কষ্ট দিচ্ছেন আত্র চেয়ে সবার সামন এহাসির পাত্রেই পরিণত হচ্ছেন আপনি।

৯। ও তো অনেক খরচ করে, মিথ্যা বলেঃ দয়া করে বাইরের মানুষকে নালিশ করা বন্ধ করুন। আপনার স্ত্রীকে ওরা পরিবর্তণ করতে পারবে না। পারলে আপনিই পারবেন। তাই খরচ কমাতে বাজেট করুন। মিথ্যা কমাতে আপনার উপর আস্থা তৈরীর চেষ্টা করুন।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক একান্তই ব্যক্তিগত। তাই নিজ স্ত্রীর সম্পর্কে সবার সামনে এমন কোন কথা বলবেন না, যা তাকে হেয় করে। তিনি হেয় হলে কিন্তু আপনারও ইমেজ কমে বৈ বাড়ে না। ভালো থাকুন।