Showing posts with label ভূতের গল্প. Show all posts
Showing posts with label ভূতের গল্প. Show all posts
দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প - ৪

দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প - ৪


ঘটনাটা আমার এক বন্ধুর মামার কাছ থেকে শোনা। নাম পিয়ারুজ্জামান। উনি থাইল্যান্ড এ থাকতেন। তার সাথে থাইল্যান্ডেরই এক বাঙ্গালীর সাথে পরিচয় হয়। তো দেশে দুই জন এক্ সাথেই ফেরেন। ঐ বন্ধুর নাম আখতার। দেশে ফেরার কয়েকদিন পরেই আখতার বিয়ে করেন। বিয়েতে মামাকে দাওয়াত দেন। উনাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। বিয়ের দুই দিন আগেই মামা সিরাজগঞ্জ যান। ঘটনার দিন আখতার এর গায়ে হলুদ ছিল। গায়ে হলুদের দিনই পাশের বাড়ির এক মেয়ে মারা যায় মেয়েটি আখতার এর চাচাতো বোন ছিল। তো এমন ঘটনায় সবাই মন মরা হয়ে গেল। বিয়ে দুই দিন পিছিয়ে গেল। ঐ রাতেই মেয়েটির দাফন কাফনের কাজ শেষ হল। 



রাতে মামা আর আখতার সহ সবাই বাড়ির উঠানে বসে কথাবার্তা বলছে। প্রসঙ্গ: মেয়েটার হঠাৎ মৃত্যু। তো এক সময় বাড়ির কোন এক সদস্য কল পাড়ের গাছের নিচে কিছু একটা নড়তে দেখে। একটু ভাল করে খেয়াল করে দেখে সাদা কাফন পরা ঐ মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার তখন ঘটে, যখন এই ঘটনা সবাই দেখে শুধু একজন নয়। বাড়িতে দোয়া দুরুদ পড়া শুরু হয়ে যায়। কোনভাবে রাত পার করে সবাই।

পরদিন সকালে ফজরের নামাজের সময় আখতার এর বাবা অজু করতে কল পাড়ে গেলেন। তিনি ঠিক তখনো মেয়েটিকে একি জায়গায় দেখলেন। ব্যপারটা তার কাছে অনেক ভয়ঙ্কর মনে হল। সকাল বেলায়ও যে একই ঘটনা ঘটবে তা তিনি ভাবেন নি। তিনি ঘটনাটি নিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে আলাপ করেন। ইমাম সাহেব মেয়েটির লাশ কে কবর থেকে তুলতে বলেন। কবর থেকে লাশ তোলার পর ইমাম সাহেব বাড়ির মহিলাদের বলেন মেয়েটির শরীর একবার পরখ করে নিতে। তো মেয়েটির শরীরে কোনো নাপাক কিছু আছে কিনা সবাই ভাল করে দেখল। ভালভাবে দেখার পর দেখা গেল যে মেয়েটি হলুদের অনুষ্ঠান এর জন্য সাজতে গিয়ে হাতে পায়ে নেইল পলিশ লাগিয়ে ছিল। তারই কিছু অংশ পায়ের কোন এক নখে লেগে ছিল। গোসল এর সময় সেখানে পানি না যাওয়ার ফলে মেয়েটিকে কবর গ্রহণ কর ছিল না। পরে আবার লাশটিকে গোসল করানো হয় এবং পরিপাটি করে কবর দেয়া হয়। এর পর মেয়েটির আত্মাটিকে আর কেউ কল পাড়ে দেখেনি। মামা আরো বলেছেন যে, আজও গভীর রাতে কল পাড় থেকে নাকি কান্নার শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু কেউ আর মেয়েটির আত্মা টিকে দেখতে পায় না।

দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প - ৩

দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প - ৩

 
সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। রাত প্রায় তিনটা বাজে । আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম। বাসার সবাই ঘুম। হঠাৎ ছাদ থেকে ধুপ ধুপ শব্দ ভেসে এলো। বিকেল বেলায় আমরা ছাদে খেললে যেমনটি শব্দ হয় ঠিক তেমনটি। আমি বেশ অবাক হলাম, এতো রাতে ছাদে আবার কে খেলছে !



কাকু আর আমি একই রুমে থাকি। বেশ কয়েকবার শব্দ হওয়ায় কাকুকে ডাক দিলাম। কাকুর উঠার নামটি নেই। নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। অনেকক্ষন ডাকা ডাকি করার পরে কোন রকম মাথা তুলে বললেন তুই গিয়ে দেখনা কে ? ইদুর টিদুর হবে হয়তো। বলে কাকু আবার নাক ডাকতে শুরু করলেন। এদিকে ছাদের শব্দ দৌড়া দৌড়ি পর্যায় পৌছে গেছে । আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার তেমন ভয় করছেনা। বরং দেখতে ইচ্ছে করছে এতো রাতে ছাদে কে দৌড়া দৌড়ি করছে।

আমাদের রান্না ঘরের দেয়ালে মা ছাদের চাবি ঝুলিয়ে রাখেন। আমি ঘর থেকে বের হয়ে ছাদের চাবি নিলাম । আমাদের ফ্লাট থেকে বের হতেই ডান দিক দিয়ে উঠে গেছে ছাদের সিঁড়ি। প্রতিটি বারান্দায় বাতি জ্বলছে। তিন তলার বারান্দা ঘুরে ছাদের সিঁড়ি। আমি ছাদের সিঁড়িতে উঠার পরও আমার কোন ভয় লাগছিল না। তিন তলা থেকে ছাদের দরজা দেখা যায়। বন্ধ দরজা। তালা দেখা যাচ্ছে। তবে ছাদে শব্দ করছে কে ?

আমি ছাদের তালা খুলে ফেললাম। চাঁদের আলোয় ছাদ ভেসে যাচ্ছে। ছাদে বের হলেই সামনে রবিন চাচ্চুদের ৪ তলা বাড়ী। রবিন চাচ্চুদের বাসা থেকে আমাদের পুরো ছাদটা দেখা যায়।



ছাদের এ মাথা ও মাথা বেশ ভাল করে দেখলাম কেউ নেই। আমি বেশ অবাক হলাম। তা হলে শব্দ করলো কে? পানির ট্যাংকির উপর দেখলাম, নাহ কেউ নেই। এবার কিন্তু আমার গা বেশ কেমন ছমছম করছে। আশে পাশের বাড়িগুলোর দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়ে আমি নীচে নেমে এলাম ।

ঘরে এসে ঢকঢক করে দু গ্লাস পানি খেলাম। এমনিতেই আমি বারবার হিশু পায় বলে রাতের বেলা পানি কম খাই। কিন্তু সেদিন তেসটা যেনো আর মিটছিলো না। ২য় গ্লাস পানি শেষ করার মুর্হুতে আবার ধুপ ধুপ শব্দ ভেসে এলো। আমি গ্লাসটি রেখে উঠে পড়লাম। ছাদের সিঁড়িতে এসে দেখি ছাদে তালা মারাই আছে। দরজা বন্ধ। কিন্তু দরজার ওপাশেই কে যেনো দৌড়াচ্ছে । আমি ভয়ে ভয়ে তালা খুলে ছাদে এলাম । আবারও চাঁদের আলোয় চোখ ভেসে গেলো । আমি পুরো ছাদ বেশ ভাল করে দেখলাম। না। কেই নেই। নিজেকে কেমন বোকাবোকা মনে হলো। নিজেকে শান্তনা দিলাম হয়তো রাত জেগে পড়ার ফলে উল্টা পাল্টা শব্দ শুনছি।

ছাদ তালা দিয়ে নামার জন্য পেছন ঘুরতেই চমকে উঠলাম। হাতের ডান পাশে সিঁড়ির শেষ মাথার ছাদের দেয়াল ঘেষে কে যেনো বসে আছে। ভয়ে আমার বুক তখন ধুকপুক করে উঠা নামা করছে । আমি কোন রকম জিজ্ঞেস করলাম। কে! কে ওখানে? হালকা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দু’হাটুর মাঝখানে মাথা রেখে কে যেনো বসে আছে । ছোট্ট শরীরটা দেখে আট দশ বছরের বাচ্চা বলে মনে হলো। 

আমি কানে তখন কিচ্ছু শুনছি না। চোখেও ভাল করে দেখছি বলে মনে হলো না। শুধু তাকিয়ে আছি। আর জোরে জোরে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছি কে ! কে ওখানে ?

বেশ কয়েক বার চিৎকার করতেই হাটু থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো। ভয়ে আমি চমকে উঠলাম। জাপানি ভুতের সিনামায় দেখা আট নয় বছরের একটি ছেলে আমার দিকে হাটু থেকে মুখ তুলে তাকালো । বড় বড় দুটো চোখ । সমস্ত মুখ কেমন ফেকাসে হয়ে আছে ।



অনেকক্ষন পানিতে ভিজলে চামড়া যেরকম ফেকাসে হয় তেমনটি। আমি আরো জোড়ে চিৎকার করলাম কে কে? ছেলেটি কোন উত্তর দিলো না শুধু একটি হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আমি ভয়ে তখন কি ভাবে যে নীচে নেমে এলাম বলতে পারবো না । যখন চোখ খুললাম তখন দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি; মা-বাবা, কাকু আর একজন ডক্টর আমায় ঘিরে আছেন ।

বাবা কাকুকে বকছেন আমাদের কেন ভুতের গল্প শুনায় তার জন্য । মা’র হাতের ফাঁক দিয়ে আমার চোখ যখন দরজার কাছে গেলো তখন আবার চমকে উঠলাম। ছাদে দেখা ছেলেটি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে । আমার চোখাচোখি হতেই ডান হাতটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আমি আবার জ্ঞান হারালাম ।

সে বার আমাকে অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সে রাতের পর ঐ ছেলেটিকে আর কোনদিন আমাদের ছাদে দেখা যায়নি। সে রাতে অবশ্য আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল সেটি হলো আমাদের পাশের বাসার রবিন চাচ্চু মারা গিয়েছিলো। ভাল মানুষ হঠাৎ নাকি কি দেখে খুব ভয় পেয়েছিলেন ।
দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প - ২

দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প - ২



ঘটনাটি আমার এক মামার কাছ থেকে শোনা এবং রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে মামাসহ আরো একজনের সাথে । মামা এবং মামার বন্ধু নওগা হয়ে আসছিল গাড়ি চালিয়ে । গাড়ি চালাচ্ছিল মামার বন্ধু । তারা যখন নওগাঁ নহাটাতে পৌছল তখন ঘটনাটি ঘটে। তখন রাত প্রায় তিনটা । তারা মাইক্রোবাসে করে যখন আসছিল সেই মুহূর্তে তারা একটা মেয়েকে দেখতে পায় রাস্তার ধারে দাড়ানো অবস্থায় । মামার বন্ধু বলে এত রাতে এখানে একটা মেয়ে, বোধ হয় বিপদে পড়েছে, চল মেয়েটিকে সাহায্য করি । 



মামা তখন বলে তুই কি ঠিক আছিস! দেখ চারিদিকে বিল, আশেপাশে কোন বাড়িঘর নাই। তাছাড়া রাত বাজে ৩টা এত রাতে এমন নির্জন জায়গায় একটা মেয়ে!! মামার বন্ধুটি ভূত প্রেত কিছুতেই বিশ্বাস করেনা । তো সে মামাকে বলল তুই না গেলে না যাস আমি যাব। মামার বন্ধুটি গাড়ি ঘুরিয়ে সেই মেয়েটি যে জায়গায় ছিল সেই জায়গায় যেয়ে দেখে মেয়েটি হাটু গেড়ে বসে আছে। তারা নেমে দেখে সেটি ছিল এক মহিলা। বয়স আনুমানিক ৪০-৪৫। তারা মহিলাকে বলে এত রাতে আপনি এখানে! কোন বিপদ হয়েছে নাকি? মহিলাটি কোন কথা না বলে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। মহিলার কান্নার কারন জানতে চাইলেও মহিলাটি কিছুই বলেনা। হঠাৎ মহিলাটি বিলের মধ্য দিয়ে হেটে যেতে থাকে । মামা বন্ধুকে বলে মহিলার সাথে যাবার দরকার নাই, বিপদ হতে পারে। কিন্তু বন্ধুটি মামার কথা না শুনে মহিলার পেছন পেছন যেতে থাকে। নিরুপায় হয়ে মামাও যায় তার সাথে। কিছুদূর যাবার পর মহিলাটি পোটলার মত কিছু একটা দেখিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল। মামা এবং বন্ধু যেয়ে দেখে পোটলার ভেতর একটা কাপড়ে ঢাকা ছোট বাচ্চার লাশ। মামা এই লাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিলাটি চুপ করে কাঁদতে থাকে। মামারা ভাবে মহিলাটি হয়তো বোবা। হুট করে মামার বন্ধুটি বলে উঠে যে চল মহিলাটিকে আমরা সাথে করে নিয়ে যাই, এই নির্জন এলাকায় এত রাতে ফেলে রেখে যাওয়া উচিত হবে না। 

মামা অনিচ্ছা সত্বেও রাজি হলো। মহিলাটিকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে গাড়ি চলতে থাকল। সময় তখন রাত ৩.৫০। কিছুদূর যাবার পর গাড়ির ইন্জিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। গাড়ি সারতে সারতে প্রায় ৪.১৫ বেজে গেল। গাড়ি আবার চলছে এমন সময় মামা লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখে মহিলাটার মাথাহীন দেহ । সাথে সাথে পেছন ফিরে দেখে মহিলাটি ঠিকই আছে । কিন্তু আবার যখন লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাল তখন একই দৃশ্য দেখল । মামা তখন তার বন্ধুকে দেখতে বলল । বন্ধুটিও একই দূশ্য দেখে ভয়ে কাপতে লাগল এবং তারা দুজনই প্রচন্ড ঘামতে শুরু করল। মামা ভয়ে কাপড় দিয়ে লুকিং গ্লাস ঢেকে দিল এবং মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল আপনি কি কিছু খাবেন? সাথে সাথে খেয়াল করে মহিলাটির চোখ অনেকখানি লাল এবং মৃত শিশুটি তার কোলেই রয়েছে। মামারা আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকল। 


কিছুদূর যেতে না যেতেই তারা সেই মহিলাটিকে আবার রাস্তার পাশে দাড়ানো অবস্থায় দেখে কিন্তু মহিলাটি তো তাদের গাড়িতে বসা ছিল। তারা গাড়িটা থামিয়ে দিল এবং একসাথে দেখল যে পেছনে মহিলাটি নাই এবং সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটা হচ্ছে মৃত বাচ্চাটি সিটের উপর দাড়িয়ে তাদের দিকে মুচকি হাসছে এবং বাচ্চাটির চোখের মনি নেই। এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বন্ধুটি সেন্সলেস হয়ে যায় । মামা মনে সাহস আনার চেষ্টা করল এই ভেবে যদি আমার কিছু হয় তাহলে আমাদের আজ রাতে এখানে পড়ে থাকতে হবে, কিছুতেই জ্ঞান হারানো যাবে না। মামা এবার নিজে ড্রাইভ করতে লাগল এবং ভয়ে পেছনে তাকাচ্ছে না। মামা যত সূরা জানে সবগুলো পড়তে লাগল । হঠাৎ মামা পেছন থেকে খটমট আওয়াজ শুনতে পেল। মামা ভয়ে ভয়ে লুকিং গ্লাসের কাপড় সরিয়ে দিয়ে দেখে বাচ্চাটি একটা রক্তাক্ত পা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। এইটা দেখে মামা গাড়ির গতি আরো বাড়িয়ে দিল এবং মামা নাকি আরো ২বার মহিলাটি দাড়ানো অবস্থায় দেখেছে । ইতিমধ্যে সকাল হয়ছে তো মামা দেখে রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলছে । ঘড়িতে তখন সকাল ৭.২৫। মামা গাড়ি থামিয়ে পেছনে দেখে কেউ নাই শুধুমাত্র সেই কাপড়টা ছাড়া যে কাপড়ে বাচ্চাটি ঢাকা ছিল। মামা যেয়ে দেখে কাপড়ের মধ্যে কয়েকটা রক্তাক্ত হাড় পড়ে আছে । মামা রাস্তার কয়েকজন লোককে ডেকে আনল ব্যাপারটা দেখানোর জন্য। কিন্তু এসে দেখে গাড়ির পেছনের সিটে কাপড়সহ রক্তাক্ত হাড়গুলো নেই!!
বীভৎস কান্না: ভূতের গল্প

বীভৎস কান্না: ভূতের গল্প


এক নিঃশ্বাসে ছুটে গিয়ে বাড়ির সদর দরজার বাইরে লাগানো গ্রিলের গেটটা ধরে ঝাঁকাতে থাকি আর চিৎকার করে নিজের ছোট পিসি ("পাপু" বলে ডাকি) কে ডাকতে থাকি দরজা খোলার জন্য। পাপু আমার চিৎকারে সাড়া দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ঘর থেকে বেড়িয়ে দরজা খুলতে মিনিট ৩-৪ মত সময় নিয়েছিলো, এরপর গ্রিলের গেটটা খুলতে আরও ২-৩ মিনিট। এই ৫-৭ মিনিট আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার মধ্যে ভয় বা আতঙ্ক কি জিনিস সেটা প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম। অবশ্যই কারোর মতে ভুত আবার কারোর মতে নেগেটিভ এনার্জি হতে পারে। আমি আজ পর্যন্ত এর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি, আজও যদি কাউকে এই ঘটনা গল্পের আকারে পরিবেশন করি আমার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ হয় ও সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে, একটু হলেও অস্বস্থি অনুভব করি ও সময়ের সাথে সাথে সেটি অবলুপ্ত হয়। হ্যাঁ এখন এই ঘটনাটি লেখার মুহূর্তেও অনুভব করছি।।



১৯৯৬ সাল তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি। বছর তিনেক আগে ১৯৯৪ এ পাড়ার ক্লাবে ক্রিকেট খেলার জন্য ভর্তি হই। আমাদের প্র্যাক্টিস হত সপ্তাহে তিন দিন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে থেকে আর শনি ও রবিবার দুপুর ২টো থেকে। এই সময়ে অনেক টুর্নামেন্ট হত যেমন; শহীদ মিনার ট্রফি, ভিডল ট্রফি, রাসনা ট্রফি আরও অনেক যার মধ্যে অম্বর রায় স্মৃতিতে(আন্ডার থার্টিন) যেটা হতো সেটা আজও হয়, CAB অর্গানাইজ করে এটা।

আমাদের যিনি প্র্যাক্টিস করতেন ছোটকা দা (ভালোনাম : দীপঙ্কর ঘোষ দস্তিদার), তিনি টালিগঞ্জ এ থাকতেন, ওনার বাড়ি ছিল বিমলেন্দু স্মৃতি ক্রিকেট কোচিং সেন্টার-এর কাছেই মানে টালিগঞ্জ অগ্রগামী মাঠের পাশে। ওনার সৌজন্যে আমাদের পাড়ার ক্লাব থেকে কিছু ছেলে টালিগঞ্জ অগ্রগামী ক্লাবেও প্র্যাকটিস করা ও খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। ওখানে আমাদের প্র্যাকটিস হত সপ্তাহের কিছুদিন সকাল ৭.৩০ ও ১০টা থেকে। আমরা সকলেই ওখানে যেতাম ভোরের ডাইরেক্ট ট্রেন ধরে, টালিগঞ্জে নেমে বাসে করে মালঞ্চ সিনেমা হলের সামনে নেমে হেঁটে মাঠে যেতাম।

আপনারা অনেকেই জানেন ওই সময়ে এখনকার মত টিভি তে এত চ্যানেল আসতো না শুধু ছিলো ডিডি বাংলা ও ন্যাশনাল। আর ন্যাশনাল চ্যানেলে প্রতি শুক্র, শনিবার রাত ৯টা থেকে হিন্দি সিনেমা দেখানো হত।

আমাদের বাড়িটা এমন একটা জায়গায় ছিল সেখানে তিনদিকে বন-জঙ্গল, পূর্বদিকে কিছুটা বসতি ছিলো কিন্তু সেদিকে আমাদের বাউন্ডারি দেওয়ার জন্য যাতায়াত হত না আর পশ্চিমদিকে একটি মাত্র ঘর ছিলো, পাশাপাশি এই দুটি বাড়ি ছাড়া বাকী সবটুকুই বন-জঙ্গল আর পুকুর। বাড়ির সদর দরজা(উত্তরদিকে) থেকে বেড়িয়ে মেন গেটে পৌঁছাতে হত (মেন গেট টা ছিল কাঠের তৈরি আর গেট টিকে আটকানোর জন্য একটি লোহার আংটা ছিল(এখন সেখানে লোহার গ্রিলের গেট), তারপর সোজা ২-৩ মিনিট হাঁটলে পাড়ার বড় রাস্তা(উত্তরদিকে)য় পৌঁছানো যেত। আমাদের যাতায়াতের ওই একটাই মাত্র গলিপথ বা ছোটরাস্তা এখনও তাই। আর এই গলি ব্যবহারের সময় ডানদিকে মানে পশ্চিমদিকে পড়ত দমকল বা ফায়ার বিগ্রেড অনেকটা বড় জায়গা নিয়ে(এখন সেটা আর নেই, সেই জায়গাটিকে এখন বিশাল ফ্ল্যাট বা আবাসন-এ পরিণত করা হয়েছে)। অনেক দূর থেকে সেখানে লোকে কাজে আসতো আর কিছু জনের থাকারও ব্যবস্থা ছিল সেখানে। থাকার জায়গাটা ছিল পিছনের দিকে মানে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার রাস্তায় যাওয়ার সময় ডানদিকের শুরুতেই সেই ঘরগুলো। দিনের বেলা ওই ঘরে লোকেরা থাকলেও রাতে ওখানে কেউ থাকতো না। কারণ, শোনা কথা...

একটি অফিসার তার পরিবার নিয়ে ওখানে থাকতো, একদিন তারা স্বপরিবারে কোথাও ঘুরতে যায় কিন্তু তার বৃদ্ধ মা যেতে না পারার জন্য উনি একই ছিলেন কিন্তু ওনারা ফিরে এসে দেখেন ওনার মা মৃত, হৃদ রোগে মারা গেছেন, ওনারা যত দিন না ফিরেছেন কেউ বুঝতেই পারিনি আর ততদিন ওই বৃদ্ধা মৃত অবস্থায় ওখানেই ছিলেন। এরপর ওনারা মৃত মায়ের সৎকার করেন কিন্তু তারপর থেকে ওখানে থাকতে ওনাদের নিজেদেরই ভয় লাগতো তাই ওনারা ওই ঘর দুটি ছেড়ে পাশেই কোথাও ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। সন্ধ্যা নামার পরেই জায়গাটায় নিস্তব্ধতা গ্রাস করে ছমছমে হয়ে উঠেছিলো। পাড়ার রাস্তা থেকে আমাদের বাড়ি আসার পথের ঠিক মাঝখানে একটি লাইটপোস্ট ছিল, সেটা এখনও আছে। রাতের বেলায় এই লাইটপোস্ট পেরোলেই মাঝে মধ্যে অনেকেরই শরীর টা ভারী হয়ে যেত, তাই অনেকেই ভয় পেত কিন্তু এর বেশী কারোরই কিছু হয়নি কোনোদিন। কেউ কেউ আবার যেই শরীর ভারী মনে হত আমাদের বাড়ি না এসে ফিরে যেত নয়তো ওখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকলে আমাদের বাড়ির লোক বেরিয়ে ওনাকে বাড়ি নিয়ে আসতো আবার ফেরার সময় পুরো রাস্তাটাই ওনাদের সঙ্গে থেকে পাড়ার রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হত।

আমাদের বাড়িটা এমনিতেই অনেকটা বড়, ৩কাঠার উপর বাড়ি আর বাড়ির সামনে (উত্তরদিক) প্রায় ৩কাঠার কাছাকাছি বাগান, বাগানে কোন গাছ নেই বলা যাবেনা প্রায় সব গাছই আছে কারণ বন-জঙ্গল গাছ-গাছড়া নিয়েই জমি কিনে বাবা জ্যাঠা-রা বাড়ি করেন, যেটুকু দরকার সেইটুকুই গাছ কেটে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে বাড়ি করেছিলেন বাকী টুকু প্রয়োজন ছাড়া কাটা হবে না এটাই ঠিক হয়েছিল, বাড়ির চারদিক বোন জঙ্গল আর গাছে ভরা, বাড়ির পিছনে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দিকে বাঁশ ঝাড় ও ছিল। রাতের বেলায় বন-জঙ্গলে-র জন্য এক ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি হত, সেই সময়ে বাড়ি ছাড়া রাস্তায় এখনকার মত লাইট থাকতো না, পাড়ার মোড়ে মোড়ে আর কিছু গলির মুখে পোস্টে একটা করে বাল্ব জ্বলতো এটাই অনেক।



আমাদের বাড়ির সামনেই (উত্তরদিকে) ছিল বড় একটা পুকুর আর পুকুরের পাশে পাড়ার রাস্তার শুরু থেকেই আমাদের বাড়ি পর্যন্ত সারিবদ্ধ ভাবে ছিল নারকেল গাছ, কয়েকটা আমাদের জমির মধ্যেও ছিল, বাড়ি করার সময় প্রয়োজনে দুটি কেটে ফেলা হয় একটি রেখে দিয়ে।

পড়াশুনা আর ক্রিকেট খেলা নিয়েই থাকতাম আমি, তাই টিভি দেখার সেভাবে সময় পেতাম না। আর বাড়িতে আমাকে মাধ্যমিক পর্যন্ত খুব রেস্ট্রিকশনে থাকতে হয়েছে টিভি দেখার ব্যাপারে, ছিলামও তাই। জ্যাঠতুতো দাদা দিদির বেলায় যেটা ছাড় ছিল সেটা আমার বেলায় ছিল না। মা, বাবা এই ব্যাপারে সব সময়ই আমার পাশে থাকার জন্য মা বাবার মুখ চেয়ে সব মেনে নিতাম আর পাশে পেতাম আইবুড়ি পিসি আর ঠাকুমা ("মাম" বলে ডাকতাম)কে। টিভি দেখার একমাত্র জায়গা ছিল আমার মামার বাড়ি। মামাবাড়ি ছিল ঠিক আমাদের বাড়ির সামনের পুকুরটার ওপারের উত্তর-পশ্চিম কোনায়। একবাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দেখা যেত। দিনের বেলায় হাত নেড়ে কথাও হত। প্রতি শুক্র ও শনিবার আমি রাত ৮.৩০-৮.৪৫ মধ্যে মামা বাড়ি চলে যেতাম ওখানে বসেই ৯টার সময় থেকে হওয়া সিনেমা দেখতাম। বেশিরভাগ দিন সিনেমা দেখতে দেখতে ওখানেই ঘুমিয়ে সকালে বাড়ি ফিরে আসতাম আর কোন কোন দিন বাড়ি ফিরে আসতাম কারণ পরের দিন যদি খেলা, টিউশন বা অন্য কোন দরকারি কাজ থাকে তো, তিন মামার কোন এক মামা কিছুটা হলেও এগিয়ে দিত।

বলে রাখি একই বাড়িতে থাকলেও খুব ছোট থেকে আমি পিসি, ঠাকুমার কাছে থাকতাম, যত বড় হলাম ওদের কাছেই রাতে শুতাম, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আমি পিসি, ঠাকুমার কাছেই শুতাম। পিসির অনেক গুন ছিল যেমন গান শেখানো আর সেলাই করা, সকালে আর বিকেলে গান শেখাতো, দুপুরে আর রাত জেগে ব্লাউজ, চুড়িদার, ফ্রক তৈরি করতো পাড়ার কাকিমা, জেঠিমা, বৌদি, বোনেদের জন্য অর্ডার নিয়ে।

এবার আসছি আসল ঘটনায়।
এখনই আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো...
দিনটা ছিল শনিবার, দুপুর ২টোর পর স্কুল ছুটি হত তখন, স্কুলের পর প্র্যাক্টিস, বাড়ি ফিরে পড়াশুনা করে প্রতি সপ্তাহের মতোই সেই দিনেও আমি মামাবাড়ি গেছি টিভিতে সিনেমা দেখতে, খুব ক্লান্ত আমি। সিনেমা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি অজান্তেই, যখন ঘুম ভাঙে তখন ধড়পড় করে উঠে বসে ঘড়িতে দেখি মধ্যরাত প্রায় ১.১৫/১.৩০ হবে। কোন কথা না বলেই বিছানা ছেড়ে মামাবাড়ি থেকে বেরোতে যাবো দেখি সদর দরজায় তালা দেওয়া হয়েগেছে আর মামারা, মাসীরা, দাদু, দিদা সবাই শোওয়ার ব্যবস্থা করছে (দাদুর মুদিখানার বড় দোকান বাজারে, রাতে বন্ধ করে বাড়ি ফিরতে প্রতিদিনই রাত ১২টা বেজে যেত তারপর সবাই একসাথে খেয়ে শুতে শুতে রাত ১টা-১.৩০টা হয়েই যেত, আজও তাই হয়েছে)। আমি বললাম বাড়ি যাবো সদর দরজা খুলে দিতে, মাসীরা বললো... "আজ আর যেতে হবে না কাল সকালে যাস"। আমি বললাম... "না, আজই যেতে হবে কারণ সকালের ডাইরেক্ট ট্রেন ধরে টালিগঞ্জ যেতে হবে, ভিডল ট্রফির খেলা আছে ৮টা থেকে, আজ না গেলে কাল সকালে খুব অসুবিধা হয়েযাবে, আমি মাঠে পৌঁছতে পারবো না, ট্রেন মিস করলে"। অন্য দিনগুলোয় তিন মামার কোন এক মামা আমায় কিছুটা এগিয়ে দিত এমনিই, আমাকে কিছু বলতেও হত না, সেই দিন মামারা আমায় বলে দিলো... "আমরা কিন্তু আজ তোকে এগিয়ে দিতে পারব না, তোর বাড়িতে সবাই শুয়ে পড়েছে, কেউ দরজা খুলবে না, কথা না শুনলে একা চলে যা, নাহলে এখানে থেকে যা, কাল ভোরবেলা চলে যাস"। শুনলাম না কারোর কথা, বললাম... "একাই চলে যাবো অসুবিধা হবে না, ভয় দেখিও না, পাপু এখনো জেগে আছে, সেলাই করছে, আমার জন্য দরজা খোলার লোকের অভাব হবে না"।

মেজ মামা সদর দরজা খুলে দিলো, আমিও বেরিয়ে পড়লাম মামাবাড়ি থেকে, একটু হলেও রাগে মেজ মামা সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজা একটু জোরে আওয়াজ করেই বন্ধ করে দিলো, আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কিছু হলেও আজ রাতের জন্য এই বাড়িতে আমার জন্য আর সদর দরজা খোলা হবে না। রাস্তায় তখন আমি একা আর কিছু পাড়ার কুকুর এখানে ওখানে দলা পাকিয়ে শুয়ে আছে, হেঁটে যখন এগিয়ে যাচ্ছি তখন দুই একটা কুকুর মাথা তুলে দেখলো কিন্তু কোন রকম ডাক বা চিৎকার করলো না শুধু দেখে আগের মত মাথা নিচু করে শুয়ে পড়লো। রাস্তায় তখন দুটো লাইটপোস্ট-এ বাল্ব জ্বলছে, একটা মাঝখানে আর একটা পাড়ার রাস্তা আর আমাদের বাড়ির গলিরাস্তার সংযোগ স্থলে, আর কোথাও কোন আলো নেই এমনকি চাঁদের ও না কারণ অমাবস্যা কি না জানি না থাকলেও আকাশে চাঁদের দেখা নেই। হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ালাম পাড়া আর আমাদের গলিরাস্তার সংযোগ স্থলে, ডানদিকে ঘুরে গলিরাস্তা ধরে বাড়ির দিকে এগোতে যাবো ঠিক তখনই দেখতে পেলাম মেন কাঠের গেটের ভেতরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে আর ঠিক সেই সময়ই পড়ার যত কুকুরগুলো শুয়েছিলো সবকটা এক সাথে বীভৎস সুরে কাঁদতে আরম্ভ করলো, আমার সারা শরীর কেমন যেন ভারী হয়ে, সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠতে আরম্ভ করলো, আমি শুনতে পাচ্ছি আমার হৃদস্পন্দন কিন্তু আমি হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছি বাড়ির মেন কাঠের গেটের দিকে, যত এগোচ্ছি আমার কাছে তত পরিস্কার হচ্ছে, যে দাঁড়িয়ে আছে তার পরনে সাদা কাপড়, আমি এগিয়ে যাচ্ছি শুধু শুনতে পাচ্ছি কুকুরের বীভৎস উচ্চস্বরে কান্না আর আমার হৃদস্পন্দন, যত কাছে এগিয়ে যাচ্ছি আমি তত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি তার সাদা কাপড় পড়া অবয়ব, আমি কিন্তু হেঁটেই যাচ্ছি, কোনো ভয় কি কিছু মনেই হচ্ছে না, মনে হচ্ছে আমি কারোর বশবর্তী হয়েই হাঁটছি, শরীরের প্রতিটি লোমকূপে আমি কাঁটার মত শিহরণ অনুভব করছি এমনকি মাথার প্রতিটি চুলেও, খুব কাছে যখন পৌঁছলাম তখন দেখালাম সারা শরীর সাদা কাপড়ে মোড়া ঘোমটা টানা বুক পর্যন্ত, আঁচলটা হালকা হওয়ায় নড়ছে, এসে দাঁড়ালাম মেন কাঠের গেটের সামনে। এ কী দেখছি আমি, নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না, কাঠের মেন গেটের উপরের লোহার আংটা টা ধরে খুলে ভিতরে ঢুকে মুখ ঘুরিয়ে আংটা টা আবার মেন গেটে লাগিয়ে দিলাম, আবার মুখ ঘোরালাম আমি। চমকে গেলাম... কোথাও কিছু নেই। তাহলে কি আমি ভুল দেখলাম এতক্ষন, বিশ্বাস হলো না। আবার মেন কাঠের গেটের আংটা খুলে বাইরে গিয়ে দেখলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেখান থেকে দেখেছি... না কিছুই নেই সেখানে, বিন্দু মাত্র আলোও নেই যে প্রতিফলিত হবে। তখন আমার হাতে মেন গেটের লোহার আংটা টি ধরা, আমি আর লোহার আংটা টি ছাড়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। যতক্ষণ আমি মেন কাঠের গেটের লোহার আংটা টি ধরিনি ততক্ষণ আমি সেই অবয়ব দেখতে পেয়েছিলাম, মেন কাঠের গেট খোলার জন্য আংটাটি ধরার পর থেকে এখনও আমি সেটি থেকে হাত ছাড়িনি তাই আমি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, ওদিকে বেমালুম কুকুরগুলোর কান্নাও থেমে গিয়ে অদ্ভুত একটা নিস্তব্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে (এই মুহূর্ত থেকে পাপু বাড়ির সদর দরজা না খোলা পর্যন্ত আমার জীবনের প্রথম ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল)। তখন আমি কি করবো ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না, হঠাৎ মাথায় এলো বাড়ির সদর দরজার বাইরে লোহার গ্রিলের গেট ব্যাস আর পায় কে... এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দম বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে ছুট...


পাঠিয়েছেনঃ সঞ্জয় কুমার সরকার (কলকাতা)

দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প

দুষ্টু আত্মা: ভয়ংকর ভূতের গল্প


রাত তখন সাড়ে ৩টা। বাস থামলো আমার গন্তব্যস্থলে । না মানে গন্তব্যেস্থল বললে ভুল হবে এখনো প্রায় ২০ মিনিটের পায়ে হাটা পথ পাড়ি দিলেই আমার বাড়ি। বাস থেকে নেমে পড়লাম, আমার সাথে আরেকজন যাত্রীও নামলো কিন্তু তার গন্তব্য পথ আমার পথের উল্টো দিকে ।


যাই হোক দুটি ব্যাগ একটি হাতে আরেকটি কাঁধে নিয়ে হাটা শুরু করলাম। মাত্র মিনিট বিশেকের পথ দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে, মিনিট দুইয়ের মধ্যে পিচ ঢালা মেইন রোড অতিক্রম করে বাড়ির পথের মাটির রাস্তায় নেমে এলাম। দূরবর্তি ল্যাম্পপোস্ট গুলোর ক্ষীন আলোয় পথ চলতে অসুবিধা হচ্ছিল না। মেঠো পথে, অগণিত গাছপালায় আচ্ছাদিত। একা একা হাঁটছি, তাই বলে মনে কোনো ভয় নেই। আমার চির পরিচিত পথ, ছোট থেকে বড়ো হয়েছি এই পথ দিয়ে চলতে চলতে, মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর মনে হলো কেউ একজন আমাকে অনুসরণ করছে, হ্যাঁ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার পেছনে কেউ আছে, এই প্রথম মনের ভিতর কিছুটা ভয় অনুভব করলাম । এতো রাতে কে আমার পিছু নিবে? মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে পিছু তাকালাম কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না, মনের ভয়টা যেন হাজার গুণ বেড়ে গেলো আর যেন পা চলতে চাইছে না, কোন অদৃশ্য শক্তি মনে হয় পায়ে পাথর বেধে দিল। বিশ মিনিটের পথ প্রায় চল্লিশ মিনিট হেটেছি তবুও পথের শেষ নেই। হটাৎ করে মনে পড়লো আমার মোবাইলে অডিও সূরাহ ইয়াসিন আছে, তা জোরে চালিয়ে দিব। কিন্তু পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে দেখি চার্জ নেই । মোবাইলটা বন্ধ, অনেক চেষ্টা করেও মোবাইলটা আর চালু করতে পারলাম না ।

ঠিক তখনি কানে ভেসে এলো কান্নার শব্দ। কেউ একজন যেন খুব করুন স্বরে কাঁদছে। যেন হাজার বছরের লুকিয়ে রাখা কষ্ট উজাড় করে দিচ্ছে করুন কান্নার শব্দে, ক্রমেই কান্নার শব্দ বাড়তে লাগলো। মনে হলো ক্রমেই তা আমার দিকে এগিয়ে আসছে, আমি বুঝতে পারলাম আমি ফেঁসে গেছি। ফেঁসে গেছি কোনো অপশক্তি বা দুষ্টু আত্মার মায়াজালে, তখন আমার মনে হচ্ছিল আজই আমার জীবনের শেষ দিন।

মা-বার কথা মনে পড়ে গেল তারা সবসময় বলতেন বিপদের সময় ধৈর্য হারাতে নেই । এই দিকে সেই অশুভ মায়া কান্না ক্রমেই আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে। নাহ আমি এতো সহজে হার মানবোনা আমার সাথে আমার মায়ের দোয়া আছে। আয়াতুল কুরসি পড়ে মাটিতে একটি বৃত্ত একে বৃত্তের ভেতর বসে রইলাম, কান্নার সেই করুণ শব্দ থেমে গেলো। আমি বৃত্তের মাঝে বসে বসে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় শুরু হলো, মনে হচ্ছিল গাছ গুলো ভেঙে আমার মাথার উপর পড়বে। প্রচন্ড বাতাসের বেগে ধূলি উড়া আরম্ভ করলো । একবার ভাবলাম উঠে দৌড় দেয় কিন্তু উঠার সাহস পেলাম না, একটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল করে দেখি, এই বাতাস, ধূলো কিছুই আমার বৃত্ত অতিক্রম করতে পারছিলোনা। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, আমাকে ভয় দেখিয়ে বৃত্তের বাইরে বের করার কারসাজি চলছে আমি চুপচাপ বসে রইলাম। ঝড় থেমে গেল, চারদিকে স্তব্ধ হয়েগেছে। আর তখনি ঘটলো আসল ঘটনা আমি আমার চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না, আমার বৃত্তের চারদিকে ঘিরে আছে অসংখ্য ছায়া মুর্তি, তারা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছিল হাজার বছরের পিপাসিত তারা, আমি আর চোখ মেলে রাখতে পারছিলাম না, অন্ধকারের মাঝে এক অন্য অন্ধকার আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে। বুঝতে পারলাম আমি জ্ঞান হারাচ্ছি।

সকালে হাল্কা মৃদু রোদ চখে পড়তেই জ্ঞান ফিরে পেলাম। আমি তখনও বৃত্তের ভেতরে শুয়ে আছি, উঠে দাড়াতে বিষন্ন কস্ট হচ্ছিল। ব্যাগ দুটি হাতে নিয়ে হাটা শুরু করলাম একটু এগুতেই আমাদের বাড়ি দেখতে পেলাম, মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো আর মুখে ফুটে উঠলো আনন্দের হাসি, এ আনন্দ বেঁচে থাকার আনন্দ। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। বাসায় পৌছে দু’রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম আর নিজের জানা-অজানা পাপ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। আল্লাহর রহমতে তারপর থেকে আর কোন বিপদে পড়তে হয়নি।
লাশ কাটা ঘর - ভূতের গল্প

লাশ কাটা ঘর - ভূতের গল্প

রাত তখন ২.৩০। আজ অফিস থেকে ফিরতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে জিয়ামের। রাস্তায় এসে একটাও সিএনজি বা রিকশা কিছুই দেখতে পেলো না সে। কি আর করার যথারীতি হাটতে থাকলো জিয়াম। কিছুদূর যেতেই জিয়াম ভাবতে লাগলো যদি মেইন রোড দিয়ে যাই তাহলে এক ঘন্টা লাগবে। আর যদি মাজারের পাশ দিয়ে নৌকা পার হয়ে যাই তাহলে ১০ মিনিট লাগবে। 




যেই ভাবা সেই কাজ। জিয়াম ঠিক করলো সে নৌকা দিয়ে খালটা পার হয়েই বাসায় ফিরবে। উল্লেখ্য যে, খালটার পাশেই একটা পুরনো লাশকাটার ঘর রয়েছে। জিয়াম যখন মাজারের পাশ দিয়ে খালের রাস্তার দিকে যাচ্ছিলো, তখন জিয়াম খেয়াল করলো মাজারের কবরস্থানের উচু দেওয়ালের উপর থেকে একজন সাদা কাপড় পরিহিত বৃদ্ধলোক তাকে খালের ঐদিকে যেতে নিষেধ করছেন। কিন্তু জিয়াম সে কথায় পাত্তা দিলো না। তখনো জিয়াম খালের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলো। এবং হাটা শুরু করলো। বৃদ্ধ লোকটি তখন বলে উঠলো পরে কোনো ক্ষতি হলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবি না। এই রাস্তা ভালো না। তুই অন্য রাস্তা দিয়ে যা। তোর ক্ষতি হবে। তোর ক্ষতি হবে। এই বলেই লোকটি হঠাত মাজারের কবরস্থানের মধ্যে উধাও হয়ে গেলেন। জিয়াম অনেক সাহসী ছিলো। জিয়াম ভেবেছে কোনো পাগল টাগল হবে। তাই সে এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে ঘাটে গিয়ে পৌচ্ছালো। তখন জিয়াম খেয়াল করলেন পুরো ঘাটে কেউ নেই। ঘাট সম্পূর্ন জনমানবশূন্য। ঐ ঘাটে সরকারী একটি নৌকা ছিলো। যা রশি টেনে টেনে এপার ওপার হওয়া যেতো। তখন আর কিছুই করার নেই তাই জিয়াম একা একাই নৌকায় উঠলো। নৌকায় উঠার পর জিয়াম খেয়াল করলো খালের পাড়ের পুরনো লাশকাটা ঘরটার দরজা আপনা-আপনি খুলে যাচ্ছে, আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। . এসব দেখে জিয়াম প্রচন্ড ভয় পায়। তখন জিয়াম জোরে জোরে নৌকার রশি টানতে লাগলো। কিন্তু সে হঠাত দেখতে পেলো খালের ওই পাড়ের ঘাটে কালো কাপড় পরিহিত বিভৎস এক মহিলা তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। জিয়াম সাথে সাথে মধ্য খালে নৌকা থামিয়ে দিলো। জিয়াম না কি শুনেছে আগুন সাথে থাকলে নাকি খারাপ কোনো কিছু পাশে আসতে পারে না। তাই জিয়াম তার পকেট থেকে সিগারেট বাহির করে টানতে লাগলো। . তখন ওই মহিলাটি ঘাটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জিয়ামের দিকে তাকিয়ে হাসছে। এদিকে জিয়াম একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাতেই আছে। কিছুক্ষন পর হঠাত মহিলাটি বলতে লাগলো এই সামান্য আগুন আমার থেকে কতোক্ষন তোকে রক্ষা করবে। তোকে তো পাড়ে আসতেই হবে। 



জিয়াম এই কথা শোনার পর চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয় এবং বাঁচার জন্য চিৎকার করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। কারণ আশেপাশে এলাকা তখন সম্পূর্ন নিরব। জিয়ামের কান্না দেখে বিভৎস সেই নারী আরো জোরে হাসতে শুরু করলেন। এসব করতে করতে প্রায় ফজরের আযান দেওয়ার সময় হয়ে যায়। জিয়াম তখন দেখলো বিভৎস সেই মেয়েটি আস্তে আস্তে হেটে হেটে লাশকাটা ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে। যেতে যেতে হঠাৎ সেই বিভৎস মেয়েটা পিছনে ফিরে জিয়ামকে বললো, তোর কপাল ভালো, তুই আমার হাত থেকে বেঁচে গেলি। আগামী তে হাতে পেলে আর ছাড়বো না। এই বলেই মেয়েটি লাশকাটা ঘরের দিকে আবার হাঁটা শুরু করলো। জিয়াম তখন আস্তে আস্তে নৌকার রশি টানতে টানতে অপর পাড়ে পৌচ্ছালো। কিন্তু জিয়ামের দূর্ভাগ্য ছিলো, ততোক্ষনে জিয়ামের শেষ সিগারেটটি শেষ হয়ে নিভে যায়। তখনো ফজরের আযান দিতে ঢেড় বাকি। জিয়াম বিপদ কেটে গেছে মনে করে নৌকা থেকে নেমে আসে। কিন্তু জিয়াম বুঝতে পারেনি বিপদ এখনো তার জন্য অপেক্ষা করছে। নৌকা থেকে নেমে একটু সামনে যাওয়ার সাথে সাথে সেই কালো কাপড় পরিহিত বীভৎস সেই মেয়েটিকে তার পাশে দেখতে পায়। জিয়াম তখন দৌড়ে নৌকায় উঠতে যাওয়ার আগেই মেয়েটি জিয়ামের গলায় কামড় বসায়। জিয়াম সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন সেই বীভৎস মেয়েটি জিয়ামের শরীরের থেকে মাংস গুলোকে খুবলে খবলে খেতে লাগলো। পরেরদিন সকালে জিয়ামের লাশটা পাওয়া যায় একটা গাছের উপর ঝুলন্ত অবস্থায়। জিয়ামের শরীরের ক্ষতের চিহ্ন দিয়ে ভরপুর। মনে হচ্ছে কোনো হিংস্র জানোয়ার তার ধারালো নক দিয়ে জিয়ামের শরীরটা কে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো জিয়ামের শরীরে এক ফোটা বিন্দু পরিমান রক্তও বাকি ছিলো না। . 

গল্পঃ Rafiqul Islam Erafi
লেখকঃ রফিকুল ইসলাম