Showing posts with label ছোটগল্প. Show all posts
Showing posts with label ছোটগল্প. Show all posts
ডাল বিভ্রাট!

ডাল বিভ্রাট!


পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে। এক, যারা মনে করে ডাল কোনো খাবারই না এবং তারা পারতপক্ষে ডাল খায় না। দুই, যারা মনে করে ডাল মানুষের প্রধান খাবার এবং তাদের সমস্ত খাবারের সাথেই ডাল থাকা লাগে। আমার বন্ধু শংকর দ্বিতীয় দলে। শুধু যে দ্বিতীয় দলে সেটাই না, তাকে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও বলা যায় চোখ বন্ধ করে। ডাল জিনিসটা নিয়ে অদ্ভুত অবসেশন আছে শংকরের। তার পৃথিবী সম্পূর্ণ ডালময়।
তাকে যদি ফোন দিয়ে বলি, 'দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে আমার।'
সে প্রথম যে প্রশ্ন করবে সেটা হলো, 'কেন, ডালে লবন কম হইছে?'
যেন ডালে লবন কম হওয়া থেকে বড় কোনো সর্বনাশ এই পৃথিবীতে হতেই পারে না।
যদি বলি, 'না রে, বিশাল সর্বনাশ।'
- শিট, তাহলে কি লবন বেশি হইছে?
- ধুর, আমার লাইফই শেষ।
- মানে কি? খেতে বসে ডাল পাসনি?
.
এই হলো অবস্থা। শংকরকে যদি বলি, 'দোস্ত আমার ক্যান্সার হইছে।'
সে শান্ত গলায় বলবে, 'আচ্ছা, তারপর বল। বাসার সবাই কেমন আছে?'
কিন্তু যদি বলি, 'দোস্ত দুপুরে খেতে গিয়ে ডাল পাইনি।'
মুহুর্তে তার কণ্ঠস্বর চেঞ্জ হয়ে যাবে। চিৎকার দিয়ে বলবে, 'এ কী সর্বনাশ। তুই এক্ষুনি টেবিল থেকে উঠে পড়। যত দ্রুত সম্ভব। আমার বাসায় চলে আয়। তিন প্রকার ডাল রান্না হইছে। একসাথে খাবো।'
.
শংকর জীবনে একবারই প্রেমে পড়েছিলো এক মেয়ের। প্রেমপত্রে লিখেছিলো, 'তোমাকে প্রথমবার দেখেই মনে হয়েছে তুমি যেন এক প্লেট গরম ভাতের সাথে ঘন সোনামুগ ডাল। মেসের ডালের মত পাতলা ঠোট আর হোটেলের ডালের মত গাড় কাজল দেয়া ডালের বড়ার মত বড় বড় চোখে তুমি যেন ঠিক পরীস্থানের কোনো পরীর রান্না করা ডাল রেসিপি। আমার প্রিয় মসুরির ডালের কসম, তোমার সাথে সারাজীবন ডালের বাটি ভাগ করে নিয়ে একসাথে খেতে চাই।'
.
স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রেম আলোর মুখ দেখেনাই। আরেকবার মেসেঞ্জারে এক মেয়ের সাথে ভালোই চ্যাট এগিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু পরে নাকি মেয়েটা হুট করে কথা বন্ধ করে দেয়। শংকরকে কে বোঝাবে যে শুধুমাত্র ডাল টপিক নিয়ে খুব বেশিদিন কথা বলে যাওয়া কোনো মেয়েই পছন্দ করবে না। তাছাড়া কোনো সুন্দরী মেয়েকে মেসেঞ্জারে 'পাতলা ডাল' নিকনেম কেউ দেয়?
.
পরে ফ্যামিলির পছন্দে এরেঞ্জ ম্যারেজ হয় তার। সেই বিয়েও টিকেনি। বিয়ের আঠারো দিনের মাথায় সে বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিছে। বউ এর দোষ শংকর ডাল রান্না করে রেখে গেছিলো। বউ লবন চেখে দেখে ভেবেছে লবন বেশি হইছে, তাই পানি দিয়ে জ্বাল দিছে।
শংকর ডাল মুখে দিয়েই একবার শুধু বউ এর দিকে তাকাইছে। তারপর বের হয়ে পুরান ঢাকার সিরাজের দোকানে গিয়ে ডাল ভাত খেয়ে সোজা উকিলের কাছে গিয়ে ডিভোর্স পেপার রেডি করে এসেছে।
শংকরের মতে পুরান ঢাকায় সিরাজ হোটেলে সে লাইফের বেস্ট ডাল খেয়েছে। যেমন স্বাদ, তেমন গন্ধ, তেমনই লবন হলুদ পারফেক্ট পরিমানে দেয়া। যদিও একবারই সে সেই স্বাদ পেয়েছিলো৷ প্রতিবার নাকি অতো ভালো হয় না। কিন্তু আবারো কখনো হতে পারে সেই আশায় প্রতি সপ্তায় অন্তত একবার সিরাজ হোটেলে ডাল ভাত খায় সে।
.
বাংলাদেশের এমন কোনো হোটেল নাই যেখানে ডাল সে চেখে দেখেনি। ভাত খেতে বসলে মানুষ যেমন আগে ভাজা ভর্তা দিয়ে অল্প খেয়ে মাংস নেয়, শংকর তেমনি আগে মাছ মাংস দিয়ে অল্প ভাত খেয়ে পরে ডাল নেয়। ডাল তার খাবারের মেইন কোর্স। মরার পর শংকর স্বর্গে যাওয়া নিয়ে ভয়ে আছে। সে শুনেছে স্বর্গে নাকি মাছের কলিজা আর পাখির মাংস ভুনা পাওয়া যায়। ডাল পাওয়া যায় এমন কোনো তথ্য সে কোথাও পায়নি।
.
এই ডালের চক্করে দুইবার চাকরি চলে গেছে শংকরের। একবার সে অফিসের বস সহ পুরা স্টাফকে বাসায় ডালভাত খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে শুধু ডাল আর কাচালঙ্কা দিয়ে খেতে দিয়েছিলো। আরেকবার জাপানী ক্লায়েন্টের সাথে সোনারগা হোটেলে মিটিংয়ে গিয়ে প্রোডাক্টের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে তাদেরকে দেড় ঘন্টা ধরে বিভিন্ন প্রকার ডাল বিষয়ে জ্ঞান দিয়েছে। তারপর খাবারের অর্ডার ক্যানসেল করে জাপানী টিম নিয়ে পুরান ঢাকার সিরাজ হোটেলে ডাল আর রুটি খাওয়াতে নিয়ে গেছে।
এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় শংকর বললো, 'নাক চ্যাপ্টা জাপানীরা মানুষ হিসাবে খুব ভালো। পুরো এক বাটি ডাল এক চুমুকে খেয়ে বলেছে, নাইচ স্যুপ।'
তারপর নাকি তাদের একজন বমি করা শুরু করেছে। শংকর অত্যন্ত অবজ্ঞা নিয়ে বলেছে, 'হালারা সাপ ব্যাং খেয়ে মানুষ। ভালো জিনিস পেটে সইবে কিভাবে!'
.
এ তো গেলো চাকরি হওয়ার পর চলে যাওয়া। কিন্তু আরো কতগুলো চাকরি যে হতে হতেও হয়নি তার ইয়ত্তা নেই। মেধাবী স্টুডেন্ট শংকর, রেজাল্ট ভালো, লিখিত পরীক্ষাতেও ফার্স্ট সেকেন্ড হয়, কিন্তু ঝামেলা বাধে ঐ ভাইভাতে গিয়েই।
পরীক্ষক হয়তো প্রশ্ন করলো, 'তোমার হবি কি?'
শংকর হাসিমুখে জবাব দেবে, 'ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া।'
- না, কি খাবার প্রিয় জানতে চাইনি। তোমার অবসরে কি করতে ভালো লাগে?
- ডাল রান্না করতে ভালো লাগে। কারণ অন্যের রান্না ডাল আমি সাধারণত খেতে পারিনা। লবন হলুদ মশলা পরিমান মত হয় না। একেক ডাল রান্নার একেক নিয়ম। মসুর ডালে আপনি যতটুকু পানি দিবেন মাসকলাই এর ডালে ততটুকু পানি দিলে হবে? হবে না।
- ডাল রান্না ছাড়া অবসরে আর কি করেন?
- দোকান থেকে ডাল কিনে আনি। একদম ফ্রেশ দেশি ডাল না হলে আপনার ভালো লাগবে না। আজকাল তো কতধরনের চায়না, ইন্ডিয়ান ডাল পাওয়া যাচ্ছে। একদম স্বাদ নেই।
- আচ্ছা অন্য টপিকে যাই। আমাদের কোম্পানির জন্য আপনি এমন কি করতে পারবেন যা অন্য কেউ পারবে না?
- কোম্পানি এমপ্লয়িদের ফার্স্টক্লাস ডালভাত খাওয়াতে পারবো তিন বেলা। সাথে লেবু আর কাচালঙ্কা। উফ!
- আপনাকে বাবুর্চি পদের জন্য ডাকা হয়নি৷ মার্কেটিং ম্যানেজার পদের জন্য ডাকা হয়েছে। আচ্ছা বলুন, যদি কোনো ক্লায়েন্ট কোম্পানির পাওনা টাকা আটকে রেখে দেয় তো কিভাবে তার থেকে টাকা আদায় করবেন?
- ক্লায়েন্টকে দাওয়াত দিয়ে যত্ন করে সিরাজ হোটেলের স্পেশাল ভুনা ডাল দিয়ে তন্দুরি রুটি খাওয়াবো।
- এতে কি কাজ হবে বলে আপনার মনে হয়?
- অবশ্যই স্যার। একশো বার হবে৷ হতেই হবে। ডালের বড়ার কসম।
.
সঙ্গত কারণেই চাকরি হয় না শংকরের। কিন্তু সে কারণটা ধরতে পারে না। সে বোঝে না যে সে একজন অস্বাভাবিক মানুষ। সে বোঝে না, কোনো স্বাভাবিক মানুষ কখনো ডালের বড়ার কসম খায় না।
.
আমার ধারণা যদি কোনোদিন শংকরের ফাসির আদেশ হয় তো সে শেষ চাওয়া হিসাবে কয়েক পদের ডাল দিয়ে ভাত খেতে চাইবে।
.
সে এই জেনারেশনের ওপর রেগে আছে, কারণ এরা নাকি ডাল খেতে চায় না। খালি পিজা বার্গারের ধান্দায় থাকে।
তো একদিন আমাকে কল দিয়ে খুশি খুশি গলায় বলতেছে, 'দোস্ত সুসংবাদ। আজই খোজ পেলাম আমার ছোটভাই নাকি এলাকার কয়েক পোলার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে ডাল খায়। খবরটা শুনে এতো খুশি হইছি বলার মত না। বোকা ছেলেটা ভাবছে ডাল খাওয়া দেখলে কেউ ওদের রাগ করবে। আরে ডালই তো খাচ্ছিস, কোনো নেশা তো আর না।'
আমি আমতা আমতা করে বললাম, 'ঐ ডাল মানে নেশাই।'
- হ দোস্ত ঠিকই বলেছিস। ডালের থেকে বড় নেশা আর হয় না।
- আরে এই নেশা সেই নেশা না। এই ডাল মানে ফেনসিডিল।
.
আরেকদিন কল দিয়ে বলতেছে, 'ধুর, ওটা কোনো ডালের জাতই না। সেদিন রুটি দিয়ে খেয়ে দেখলাম। ঔষধের মত খেতে। মিষ্টি। না আছে লবন না হলুদ। ডাল হবে ঝাল ঝাল। মিষ্টি তো রসগোল্লাও হয়৷ ডাল নামের কলংক। আমার ছোটভাইরে বলে দিছি খাইলে মসুরি খা, মুগ খা, মাসকলাই খা, ফেনসিডিল নামের ডাল যেন আর না খেতে দেখি।'
- সিরিয়াসলি?
- কি?
- তুই ফেনসিডিল রুটি দিয়ে খাইছিস?
- হুম, শুধু শুধু টাকা নষ্ট। এক বোতল ষোলোশো টাকা। এই টাকায় সিরাজের হোটেলে এক মাস ডাল রুটি খাওয়া যাইতো।
.
তো এই হলো আমার বন্ধু শংকরের অবস্থা। আপনারা না দেখলে কোনোদিন বিশ্বাস করতে পারবেন না যে একটা মানুষ তিনবেলা ডাল খাচ্ছে। চব্বিশটা ঘন্টা ডাল নিয়ে ভাবছে এবং কথা বলছে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো। এর মধ্যেই ঘটলো ঘটনাটা।
.
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি অফিস থেকে ফিরে বেলকনিতে চা নিয়ে বসেছি। এমন সময় ফোন বাজলো।
ওপাশ থেকে শংকরের গলা, 'দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে।'
আমি ওর সর্বনাশ সম্পর্কে জানি। হাসলাম। বললাম, 'ডালে লবন কম হইছে?'
- না, তারচেয়েও ভয়াবহ।
- হাহা, লবন বেশি হইছে?
- না রে, আমার লাইফ শেষ।
- টেবিলে ডাল পাসনি? তুই কই? এটা কার নাম্বার?
- এসব কিছুই না। আমি থানাতে। আমি একটা খুন করে ফেলেছি। আমাকে বাঁচা প্লিজ।
.
ছুটে থানায় গেলাম। শংকর পুলিশ কাস্টডিতে। পুলিশ এবং শংকরের থেকে ঘটনা যা শুনলাম তা হলো ওর প্রমোশন হয়েছে। সেটা সেলিব্রেট করার জন্য এক বড় হোটেলে খেতে গিয়েছিলো। সেখানে ডাল অর্ডার করার পর ওয়েটার বলেছে, 'এসব নাই। ভালো কিছু অর্ডার করুন।'
শংকর রেগে গেছে, 'ডাল ভালো কিছু না?'
ওয়েটার বলেছে, 'আরে নাহ, ধুর, থার্ডক্লাস খাবার৷ রুচিশীল খাবারের মধ্যে ডাল পড়ে না।'
শংকর রেগে গিয়ে ওয়েটারকে খুন করে ফেলেছে।
.
আমি অবাক হই, 'এইটুকু বলায় একেবারে খুন করে ফেললি?'
- খুন তো করিনি।
- তাহলে?
- জাস্ট একটা ধাক্কা দিছি। এক ধাক্কায় দরজা দিয়ে বাইরে ফেলে দিছি। সে মরে গেলে আমার কি দোষ?
.
জানা গেলো রেস্টুরেন্টটা ছিলো সাত তলায়। শংকর সাত তলা থেকে ফেলে দিয়েছে ওয়েটারকে। আরো জানা গেলো সে মারামারির একপর্যায়ে বলেছিলো, 'ডালের বড়ার কসম তুই শেষ।'
ডালের বড়ার কসম খেয়ে ফেলার পর নাকি কিছু করার থাকে না৷ এই ভয়াবহ কসম না খেলে নাকি ঘটনা এতোদূর গড়াতো না।
ও হ্যা, সে আরো বলেছিলো, এক মায়ের ডাল খেয়ে থাকিস তো সামনে আয়।
- মায়ের দুধ শুনেছি, ডাল কি?
- আই মিন, মায়ের হাতের ডাল।
.
শংকরের কেস চলতেছে। সে জেলে আছে। এখনো রায় হয়নি। আমি মাঝে মাঝে দেখতে যাই। জিজ্ঞেস করি, কেমন আছিস? এখানে কেমন কাটছে?
সে বলে, সবই ভালো ছিলো শুধু সকালে ডাল দেয় না। রুটি আর সবজি খালি।
- আর দুপুরে?
- দুপুর আর রাতে ক্যান্টিন থেকে ডাল কিনে খেতে পারি। সমস্যা হয় না।
.
তারপর একদিন শংকরের ফাসির আদেশ হয়৷ ফাসি হয়েও যায়। কিন্তু একটা জিনিস শুনে আমরা ভীষণ অবাক হই। শেষ ইচ্ছা হিসাবে সে সিরাজ হোটেলের ডাল খেতে চায়নি। সে নাকি তার আঠারো দিন সংসার করা বউ পায়েলের জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে।
আমরা আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাই। এতোগুলো বছর পর তার বউ এর কথা মনে পড়লো? কেন মনে পড়লো? কি লেখা আছে সেই চিঠিতে? লাইফে প্রথমবার তাহলে ডালের থেকে ইম্পর্টেন্ট কিছু সে ভেবেছিলো!
.
আমরা ধারণা করেছিলাম পায়েল বৌদি আমাদেরকে চিঠিটা পড়তে দিবে না। হাজার হোক, ব্যক্তিগত জিনিস। কিন্তু সে আমাদের চিঠিটা পড়তে দেয়। আমরা পড়ে আরো অবাক হয়ে যাই।
.
চিঠিতে লেখা ছিলো-
.
'প্রিয় পায়েল,
কোনো একটা কারণে আমাদের একসাথে থাকা হয়নি। দোষ কার ছিলো সে কথায় যাবো না। ওসব ব্যাখা বিশ্লেষণ করে আর লাভ নেই আসলে। জেলের ভেতর আমার করার কিছুই ছিলো না। সারাদিন শুধু ভেবেছি। শুনলে অবাক হবা, ভাবনাগুলো ছিলো তোমাকে নিয়ে। তোমার সাথে আমার যা হয়েছিলো সেটা নিয়ে। এখন আমি জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে পৌছেছি। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে এতোদিন ভেবে আমি যা পেয়েছি সেই কথাটা বলে যাওয়া দরকার। পায়েল, তুমি আমার ডালে পানি দিয়ে জ্বাল দিয়েছিলে। সেটা যদি ঠান্ডা পানি না দিয়ে আগে থেকে পানি গরম করে সেই পানি দিতে, আর শেষে যদি দুটো শুকনো লঙ্কা ছেড়ে দিতে, তাহলে ডালটা খেতে আরো ভালো হতো!'
ইতি, শংকর।'
.
আর হ্যা, চিঠির শেষে পুনশ্চ দিয়ে লেখা ছিলো, শুকনা না পেলে কাচা লঙ্কা দিলেও হতো কিন্তু!

লেখা: সোহাইল রহমান
ছেলে থেকে মেয়ে হবার গল্প

ছেলে থেকে মেয়ে হবার গল্প


ডাক্তার সাহেব, আমি সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করে মেয়ে হয়ে যেতে চাই।'

বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মঈন অবাক হয়ে সামনে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখেন। ছেলেটার বয়স কত হবে? সাতাশ বা আটাশ?
জিজ্ঞেস করে, 'কি বললেন, মিস্টার...!'
- কামাল, কামাল হোসেন। নিজের নাম বলে ছেলেটা। বলে, যা বলেছি ঠিকই শুনেছেন।
- আপনি মেয়ে হয়ে যেতে চান?
- হ্যা চাই৷ আপনি বলেন কি কি করা লাগবে।

মঈন মাথা নাড়ে, 'যা ই করা লাগুক না কেন, সেটা আসলে আমার ডিপার্টমেন্ট না। আপনি ভুল ডাক্তারের কাছে এসেছেন। এটা প্লাস্টিক সার্জারির কাজ। আপনি একজন কসমেটিক সার্জনের কাছে যান।'
- আপনি পারবেন না?
- উহু, আমি মানুষের বুক স্পেশালিস্ট। ছেলে আর মেয়ের বুক দেখতে আলাদা তাই বলে এই না যে আমি আপনাকে মেয়ে বানাতে পারব৷ আমি বুকের ভেতরটা নিয়ে কাজ করি, বাইরে না।

'আচ্ছা ঠিক আছে, কামাল উঠে পড়তে চায়। তাহলে আমি একজন প্লাস্টিক সার্জনের সাথে যোগাযোগ করবো।'
- সে নাহয় করবেন, মঈনের কৌতুহল হয়। আমি কি জানতে পারি আপনি ঠিক কোন কারণে মেয়ে হতে চাচ্ছেন?

উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়ে কামাল। তার মুখে স্পষ্ট দুঃখের ছাপ পড়ে। অনেক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, 'আমি আসলে সিঙ্গেল।'
- তো?
- আমি আসলে অনেক বেশি সিঙ্গেল। এতো সিঙ্গেল কোনো মানুষ কখনো হয়নি এই দুনিয়ায়। আমি সাতাশ বছর ধরে সিঙ্গেল।
- আপনার বয়স?
- ছাব্বিশ বছর তিন মাস। মায়ের পেটের নয়মাস যোগ করে সাতাশ হয়। আপনি বিশ্বাস করবেন না ভাই, আমি একটামাত্র প্রেম করার জন্য লাইফে কি কি করেছি। কিন্তু পারিনি। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ লাজুক ছিলাম৷ কোনো মেয়ের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। দেখতেও ভালো না আমি। বিধায় কথা বলতে আসেনি কোনো মেয়েও। সবাই বলতো ভার্সিটিতে ওঠ, ঠিকই প্রেমিকা পাবি।
- তারপর?
- ভার্সিটিতে উঠে দেখলাম সব ভুল। ভার্সিটি শেষ হলো, তাও প্রেমিকা পেলাম না। সাহস করে তিনটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম, দুইজন মুখের ওপর না করে দিছে। কখনো কোনো মেয়েকে স্পর্শ করতে পারিনি লাইফে। হাতটাও ধরিনি, অন্যকিছু ধরা তো দূরের কথা। ফ্রাস্টেশন দূর করতে করতে বাম হাতের রেখা মুছে গেছে প্রায়। লোশন আর টিস্যু কোম্পানির মালিক গাড়ি বাড়ি করে ফেলছে শুধু আমার টাকা দিয়ে, কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আপনিই বলেন।
- আচ্ছা একটু আগে যে বললেন তিনজন মেয়েকে প্রপোজ করেছেন, দুইজন না বলেছে। তো আরেকজন?
কামাল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'সে সবার সামনে থাপ্পড় মেরে দিছে। সেদিনই জেদ উঠছে আমার। ডিসিশন নিছি এসব মেয়েদের পেছনে আর না৷ অনেক হইছে। কাউকে গুনব না আমি। নিজেই অপারেশন করে মেয়ে হয়ে যাব। তারপর নিজে নিজেকে স্পর্শ করব, ধরব, চুমু খাবো, যা খুশি করব। কেউ কিছু বলতে পারবে না। শালার মেয়ে মানুষের ধার কামাল আর ধারবে না।'

কথা শেষ করে রাগে কাপতে থাকে সে। মঈন তাকে শান্ত করায়। বলে, 'আচ্ছা আপনার যা খুশি তাই করবেন। আমি কি আপনার ফেসবুক আইডিটা পেতে পারি?
- কেন বলুন তো?
- যোগাযোগ রাখব। মেয়ে হওয়ার পর আপনাকে কেমন দেখায় সেটা দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে, এড করে নেন।

মঈনের মাথায় তখন অন্য চিন্তা এসেছে৷ সে কামালের জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চায়। একটা ছেলে এভাবে মেয়ে হয়ে যাবে, এটা কোনো কাজের কথা না।

আইডিয়াটা খুবই সহজ। মঈন একটা ফেক মেয়ে আইডি খুলে কামালকে 'হাই' লিখে নক দেয়।
কামাল সীন করে না। মঈন নক দিতেই থাকে। শেষমেশ একদিন রিপ্লাই আসে, 'কে আপনি? কি সমস্যা?'
মঈন স্মাইলি পাঠায়, 'আপনি আমাকে ইগনোর করছেন কেন? আমাকে কেউ ইগনোর করলে আমার খুব খারাপ লাগে জানেন!'
- তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কোনো মেয়ের প্রতি আমার আগ্রহ নাই৷
- ও আচ্ছাহ, গে আপনি? আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাকবেন। আপনার বয়ফ্রেন্ডকে আমার সালাম জানাবেন। বাই।
- ওয়েট, ওয়েট, আমি কোনো গে না৷ আমি স্ট্রেইট।
- তাহলে আমার সাথে কথা বলতে কি সমস্যা?
- কোনো সমস্যা নাই। বলেন।

এভাবেই আস্তে আস্তে কথা হতে থাকে দুজনের। কথা থেকে ভালোলাগা৷ ভালোলাগা থেকে প্রেম প্রেম। কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা জানায় না ঠিক, কিন্তু দুজনই বুঝতে পারে তারা আসলে প্রেমে পড়েছে। তাদের দেখা হওয়ার ডেট ঠিক হয় সামনের ভ্যালেন্টাইন ডে তে।

কথায় কথায় কামাল জানায়, 'আমি লাইফে একটা বড় ডিসিশন নিয়েছিলাম। তোমার সাথে পরিচয় হওয়াতে সেই ডিসিশন বাদ। আর দরকার হবে না।'

কামাল স্বীকার না করলেও মঈন বুঝতে পারে সে সেক্স চেঞ্জ অপারেশনের কথা বুঝাচ্ছে৷ কিন্তু এখন কামাল যদি মেয়ে না হয়ে যায় তো তাদের এই প্রেমের ভবিষ্যৎ কি? তারা দুইজনের একজনও গে না যে ছেলে ছেলে প্রেম চালাবে।

তখনই এক রাতে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে মঈন। সে ময়না হবে। মানে নিজেই সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করবে।
কামালের মত ফরেভার সিঙ্গেল সে না। মেয়ে মানুষ তার লাইফে বহু এসেছে। কিন্তু সবাই শুধু কষ্টই দিয়ে গেছে। প্রেমিকারা তাকে ছেড়ে বিসিএস ক্যাডার ধরেছে একের পর এক। এমন এক সময় আসছিলো যে ক্যাম্পাসে সবার দৃড় বিশ্বাস ছিলো, মঈনের সাথে প্রেম করলে বিসিএস ক্যাডার পাত্রের সম্বন্ধ আসা নিশ্চিত। মঈন এখন বুঝতে পারে, শেষেরদিকে এতো এতো মেয়ে তাকে ডেইলি প্রপোজ কেন করত। তাদের লক্ষ্য ছিলো ঐ বিসিএস ক্যাডারই।
পরে মঈনের বিয়েও হয়। দেড় বছরের মাথায় বউ ভেগে যায় আপন ছোট ভাইয়ের সাথে৷ কি লজ্জার কথা। হ্যা, সমস্যা মঈনের ছিলো৷ কলিকাতা হারবাল থেকে শুরু করে শক্তি প্রাশ হয়ে সানি লিওনের রেকমেন্ড করা লাভ ফরেভার সে খেয়ে দেখেছে। সংসারে অনাবিল সুখ শান্তিও এসেছে। কিন্তু তার না, তার ছোট ভাইয়ের। ওসব এডে যা দেখায় সবই আসলে ভুয়া।
এখন মেয়ে হয়ে সে চাইলেই কামালের সাথে সুখের সংসার করতে পারে। ইয়েস, দ্বিতীয়বার আর ভাবে না মঈন। ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নেয়।

এদিকে ভ্যালেন্টাইন ডে'ও চলে আসছে। তার আগেই মেয়ে হতে হবে মঈনের। হতে হবে মঈন থেকে আসল ময়না। ফেক আইডিটা তখন হয়ে যাবে রিয়েল।

বিখ্যাত কসমেটিক সার্জন মতিন হক বেশ বয়স্ক মানুষ। প্রায় ষাট ছুই ছুই বয়স। মঈন মেয়ে হতে চায় শুনে তিনি অবাক হন। বলেন, 'দেখুন মঈন সাহেব আপনি নিজেও ডাক্তার। আপনার জানার কথা যেসব পুরুষের দেহটা পুরুষ কিন্তু মনের দিক দিয়ে নারী, শুধুমাত্র তাদেরই অপারেশন করি আমরা। আপনি সুস্থ সবল পুরুষ আপনি এসবে কেন আসলেন?'
'প্রেমের কথা তো আর বলা যায় না। মিথ্যা এক আবেগী গল্প ফাদে মঈন। বলে, আমার স্ত্রী মারা গেছে ছোট্ট দুইটা মেয়ে রেখে৷ তাদের আসলে বাবার চাইতেও মায়ের আদর বেশি দরকার। তাই আমি নিজেই মা হয়ে যেতে চাই।'
- কিন্তু আপনি একটা বিয়ে করলেই তো পারেন।
- নাহ, সৎমা কখনো আপন হয়না। সে আমার মেয়েদের ভালোবাসবে না নিজের সন্তানের মত।
- আপনার ধারণা ভুল। এরকম অনেক নারীই আছে যারা সৎমা কনসেপ্টে বিশ্বাস করে না। তারা মা হতে চায় শুধু।
- আমি বিলিভ করিনা সেটা। তাছাড়া আমি স্ত্রী চাই না, আরেকটা বিয়েও করব না। শুধু ওদের মা চাই।
- আমাকে দুইটা সপ্তাহ টাইম দেন। আমি খুজে দিব। এমন মহিলা খুজে দিব যে আপনাকে বিয়ে না করেই আপনার সন্তানদের মা হবে।
- যদি না পারেন?
- না পারলে তখন আপনার অপারেশন করে দিব। টেনশনের কিছু নাই।
- ঠিক তো?
- অবশ্যই, মাত্র দুই সপ্তাহ নিব আমি। আপনার ঠিকানাটা দিন। কাউকে পেলে যোগাযোগ করব৷

মঈন নিজের কার্ড দেয়৷ বলে এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন।

মঈন বের হওয়ার পর কসমেটিক সার্জন মতিন হক বিষয়টা নিয়ে ভাবেন৷ তার স্ত্রী মারা গেছেন সেই বহুবছর আগে৷ একটা মাত্র সন্তান রেখে গেছিলেন, সেই মেয়েকেও বউ এর মা নিজের কাছে নিয়ে মানুষ করেছে। মেয়ে এখন স্বামীর সাথে অস্ট্রেলিয়া। খুব শখ ছিলো নিজ হাতে ছোট ছোট বাচ্চা মানুষ করবেন। আশা পূরণ হয়নি৷ স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসতেন বলে আরেকটা বিয়ের চিন্তা মাথাতেও আনেননি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। একটা অপারেশন করে বিয়ে ছাড়াই মা হিসাবে দুটো বাচ্চা মানুষ করতে পারেন চাইলে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কি চাওয়ার থাকে মানুষের? হ্যা, ডিসিশন নিয়ে নেন মতিন সাহেব। সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করে হয়ে যাবেন মহিলা। মতিন হক থেকে হবেন মতিয়া বেগম।

এদিকে কামাল আর মঈনের ভার্চুয়াল লাইফে আরেক ঘটনা ঘটে। কামাল সন্দেহ করে মঈনের খোলা ফেইক আইডি ময়না আসলে ছেলে। সে শিওর হতে পারে না, আবার ফেলেও দিতে পারে না।
সে দেখেছে ময়না নামের আইডিটা এমন কিছু পোস্টে কমেন্ট করেছে যেখানে শুধু ছেলেদেরই কমেন্ট করার কথা। যেমন একটা পেইজে গোপন অঙ্গ লম্বা ও শক্ত হওয়ার মালিশ জাপানি তেল বিক্রি করে। সেখানে ময়না কমেন্ট করেছে, 'ইনবক্সে নক দিয়েছি। চেক করেন।

হর্স মার্কা কস্তরি জাপানি তেল দিয়ে কি করবে একটা মেয়ে? ডিমের কোর্মা রান্না করবে?
শুধু এটাই না, আরো আছে। এক পেজের পোস্ট ছিলো কারা রিলেশনশিপে বেশি লয়্যাল হয়? মেয়ে লাভ, ছেলে ওয়াও।
সেখানে ময়না কেন 'ওয়াও' দিবে?

কামাল ময়নাকে জোরাজুরি করে ভ্যালেন্টাইন ডে না, সামনের সপ্তাহেই দেখা করতে হবে। ময়না ওরফে মঈন রাজি হয় না৷ আমতা আমতা করে। যা বোঝার বুঝে ফেলে কামাল। তার সাথে আবারো ধোকা হয়েছে। ময়নাকে ব্লক করে দিয়ে সেদিনই তার আগের ডিসিশনে ফিরে যায়। এক কসমেটিক সার্জনের কাছে গিয়ে অপারেশন করে মেয়ে হয়ে যায়। নিজের নাম রাখে কমলা।

কামাল ব্লক দিয়েছে দেখে মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয় মঈনের। সে অন্য আইডি থেকে কামালকে নক দিবে ভাবে৷ কিন্তু তার আগে মেয়ে হওয়াটা জরুরি। সে তখনই মতিন বাদে আরেক ডাক্তারের কাছে গিয়ে অপারেশন করে ফেলে। হয়ে যায় ময়না।

এদিকে মতিন সাহেব দুই সপ্তাহ টাইম নিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়েট করেন না। পরদিনই ডাক্তারের কাছে গিয়ে অপারেশন করে ফেলেন। হয়ে যান মতিয়া।

কমলা, ময়না, মতিয়া। তিনজন নারী। এই পুরুষশাসিত জালিম সমাজে তাদের আপন বলে কেউ নেই। বড় অসহায় তারা।

কামাল ওরফে কমলা এর মধ্যে সত্যিটা বুঝতে পারে৷ নিজের শরীর স্পর্শ করে কোনো মজাই সে পায় না৷ তার একজন পুরুষের দরকার পড়ে। কিন্তু মেয়ে হওয়ার পর তাকে দেখাচ্ছে হিজড়ার মত। কোনো ছেলেই আর পাত্তা দিবে না। তখনই মনে পড়ে ময়না আইডিটার কথা। সে নিশ্চিত ছিলো ময়না একজন ছেলে। আর ভালোবাসা যেহেতু তাদের মধ্যে ছিলো, তো সেই ছেলেটা তাকে মেনে নিতেও পারে।

ময়নাকে আনব্লক করে নক দেয় কমলা অর্থ্যাৎ কামাল। বলে, 'আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।'
- আমিও দেখা করতে চাই। কালই৷ আমারো তোমাকে কিছু বলার আছে। দেখা করেই বলব।'

কমলা ভাবে ময়না যে ছেলে এই কথাটাই তাকে বলতে চায়। মুচকি হেসে বলে, 'আচ্ছা ঠিক আছে।'

কথা হয় ময়না ওরফে মঈনের বাসায় দেখা করবে ওরা।

এদিকে সার্জন মতিন ওরফে মতিয়া কোনোভাবেই মঈনের পাত্তা পাচ্ছে না। খোজই নাই ছেলেটার। মঈনের দেয়া কার্ডের ঠিকানায় যে চেম্বার সেটা বন্ধ। হতাশ হয়ে পড়ে মতিয়া। তাহলে তার কি মা হয়ে বাচ্চা মানুষ করা হবে না? জীবন তাকে এই সামান্য সুযোগ দেবে না?

সে টাকা দিয়ে একটা গোয়েন্দা লাগায়। গোয়েন্দাকে মঈনের কার্ড দিয়ে বলে এই ছেলের বাসার ঠিকানা আমার চাই। তিন দিনের মধ্যে।

তিনদিন লাগে না। মাত্র একদিনেই ঠিকানা এনে দেয় গোয়েন্দা।

পরদিন, বিকাল চারটা।

সেজেগুজে কামালের জন্য অপেক্ষা করছে ময়না। কলিং বেল বাজে। ডোর হোল দিয়ে চেয়ে দেখে দুই রমনি দাঁড়িয়ে আছে। একজনের বয়স ষাটের কাছে। পরনে হালকা নীল শাড়ি। আরেকজন সাতাশ আটাশ বছরের হবে সর্বোচ্চ। গোলাপি সালওয়ার কামিজ পরা।

সে আস্তে আস্তে দরজা খোলে....!

(গল্প শেষ, এই গল্পের কোনো দ্বিতীয় পর্ব নেই)
লেখা: সোহাইল রহমান
নন-ভার্জিন বউ বিয়ের কান্ড!

নন-ভার্জিন বউ বিয়ের কান্ড!


পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটা হলো, বিয়ের আগে মেয়ে ভার্জিন নাকি নন ভার্জিন এটা খুজে বের করা। আমার বন্ধু পলাশ এই জিনিসটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
.
এটুকু পড়েই আমার লিস্টের নারীবাদী বন্ধুরা ক্ষেপে যাবেন না প্লিজ। বাংলাদেশের আর দশটা পুরুষের মতন পলাশ বিয়ের জন্য ভার্জিন মেয়ে খুজতে নামেনাই। তার উদ্দেশ্য আলাদা। সে খুজছে পিওর একজন নন-ভার্জিন মেয়ে। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। পলাশ নিজে ভার্জিন। সেক্স বিষয়ে তার জ্ঞান ক্রিকেট বিষয়ে সাব্বির রহমানের জ্ঞানের কাছাকাছি। এখন মেয়ের যদি আগে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে পলাশকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারবে। তাছাড়া পলাশের মন অত্যন্ত নরম৷ মেয়ে ভার্জিন হলে বাসর রাতে অনেক ব্যাথা পাবে৷ পলাশ চায় না তার জন্য কোনো মেয়ে একটুও কষ্ট পাক।

তবে এগুলো সবই ঐচ্ছিক কারণ। প্রধান কারণ যেটা সেটা হলো, পলাশের হার্ট দূর্বল। সে রক্ত দেখতে পারে না। রক্ত দেখলেই তার ভীষণ মাথা ঘুরে৷ অজ্ঞানও হয়ে যায় কখনো কখনো। এখন পলাশ শুনেছে মেয়ে ভার্জিন হলে নাকি রক্ত বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন বাসর রাতে ঐ মুহুর্তে বর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কেমন না? পলাশ এই রিস্ক নিতে চায় না বলেই খুজছে এমন একজন মেয়ে, যে ভার্জিন না। তাছাড়া পলাশ অনেক ফ্রি মাইন্ডের। মেয়ে পাস্টে কি কি করেছে এসব নিয়ে একফোঁটাও মাথাব্যথা নাই তার। সে মনে করে মেয়েদের ভার্জিনিটি তার মনে, শরীরে না। পলাশের শুধু নন ভার্জিন মেয়ে হলেই চলবে।
.
প্রস্তাবনা শেষ, এবার মেয়ে দেখার পালা। দুই ফ্যামিলি সামনাসামনি বসা। সব কথাবার্তা শেষের পথে। পলাশ হাত উচু করলো। বললো, 'আমার একটা জিনিস জানার আছে।'
মেয়ের পিতা খুব আগ্রহী, 'অবশ্যই বাবা, অবশ্যই। কি জানতে চাও বলো।'
পলাশ আস্তে করে বললো, 'ইয়ে মানে আপনাদের মেয়ে কি ভার্জিন?'
.
মুহুর্তে মেয়ের বাপের চেহারা চেঞ্জ হয়ে গেল। প্রচন্ড রাগে কাপছেন। মুখ লাল হয়ে গেছে। চিৎকার দিয়ে বললেন, 'কি বললে এটা তুমি? কি বললে? আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করো তুমি? আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে? তুমি জানো আমরা কোন বংশ? আমার বাপ মোল্লা হাফিজুর রহমানের নাম শুনলে এখনো লোকে মাথা উচু করে কথা বলে না। আশি সালে পরপর দুইবার হজ্ব করে এসেছেন। তুমি সেই মোল্লাবাড়ির মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলো। তোমার সাহস কতবড়!'
পলাশ আমতা আমতা করে বললো, 'আমি তো আপনার বাবা মোল্লা হাফিজুর রহমান ভার্জিন কিনা জানতে চাইনি৷ উনি দুইবার হজ্ব করে আসলে সেটা উনার ব্যাপার। এর সাথে আপনার মেয়ে ভার্জিন হওয়া না হওয়ার কি সম্পর্ক সেটা তো বুঝলাম না। আপনার মেয়েকে ডাকুন। জিজ্ঞেস করে দেখি।'
.
তো স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার কথা ছিলো তাই হলো। কনেপক্ষ মেরে পলাশের মাথা ফাটিয়ে দিলো। দুইসপ্তাহ ফুল বেড রেস্ট।
.
দুই সপ্তাহ পর আবার নতুন মেয়ে দেখতে যাওয়া। এবার পলাশ আর আগের ভুল করেনি। মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলার জন্য পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সবাই বাইরে বসে আছি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন ওরা বের হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমের ভেতর থেকে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড়ের শব্দ হলো। দরজা খুলে পলাশ বের হয়ে আসলো মুখ ডলতে ডলতে। আহারে, বেচারা!
.
আরেকদিনের ঘটনা। মেয়ের নাম মুনিয়া৷ এইদিন রেস্টুরেন্টে মিট। বাসায় গেলে মাইর খেতে হয় বলে পলাশ রেস্টুরেন্ট বেছে নিয়েছে।
কথাবার্তার পর মুনিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, 'আচ্ছা আপনি কি ভার্জিন?'
মুনিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'ঐ ভিডিও এডিট করা।'
পলাশ অবাক হলো, 'মানে?'
- মানে জিসান আপনাকে কি বলেছে?
- জিসান কে?
- আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড। ও আপনাকে কি দেখিয়েছে সেটা বলেন।
- আমার কোনো জিসানের সাথে কখনো কথাই হয়নি, কিভাবে কি দেখাবে?
- তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেন যে আমি ভার্জিন কিনা?
- এটা তো এমনিই। বলেন না ভার্জিন কিনা আপনি।
মুনিয়া চোখমুখ শক্ত করে বললো, 'অবশ্যই আমি ভার্জিন। কোনো ছেলে কখনো আমার হাতও ধরেনি। কখনো প্রেমও করিনি আমি।'
- কিন্তু আপনি মাত্রই বললেন, জিসান আপনার এক্স।
- আরে ধুর, আমার পেছনে ঘুরতো। আমি কখনো পাত্তাই দেইনি।
- তাহলে আপনি ভার্জিন?
- হ্যা, হান্ড্রেড পার্সেন্ট।

মন খারাপ করে চলে এসেছে পলাশ। আমার কাছে দুঃখ করে বলতেছে, 'দেশটার কি যে হয়ে গেল দোস্ত। সব মেয়েই দেখি ভার্জিন।'

শেষমেশ একটা ভালো সম্বন্ধ খুজে আনলাম পলাশের জন্য। মেয়ে ডিভোর্সি। বিয়ের তিনমাসের মাথায় ডিভোর্স হয়। ছেলের আরেকটা সম্পর্ক আছে সেটা হঠ্যাৎ একদিন জেনে ফেলে মেয়েটা।
পলাশ খুব খুশি। তিনমাস সংসার যখন করেছে, নির্ঘাত আর ভার্জিন না।
কিন্তু পলাশের সে আশায় গুড়েবালি। মিট করে এসে হতাশ গলায় বললো, 'ঐ মেয়েও ভার্জিন রে।'
- কি বলিস? কে বললো?
- মেয়ে নিজেই বললো। বিয়ের পর নাকি বরকে কাছেই আসতে দেয়নি কখনো। হাতটা পর্যন্তও ধরতে দেয়নি।'
.
এরকম আরো কিছু মেয়ে দেখা হলো৷ কয়েকজায়গা আমরা খেলাম মাইর৷ কয়েক জায়গায় গালি। তবে সবখানেই একই ব্যাপার। মেয়ে ভার্জিন। এখন পর্যন্ত কোনো মেয়েই পলাশকে বলেনি যে সে ভার্জিন না। আর পলাশটাও গাধা। সে মেয়ের মুখে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। আমরা বুঝাইলেও বুঝে না।
.
ফাইনালি আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, আমার কাছে একটা ননভার্জিন মেয়ের খোজ আছে। প্রস্তাব পাঠিয়ে দেখ।
পলাশ খুশি হওয়ার সাথে সাথে অবাকও। বললো, 'তুই কিভাবে বুঝলি যে মেয়ে ভার্জিন না।'
- আরে আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।
- তো? তুই কি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেছিস সে ভার্জিন কিনা?
- আরে গাধা, জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আমি জানি।
- তুই কি সবজান্তা? মানুষের মনের খবর জেনে বসে আছিস?
- আরে ধুর, ওরে নিয়ে লিটনের ফ্লাটে গেছি কয়েকবার।
- তো? লিটনের ফ্লাটে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিস, সে ভার্জিন কিনা?
- না জিজ্ঞেস করিনি। অন্যকিছু করেছি।
পলাশ চোখমুখ শক্ত করে বললো, 'অন্যকিছু করলে হবে? জিজ্ঞেস করে দেখা উচিত ছিলো। আমি বুঝেছি তুই কি কি করেছিস, কিন্তু ওসব কাজে দেয় না।'
- মানে? কি করেছি আমি?
- ঐ যে ইউসি ব্রাউজারে নিউজ দেয়, যে দশটি লক্ষণে বুঝবেন মেয়ে ভার্জিন কিনা। ঐ লক্ষনগুলো মিলায় দেখছিস তো? ওসব নিউজ ভুয়া। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাবে না কখনোই এসব। একটাই উপায়, মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে সরাসরি।

তো পলাশ গেছিলো জিজ্ঞেস করতে। ফিরে এসে বললো, 'না রে দোস্ত, তোর এক্স গার্লফ্রেন্ডও ভার্জিন।'
আমি হাসলাম, 'তোকে মিথ্যা বলেছে।'
- উহু, শুধু শুধু একজন মিথ্যা কেন বলবে? সত্যিই বলেছে। বলেছে তোকে কোনোদিন হাতটাও ধরতে দেয়নি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, খুবই ভালো।
পলাশ আস্তে করে বললো, 'অন্য কিছু নাহয় বুঝলাম, কিন্তু হাতটাও ধরতে দেয় না কেন কেউ। হাত ধরলে কি সমস্যা?'
.
তো ফাইনালি পলাশ তার মনের মত মেয়ে পেয়েছে। সেই কাহিনী বলি। যে মেয়েকে দেখতে গেছিলো, সে নারীবাদী টাইপ।
পলাশ জিজ্ঞেস করেছে, 'আপনি কি ভার্জিন?'
মেয়ে রেগে গেছে। বলেছে, 'যদি ভার্জিন না হই, তো?'
- তো কি। কিছুনা।
- জানি তো। আপনাদের মত ফালতু পুরুষ আমার চেনা আছে।
পলাশ রিকুয়েস্ট করলো, 'প্লিজ বলেন না। আপনি ভার্জিন কিনা।'
মেয়ে আরো রেগে গেলো। রেগেমেগে বললো, 'আচ্ছা যান আমি ভার্জিন না। তো? এখন? আমাকে বিয়ে করবেন না, তাইনা?'
পলাশ খুশিতে হেসে ফেললো, 'কেন করব না? অবশ্যই করব।'
- আমি ভার্জিন না, তাতে আপনার কোনো সমস্যা নাই?
- উহু, অবশ্যই না। আমার কোনো সমস্যা নাই।

তো নারীবাদী মেয়েটা শুরুতে ভেবেছিলো, পলাশকে না করে দিবে। কিন্তু কথোপকথনের এই পর্যায়ে পুরোপুরি ইমপ্রেস হয়ে গেল। বাংলাদেশে কয়টা ছেলে আছে যে, নন-ভার্জিন মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হবে? এতো উদারও কোনো ছেলে হয়? বাহ!

বিয়েতে হ্যা বলে দিলো মেয়েটা। হ্যা বললো পলাশও। ধুমধাম করে বিয়ে হলো। আমরা খুব আনন্দ করলাম।

সব অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত। বাসায় এসে মাত্র ঘুমাইছি। এমন সময় ফোন বাজলো। রিসিভ করে খবর পেলাম, ঘটনা ঘটে গেছে। পলাশ অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে।

দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছে। আমার দিকে চেয়ে ক্লান্ত হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে বললো, 'তুই ঠিকই বলেছিলি দোস্ত। মেয়েরা আসলেই মিথ্যুক হয়।'
- মানে কি?
- মানে তোর ভাবী ভার্জিন ছিলো। আমার উপরে রেগে গিয়ে বলেছে ভার্জিন না।

আমি বাসায় চলে আসতেছি। পলাশের সিরিয়াস কিছু না। স্যালাইন ধরানো হয়েছে। সকালে ফিরতে পারবে বাসায়। নতুন বউ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে বেডের পাশে। পলাশের চোখেমুখে দুঃখ আর হতাশার চিহ্ন।
.
বউ ভার্জিন এই খবরে এতো হতাশ এই পৃথিবীতে কোনো পুরুষ সম্ভবত কখনোই হয়নি! আহারে, বেচারা!
সাড়ে তিন কোটি বছর বয়সের মানুষ!

সাড়ে তিন কোটি বছর বয়সের মানুষ!


রায়হান আছে বিরাট ঝামেলায়। যখন ইয়াং ছিলো তখন বার্থডে আসলে সবাই উইশ করতো, 'ভাই হাজার বছর বেঁচে থাকেন।'

তো কিভাবে কিভাবে জানি কথা লেগে গেছে। ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন, ছোটভাই বড়ভাই সব মরে ভূত কিন্তু রায়হান আর মরে না। দেড়শো বছর পার করে ফেলার পর সে প্রথম রিয়েলাইজ করলো, এইটা তো বিরাট ঝামেলা। নিজের ছোট ছেলে বুড়ো হয়ে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেলো সেদিন অথচ রায়হান বিন্দাস আছে। নাতি নাতনির বয়সও পঞ্চাশ পার করে ফেলেছে এদিকে তার মরার খবর নাই। সবাই এমনভাবে লুক দেয় যেন সে প্রতারণা করতেছে। স্বার্থপরের মত বেঁচে আছে। দুইশো বছর হওয়ার পর রাইহানকে নিয়ে কিছুদিন টিভি আর পত্রিকায় খুব তোলপাড় হলো। নিউজ টিউজ আসলো। মোটামুটি একটা সেলিব্রেটি টাইপ ভাব৷ তারপর আস্তে আস্তে সেটাও থেমে গেলো। এখন আর পরিচিত কয়জন ছাড়া বাকি কোনো লোক বিশ্বাস করে না। বলে, 'ধুর, ফাপর দিও না। দেইখাই বোঝা যায় বয়স হবে সর্বোচ্চ আশি একাশি। আসছে দুইশো বছরের গল্প নিয়ে।'
যারা এরকম বলে তারাও একসময় পটাপট মরে গেলো। রায়হান তখনো দাত দিয়ে আখ ভেঙ্গে খায়। নাতিপুতির ছেলেরা তাকে সেভাবে দেখতে পারে না৷ তার মরার জন্য সবাই ওয়েট করে থাকে। সে এখন ঠিক কোন নাতির ছেলের ছেলের ঘরে থাকে, তার অতো হিসাবও নাই। তবে যাদের বাড়িই থাকুক না কেন, তারা প্রতিটা দিন রায়হানের মরার জন্য দিন গোণে।

বাড়ির বউ এসে ডেইলি ডেইলি জিজ্ঞেস করে, 'আব্বা, শরীরটা কেমন আজকে? কিছু কি বুঝতেছেন? একটু খারাপ কি লাগে? বুকে ব্যাথা বা শ্বাসকষ্ট এই টাইপ কিছু হয় নাকি!'

রায়হানের কিচ্ছু হয় না, তারপরও তাদেরকে খুশি করার জন্য বলে, 'হ, আজকে একটু শরীরের মধ্যে কেমন কেমন যেন লাগতেছে। মনে হচ্ছে আর বেশিদিন বাঁচবো না।'

অতি সন্তর্পনে বাড়ির মানুষের মুখে হাসি ফুটতে দেখে সে। পাশের রুম থেকে কথা শোনে, 'ওগো খবর শুনছো, গুড নিউজ। বুড়ো এইবার মনে হয় যাবে।'

কিন্তু রায়হান কোথাও যায় না। নাতির ছেলের ছেলে আর তার বউ টুক টুক করে মরে যায়। রায়হান তখনো চশমা ছাড়া পত্রিকা পড়ে খালি চোখে৷ বয়স এখন কত হবে? তিনশো ছাড়ায়ে যাওয়ার কথা৷ গোনে না রায়হান। কতগুলো পুরুষ পার হলো সেটাও আর গোনে না। লাইফটা তার কাছে বড়ই রসকষহীন হয়ে গেছে। আর বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না। শুধুমাত্র মহাপাপ বলেই এখনো সুইসাইড করছে না রায়হান।
.
নাতির নাতিপুতিরা রায়হানকে মারার জন্য সরাসরি কিছু না করলেও পরোক্ষভাবে অনেক চেষ্টা করলো। মাহফুজুর রহমানের গান শুনালো, কেকা ফেরদৌসির রেসিপি খাওয়ালো, কান হেলালের ভিডিও আর হিরো আলমের সিনেমা দেখালো। রাবা খানের বই পড়ালো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না৷ সবকিছু পরাস্ত করে সে বেঁচে রইলো।
.
তার আশেপাশের দুনিয়ায় কতকিছু চেঞ্জ হয়ে গেছে এর মধ্যেই। তাদের জামানায় ফেসবুক ছিলো, এখন আর সেসব চলে না। জাদুঘরে গেলে দেখে আসা যায়। পরে ব্রেইনবুক বলে একটা জিনিস আসছিলো। সবাই সবার ব্রেইনের সাথে কানেক্ট হয়ে কথাবার্তা বলতে পারতো মনে মনেই। সেটাও আস্তে আস্তে ব্যাকডেটেড হয়ে গেল। মানুষের চাইতে দুনিয়ায় রোবট কাজকর্ম করে বেশি। তবে কোনটা মানুষ আর কোনটা রোবট তা বের করা যায় না সহজে। রায়হান এককালে সিনেমার খুব ভক্ত ছিলো, তাদের সময় শাহরুখ, সালমান, জনি ডেপ, টম ক্রুজ বলে কত নায়ক ছিলো। সব বহু আগেই মারা গেছে। তারপর নায়কের কত জেনারেশন চলে গেলো। রায়হান নিজেকে এইসব বাচ্চা নায়কদের সাথে ঠিক মিলাতে পারে না। তার খুবই অস্বস্তি হয়। সিনেমা দেখাও বাদ দিয়ে দিয়েছে সেইজন্য। তবে রায়হান একটা জিনিসে খুব মজা পায়। এককালে এই দেশে যারা ক্ষমতায় ছিলো, ক্ষমতায় থাকার জন্য পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলতো, তাদের আজ নামও কেউ জানে না। বহু আগেই সবাই ধুয়েমুছে গেছে। কই গেছে কে জানে! স্বর্গ নরক কিছু থাকলে তাদের নরকেই যাওয়ার কথা। মানুষের অভিশাপ তো আর কম লাগেনাই। চিন্তা করতেই অন্যরকম এক তৃপ্তি আসে তার।
.
এখন রায়হান যাদের সাথে থাকছে, তারা রায়হানকে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে৷ ডাক্তার জিজ্ঞেস করে, সমস্যা কি?
তারা কিছুই বলতে পারে না। বলে, 'বডি চেকাপ করাইতে নিয়ে আসছি। একটু দেখেটেখে বলেন কি অবস্থা। মরবে কবে।'
ডাক্তার সব চেক করে বলে, 'আপনার বাবা তো খুব সুস্থ আছে। কোনো সমস্যা নাই।'
তারা মুখ বাকিয়ে বলে, 'আমার বাবা না ইনি।'
ডাক্তার হাসে, তাহলে আপনার দাদা। ইনার শরীর আলহামদুলিল্লাহ অসাধারণ এই বয়সেও।'
তারা আরো বিরক্ত হয়, আমার দাদাও না।
.
তাদের শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। হার্ট প্রবলেম, হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস। অথচ রায়হান এখনো লিফট ছাড়া ছয় তলা হেটে হেটে উঠে পড়ে সিড়ি ভেঙে।
.
রায়হানের বয়সের খবর মিডিয়া এখন জানলে সারাবিশ্বে একটা তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যাবে৷ বিজ্ঞানীরা বিরাট অবাক হবে৷ কিন্তু কেন যেন সে যেই নাতির ঘরের নাতির নাতিপুতিদের সাথে থাকে, তারা পুরো বিষয়টা গোপন করে রেখেছে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে, বয়স আর কত হবে৷ এই নব্বই পচানব্বই। তারা খুব হিংসায় জ্বলেপুড়ে মরে। তারা চায় না বিশ্বের লোকজন রায়হানকে নিয়ে আগ্রহী হয়ে যাক। রায়হান একা একটা ঘরে সারাদিন থাকে। সকাল আর বিকাল একটু বাসার পাশের গার্ডেনে হাটতে বের হয়৷ এককালে যারা তার সামনে হাফপ্যান্ট পরে দৌড়াদৌড়ি করতো, হাসতো খেলতো, আজ তারা বয়সের ভারে কুজো হয়ে গম্ভীর মুখে পার্কের বেঞ্চে বসে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করে। একটু বেশি হাটলেই তাদের বুকে চাপা ব্যাথা শুরু হয়। ঘন ঘন নিশ্বাস পড়ে। অথচ রায়হান এখনো পুরো পার্কে তিন চক্কর দিয়ে এসে ক্লান্ত হয় না।
.
আরো দুইশো বছর যাওয়ার পর দেশ থেকে বিয়েশাদি উঠে গেলো৷ জনসংখ্যা সমস্যার কারণে সরকারিভাবে বাচ্চা নেয়া নিষিদ্ধ করা হলো। সুতরাং সে যেই বাসায় থাকতো তারা মরে যাওয়ার পর রায়হানের আর কোনো আত্মীয় বেঁচে থাকলো না। সে একা একা বের হয়ে পড়লো দুনিয়া ভ্রমনে৷ বিভিন্ন শহরে যায়, ছোটোখাটো কাজ করে নিজের খরচ নিজেই চালায়। এটা একদিক দিয়ে ভালো হইছে তার জন্য৷ কবে মরবে, সেই প্রশ্ন করার আর কেউ নেই।
.
এক হাজার বছর পার হয়ে গেলো কিন্তু রায়হানের কিছুই হলো না। মানুষ নিজেদের মধ্যে মারামারি করে, প্রকৃতির উপর অত্যাচার করে করে আস্তে আস্তে ধ্বংস হওয়া শুরু করলো। শহরের পর শহর উজাড় হতে থাকলো। কখনো কঠিন কোনো রোগ আসে যার কোনো চিকিৎসা নাই, কখনো বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একবারে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু যথারীতি বেঁচে থাকে রায়হান।
.
আরো দুইতিন হাজার বছর পর পৃথিবীর সভ্যতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলো। মানুষ আবার আদীম যুগে ফিরে গেলো। বন জঙ্গলে থাকে আর শিকার করে খায়। তখন মানুষ মারা যেতে থাকলো বিভিন্ন পশুর আক্রমনে। কিন্তু মরলো না রায়হান।
.
আরো পঞ্চাশ বছর পর সভ্যতা আবারো ঠিকঠাক হলো। গুহা ছেড়ে মানুষ নিজেদের জন্য ঘর বানালো। হিংস্র পশুদের মারার জন্য অস্ত্র বানালো। রায়হান তাদের সাথেই আছে। এর মধ্যে তাকে দুইবার বিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন বাচ্চাকাচ্চাও হয়েছে তার। নিজের ভেতরের এনার্জি দেখে সে নিজে যেমন অবাক, তেমনি তার থেকে দুই লাখ বছরের ছোট বউদুজনও অবাক।
.
এভাবেই কেটে গেলো আরো কয়েক লাখ বছর৷ তারপর এক শুভ দিন দেখে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে গেলো। সারা পৃথিবী ভেঙেচুরে গুড়াগুড়া। সব উল্টেপাল্টে গেলো। জীবিত সমস্ত প্রাণী মারা গেলো। কিন্তু রায়হানের কিছুই হলো না। সে একা একা বেঁচে রইলো।
.
ওদিকে বিচারকার্য শুরু হলো৷ সব মানুষ তাদের কর্মফল অনুযায়ী প্রাপ্য পেলো। কেউ স্বর্গে গেলো, কেউবা নরকে৷ একা একা রায়হান দুনিয়ায় ঘুরতে লাগলো। সে মরেনাই জন্য বিচারের আওতার বাইরে থাকলো। স্বর্গেও তারে ঢুকতে দেয় না, নরকেও যায়তে দেয় না। কোথাও জায়গা না পেয়ে সে বিরক্ত হয়ে সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিলো৷
.
একটা কাচের টুকরা জোগাড় করে কবজির রগ কেটে দিলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলো৷ শরীর আস্তে আস্তে দূর্বল হওয়া শুরু করলো। শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। মৃত্যুভয় ঢুকলো রায়হানের মনে। সে দ্রুত একটা কাপড় এনে ক্ষতস্থান বেধে রক্ত বন্ধ করে ফেললো।
'নাহ এতো দ্রুত মরা যাবে না। আরো কিছুদিন বাঁচতে হবে। তাছাড়া তার কিই বা এমন বয়স হয়েছে। সাড়ে তিন কোটি বছরের বেশি তো আর না!'

লেখা: সোহাইল রহমান
ফেক আইডির প্রেম

ফেক আইডির প্রেম


আমার জানামতে প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে ফেসবুক কখনো কাউকে নিরাশ করে না। একটু চেষ্টা করলেই ফেসবুক থেকে একটা না একটা প্রেমিকা সবাই ই পেয়ে যায়। একটু ধুরন্ধর হইলে চার পাঁচটাও পাওয়া যায়৷ লেগুনার হেল্পার থেকে বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার, রাজমিস্ত্রীর সহকারী থেকে বিসিএস ক্যাডার, এই জায়গায় সবার জন্যই প্রেমিকা আছে। এখনো যদি আপনি ফেসবুকে কোনো প্রেমিকা না পেয়ে থাকেন, তো হয় আপনি ভার্চুয়ালি প্রেম করতে চান না, নাহয় আপনি ফেরেশতা লেভেলের ভালো মানুষ। আমি এই ফেসবুক থেকেই এমন এমন মানুষকে একাধিক প্রেম করতে দেখেছি, বাস্তবে যারা হিরো আলম থেকেও বেশি অশিক্ষিত, কান হেলাল থেকেও বেশি গাঞ্জাখোর। আমাদের এলাকায় সেলুনের নাপিত একদিন চুল কাটতে কাটতে বলতেছে, 'মামা হেবি সুন্দরী এক মাইয়ার সাথে প্রেম করতেছি৷'
মেয়ের ছবি দেখাইলো। সুন্দর আছে, বাট দেখেই বোঝা যায় অতিমাত্রায় এডিট করা।
জিজ্ঞেস করলাম, 'এতো সুন্দর মাইয়া পটাইলা ক্যামনে?'
বললো, 'হে হে মামা, একটু বুদ্ধি থাকলে সবই হয়। আমি নাপিত সেইটা তো আর বলিনাই। বলছি আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্চিটির টিচার।'
অসাধারণ। কিন্তু আমি ভাবতেছি এমন কোন অশিক্ষিত মাইয়া যে নাপিতের সাথে দীর্ঘদিন কথা বলেও টের পায়নাই যে সে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির টিচার হতেই পারে না।
জিজ্ঞেস করলাম, 'মেয়ে কি করে?'
যা ভাবছিলাম তাই। মেয়েও কম না। সে মেডিকেল ভার্চিটির টিচার।

কি সুন্দরভাবে আল্লাহ দুই 'ভার্চিটির' টিচারকে ফেসবুকের মাধ্যমে মিলায় দিছে। মাশাল্লাহ।

এলাকার আরেক পোলা আছে, সিরিয়াস লেভেলের গাঞ্জাখোর। খুব সম্ভবত ভাত তার তৃতীয় প্রধান খাদ্য। প্রথম দুইটা হলো গাজা আর ইয়াবা। একদিন আমার কাছে আসছে ফেসবুক ঠিক করাইতে। এলাকার সবার ধারণা আমি এই বিষয়ে খুব ভালো বুঝি। তো ঐ পোলার ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখি প্রথম তিনজনের নিকনেম যথাক্রমে, জানপাখি, ময়নাপাখি, সোনাপাখি।
জিজ্ঞেস করলাম, পাখির বিজনেস শুরু করলি কবে থেইকা।
লাজুক হেসে বললো, ভাই যে কি কন না। এরা আপনার ভাবী। আমাদের ধর্মে চার বিয়ে জায়েজ, তিন পাখি না।
তো সে কথায় কথায় বললো, সব পাখিই ফেসবুকের মাধ্যমে পাওয়া।
আমি জিগাইলাম, এতো পাখি কই পাওয়া যায়৷ আমি তো পাই না।
পোলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ভাই এইগুলা কোনো ব্যাপার না। আপনার জন্য তো আরো সহজ। খালি আমি যা যা বলব তাই তাই করবেন।
- কি কি করব?
- একটা আইডি খুলে নাম দেবেন এলোন বয় সোহাইল। ডিএসএলার দিয়ে ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেবেন। এবাউটে লিখবেন ওয়ার্কস এট বাপের হোটেলে খাই মায়ের হোটেলে ঘুমাই, রাইটার এট রেডিও মুন্না, হ্যাকার এট ফেসবুক, ম্যানেজার এট টো টো কোম্পানি, বস এট ভিআইপি একাউন্ট।
- এতেই কাজ হবে?
- শুরুতে হবে না, কিন্তু মেলা ফ্রেন্ড এড করবেন এক্টিভ লাইকার দেখে। তারপর যখনই আপনি প্রোফাইল পিকচারে দুইশো মত লাইক পাবেন তখনই মেয়ে পটাতে পারবেন। একশো মত মেয়েরে মেসেজ দিবেন, আমার তোমাকে অনেক ভালো লাগে। আমরা কি বন্দু হতে পারি?
একশোজনের মধ্যে যদি দশজনও রিপ্লাই দেয় তো আপনার কাজ শেষ।
- কিন্তু আমি তো 'বন্দু' চাইনি। পাখি চাইছি।
- আরে ভাই বন্দু হতে চাওয়া তো টোপ। একবার বন্দু হতে রাজি হলেই এক সপ্তাহ চ্যাট করে প্রপোজ করে দিবেন। দশজনের অন্তত একজন রাজি হবেই।

ফেসবুকে মেয়ে পটানোর এতো অসাধারণ টিপস পেয়ে আমি ধন্য। সময়ের অভাবে খালি এলোন বয় সোহাইল আইডিটা খুলতে পারতেছিনা। সিঙ্গেল থাকার দিন শেষ। একবার আইডিটা খুলতে পারলেই কাটাবনের থেকে বড় পাখির দোকান বসাবো মেসেঞ্জারে।

তবে এখন আমার এই আইডির কথা বলি। আপনারা ভাবেন আমার মেলা ফলোয়ার এজন্য মেয়েরা প্রেম করার জন্য এক পায়ে রাজি। আসল কাহিনী শুনেন।
আগে যখন আমার এক হাজার ফলোয়ার ছিলো তখন কোনো মেয়ে আমার কোনো গল্পে কমেন্ট করলে তাকে রিকুয়েস্ট দিতাম সাথে সাথে। মেয়ে একসেপ্ট করত না। আর এখন আমার ফলোয়ার সত্তর হাজার প্লাস। আমার পোস্টে কোনো মেয়ে কমেন্ট করলে আমি তাকে রিকুয়েস্ট দিলে কি করে জানেন?
- কি করে? একসেপ্ট করে?
- উহু, স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট দেয়, 'এতো ফলোয়ার হওয়ার পরও হালার লুচ্চামি যায়নাই। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই রিকুয়েস্ট দেয়!' 

লাস্ট একটা কাহিনী দিয়ে স্ট্যাটাস শেষ করি। সত্যি কাহিনী।

সেদিন গভীর রাতে ফ্রেন্ডলিস্টের এক ক্লোজ ছোটো বোন আমারে মেসেজ দিয়ে বলে, 'স্যরি ভাইয়া।'
আমি তো অবাক, স্যরি কেন হঠ্যাৎ?
মেয়ে বললো, 'আসলে আপনাকে একটা সিক্রেট বলি। আপনি দুই মাস আগে ফোনে যে মেয়ের সাথে কথা বলতেন সেই মেয়ে আমি ছিলাম!'
- ওএমজি, কি বলো? কোন মেয়ে?
- ঐ যে মেডিকেল পড়ুয়া। ফাবিহা ইসলাম। ঐটা আমি ছিলাম। মানে আমার ফেইক আইডি!
- ওহ শিট, ঐ আইডির ছবি কার ছিলো?
- আমার বড় আপুর এক ফ্রেন্ডের।
- তো এতোদিন পর এখন এটা কেন বলছো?
- এমনিই। আপনার একটা পোস্ট পড়তেছিলাম হঠ্যাৎ করে মনে হলো লুকিয়ে না রেখে বলেই ফেলি। মনে আছে আমাদের রিলেশন হতে গিয়েও হয়নি? আপনার জন্যই। একদিন সারারাত ফোন ওয়েটিং পাওয়াতে রেগে গিয়ে আপনি যদি ব্লক না দিতেন তাহলে হয়তো আজ আমরা বিএফ জিএফ থাকতাম।
- যাক সেদিন ব্লক দিছিলাম ভালো হইছিলো। বাঁইচা গেছিলাম। নাইলে অন্য একজনকে ভেবে একটা ফেইক আইডির সাথে রিলেশন করে ফেলতাম।
- হুম। এই যে এখন বলে দিলাম আপনি কি রাগ করলেন?
- একটু তো করেছিই। কাজটা তুমি ঠিক করোনি। কয়দিন আগে জানলেও এভাবে ধোকা দেয়ার জন্য আমি তোমাকে ব্লক দিতাম। বাট এখন আর ওসব ভাবিনা। নতুন প্রেমিকা হইছে আমার। আমি ওকে নিয়েই হ্যাপি।
- তাই নাকি? কনগ্রাচুলেশনস। নাম কি আপুর?
- ওর নাম রোজ। আর হ্যা, আমাদের মধ্যে যা হইছিলো আমি ভুলে গেছি তুমিও ভুলে যাও। রোজ যেন না জানতে পারে। তাইলে আমি শেষ! ওকে?

মেয়েটা অনেক্ষন চুপ করে থেকে বললো, 'ইয়ে মানে ভাইয়া রোজ আপু জানলেও আসলে সমস্যা হবে না।
- মানে কি? কেন?
- কারন ঐটাও আমারই আরেকটা ফেক আইডি!

লেখা: সোহাইল রহমান
যেমন কর্ম তেমন ফল

যেমন কর্ম তেমন ফল


রাজিবের সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকেই। সে আমার ফ্রেন্ড মৌমিতাকে রাত দেড়টায় সময় মেসেজ দিছে, 'সেন্ড মি ন্যুডস।' আমার উচিত ছিলো রাজিবকে জাস্ট বাসায় গিয়ে মেরে আসা। অথবা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অন্তত একটা কেস করে দেয়া৷ ন্যুনতম স্ক্রিনশট নিয়ে রাজিবের বিরুদ্ধে একটা পোস্ট দেয়া তো অবশ্যই উচিত ছিলো। কিন্তু তার বদলে রাজিব আমার মোটামুটি বেস্টফ্রেন্ড হয়ে গেছে। এর কারণটা খুবই সিম্পল। রাজিব মৌমিতাকে যে মেসেজ রাত দেড়টার সময় দিছে, সেম মেসেজ আমি মৌমিতাকে দিছি ঐদিনই রাত সাড়ে বারোটায়। মৌমিতা আমাদের দুজনকেই ব্লক করে দিছে। যেহেতু আমি আর রাজিব সেম মেয়ের কাছে ন্যুড চাইছি, সেহেতু আমরা আসলে একে অন্যের ন্যুডতুতো ভাই। অথবা একই মেয়ের কাছে ব্লক খাওয়ার সুবাদে আমি আর রাজিব একে অপরের ব্লকতুতো ভাইও হই।

রাজিব আর আমি বেস্টফ্রেন্ড হয়ে যাওয়ার পর আসল কাহিনী শুরু। রাজিবের ছিলো বুদ্ধি, আমার ছিলো সাহস। আমরা ফেসবুকে শুরু করলাম মিশন ন্যুডস। মেয়েদের কাছে ন্যুডস চাওয়ার এতো এতো তরিকা আমি আর রাজিব মিলে বের করেছিলাম যে, সবগুলো একজায়গা করে একটা বেস্টসেলার বই বের করে ফেলা যেত বইমেলায়। বইএর নাম হতো, 'সহীহ ন্যুডস আহবান' অথবা 'ন্যুডস চাওয়ার একশো উপায়।'

যেসব মেয়ের ফেসবুক সম্পর্কে ধারণা কম ছিলো তাদের আমরা বিশাল এক মেসেজ দিতাম। মেসেজটা ছিলো এরকম, 'হ্যালো সম্মানিত ফেসবুক ইউজার। ফেসবুকের ফাউন্ডার এবং সিইও মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি রিয়েল আইডিগুলো সনাক্ত করার উদ্দেশ্যে একটা অভিনব পন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি ঘোষণা করেছেন মানুষের শুধু ওপরটা দেখে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভেতরটাও দেখবেন। সেজন্য এই মেসেজ বিশ্বের ২৪৪ টি ভাষায় অনুবাদ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন মেসেজটা পাওয়ার সাথে আপনার একটা কাপড় ছাড়া ন্যুড ছবি দ্রুত মেসেজের রিপ্লাইতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য৷ (মুখ, বুক থেকে পেট পর্যন্ত একসাথে) ছবি পাঠানোর মাত্র পঁনেরো মিনিটের মধ্যে সেটা যাচাই বাছাই করে আপনার আইডিটা সারাজীবনের জন্য ভেরিফাইড আইডি হিসাবে ফেসবুক এন্ট্রি করে রাখবে। ফেসবুক নিশ্চিত করছে আপনার ছবির শতভাগ গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। মেসেজটি ৬৯ জনকে ফরোয়ার্ড করুন এবং অপরপক্ষ ন্যুডটি পাঠানোর সাথে সাথে একবার দেখেই ডিলিট করে দিন। ধন্যবাদ।'

কোনো মেয়ে কবিতাপ্রেমি হলে আমরা কবিতার মাধ্যমে ন্যুড চাইতাম।
.
"করুণা করে হলেও ন্যুড দিও, ফ্লাশ মেরে তুলে দিও
শরীরের মিহিন গঠন।
ভুল ফোকাসে তুলো ছবি, বাজে হলে পাঠিয়ে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি ন্যুড দিও, তোমার বালিশের মতো তুলতুলে ঝকঝকে একখানি ন্যুড।"

মেয়ে রবীন্দ্রনাথ ফ্যান হলে লিখতাম, 'আধো রাতে যদি ঘুম না আসে, মনে পড়ে মোরে প্রিয়।
এক্টিভ হয়ে রবো অনলাইনে, মেসেঞ্জারে ন্যুড দিও।'

নজরুলের ক্ষেত্রে,

দাও ন্যুড,
দাও, হইয়োনা আজ রুড,
ন্যুড তোমারি সেন্ড মি প্লিজ,
উই জাস্ট ফ্রেন্ড, ড্যুড!

আর জীবননান্দ পছন্দ হলে সেক্ষেত্রে-

সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
দিওনাকো ন্যুড ওই যুবকের ফোনে;
এদিকে এসো সুরঞ্জনা:
এইখানে ন্যুড দাও নক্ষত্রের আগুন ভরা রাতে।

তবে খুব সম্ভবত আমাদের সবচাইতে মাহাত্ম্যপূর্ণ আবিস্কার ছিলো ইমোশনাল ব্লাকমেইল। মনটন নরম দেখে আমরা কোনো মেয়েকে বেছে নিয়ে মেসেজ দিতাম, 'হাই।'
অল্প একটু কথাবার্তা আগানোর পর মেয়ে যখন কেমন আছি জানতে চাইতো তখন স্যাড ইমোজি দিয়ে বলতাম, 'ভালো না। মনটা খুব খারাপ। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মরে যাই।'
মেয়ে জানতে চাইতো, 'কেন?'
তখন বলতাম, 'আমার পরিচিত এক ছেলে অনেক বড়লোক। বাপের কোটি কোটি টাকা। দামী গাড়িতে চলে, ব্রান্ডের ড্রেস পরে সবসময়।'
- তো?
- তো আর কি। সেই ছেলে প্রতিদিন ফেসবুকে কত কত মেয়েদের থেকে ন্যুড নেয়। অথচ!
- অথচ।
- এই যে আমার কথা ধরো। দামী গাড়ি নেই, বাড়ি নেই, ভালো ড্রেস নেই, আব্বুর অল্প টাকা বেতনের সাথে নিজের টিউশনির সামান্য কটা টাকা যোগ করে একই শার্ট বারবার পরে, রিক্সাভাড়া বাঁচিয়ে হেটে হেটে কলেজে গিয়ে সেই টাকার দুটো সিঙ্গাড়া দিয়ে লাঞ্চ করা এই মধ্যবিত্ত আমি ছেলেটাকে কোনো মেয়েই কোনোদিন ন্যুড দেয় না। অবশ্য দিবেই বা কেন৷ তুমি বলো। আমরা মধ্যবিত্ত, আমাদের নেই কোনো যোগ্যতা, নেই কোনো মেয়ের ন্যুড পাওয়ার অধিকার। আমরা ধনীর দুলালদের মত ন্যুড এপেলের ল্যাপটপে সেভ করে রাখিনা, আমাদের চায়না ফোনে মেমরি খুব কম। আমরা একবার দেখেই ডিলিট করে দেই। অথচ তারপরও কোনো মেয়ে আমাদের ন্যুড দেয় না। তুমিও দিবা না। জানি আমি। আমার কোনো আক্ষেপ নেই আসলে। মধ্যবিত্ত হয়ে জন্ম যখন নিয়েছি তখন শখ আহ্লাদ সব জীবন থেকে মুছে ফেলেছি৷ তবে জানো কি, মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়। খুব বেশি কষ্ট। নিজেকে বড্ড সামান্য মনে হয়। এভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ বলতে পারো শাম্মি? মধ্যবিত্তের ঘরে জন্ম নেয়াটা কি কোনো পাপ? কোনো অপরাধ? প্রচন্ড কষ্টে মোড়া আমার এই ছোট্ট বুকটার মাঝে লুকানো একমাত্র ইচ্ছাটা আজ রাতে তুমি কি পূরণ করে দিতে পারো না? কিছুক্ষণের জন্য একজন মধ্যবিত্ত যুবক কি ভাবতে পারে না যে তারও অধিকার আছে সুন্দরী কোনো মেয়ের ন্যুড পাওয়ার?
- কিন্তু আমি তো সুন্দরী না।
- আরে ধুর, তাতে কি? ফেস কে দেখতে চাচ্ছে!

তো এরকম আরো বহু উপায় প্রয়োগ করেও শেষপর্যন্ত আমাদের ন্যুডস নেয়ার সাকসেস রেশিও সাব্বির রহমানের ওয়ানডে এভারেজ থেকেও কম ছিলো। এই ফেসবুকে আসলে যত ন্যুডসের চাহিদা আছে, তত যোগান নেই। অর্থনীতির ভাষায় ফেসবুকে ন্যুডসের অপূর্ণ প্রতিযোগিতা মূলক বাজার বিদ্যমান।

খুব সম্ভবত এই কারণেই আমার বন্ধু রাজিব একদিন ফেসবুকে মেয়েদের কাছে ন্যুড চাওয়া বন্ধ করে দিলো।
খবর পেলাম রাজিব নাকি বাইক আর গিটার কিনেছে।
আমি আমাদের মিশন ন্যুডসের ব্যাপারে বলতেই রাজিব তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, 'বন্ধু আমার, তুমি বাচ্চাই থাকলা। ফেসবুক থেকে একটু বাইরের দুনিয়ায় উকি মেরে দেখো। আমার দিনকাল অনেক পাল্টে গেছে এখন। এখন আর ন্যুডসের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নাই।'
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, 'কেন বন্ধু, তোমার কি সমস্যা হইছে? তোমার ছোট বন্ধু দাড়াতে পারছে না? টেনশন নিও না, তারজন্য কোলিকাতা হারবাল আছে।'
রাজিব রাগতস্বরে বললো, 'আমি ভার্চুয়াল ন্যুডসের প্রতি আগ্রহ নাই এটা বুঝাইছি গাধা৷ এখন আমি ওসব শুধু দেখব না আর, ডাইরেক্ট একশনে যাবো। আমার এক ফ্রেন্ডের নাম লিটন, তার আবার ফ্লাটও আছে একটা। কি বুঝলি?'
- তোমার ফ্রেন্ড অনেক বড়লোক।
- এর বেশি কিছু বুঝিসনাই?
- না তো!
- এজন্যই তুই সারাজীবন দেখেই যাবি। খাইতে আর পারবি না।

তো আমার চোখের সামনেই রাজিব চুড়ান্ত খাওয়াদাওয়া শুরু করলো। সারাদিন সে আজিজের ফ্লাটে থাকে কম, লিটনের ফ্লাটে থাকে বেশি। আজিজ ওর বাবার নাম।
এদিকে আমার খুব হিংসা হয়। আমারো ইচ্ছা করে মেয়ে নিয়ে ফ্লাটে যেতে। কিন্তু চাইলেও আমি পারিনা। আমার না আছে বাইক, না গিটার না ডিএসএলার। এমনকি সাহসও নাই কোনো মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর।
আমি তাই ফেক আইডি খুলে ফেসবুকেই মেয়েদেরকে মেসেজ দেই, 'আমি মনে করি মেয়েরা ছেলেদের থেকে কম না কিছুতেই। এই যে আমি আমার বুকের ছবি দিলাম। সাহস থাকলে তুমি তোমারটা পাঠাও।'

এর মধ্যেই একদিন রাজিব এসে দুঃখ দুঃখ গলায় বললো, 'দোস্ত আমার খাওয়ার দিন শেষ।'
- কেন, পেট ভরে গেছে?
- ধুর পাগলা, যে খাওয়াতে কিছু ভেতরে যায় সেটাতে পেট ভরতে পারে, কিন্তু যে খাওয়ার নিয়মই হলো বের করে দেয়া, সেটাতে কখনো পেট ভরে?
- তাইলে বন্ধ কেন?
- আমার স্কলারশিপ হয়ে গেছে। আমি ইতালি চলে যাচ্ছি।

তিন বছর পর রাজিব ফিরলো। এতোদিনে আমি আর ও দুইজনই চেঞ্জ হয়ে গেছি৷ আমি ফেসবুক ছেড়ে লিটনের ফ্লার্ট ধরেছি, আর রাজীব সাময়িক বাইরে খাওয়া ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি রাইস কুকার কিনতে যাচ্ছে। মানে পোলা এবার বিয়ে করবে। আমাকে ফোন দিয়ে বললো, 'মেয়ে দেখ।'
আমি খুশি খুশি গলায় বললাম, 'সায়মাকে বিয়ে করে ফেল। তোর এক্স ছিলো। কত নিয়ে গেছস লিটনের ফ্লার্টে।'
রাজিব রাগ করলো। বললো, 'পাগল হইছিস? যে মেয়ে কোনো ছেলের সাথে ফ্লাটে যায় তার মতো দুশ্চরিত্রা মেয়ে আমি বিয়ে করব? নেভার।'
- কিন্তু তুই বলছিলি তুই ওকে বিয়ে করবি।
- আর সে এটা বিশ্বাসও করেছিলো৷ মেয়ে দুশ্চরিত্রাই শুধু না, বোকাও। আর আমি বোকা মেয়ে তো বিয়ে করব না।
- তাহলে তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?
- সুন্দরী, চরিত্রবান, নামাজী, পর্দানশীন, লয়্যাল। লাইফে কোনো প্রেম করে নাই। আর সবচাইতে বড় কথা, মেয়েকে ভার্জিন হতে হবে মাস্ট।
- কিন্তু তুই নিজে নামাজ পড়িস না। কয়টা প্রেম করছিস ঠিক নাই। চরিত্রের কথা না ই বলি। আর ভার্জিনিটি? হাহা!
- চুপ থাক, তুই বেশি বুঝিস না। যা বললাম এরকম মেয়ে থাকলে খোজ নে। নাইলে ফোন রাখ।
আমি ফোন রেখে দিলাম। মনে মনে বললাম, 'হালা হিপোক্রেট। তোর মতো ফাউল পোলা ওরকম মেয়ে জীবনেও পাবে না।'

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রাজিব পেয়ে গেলো। রাজিবের চাওয়া অনুযায়ী সমস্ত গুণ আছে মেয়ের মধ্যে। নম্র ভদ্র, নামাজী ও ভার্জিন। আসলে কলেজ লাইফে যেমন বাইক আর গিটার থাকলে সব পাওয়া যায় তেমনি বিয়ের সময় ভালো চাকরী থাকলেই হয়। তাছাড়া রাজিব বিদেশী ডিগ্রিওয়ালা বড় চাকুরীজীবি। সুন্দরী মেয়ের বাবা মা রা তো ওয়েট করেই থাকে রাজিবদের জন্য।

ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো রাজিবের। আমরা পেট ভরে রোস্ট আর পোলাও খেলাম। ভাবীর সাথে ফটোশ্যুট করলাম। ভাবীর নাম অনামিকা। আসলেই অসম্ভব ভদ্র মেয়ে। রাজিব নিজে মেড ইন চায়না হলেও জিনিস পেয়েছে পিওর মেড ইন জাপান। ভীষণ খুশি সে। দেনমোহর ঠিক হলো এক কোটি টাকা। আমি বললাম, 'দোস্ত কোনোদিন ডিভোর্স তো দিতে পারবি না। এতো টাকার ব্যাপার।'
রাজিব প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো, 'বিয়ে হলো জন্ম জন্মান্তরের বাধন। ডিভোর্স দেয়ার জন্য বিয়ে করলে সায়মা বা ফারিয়াকেই করতাম।'
আমার কিঞ্চিৎ হিংসা ফিল হলো৷ আমিও ডিসিশন নিলাম বিয়ে করলে এরকম চরিত্রবান ভার্জিন মেয়েই বিয়ে করবো। প্রান্তিকে করা যাবে না কোনোভাবেই।
প্রান্তি আমার প্রেমিকা। যার সাথে আমি লিটনের ফ্লাটে যাই নিয়মিত। কিন্তু কোন মেয়ে অনামিকা ভাবীর মত ভালো হবে সেটা কিভাবে বুঝব? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। স্বপ্ন দেখলাম, আমার বিয়ে হয়েছে। বাসর রাতে বউ বলছে, 'আমাকে ৫০০ টাকা দাও।'
আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'কেন?'
বললো, 'আর সবার থেকে এক হাজার করে নেই। তুমি আমার হাজবেন্ট বলে ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট।'
চিৎকার দিয়ে উঠে বসলাম। দেখি সকাল হয়ে গেছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে রাজিব আমার বাসায় উপস্থিত। হাফাচ্ছে খুব। বললো, 'দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে।'
- কেন? কি হইছে? ভাবী ভার্জিন না?
- তা তো জানিনা। কিছু করিনি কাল।
- তাহলে?
- ভাবলাম প্রথম রাতে গল্প করে কাটাই। কথায় কথায় ওর ফেসবুক আইডি নিলাম। ওর আইডিতে ঢুকে দেখি ও আমাকে আগেই মেসেজ দিয়ে রেখেছে একটা মেসেজ রিকুয়েস্টে।
- বাহ জোস তো। ভাবী তোকে চিনতো আগে? কি মেসেজ দিছে?
রাজিব ফোন খুলে মেসেজটা বের করে আমার সামনে ধরলো। পড়লাম আমি।
মেসেজটা ছিলো এরকম-

"শুদু প্রবাসিদের জন্য-
————★————★————★———
**ফোন_সেক্স=-> ১০২০ টাকা ১ ঘন্টা।
**ভিডিও_সেক্স=-> ২০৪০ টাকা ১ ঘন্টা।
আমি টাকার বিনিময়ে ফোন সেক্স ও ইমু সেক্স করি। আমি সব কিচু খুলে মজা দিয়ে থাকি। উপরে ও নিচে হাত দিয়ে দরে দেখাই। আর তোমরা জদি আমার সাথে সেক্স করতে চাও তাহলে ইনবক্স এ মেসেজ দেও। ১ ঘনটা করে ইমু সেক্স ২০৪০ টাকা। আর ফোন সেক্স ১ঘনটা করে ১০২০ টাকা। টাকা বিকাশের মাদ্যমে নেই। শুধু প্রবাসিদের জন্য। দেশের কেউ মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করবা না। বিকাশে টাকা পাটানোর আগে দশ সেকেনড আমার মুখ দেকতে পারবা। মুখ বাদে অন্ন কিচু দেকতে চাইলে নগদে বলোক দিব। বিকাশ করার পর বাকি সব খুলবো। ভিডিও ছারা কনো প্রকার খোলা মেলা ছবি দেয়না আমি। কারন আমি একানে চেট সেক্স করতে আসি নাই। বিকাশ করবেন ইমুতে আসবেন কাজ বুজে নিবেন।
আর কেউ সরাসরি সেক্স করতে চাইলে ঢাকার মদ্যে হতে হবে, আমার টিকানায় আপনাকে আসতে হবে, টাকা লাগবে ত্রিশ হাজার। অগরিম দশ আর কাজ সেষে বাকি বিশ হাজার।"

মেসেজ পড়া শেষ করলাম। রাজিব কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, 'দোস্ত, আমি শেষ। এখন আমি কি করবো তুই বল।'
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুচকি হেসে বললাম, 'কি আর করবি। এক কোটি টাকা তো নাই যে ডিভোর্স দিবি। তারচেয়ে বেটার ত্রিশ হাজার টাকা থাকলে সরাসরি কর, নাহয় দুই হাজার চল্লিশ টাকায় 'ইমু' সেক্স। টাকা না থাকলে বল, আমি ধার দিচ্ছি। লাগবে নাকি?'

রাজিব একদৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কিছু না বলেই চলে গেলো। তার সম্ভবত টাকা আছে৷ ধার লাগবে না!

লেখা: সোহাইল রহমান
বউ যখন ভাবী!

বউ যখন ভাবী!


এলাকার বড়ভাই শরীফ ভাই ফোন দিয়ে বললেন, 'রনি, একটু দেখা করতে পারবি?'
বললাম, 'জ্বী ভাই, আসছি।
ভাই অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, 'আমার সাথে না। আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে পারবি?'
- আমি ঠিক বুঝলাম না।
ভাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন, 'আচ্ছা তোকে বুঝায়ে বলি। আমার প্রেমিকা স্নেহার সাথে পরিচয়, ভালোলাগা বা প্রেম যা ই বলিস না কেন, সব ফেসবুকের মাধ্যমেই। আমাদের মধ্যে সাক্ষ্যাৎ হওয়া তো দূরের কথা, স্নেহা আমাকে দেখেনাই পর্যন্ত।'
আমি অবাক হলাম, 'না দেখেই প্রেমে পড়ে গেল?'
- ইয়ে মানে ব্যাপারটা আসলে এরকম না। আমাদের মধ্যে সেইভাবে অফিশিয়াল প্রেম এখনো হয়নি। তবে প্রেম হবো হবো করছে। সারাদিনই কথা হয় ফোনে। সারারাত মেসেঞ্জারে চ্যাট হয়। এখন দেখা করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি দেখা করতে পারবো না।'
- কেন পারবেন না? কি সমস্যা?
ভাই রাগলেন। বললেন, 'গাধা, আমার দিকে তাকিয়ে দেখ। আমার ওজন একশো আট কেজি। এতো মোটা কোনো ছেলের সাথে স্নেহার মত মেয়ে প্রেম করবে? করবে না। তো আমি ডায়েট শুরু করে দিয়েছি। কয়েক মাস টাইম লাগবে। কিন্তু এদিকে স্নেহা নাছোড়বান্দা। দেখা না করলে নাকি আর কথাই বলবে না৷ তাই তুই প্লিজ আমার হয়ে ওর সাথে দেখা করে আয়। বলবি, তুই ই শরীফ। মানে আমি।'
আমি এতোক্ষণে বুঝলাম। বললাম, 'কিন্তু পরে যদি কোনো ঝামেলা হয়?'
- আরে ধুর, সেটা আমি দেখব। কোনো সমস্যাই হবে না। তুই জাস্ট ওর সাথে গিয়ে আধাঘন্টা একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুই স্লাইস পিজ্জা খেয়ে চলে আসবি। তারপর তোর কাজ শেষ। বাকি দায়িত্ব আমার। কিন্তু একটা কথা।'
- কি?
- সমসময়, সব পরিস্থিতিতে একটা জিনিস মাথায় রাখবি। সেটা হলো, স্নেহা তোর ভাবী হয়। ভাবী।
.
ভাইয়ের শরীরে চর্বির মত পকেটে টাকারও অভাব নাই। আমরা খুব বড় এক রেস্টুরেন্টে ডেট করলাম। বিল যা আসলো তার থেকে বেশি দিলাম টিপস। তাছাড়া ফুলের তোড়া বাদেও স্নেহার জন্য হোয়াইট গোল্ডের খুব দামী একটা ব্রেসলেট উপহার নিয়ে গেছিলাম। সে তো খুবই ইমপ্রেস। দুইবার আলতো করে আমার হাত ধরতে চেষ্টা করলো। কিন্তু আমি হাত সরিয়ে নিলাম। হাজার হোক সে আমার ভাবী হয়।
.
দেখা করে আসার দুইদিন পরই শরীফ ভাইয়ের মেসেজ আসলো, 'রনি, মিশন কমপ্লিট। প্রেম হয়ে গেছে পুরোপুরি।'
আমি রিপ্লাই দিলাম, 'আলহামদুলিল্লাহ। ট্রিট দেন।'
ভাই ট্রিটও দিলো। আমি খুব খুশি। আমি যে স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম সেটা তো আগেই জানতাম। প্রমানও পেলাম হাতেনাতে।
.
কিন্তু খুশি আমার কপালে ছিলো না সম্ভবত। অথচ আরো বেশিই খুশি লেখা ছিলো কপালে।
.
তিনদিন পরই ভাইয়ের ডাক আসলো। স্নেহাকে শপিং এ নিয়ে যেতে হবে। ওর চাচাতো বোনের বিয়ে। আর্জেন্ট।
কি আর করা, চলে গেলাম। টাকা তো আর আমার যাচ্ছে না।
কয়দিন পর সিনেমা দেখা। সিনেপ্লেক্সে জোকার এসেছে। ভাবী ভাইকে ছাড়া দেখবে না। এদিকে ভাবীর কাছে ভাই তো আমি।
শরীফ ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিকিট বুকিং দিলেন।
.
মাসখানেক পর স্নেহা ভাবীর সাথে আমার ডেট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়ালো। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন তো হচ্ছেই। হয়তো আমি দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে মাত্র রেস্ট নিতে বসেছি, সেইসময়ই ভাইয়ের ফোন,
- তোর ভাবীর ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে।
- তোর ভাবী বাতিঘর যাবে।
- তোর ভাবীর ডাক্তারের কাছে সিরিয়াল আছে।
- তোর ভাবীর ফ্রেন্ডের জন্মদিন।
আমি অবাক হই, 'ভাবীর ফ্রেন্ডের জন্মদিন তো আমি কি করব?'
ভাই ক্লান্ত গলায় বলেন, 'জন্মদিনের পার্টিতে আমাকেও দাওয়াত দিছে।'
.
সত্যি বলতে আমার খারাপ লাগে না তেমন। ভালোই লাগে৷ স্নেহা ভাবী জোস মেয়ে। সেইরকম সুন্দরী। আমাকে দেখলেই এতো বাবু বাবু করে। উফ। আমিও সুযোগ ছাড়িনা৷ কথায় কথায়, সোনা, জান, পাখি বলে ফিল নিই।
ওদিকে রাতজেগে চ্যাটিং করে শরীফ ভাই। আহারে, বেচারা!
.
ভাবী কোনো কোনো দিন আমাকে বলে, 'কাল রাতের জন্য আমি স্যরি।'
আমি মুচকি হাসি, 'আরে বাবু দোষ তো আমারই। তুমি কেন স্যরি বলবা?'
- তুমি খুব ভালো একটা ছেলে শরীফ।
- আমি জানি ভাবী।
- হোয়াট? কি বললা?
- বেবি। আমি জানি বেবি। বেবি বলছি।
.
কিন্তু আমার সমস্যা না হলেও একজনের হচ্ছিলো। আমার প্রেমিকা ইরার। সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে, তুমি আমাকে টাইম দাওনা। তুমি আগের মত নাই, বদলে গেছ। আমার ফ্রেন্ড তোমাকে সেদিন যমুনাতে এক মেয়ের সাথে দেখেছে, সে কি হয়?
আমি কসম কেটে বলি, সে আমার ভাবী হয়।
.
এটাই তো সত্যি, তাইনা? ভাবীই তো হয়।
.
আরো দুইমাস পরে আমাদের ত্রিভুজ প্রেম, আই মিন আমি শরীফ ভাই আর স্নেহা ভাবী এই তিনজনের প্রেম লিমিট ক্রস করে ফেললো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শরীফ ভাই আমাদের বসার ঘরে বসে আছেন। চোখমুখ শুকনা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুম হয়নি।
আমি ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাড়াই, 'কি হইছে? কোনো সমস্যা?'
ভাই মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বললেন, 'তোর ভাবীর বাসায় আজ কেউ থাকবে না। বাসা ফাকা থাকবে। আমাকে যেতে বলেছে।'
- হোয়াট? না না এটা সম্ভব না। আমার প্রেমিকা আছে।
- আমি ওকে কথা দিয়েছি আমি যাবো।
- প্লিজ ভাই। কি বলছেন এসব?
ভাই পকেট থেকে একটা প্লাস্টিকের গ্লাভস বের করলেন। বললেন, এটা হাতে পরে ফেল। স্নেহাকে এটা পরে টাচ করবি। তোর আর স্নেহার মাঝে যেন প্লাস্টিকের পর্দা থাকে। তোর শরীরের কোনো অংশ যেন ওর শরীরের সাথে সরাসরি না ছুয়ে যায়।
- কোনো অংশই না?
- উহু, ভাই শান্ত মুখে কনডম বের করে আমার হাতে দিলেন। কোনো অংশই না।
.
স্নেহার বাসায় ঢোকার সাথে সাথেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে সে আমাকে কিস করার চেষ্টা করলো। আমি বাধা দিলাম, 'প্লিজ, বিয়ের আগে এসব না।'
- মানে কি? তাহলে আসছ কেন?
- না মানে বাকি সব হবে, কিন্তু কিস না?
- বাকি সব বলতে?
- সেক্স?
- সিরিয়াসলি? সেক্স করতে সমস্যা নাই বিয়ের আগে কিন্তু চুমুতে সমস্যা?
আমি আমতা আমতা করে বলি, 'ইয়ে মানে আমি ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে রেখেছি বউ বাদে কাউকে কিস করব না।'
- সে নাহয় বুঝলাম, কিন্তু তোমার হাতে পায়ে প্লাস্টিকের কাভার কেন?
আমি চোখ টিপ দেই, আসলে আমি সবখানেই প্রটেকশনে বিলিভ করি।
- হাইরে কপাল। তোমার মত পাগল আমি আর দেখিনাই। হাসে স্নেহা।
.
রাতে পরপর তিনবার সেক্স করার পর স্নেহা টান দিয়ে আমার গ্লাভস খুলে ফেলে। বলে, 'একবার আমি তোমার হাতটা ধরতে চাই।'
আমি ঝটকা দিয়ে সরে যাই। সরাসরি হাত ধরা? কিভাবে সম্ভব? ছিঃ এটা আমি পারব না। হাজার হোক স্নেহা আমার ভাবী হয়, ভাবী!
.
ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাবী আমাকে ডাক দেয়। বলে দেখে যাও, একটা চোর সম্ভবত। আমি ধড়ফড় করে উঠি, 'কই চোর? কোথায়?'
স্নেহা আমাকে চার তলার জানালা দিয়ে দেখায়, নীচে ওদের বাসার সামনের মাঠে একটা লোক দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।
আমি শরীফ ভাইকে চিনতে পারি। আহারে বেচারা। স্নেহা আমার কাছে আসতে গেলে আমি সরিয়ে দেই। বলি, আজ আর না। আজ মনটা খুব খারাপ।
- হঠ্যাৎ কি হলো বাবু?
- কিছুনা বাদ দাও। ঘুমাই।
.
সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়৷ নীচে নেমে দেখি যথারীতি শরীফ ভাই দাঁড়ানো। আমাকে দেখেই বলেন, 'গ্লাভস কই?'
- সকালে উঠে ফ্রেশ হওয়ার সময় খুলেছি।
- সরাসরি টাচ করিসনি তো?
- না ভাই, করিনি৷
.
উনার চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ পড়ে। আমি বলি, 'ভাই অনেক হইছে, আর এভাবে চালানো ঠিক হবে না। স্নেহাকে সব বলে দেন। নাহলে খুব বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।'
শরীফ ভাই নিজের বিশাল ভুড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন, 'এখনো সময় হয়নি৷ আর কিছুদিন যাক।'
- কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের তো তেমন কোনো পার্থক্য দেখছি না।
- আরে ভাই আর বলিস না। খাবার দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। কি যে করি। বাট তুই চিন্তা করিস না। কিটো ডায়েট নামের নতুন একটা ডায়েট শুরু করতে যাচ্ছি। আর বেশিদিন লাগবে না।
.
কিন্তু বেশিদিন লাগে। মাসের পর মাস চলে যায়। এদিকে আমাদের অবস্থার কোনো হেরফের হয়না। ফোনে আর ফেসবুকে প্রেম করে শরীফ ভাই। সরাসরি আমি।
তবে পার্থক্য কিছু হয়েছে অবশ্য। আগের মত ফুচকা খাইয়াতে নিয়ে যাওয়ার মেসেজ আসে কম। এখন হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খাচ্ছি, এমন সময় ভাইয়ের কল আসে,
- আজ তোর ভাবীর ফ্রেন্ডের বাসায় কেউ থাকবে না।
- তোর ভাবীর আব্বু আম্মু গ্রামে গেছে। দুইদিন ফাকা থাকবে বাসা।
- এইবার আমার এক ফ্রেন্ডের ফাকা ফ্লাট পাওয়া গেছে। তোর ভাবী বলেছে চাবি নিয়ে রাখতে।
- তোর ভাবীর ফ্রেন্ডের জন্মদিন?
আমি অবাক হই, 'ফ্রেন্ডের জন্মদিন তো আমি কি করব?
শরীফ ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, 'জন্মদিনের পার্টিতে আমাকেও দাওয়াত দিয়েছে। রাতে থেকে যেতে হবে স্নেহার সাথে।
.
অনেকবার এরকম হয়েছে যে একই সাথে আমার প্রেমিকা ইরার বাসাতেও কেউ নাই, আবার ভাবীর বাসাতেও কেউ নাই। সেক্ষেত্রে আমি নিজের প্রেম সেক্রিফাইস করে ইরার বাসায় না গিয়ে ভাবীর বাসায় গেছি। হাজার হোক, ভাবী তো ভাবীই। গার্লফ্রেন্ডের আগে তার স্থান।
.
আপনারা ভাবছেন, আর কি বাকি থাকলো? এবার সেটাই বলি। কিছুদিন পর ভাই ছয় কেজি মিষ্টি নিয়ে আমার বাসায় আসলেন। আমি তো অবাক, এতো মিষ্টি কি মনে করে? ভাবীকে বলে দিছেন সব? ভাবী মেনে নিছে?
- আরে নাহ, মিষ্টি তোর জন্য না।
- তাহলে?
- তোর ভাবীর বাসা থেকে বিয়ের জন্য ছেলে দেখেছে। কিন্তু অন্য কারো সাথে ওর বিয়ে তো আমি মেনে নিতে পারব না। আমি ওর প্রেমিক।
- তো?
- তো আর কি। তুই ওর বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাবি।
- যদি রাজি হয়ে যায়?
- তখন দেখা যাবে।
.
স্নেহার বাবা মা রাজি হন না। শরীফ ভাই ডিসিশন নেন উনি প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করবেন। কিন্তু পোড়া কপাল তো আমার, শরীফ ভাইয়ের পক্ষ থেকে পালাতে হবে আমাকে। কিন্তু বিয়ে? সেটা কে করবে?
শরীফ ভাই আমার হাতটা ধরে বলেন, 'তুই আমার জন্য এটুকু করতে পারবি না?'
- মানে কি? বিয়ে করে ভাবীকে কি খাওয়াবো?
- সেই দায়িত্ব আমার। বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে বাজার সদাইয়ের সব খরচ আমার।
- কিন্তু আপনি ওকে সত্যিটা বলবেন কবে?
- একটা মাস টাইম দে আমাকে। নতুন এক জিমে ভর্তি হয়েছি। তারা বলেছে এক মাসেই স্লিম করে দিবে। তুই থাইল্যান্ড গিয়ে হানিমুন করে আয়। ব্যবস্থা করতেছি।
- থাইল্যান্ড কেন?
- স্নেহার শখ অনেক আগে থেকেই। একমাস হানিমুন করে ফিরতে ফিরতেই আমি রেডি হিয়ে যাব।
.
কিন্তু একমাসে কিছুই হয় না৷ দুই বছর পর আমাদের প্রথম বাচ্চা হয়, শিরিন। বৈজ্ঞানিকভাবে বাচ্চা আমার হলেও, আসলে এটা তো শরীফ ভাইয়েরই বাচ্চা। তাই নামও উনার নামের সাথেই মিলিয়ে রেখেছেন ভাই নিজেই। আমি বাচ্চাকে নিয়ে আসি প্রায়ই ভাইয়ের কাছে। নিজের প্রথম ও একমাত্র মেয়েকে ভীষণ আদর করেন উনি। উনার একক প্রচেষ্টায় শিরিন উনাকে আধো আধো বোলে বাবা ডাকে। ভাইয়ের খুশি আর দেখে কে!
.
এদিকে আমার বাসা থেকে ইরার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে৷ আমি বলি, 'ভাই, আমার পক্ষে আপনার বউ ছেলে মেয়ের সাথে সংসার করা আর সম্ভব না। আমারো তো একটা জীবন আছে। আমারো তো ইচ্ছা হয় বিয়ে করি, বাচ্চার বাবা হই।'
ভাই দুঃখ দুঃখ গলায় বলে, 'তোর কষ্টও আমি বুঝি। তুই আমার জন্য যা যা করেছিস সেটা আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবো না। বাট এবার আমি স্নেহাকে সব বলব। তোর বিয়ের দিনই।'
- কিন্তু আপনি তো চিকণ হননি?
- মোটা চিকণ দিয়ে কি হয়? প্রেম ভালোবাসা মনের সাথে মনের ব্যাপার। স্নেহা আমাকে ভালোবাসলে আমি যেমন সেভাবেই বাসবে।
- এটা শুরুতে কেন ভাবেননি?
- সেটাই তো ভুল করেছি। তোর জীবন নষ্ট করতেছি। আর হবে না। এবার শিওর বলব।
.
আমার বিয়ের দিন ভাই স্নেহার বাসার সামনে যায়। স্নেহা তখন হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছিলো। সে কিভাবে যেন খবর পেয়ে গেছে আমার আরেকটা বিয়ে। বাসার সামনে ভাইকে দেখে চিনতে পারে ও। ভাইকে সাথে করে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসে৷ আমি তখন বরযাত্রীতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। স্নেহার কোলে আমার বৈজ্ঞানিক বাচ্চা। বিয়ে ভেঙে যায়। ভাইয়েরও আর কিছু বলা হয় না।
.
ভাই আমার হাত ধরে বলেন, 'আর অল্প কয়টা দিন। আমার জন্য এইটুকু তুই কর।'
আমি মাথা নাড়ি। কপালে ভাইয়ের সংসার টানা থাকলে কি আর করা।
আমি আস্তে করে বলি, 'ঠিকঠাক বলেন আর কতদিন?'
- অল্প কয়দিন রে ভাই। শীঘ্রই স্নেহাকে সব বলবো। প্রমিজ।'
.
পরিশিষ্টঃ আমার আর স্নেহার বিয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। শরীফ ভাই বিশাল পার্টি দিয়েছেন। হাজার খানেক লোক ইনভাইট করেছেন। আমাকে দিয়ে স্নেহাকে ডায়ামন্ডের নেকলেস গিফট করলেন। অসম্ভব খুশি উনি৷ একটু পর পর বলছেন, 'কখনো ভাবীনাই, ভালোবাসার মানুষের সাথে পঞ্চাশ বছর পূরণ করবো।'
ভাইয়ের চোখ আনন্দে চকচক করে।
আমি কিছু বলিনা। হতাশ হয়ে মাথা নাড়ি। বেচারা!
.
রাতে স্নেহা আমার বুকে মাথা রেখে বলে, 'শরীফ জানো, আমি খুব ভাগ্যবতী মেয়ে। তোমার মত কাউকে স্বামী হিসাবে পেয়েছি। আমার আশেপাশে সবার স্বামীর সাথে ওদের কত ঝগড়া হয়। ওদের বর ওদেরকে রাগ করে, ঝাড়ি দেয়। কিন্তু তুমিই পৃথিবীর একমাত্র স্বামী যে আমাকে কখনো জোর গলায় একটা কথাও বলোনি। কোনোদিন না। আমি কতশত ভুল করেছি, তোমাকে বকা দিয়েছি, তাও তুমি কিচ্ছু বলোনি। কিচ্ছু না। তাহলে আমি ভাগ্যবতী না বলো?'

আমি চুপ করে থাকি। বউ হলে নাহয় ঝাড়ি দেয়া যায়৷ কিন্তু ওকে আমি কিভাবে রাগ করি? হাজার হোক স্নেহা যে আমার ভাবী হয়, ভাবী। ভাবীর সম্মান অনেক ওপরে!


লেখা: সোহাইল রহমান