পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটা হলো, বিয়ের আগে মেয়ে ভার্জিন নাকি নন ভার্জিন এটা খুজে বের করা। আমার বন্ধু পলাশ এই জিনিসটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
.
এটুকু পড়েই আমার লিস্টের নারীবাদী বন্ধুরা ক্ষেপে যাবেন না প্লিজ। বাংলাদেশের আর দশটা পুরুষের মতন পলাশ বিয়ের জন্য ভার্জিন মেয়ে খুজতে নামেনাই। তার উদ্দেশ্য আলাদা। সে খুজছে পিওর একজন নন-ভার্জিন মেয়ে। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। পলাশ নিজে ভার্জিন। সেক্স বিষয়ে তার জ্ঞান ক্রিকেট বিষয়ে সাব্বির রহমানের জ্ঞানের কাছাকাছি। এখন মেয়ের যদি আগে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে পলাশকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারবে। তাছাড়া পলাশের মন অত্যন্ত নরম৷ মেয়ে ভার্জিন হলে বাসর রাতে অনেক ব্যাথা পাবে৷ পলাশ চায় না তার জন্য কোনো মেয়ে একটুও কষ্ট পাক।
তবে এগুলো সবই ঐচ্ছিক কারণ। প্রধান কারণ যেটা সেটা হলো, পলাশের হার্ট দূর্বল। সে রক্ত দেখতে পারে না। রক্ত দেখলেই তার ভীষণ মাথা ঘুরে৷ অজ্ঞানও হয়ে যায় কখনো কখনো। এখন পলাশ শুনেছে মেয়ে ভার্জিন হলে নাকি রক্ত বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন বাসর রাতে ঐ মুহুর্তে বর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কেমন না? পলাশ এই রিস্ক নিতে চায় না বলেই খুজছে এমন একজন মেয়ে, যে ভার্জিন না। তাছাড়া পলাশ অনেক ফ্রি মাইন্ডের। মেয়ে পাস্টে কি কি করেছে এসব নিয়ে একফোঁটাও মাথাব্যথা নাই তার। সে মনে করে মেয়েদের ভার্জিনিটি তার মনে, শরীরে না। পলাশের শুধু নন ভার্জিন মেয়ে হলেই চলবে।
.
প্রস্তাবনা শেষ, এবার মেয়ে দেখার পালা। দুই ফ্যামিলি সামনাসামনি বসা। সব কথাবার্তা শেষের পথে। পলাশ হাত উচু করলো। বললো, 'আমার একটা জিনিস জানার আছে।'
মেয়ের পিতা খুব আগ্রহী, 'অবশ্যই বাবা, অবশ্যই। কি জানতে চাও বলো।'
পলাশ আস্তে করে বললো, 'ইয়ে মানে আপনাদের মেয়ে কি ভার্জিন?'
.
মুহুর্তে মেয়ের বাপের চেহারা চেঞ্জ হয়ে গেল। প্রচন্ড রাগে কাপছেন। মুখ লাল হয়ে গেছে। চিৎকার দিয়ে বললেন, 'কি বললে এটা তুমি? কি বললে? আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করো তুমি? আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে? তুমি জানো আমরা কোন বংশ? আমার বাপ মোল্লা হাফিজুর রহমানের নাম শুনলে এখনো লোকে মাথা উচু করে কথা বলে না। আশি সালে পরপর দুইবার হজ্ব করে এসেছেন। তুমি সেই মোল্লাবাড়ির মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলো। তোমার সাহস কতবড়!'
পলাশ আমতা আমতা করে বললো, 'আমি তো আপনার বাবা মোল্লা হাফিজুর রহমান ভার্জিন কিনা জানতে চাইনি৷ উনি দুইবার হজ্ব করে আসলে সেটা উনার ব্যাপার। এর সাথে আপনার মেয়ে ভার্জিন হওয়া না হওয়ার কি সম্পর্ক সেটা তো বুঝলাম না। আপনার মেয়েকে ডাকুন। জিজ্ঞেস করে দেখি।'
.
তো স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার কথা ছিলো তাই হলো। কনেপক্ষ মেরে পলাশের মাথা ফাটিয়ে দিলো। দুইসপ্তাহ ফুল বেড রেস্ট।
.
দুই সপ্তাহ পর আবার নতুন মেয়ে দেখতে যাওয়া। এবার পলাশ আর আগের ভুল করেনি। মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলার জন্য পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সবাই বাইরে বসে আছি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন ওরা বের হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমের ভেতর থেকে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড়ের শব্দ হলো। দরজা খুলে পলাশ বের হয়ে আসলো মুখ ডলতে ডলতে। আহারে, বেচারা!
.
আরেকদিনের ঘটনা। মেয়ের নাম মুনিয়া৷ এইদিন রেস্টুরেন্টে মিট। বাসায় গেলে মাইর খেতে হয় বলে পলাশ রেস্টুরেন্ট বেছে নিয়েছে।
কথাবার্তার পর মুনিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, 'আচ্ছা আপনি কি ভার্জিন?'
মুনিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'ঐ ভিডিও এডিট করা।'
পলাশ অবাক হলো, 'মানে?'
- মানে জিসান আপনাকে কি বলেছে?
- জিসান কে?
- আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড। ও আপনাকে কি দেখিয়েছে সেটা বলেন।
- আমার কোনো জিসানের সাথে কখনো কথাই হয়নি, কিভাবে কি দেখাবে?
- তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেন যে আমি ভার্জিন কিনা?
- এটা তো এমনিই। বলেন না ভার্জিন কিনা আপনি।
মুনিয়া চোখমুখ শক্ত করে বললো, 'অবশ্যই আমি ভার্জিন। কোনো ছেলে কখনো আমার হাতও ধরেনি। কখনো প্রেমও করিনি আমি।'
- কিন্তু আপনি মাত্রই বললেন, জিসান আপনার এক্স।
- আরে ধুর, আমার পেছনে ঘুরতো। আমি কখনো পাত্তাই দেইনি।
- তাহলে আপনি ভার্জিন?
- হ্যা, হান্ড্রেড পার্সেন্ট।
মন খারাপ করে চলে এসেছে পলাশ। আমার কাছে দুঃখ করে বলতেছে, 'দেশটার কি যে হয়ে গেল দোস্ত। সব মেয়েই দেখি ভার্জিন।'
শেষমেশ একটা ভালো সম্বন্ধ খুজে আনলাম পলাশের জন্য। মেয়ে ডিভোর্সি। বিয়ের তিনমাসের মাথায় ডিভোর্স হয়। ছেলের আরেকটা সম্পর্ক আছে সেটা হঠ্যাৎ একদিন জেনে ফেলে মেয়েটা।
পলাশ খুব খুশি। তিনমাস সংসার যখন করেছে, নির্ঘাত আর ভার্জিন না।
কিন্তু পলাশের সে আশায় গুড়েবালি। মিট করে এসে হতাশ গলায় বললো, 'ঐ মেয়েও ভার্জিন রে।'
- কি বলিস? কে বললো?
- মেয়ে নিজেই বললো। বিয়ের পর নাকি বরকে কাছেই আসতে দেয়নি কখনো। হাতটা পর্যন্তও ধরতে দেয়নি।'
.
এরকম আরো কিছু মেয়ে দেখা হলো৷ কয়েকজায়গা আমরা খেলাম মাইর৷ কয়েক জায়গায় গালি। তবে সবখানেই একই ব্যাপার। মেয়ে ভার্জিন। এখন পর্যন্ত কোনো মেয়েই পলাশকে বলেনি যে সে ভার্জিন না। আর পলাশটাও গাধা। সে মেয়ের মুখে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। আমরা বুঝাইলেও বুঝে না।
.
ফাইনালি আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, আমার কাছে একটা ননভার্জিন মেয়ের খোজ আছে। প্রস্তাব পাঠিয়ে দেখ।
পলাশ খুশি হওয়ার সাথে সাথে অবাকও। বললো, 'তুই কিভাবে বুঝলি যে মেয়ে ভার্জিন না।'
- আরে আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড।
- তো? তুই কি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেছিস সে ভার্জিন কিনা?
- আরে গাধা, জিজ্ঞেস করা লাগবে না। আমি জানি।
- তুই কি সবজান্তা? মানুষের মনের খবর জেনে বসে আছিস?
- আরে ধুর, ওরে নিয়ে লিটনের ফ্লাটে গেছি কয়েকবার।
- তো? লিটনের ফ্লাটে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিস, সে ভার্জিন কিনা?
- না জিজ্ঞেস করিনি। অন্যকিছু করেছি।
পলাশ চোখমুখ শক্ত করে বললো, 'অন্যকিছু করলে হবে? জিজ্ঞেস করে দেখা উচিত ছিলো। আমি বুঝেছি তুই কি কি করেছিস, কিন্তু ওসব কাজে দেয় না।'
- মানে? কি করেছি আমি?
- ঐ যে ইউসি ব্রাউজারে নিউজ দেয়, যে দশটি লক্ষণে বুঝবেন মেয়ে ভার্জিন কিনা। ঐ লক্ষনগুলো মিলায় দেখছিস তো? ওসব নিউজ ভুয়া। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাবে না কখনোই এসব। একটাই উপায়, মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে সরাসরি।
তো পলাশ গেছিলো জিজ্ঞেস করতে। ফিরে এসে বললো, 'না রে দোস্ত, তোর এক্স গার্লফ্রেন্ডও ভার্জিন।'
আমি হাসলাম, 'তোকে মিথ্যা বলেছে।'
- উহু, শুধু শুধু একজন মিথ্যা কেন বলবে? সত্যিই বলেছে। বলেছে তোকে কোনোদিন হাতটাও ধরতে দেয়নি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, খুবই ভালো।
পলাশ আস্তে করে বললো, 'অন্য কিছু নাহয় বুঝলাম, কিন্তু হাতটাও ধরতে দেয় না কেন কেউ। হাত ধরলে কি সমস্যা?'
.
তো ফাইনালি পলাশ তার মনের মত মেয়ে পেয়েছে। সেই কাহিনী বলি। যে মেয়েকে দেখতে গেছিলো, সে নারীবাদী টাইপ।
পলাশ জিজ্ঞেস করেছে, 'আপনি কি ভার্জিন?'
মেয়ে রেগে গেছে। বলেছে, 'যদি ভার্জিন না হই, তো?'
- তো কি। কিছুনা।
- জানি তো। আপনাদের মত ফালতু পুরুষ আমার চেনা আছে।
পলাশ রিকুয়েস্ট করলো, 'প্লিজ বলেন না। আপনি ভার্জিন কিনা।'
মেয়ে আরো রেগে গেলো। রেগেমেগে বললো, 'আচ্ছা যান আমি ভার্জিন না। তো? এখন? আমাকে বিয়ে করবেন না, তাইনা?'
পলাশ খুশিতে হেসে ফেললো, 'কেন করব না? অবশ্যই করব।'
- আমি ভার্জিন না, তাতে আপনার কোনো সমস্যা নাই?
- উহু, অবশ্যই না। আমার কোনো সমস্যা নাই।
তো নারীবাদী মেয়েটা শুরুতে ভেবেছিলো, পলাশকে না করে দিবে। কিন্তু কথোপকথনের এই পর্যায়ে পুরোপুরি ইমপ্রেস হয়ে গেল। বাংলাদেশে কয়টা ছেলে আছে যে, নন-ভার্জিন মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হবে? এতো উদারও কোনো ছেলে হয়? বাহ!
বিয়েতে হ্যা বলে দিলো মেয়েটা। হ্যা বললো পলাশও। ধুমধাম করে বিয়ে হলো। আমরা খুব আনন্দ করলাম।
সব অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত। বাসায় এসে মাত্র ঘুমাইছি। এমন সময় ফোন বাজলো। রিসিভ করে খবর পেলাম, ঘটনা ঘটে গেছে। পলাশ অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে।
দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছে। আমার দিকে চেয়ে ক্লান্ত হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে বললো, 'তুই ঠিকই বলেছিলি দোস্ত। মেয়েরা আসলেই মিথ্যুক হয়।'
- মানে কি?
- মানে তোর ভাবী ভার্জিন ছিলো। আমার উপরে রেগে গিয়ে বলেছে ভার্জিন না।
আমি বাসায় চলে আসতেছি। পলাশের সিরিয়াস কিছু না। স্যালাইন ধরানো হয়েছে। সকালে ফিরতে পারবে বাসায়। নতুন বউ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে বেডের পাশে। পলাশের চোখেমুখে দুঃখ আর হতাশার চিহ্ন।
.
বউ ভার্জিন এই খবরে এতো হতাশ এই পৃথিবীতে কোনো পুরুষ সম্ভবত কখনোই হয়নি! আহারে, বেচারা!
0 Comments:
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।