Showing posts with label যে গল্পে তুমি নেই. Show all posts
Showing posts with label যে গল্পে তুমি নেই. Show all posts
যে গল্পে তুমি নেই - শেষ পর্ব

যে গল্পে তুমি নেই - শেষ পর্ব

 
বাসা থেকে বের হয়ে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে বসে রইলাম। বসে বসে কান্না করতেছি এমন সময় কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রাখে। পেছনে তাকাতেই দেখি রাশেদ আর জলিল।

রাশেদঃ কিরে তুই এখানে? আমরা তোকে অনেক খুঁজেছি।
আমিঃ…….
জলিলঃ চল এখন।
আমিঃ কোথায়?
জলিলঃ বাসায়।
আমিঃ না আমার কাজ আছে, তোরা যা।
রাশেদঃ মন খারাপ করে বসে থেকে লাভ আছে? ফ্যামিলিতে একটু সমস্যা হয় এটা কোনো ব্যাপার না।
আমিঃ তোদের কে বলেছে?
রাশেদঃ আন্টি কল করে সব বলেছে। তুই বাসায় চল।
আমিঃ না আমি জীবনেও আর ওই বাসায় যাবো না।
রাশেদঃ দেখ তুই পাগলামি করিস না, চল বাসায় চল।
আমিঃ বললাম তো আমি যাবো না।
রাশেদঃ তো তুই কোথায় যাবি?
আমিঃ আমাকে তোদের চিন্তা করা লাগবে না। তোরা যা,,,,
রাশেদঃ সত্যিই যাবি না?
আমিঃ না।
জলিলঃ কি করবি তাহলে?
আমিঃ জানি না, তবে এটা সিউর থাক যে আমি আর বাসায় যাচ্ছি না।
রাশেদঃ পড়ালেখার কি হবে?
আমিঃ জানি না। করবো না আর, করে লাভ কি?
জলিলঃ দেখ এই সামান্য ঘটনার জন্য পড়ালেখা বন্ধ করিস না, তুই তোর ফ্যামিলিকে দেখিয়ে দে। তোর ভাবিকে বুঝিয়ে দে যে তাদের ছাড়াও তুই প্রতিষ্ঠিত হতে পারিস।
রাশেদঃ আচ্ছা এখন আমার সাথে আমাদের বাসায় চল। কি করবি সেটা পরে দেখা যাবে।
জলিলঃ হুম সেটাই চল।



তারপর রাশেদের বাসায় চলে গেলাম।
রাতে আমি রাশেদ আর জলিল ওদের ছাদের উপর বসে আছি বার বার নিশিতার কথা মনে পড়তে লাগলো।
জলিলঃ তুষার!
আমিঃ হুম বল।
জলিলঃ একটা কাজ কর।
আমিঃ কি?
জলিলঃ নিশিতাকে উঠিয়ে নিয়ে আয়। তারপর বিয়ে কিরে নে।
আমিঃ নারে নিশিতা ওর আব্বু আম্মুর উপরে কথা বলবে না। আর নিশিতাকে আমি নিয়ে আসলে ভাইয়া আর ভাবির ডিভোর্স হয়ে যাবে।
জলিলঃ তাহলে কি করবি?
আমিঃ দোস্ত আমি ওরে ছাড়া থাকতে পারমু না।
জলিলঃ তুই বাসায় ফিরে যা, দেখবি সব মেনে নিবে।
আমিঃ না, আমি ওয়াদা করেছি আমি ওই বাড়িতে গেলেও থাকবো না, শুধু আব্বু আম্মু ছাড়া কারো সাথে আর কথা বলবো না। যদিও যাই এক ফোটা পানিও খাবো না।
জলিলঃ তুই একটা কাজ কর।
আমিঃ কি?
জলিলঃ তুই চট্টগ্রাম চলে যা।
আমিঃ কেন?
জলিলঃ ওখানে গিয়ে পড়ালেখাটা শেষ কর, নিশিতার বয়স এখনো বেশি হয়নি। তুই ভালো কোনো চাকরি পেলে এমনিতেই তোর কাছে বিয়ে দিবে।
রাশেদঃ হুম এটাই কর। আমার কয়েকটা ফ্রেন্ড ওখানে আছে। ওদের সাথে থাকবি পড়ালেখা করবি। আমি ওদের বলে দেবো যাতে তোর জন্য একটা চাকরি দেখে বা কয়েকটা টিউশনি দেখে যা খরচটা অন্তত চালাতে পারিস।

আমিঃ ওকে, তাহলে তুই কথা বল।
রাশেদঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
পরেরদিন আমি রাশেদ আর জলিল চট্টগ্রাম চলে গেলাম। সেখানে সোহাগ, শাহিদুর আর শোয়াইব  নামের ৩ টা ছেলে আমাদের নিতে আসলো। পরে জানলাম এরাই রাশেদের বন্ধু।

অবশেষে ওদের সাথে ব্যাচেলর উঠে গেলাম। আব্বু আম্মুর জন্য মন খারাপ থাকতো সব সময়। রাশেদ আর জলিল আমাকে রেখে আবার নোয়াখালীতে চলে আসে। ওদের সাথে মোবাইলেই কথা হয়। মাঝেমাঝে আম্মুর সাথে কথা হয়, এভাবেই দিন যাচ্ছিলো। সোহাগ  শোয়াইবও আমাকে খুব ভালো বন্ধু হিসেবে দেখে। কয়েকটা টিউশনি করিয়েই দিন যাচ্ছে।

হঠাৎ একদিন জলিল কল দিয়ে বললো নিশিতার বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে জানায়নি কারন আমি জানলে নাকি সমস্যা করতাম। জলিলও শুনেছে বিয়ের কয়েকদিন পর। ইচ্ছা করছে উড়ে নিশিতার কাছে চলে যাই কিন্তু পারলাম না। নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। ফ্যামিলি এতো বড় গাদ্দারি করবে কখনো কল্পনা করিনি। আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আম্মু বলেছে তারাও নাকি বিয়েতে যায়নি। শুধু ভাইয়া আর ভাবি গিয়েছিলো। 

আর বিয়েটা ভাবিই দিয়েছে। কিছু বললাম না আর!!!
সেদিন অনেক গুলো ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ফেলি নিজেকে সারা জীবনের জন্য ঘুমানোর জন্য কিন্তু সেটাও পারলাম না।
সোহাগ, শোয়াইব, শাহিদুর তাড়াতাড়ি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, অল্পের জন্য বেঁচে যাই।

পরে রাশেদ আর জলিলও আসে, কোনো কথা না বলে দুজনেই আমার গালে ঠাসস করে চড় বসিয়ে দেয়। তারপর জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। আমার চোখ দিয়েও পানি ঝরতে লাগলো। রাশেদ আর জলিল ২ দিন থেকে আবার ব্যাক করলো। আমি সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকতাম।

কিছুদিন পর আম্মু কল দেয়….
আম্মুঃ কেমন আছিস?
আমিঃ ভালো, তোমরা?
আম্মুঃ আছি।
আমিঃ আব্বু কোথায়?
আম্মুঃ পাশে আছে। শোন তোকে একটা কথা বলার জন্য কল করেছি।
আমিঃ হুম বলো।
আম্মুঃ তোর ভাইয়ের মেয়ে হয়েছে, তুই কাকা হয়েছিস।
আমিঃ সরি তুমি ভুল বলছো। আমার কোনো ভাই নেই।
আম্মুঃ প্লিজ এভাবে বলিস না। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার অন্তত বাড়িতে আয়।
আমিঃ নাহ, অন্য কথা থাকলে বলো।
আম্মুঃ অন্তত ছোট্ট মেয়েটাকে দেখে যা।
আমিঃ আমার সময় নাই, কখনো সময় ফেলে আসবো।
এ কথা বলে কল কেটে দিলাম। 

আম্মু কান্নাকাটি করলো বাট আমি যাইনি। এভাবে মাস শেষ হয়ে বছরও শেষ আমি আর বাসায় যাইনি। নিশিতার জন্য এখনো আমি কান্না করি। সত্যিই অনেক ভালো বাসতাম মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটাও স্বার্থপর, ওর জন্য ঘর ছাড়া হলাম কিন্তু খুব সহজেই অন্য কাওকে বিয়ে করে নিলো। একবারও ভাবলো না আমার কথা।

প্রায় ২ বছর পর, আমি অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হলাম। ছোট একটা চাকরিও পেলাম, মাসে মাসে আব্বু আম্মুর জন্য টাকা পাঠাই যাতে ভাবি আব্বু আম্মুকে কিছু বলতে না পারে।

একদিন আব্বু কল দিলো। এমনিতে আব্বুর সাথে তেমন কথা বলি না, বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর একদিন বলেছি তাও ভুলে। আর আজকে আব্বু নিজেই কল দিয়ে বললো আম্মু নাকি অনেক অসুস্থ, শেষ বারের মতো আমাকে দেখতে চাইছে। আব্বুর কথা শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি, ব্যাগপত্র ঘুছিয়ে নোয়াখালীর দিকে রওনা দিলাম।

অবশেষে নোয়াখালী চলে আসলাম, রাশেদ আর জলিল আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো তারপর ওদের কে সাথে নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালাম, কিন্তু ওরা গেলো না। কলেজে কি একটা কাজ আছে নাকি, ওরা কলেজে চলে গেলো, আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম।

ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ১১ টা বাজে, একটা হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাওয়ার টা প্যাকেট করে নিলাম। সাথে কয়েক বোতল পানি নিলাম। আব্বু আম্মুর জন্য কিছু জিনিস নিয়ে আর ভাইয়ার মেয়ের জন্য কয়েক প্যাকেট চকলেট নিয়ে বাসায় গেলাম।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম!!  কি রকম অস্বস্তি লাগছে!! শরীর কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে কলিংবেল চাপ দিলাম। ভিতর থেকে কেউ বললো দরজা খোলাই আছে, আমি ভিতরে গেলাম। ছোট একটা পরিকে দেখে আমার চোখ আটকে গেলো। পরীটা আর কেউ নয় আমার ভাইয়ের মেয়ে। চেহারাটা একদম ভাইয়ার মতো।

পরীঃ কে গো তুমি? (বাহ! কথাও বলতে পারে)
আমিঃ তুমি কে, তোমার নাম কি?
পরীঃ আমার নাম তমা। তুমি কে?
আমিঃ আমি তোমার চাচ্চু।
তমাঃ তুমিই সেই যার জন্য দাদু প্রতিদিন কাঁদে? যাও তুমি পচা, তোমার সাথে কথা নাই।
আমিঃ ওলে ওলে বাবুটা রাগ করে দেখতেছি, এটা বলেই তমাকে কোলে তুলে নিলাম। তারপর চকলেট গুলো ওর হাতে দিলাম। ওরে কোলে নিয়ে আম্মুর রুমে গেলাম। আম্মু আমাকে দেখেই কাঁদতে শুরু করলো। আমি গিয়ে সালাম করবো এমন সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না, মা তো ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। আমিও মাকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম কিছুক্ষণ।

মা আগের মতো নাই, শরীর পুরো ভেঙ্গে গেছে। আমি মায়ের পাশে বসে আছি, তমা আমার কোলে। এমন সময় আব্বু রুমে আসলো। আব্বুর চোখেও স্পষ্ট পানি দেখতে পেলাম, আব্বুও প্রায় কেঁদে দিলো। অনেকক্ষণ পর ভাবি আসলো, আমি এসেছি যে হয়তো জানে না। আম্মুর রুমে কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে আসলো।

ভাবি আমাকে দেখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো, কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি উঠে তমাকে কোলে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। মেয়েটা অনেক মিষ্টি, একদিনেই মন জয় করে নিলো। কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নিজের রুমে গেলাম। সেই সব কিছুই আগের মতো আছে। পুরোনো স্মৃতিগুলোর কথা মনে করে আমারও চোখের কোনে পানি জমা হলো। তারপর আম্মুর কাছে গেলাম, গিয়ে আম্মুর পাশে বসে বসে কথা বলতেছি এমন সময় ভাবি আসলো সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকছে।
আম্মুঃ চল খেতে চল।
আমিঃ আমি খাবার নিয়ে আসছি। তোমারাও আমার সাথে খাও।
আম্মুঃ কি বলিস, কোথায় থেকে আনলি?
আমিঃ হোটেল।

তারপর ব্যাগ থেকে খাবার বের করে আমি, আব্বু, আম্মু খেয়ে নিলাম। তমাকেও খাইয়ে দিলাম। ভাবি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো, তারপর নিজের রুমে চলে গেলো। বিকালবেলা আমি চলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় আব্বু বললো…
আব্বুঃ কোথায় যাচ্ছিস?
আমিঃ চলে যাচ্ছি।
আম্মুঃ কয়েকটা দিন থেকে যা।
আমিঃ মা আম্মু, কাজ আছে।
আব্বুঃ আজকের রাত টা থেকে যা।
আম্মুঃ প্লিজ বাপ না করিস না।
আমিঃ আচ্ছা।
বিকালবেলা বের হয়ে রাশেদ আর জলিলের সাথে আড্ডা দিলাম। মনটা একদম ফ্রেশ হয়ে গেলো। রাতে বাসায় যাওয়ার সময় রাশেদ আর জলিলকেও নিয়ে গেলাম। কারন আমি ওই বাসায় থাকবো না, বিদায় নিয়ে চলে আসবো তাই। বাসায় গেলাম, রাশেদ আর জলিল আম্মুকে দেখলো। কথা বললো, তমা এসে আমার কোলে উঠে গেলো।

কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আসলো। আমি আম্মুর কাছেই ছিলাম। আমাকে দেখে দৌড় দিয়ে আসতে যাবে এমন সময় আমি মোবাইলটা কানে লাগিয়ে উলটো দিকে হাটা দিলাম। ভাইয়া নিশ্চিত বুঝেছে আমি ওর সাথে কথা বলবো না। ভাইয়ার সাথে ভাবিও ছিলো, আমি মোবাইলটা কানে লাগিয়ে জলিলের কাছে চলে আসলাম।

ভাইয়াও আসলো….
ভাইয়াঃ কি অবস্থা তোমাদের?
রাশেদঃ জ্বি ভাইয়া ভালো।
ভাইয়াঃ আজকে সবাই খেয়ে যাবে।
জলিলঃ আসলে ভাইয়া আম্মুকে বলে এসেছি, আম্মু অলরেডি খাবার রেডে করে ফেলেছে।
ভাইয়াঃ না এতো কথা আমি শুনবো না, আজকে খেতেই হবে।
ওরা আর কিছু বললো না, আমি মোবাইলটা আবারও কানে লাগিয়ে বাইরে চলে গেলাম।
বাইরে গিয়ে হোটেল থেকে খাবার নিয়ে বাসায় গেলাম।
আমার রুমে আমরা ৩ জন বসে আছি এমন সময় ভাবি আসলো, খাওয়ার জন্য ডাকছে।
ওরা উঠে গেলো, আমাকেও উঠালো।
আমি প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ওদের সাথে ডাইনিং রুমে গেলাম।
ভাবি মনে করেছে আমিও খাবো তাই সবার আগে আমাকেই ভাত দিয়েছে কিন্তু আমি ওগুলো দূরে ঠেলে দিয়ে প্যাকেটটা খুলে প্যাকেটের উপর রেখেই খাওয়া দিলাম।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
আব্বু আম্মু আর খেলো না, ভাইয়াও রেখে উঠে গেলো।
তারপর রুমে এসে রেডি হয়ে নিলাম। 

সব কিছু নিয়ে বের হবো এমন সময় দেখি তমা নেই, মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। আব্বু আম্মুকে সালাম করে বেরিয়ে পরলাম, আম্মু কান্না থামাচ্ছেই না, ভাইয়া আর ভাবি এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বেরিয়ে জলিলদের বাসায় চলে গেলাম, রাতটা ওখানে থেকে পরের দিন আবার চট্টগ্রাম চলে গেলাম।

এরপর থেকে আম্মুর সাথে মোবাইলে কথা হয়, ভাইয়া নাকি সেদিন ভাবিকে অনেক বকাঝকা করেছে আমার পিচ্ছি আম্মুটা বললো। পিচ্ছিটার সাথে প্রতিদিনই আমার কথা হয়। এভাবেই দিন যাচ্ছে, মাস শেষ হয়ে বছর। আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করলাম, একটা কোম্পানির এমডি হলাম।
চাকরি বাকরি সব কিছু ভালো ভাবেই যাচ্ছে।

সময় পেলেই আমি মাইজদি  পৌর পার্কে ঘুরি কারন নিশিতাকে নিয়ে আমি প্রায়  পৌর পার্কে ঘুরতাম। আর এই পার্কে নিশিতা আমাকে প্রথম  ভালোবাসি কথাটা বলেছিল। এই পার্কে আসলেই নিশিতার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো অনুভব করতে পারি। আজকেও ঘুরতেছি এমন সময় নিশিতার সাথে পার্কে ধাক্কা খেলাম (১ম পর্বে বলেছি, তারপর নিশিতার আর আমার ঘটনাটা বললাম)।

রাতের বেলা আর ঘুম হয়নি, বার বার নিশিতার কথা মনে পড়তে লাগলো। সকালবেলা রেডি হয়ে অফিসে গেলাম। একজন কর্মকর্তা আসলো নাম জসিম।
জসিমঃ স্যার আসবো?
আমিঃ হুম আসেন। কিছু বলবেন?
জসিমঃ জ্বি স্যার একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ জ্বি বলুন।
জসিমঃ স্যার আমার কয়েকদিন ছুটি লাগবে।
আমিঃ কয়দিন??
জসিমঃ স্যার ৩ দিন হলে হবে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
জসিম চলে গেলো,এমন সময় আম্মু কল দিলো,কিছুক্ষণ কথা বললাম।
তারপর তমা মোবাইলটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো, পরীটার কথা শুনে মন ফ্রেশ হয়ে গেলো। পরীটার নাকি জন্মদিন পরশুদিন আমি না গেলে কেক কাটবে না।
তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম।

পরেরদিন আমি অফিস করে রাতের বেলা রওনা দিলাম, রাত ১১ টায় বার্থডে পালন হবে। অলরেডি চট্টগ্রাম থাকতে ৮ টা বেজে গেলো। ড্রাইভারকে বললাম তাড়াতাড়ি চালাতে। আমি নোয়াখালীতে নেমে নোয়াখালী সুপার মার্কেট থেকে অনেক গুলো গিফট, একটা বড় কেক, আব্বু আম্মুর জন্য কাপড় চোপড় নিলাম।।

রাশেদ আর জলিলকেও আসতে বললাম, ওরাও আসলো, তারপর ওদের নিয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলাম। বাসায় যেতে ১১.৪০ বেজে গেলো। তাড়াতাড়ি কলিং বেল চাপ দিলাম আর সাথে সাথেই একটা টাসকি খেলাম। কারন দরজা খুলে দিয়েছে নিশিতা।



আমি কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তারপর জলিলের ধাক্কা খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসলাম। ভিতরে গেলাম, শুধু আব্বু আম্মুকে সালাম করলাম আর তাদের সাথে কথা বললাম। ভাইয়া, ভাবি, নিশিতার আব্বু আম্মু কারো সাথে কথা বললাম না। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয়তো ভাবছে এতোটা পরিবর্তন কি করে সম্ভব।

তমা একটা লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠে গেলো। একটু পর ভিতরের রুম থেকে জসিম আসলো, মানে আমার অফিসের কর্মচারী। 

আমাকে দেখেই…..
জসিমঃ স্যার আপনি এখানে?
আমিঃ আরে জসিম সাহেব যে।
জসিমঃ জ্বি স্যার। স্যার আপনি এখানে আসলেন কি করে?
আমিঃ ওই যে আমার আব্বু আম্মু। (শুধু আব্বু আম্মুকে দেখিয়ে দিলাম)
জসিমঃ ওহ তাহলে তো আপনি আমার আত্নীয়।
আমিঃ হয়তো, আপনি কার কি হন?
জসিমঃ জ্বি আমি আপনার ভাইয়ের ভায়েরা ভাই। মানে নিশিতার হাসবেন্ড।

কথাটা শুনে মনটা কেঁপে উঠলো, নিশিতা  নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিশিতার আব্বু বললো….
আংকেলঃ জসিম তুমি ওকে কি করে চেনো?
জসিমঃ আরে বাবা কি বলেন! উনিই তো আমাদের কোম্পানির এমডি, আমাদের স্যার। অনেক ভালো মানুষ। আংকেল নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আমি জসিমকে বললাম অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য। অন্য কাওকে কিছু বলিনি।

নিশিতার দিকে যতবার তাকাচ্ছি ততবার আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে

তারপর কেক কাটলো, তমা সবার আগে আমাকে খাইয়ে দিলো, আমিও শুধু তমাকে খাইয়ে দিলাম। তমা একে একে সবাইকে খাইয়ে দিলো, সবাই তমাকে খাইয়ে দিলো। ভাইয়া বার বার আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইলেই আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। কেক কাটা শেষে আমি তমার হাতে সব গুলো গিফট তুলে দিলাম। তারপর আম্মু আব্বুর জন্য নিয়ে আসা জিনিসগুলো উনাদের হাতে দিলাম।

দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই আমি আম্মুর রুমে চলে গেলাম। আম্মু আব্বুও আমার পিছু পিছু আসলো
আম্মুঃ আজকেও ওদের সাথে কথা বলবি না, এতো পাষাণ হয়ে গেছিস?
আমিঃ আমার কোনো ভাই নেই, শুধু তুমি আব্বু আর তমা ছাড়া।
আম্মুঃ তো তমা কোত্থেকে আসলো তাহলে?
আমিঃ……
একটু পর তমাও আসলো, এসে আমার কোলে উঠে গেলো। হঠ্যাৎ করেই চোখ পড়লো আম্মুর খাটে একটা বাচ্ছার দিকে, কি সুন্দর ফুটফুটে বাচ্ছা। দেখে মনে হচ্ছে একটা জান্নাতি হুর ঘুমিয়ে আছে।

আমিঃ এই বাচ্ছাটা কার?
তমাঃ আরে এটা আমার খালাতো বোন, নিশিতা আন্টির মেয়ে।
কথাটা শুনে আরো একটা ধাক্কা খেলাম। মাত্র ৫ বছরে সব কিছুই চেইঞ্জ হয়ে গেছে। না আর এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। আমার শরীর কাঁপতেছে। আম্মুকে বললাম আমি চলে যাচ্ছি অনেকবার থাকতে বলেছে বাট থাকিনি। আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে দেখি রাশেদ, জলিল আর আমার ড্রাইভার খাওয়ার জন্য ডাইনিং এর দিকে যাচ্ছে।

আমিঃ লিটন ভাই (ড্রাইভার) চলেন, আমরা চলে যাবো।
রাশেদঃ আরে ভাবি তো আমাদের খেতে ডাকছে।
আমিঃ বাইরে খেয়ে নিবো। চল,,,,
জলিলঃ কিন্তু সবাই তো একসাথে খাবে এখানে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তোরা খেয়ে বাসায় চলে যাস। আমি যাচ্ছি, লিটন ভাই আসেন।
রাশেদঃ না দাঁড়া, আমরাও আসছি।
আমিঃ ওকে আয়, আপনি গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেন। লিটন ভাই বাইরে চলে যায়, আমি আব্বু আম্মুকে সালাম করে নিলাম,
সবার দিকে একবার তাকালাম, ভাইয়ার চোখে পানি টলোমলো করছে, নিশিতা ছাড়া আর বাকিরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তমা এসে আমার কোলে উঠে যায়।

তমাঃ চাচ্চু, ও চাচ্চু তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমাদের সাথে থাকতে পারো না।
আমিঃ না আম্মু আমার থাকার কোনো যোগ্যতা নেই, আমি ফ্যামিলিতে টাকা দিতে পারবো না। আমি হচ্ছি কুলাঙ্গার,
ফালতু ছেলে। আমি এখানে থাকলে তুমিও খারাপ হয়ে যাবে।
তমাঃ তুমি তো আমার ভালো চাচ্চু। ওরা সবাই পচা। 
আমি তমার মুখে একটা পাপ্পি দিয়ে ওকে নিয়ে বাইরে যাই, সবাই হয়তো বুঝে গেছে আমার কথার মানে। জসিমও বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। তমাকে নিয়ে বাইরে গেলাম, আমার পিছু পিছু সবাই আসলো।
রাশেদ আর জলিলকে গাড়িতে উঠতে বললাম। তমার হাতে কতো গুলো টাকা দিয়ে তমাকে আম্মুর কোলে দিয়ে শেষ বারের মতো সবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেলাম। লিটন ভাই গাড়ি টান দিলো। আম্মু কান্না শুরু করলো। আমারও চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো কিছুদূর গিয়ে আমরা একটা হোটেলে খেয়ে নিলাম, রাশেদ আর জলিলকে বিদায় দিয়ে আবার চট্টগ্রাম এর দিকে রওনা দিলাম।

গাড়ি চলছে তার আপন মনে, আমি হারিয়ে গেছি ফেলে আসা সেই অতীতে। হয়তো আজকে আমারও খুব সুন্দর একটা ফ্যামিলি থাকতো। আমিও অন্য দশজনের মতো থাকতে পারতাম। সামান্য একটা চাকরির জন্য হারালাম নিজের ভালোবাসাকে, ছেড়ে দিলাম ফ্যামিলিকে। সব কিছু থেকেও অনাথ, হয়তো আজকে আমিও নিশিতা কে নিয়ে অনেক সুখে থাকতাম। স্বপ্ন দেখতাম অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু নিয়তি কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা কেউ বলতে পারে না। সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকে না। সব কিছুর সমাপ্তি নেই, কিছু গল্প অসমাপ্ত থেকে যায়। তবুও ভালো থাকুক প্রিয় মানুষ গুলো।

সবার সব কিছু থাকুক পূর্ণ, হয়তো আমার গল্পে তুমি নেই, আমার জীবন নাহয় থাকবে দুঃখে পরিপূর্ণ, এটাই আমার অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প।


******** সমাপ্ত ********
যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০৪

যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০৪

 
এই অবস্থা দেখে আমি পেছনে তাকাই, তাকাতেই আমি অনেক বড় একটা ধাক্কা খেলাম, কারন পেছনে ভাবি দাঁড়িয়ে আছে, আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো।
ভাবিঃ নিশিতা তুই এখানে কি করিস?
নিশিতাঃ কই কিছু না।
ভাবিঃ যা ঘুমাতে যা।
নিশিতা মাথা নিচু করে চলে যায়, ভাবি কিছুক্ষণ আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমিও নিজের রুমে চলে যাই। রাতে বসে বসে ভাবছি ভাবি আবার নিশিতাকে ওদের বাসায় পাঠিয়ে দিবে কিনা।


এমন সময় আফছার কল দিলো,
আমি কল ধরে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
কারন আমার রুমে নেটওয়ার্ক থাকে না।
আমি ছাদের উঠার জন্য সিঁড়ি রুমের দিকে যাচ্ছি এমন সময় ভাইয়া আর ভাবির রুম থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসতে লাগলো।
এতো রাতে আবার কি নিয়ে ঝগড়া করছে কে জানে!
 আমি আফছারকে পরে কল দিবো বলে কলটা কেটে দিলাম, দরজার পাশে লুকিয়ে শুনার চেষ্টা করলাম ওরা কি বলে সেটা শুনার জন্য…..
ভাবিঃ এই শোনো আমি সকলের জন্য রান্না করতে পারবো না।
ভাইয়াঃ মানে কি? এখানে নতুন কেউ আসছে নাকি??
ভাবিঃ পুরাতনদের কথাই বলছি।
ভাইয়াঃ দেখো পাগলামি করো না। তুমি না করলে করবে কে? আম্মুও অসুস্থ হয়ে গেছে।
ভাবিঃ সব কিছু কি আমাদের ঠেকা পড়েছে নাকি?
ভাইয়াঃ মানে!
ভাবিঃ তুমি সারা দিন অফিস করবা, এতো কষ্ট করবে, আমি সারাদিন মালির মতো বাসার কাজ করবো আর অন্যরা বসে বসে খাবে।
ভাইয়াঃ অন্যরা কোথায় ফেলে! আব্বু আম্মু আর তুষার থাকে এ বাসায়, বাইরের কেউ তো থাকে না।
ভাবিঃ তো ও বসে বসে খাবে কেন?
ভাইয়াঃ কে?
ভাবিঃ তোমার ভাই? ও কিছু করতে পারে না। ফ্যামিলিটা কি শুধু তোমার একার নাকি?
ভাইয়াঃ আরে আজব, ও এখনো ছোট। পড়ালেখা করতেছে।
পড়ালেখা শেষ হোক তারপর তো ও চাকরি করবেই।
ভাবিঃ তাই বলে এতো বড় হয়েও বসে বসে খাবে?
ভাইয়াঃ দেখো ইশিতা, আব্বু যখন ইনকাম করতো তখন আমিও এই ভাবে বসে বসে খাইছি। পড়ালেখা শেষ করেই চাকরি নিয়েছি।
ভাবিঃ বাবার হোটেল আর ভাইয়ের হোটেল এক না।
ভাইয়াঃ তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো তুষারকে কাজ করতেই হবে।।
ভাবিঃ একদম কারেক্ট, বসে বসে খাওয়া চলবে না।
ভাইয়াঃ এই তুমি পাগল হয়ে গেছো, ও কি করবে এখন?
ভাবিঃ যেটা মন চায় সেটাই করুক বাট বসে বসে খাওয়া চলবে না।
আর তোমার আব্বু আম্মুকে কি শুধু আমরা খাওয়াবো নাকি?
ভাইয়াঃ মানে!
ভাবিঃ উনারা তো শুধু তোমার বাবা মা নয়,
তুষার  এরও।
সেই হিসেবে ওর ওতো অনেক দায়িত্ব আছে। তুষার কেও উনাদের খাওয়াতে হবে।
ভাইয়াঃ ওয়েট ওয়েট, তুষার  খাওয়াবে মানে কি? আমরা কি এখনো আলাদা হইছি নাকি??
তুষার  বিয়ে সাদি করে বউ নিয়ে আলাদা আছে???
ভাবিঃ দেখো এতো কিছু আমি বুঝি না, আমি সবার জন্য রান্না করবো না।
ভাইয়াঃ তোমার মাথা কি একেবারে খারাপ হয়ে গেছে?
ভাবিঃ হে হে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তুমি দেখছো না আমাদের সন্তান আসবে, ওর ওতো একটা ভবিষ্যৎ আছে।
ওর জন্য চিন্তা করা লাগবে না?
ভাইয়াঃ ইশিতা আমাদের সন্তান এখনো পৃথিবীতে আসে নি। সো এখন এগুলো নিয়ে কথা বলবে না। আরে আব্বু আম্মু আমার জন্য কিনা করেছে আর তুমি বলছো ওদের না খাওয়াইতে।
ভাবিঃ আমি তো একবারও বলিনি উনাদের খাওয়াবো না।
ভাইয়াঃ তাহলে কি বলতে চাচ্ছো?
ভাবিঃ খুব সিম্পল তুষার টাকা ইনকাম করে তোমার হাতে দিবে, তাহলেই সে এই বাসা খেতে পারবে।
ভাইয়াঃ ইশিতা ভুলে যেও না টাকা আমি ইনকাম করি তুমি না। সো কে খাবে আর কে খাবে না সেটা আমি ডিসাইড করবো।
ভাবিঃ ও আচ্ছা তার মানে এই বাসায় আমার কোনো দাম নেই, আমি উড়ে এসেছি।
ওকে ওয়েট আমি কালকেই বাবার বাড়ি চলে যাবো।
ভাইয়াঃ উলটো বুঝো কেন?
ভাবিঃ শোনো, আমি এতো কিছু জানি না। তুমি তুষারকে আর খাওয়াবে না, আর আব্বু আম্মুর জন্য জকেও টাকা দিতে হবে। নাহলে.....
ভাইয়াঃ নাহলে কি?
ভাবিঃ নাহলে আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।
ভাইয়াঃ ওকে চলে যাও।
ভাবিঃ হুম যাবো, তবে একদিনের জন্য নয়। সারা জীবনের জন্য।
ভাইয়াঃ মানে!
ভাবিঃ তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
ভাইয়াঃ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ভাবিঃ তুমি আমার কথায় রাজি কিনা সেটা বলো।
ভাইয়াঃ কোন কথা?
ভাবিঃ তুষারকে আর একটা টাকাও দিবে না এন্ড সংসারের জন্য টাকা দিতে হবে।
ভাইয়াঃ এটা অসম্ভব।
ভাবিঃ ওকে তাহলে কালকে সকালে ১০ লাখ রেড়ি রাখবে। আমি চলে যাবো।
ভাইয়াঃ ১০ লাখ মানে? আমাকে বিক্রি করলেও তো ১০ লাখ হবে না। আর কিসের ১০ লাখ?
ভাবিঃ কাবিন, ১০ লক্ষ টাকা। রেড়ি রাখবে, দেখি তোমার গায়ে কতো চর্বি হয়েছে।
ভাইয়াঃ দেখো সে হুট করে চাকরি পাবে কই।
ভাবিঃ সেটা সে বুঝবে, তাকে নিয়ে তোমার চিন্তা করা লাগবে না। টাকা না দিতে পারলে বাসা থেকে বের করে দিবে।
ভাইয়াঃ এটা কি করে সম্ভব?
ভাবিঃ সব সম্ভব, আমি কথা বলার সময় তুমি শুধু চুপ থাকবে।
ভাইয়া আর ভাবির কথা শুনে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো, আর এক সেকেন্ডও দরজার সামনে থাকলাম না। নিজের রুমে চলে গেলাম।
নিশিতাকে ভালোবাসার জন্য ভাবি এইভাবে শাস্তি দিবে কখনো কল্পনাও করিনি।
তবে আমি আরো আগে থেকে টের পেয়েছি ভাবি আমার আর আব্বু আম্মুর খাওয়াদাওয়া দেখতে পারে না। অনেক বার চাইছে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে। কিন্তু আব্বুর ভয়ে পারে নি।
এখন আব্বুর বয়স হয়ে গেছে, যেভাবে মন চায় সেভাবে বলছে। আব্বুকে ঘুম থেকে ডেকে এনে বলতে ইচ্ছা করছে
“দেখো তোমার শিক্ষিত বউমার আচরণ, তুমি না বলেছিলে বউ অনেক ভালো, তোমাদের অনেক সেবা করবে, এটাই কি ভালোর নমুনা। শুয়ে শুয়ে ভাবছি মেয়েরা মায়ের জাত সেজন্য কিছু বলতে পারি না। মাঝেমাঝে ইচ্ছা করে ভাবির দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিই। রাতে আর ঘুমালাম না, ছাদে গিয়ে বসে রইলাম। সকালবেলা নিশিতা ছাদে আসলো….
নিশিতাঃ এতো সকালে ছাদে, ঘুমাও নি?
আমিঃ না।
নিশিতাঃ কেন?
আমিঃ এমনিই।
তারপর নিশিতা আমার পাশে বসলো, আমার একটা হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে কথা বলতে শুরু করলো। নিশিতার এই রকম আচরণ দেখে আমার মনটা একটু হালকা হলো। নিশিতার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় ভাবি আমাদের পিছনে এসে অনেক জোরে একটা চিল্লানি দিলো। ভাবির চিল্লানি দেখে নিশিতা ভয়ে কাঁপতে থাকে, চিৎকার শুনে ভাইয়া আব্বু আম্মু সবাই ছাদে আসে।
আব্বুঃ কি হইছে?
ভাবিঃ আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন।
ভাইয়াঃ আচ্ছা সবাই নিচে চলো, আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে।
নিচে গেলাম। ভাবি কল দিয়ে উনার আব্বু আম্মুকে আসতে বললেন।
ততক্ষণ কেউ কোনো কথা বলছে না।
প্রায় ১ ঘন্টা পর ভাবির আব্বু আম্মু আসলো
আব্বুঃ এই তুষার কি হইছে?
আমিঃ আব্বু আমি নিশিতাকে ভালোবাসি,
আর নিশিতাও আমাকে।
ভাবিঃ মিথ্যা কথা, নিশিতা জীবনেও ওরে ভালোবাসেনি ও জোর করে নিশিতার সাথে.... ছিহ! ভাগ্যিস আমি ছাদে গিয়েছিলাম।
আমিঃ ভাবি আপনি এসব কি বলছেন?
ভাবিঃ সত্যি বলছি।
ভাইয়াঃ তোর লজ্জা করে না, এতো বড় হয়ে এখনো এগুলো করিস।
খাস তো বসে বসে, দুই টাকা তো এনে দিতে পারিস না। আবার এগুলো করে বেড়াস।
লজ্জা করে না তোর?
আমিঃ বাহ! তুই তোর বউয়ের কথা শুনে আমাকে এটা বললি?
তখন ভাবির আব্বা বলে…
আংকেলঃ বেয়াই সাব, আপনার বাসায় আমার ছোট মেয়েকে পাঠিয়েছি বড় মেয়েটাকে দেখার জন্য, আর আপনারা এই প্রতিদান দিলেন?
আব্বা কোনো কথা না বলে সোজা আমার সামনে এসে ঠাসস ঠাসস করে দুইটা চড় আমার গালে বসিয়ে দেয়।
বাবাঃ কুলাঙ্গার কোথাকার, এই জন্যই তোকে জন্ম দিয়েছি।
আমিঃ বাবা আপনি অন্তত আমাকে বিশ্বাস করুন। আপনি খুব ভালো করে জানেন আমি কেমন।
বাবাঃ দেখতেই তো পারছি কেমন ভালো। অন্যের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করিস।
আমিঃ ওকে ফাইন, আমি যেহেতু নিশিতার সাথে খারাপ কিছু করেছি আমিই নিশিতাকে বিয়ে করবো।
ভাবিঃ বিয়ে করবি মানে? তোর কাছে কে নিশিতাকে বিয়ে দেবে। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে জীবনেও দিবো না।
আমিঃ কেন কি নেই আমার মাঝে?
ভাবিঃ তুই আরো বড় কিছু হলেও নিশিতাকে তোর হাতে তুলে দিবো না।
ভাইয়াঃ এখনো বসে বসে খাস, বিয়ে করার কথা মুখে আনতে লজ্জা করেনা?
আমিঃ তুই মনে হয় অনেক ইনকাম করে রাখছিস?


মাত্র এক বছর ইনকাম করেই তোর এই অবস্থা? আব্বা যে সারা জীবন তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাইয়েছে?

তখন আম্মা এসে আমার মুখে আরো একটা চড় মারে,,,,

আম্মুঃ কুলাঙ্গার! তোর ভাইকে এই কথা বলতে তোর একটুও লজ্জা করলো না? যে তোকে খাওয়াই তাকেই তুই এই কথা বললি?
আমিঃ ওকে আমাকে আর খাওয়াতে হবে না। আব্বু আমি যেইটুকু সম্পত্তি পাবো আমারটা আমাকে বুঝিয়ে দেন। আমি নিশিতাকে বিয়ে করবো।
আব্বুঃ আমি মারা যাওয়ার পর যেটা ইচ্ছা সেটা করিস। এর আগে এক রত্তিও কেউ পাবি না।
ভাবিঃ দুই টাকার মরদ নাই আবার সম্পত্তি নিতে আসছে।
আমিঃ ভাবি আমার মাথা গরম করবেন না, তাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাবো আপনি আমার ভাবি।
ভাবিঃ কি করবি তুই হে, কি করবি? মনে রাখিস তুই যতই চালাকি করিস না কেন, নিশিতাকে পাবি না।

আমি সোজা নিশিতার কাছে গেলাম, ওর ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললাম,
- নিশিতা বলো তুমিও আমাকে ভালোবাসো, বিয়ে করতে চাও? বলে দাও নিশিতা,,
নিশিতা কয়েকবার ভাবির দিকে তাকালো তারপর না সূচক মাথা নাড়ালো, মুহূর্তেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
নিশিতার আব্বু বললো….
আংকেলঃ বেয়াই আপনার ছেলের এতো বড় সাহস আমার মেয়ের গায়ে হাত দেয়,
আমি কিন্তু দুজনকেই (ভাবি/নিশিতা) আমার বাসায় নিয়ে যাবো।
আর জীবনেও আসতে দিবো না আপনার বাসায়
আব্বু কোনো কথা না বলে আমাকে আরো কয়েকটা লাগিয়ে দেয়।
আমিঃ আব্বু নিশিতা মিথ্যা বলছে, ও ভাবির ভয়ে এমনটা করছে।
ভাবিঃ এই ফালতু এই, তোর মতো আমি এতো মিথ্যুক নই। আমার বোনের রুচি এতো টা খারাপ না যে তোকে বিয়ে করবে।
নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না, ভাবির গায়ে হাত তুলে ফেললাম। হুম ভাবিকে চড় বসিয়ে দিলাম।
মুহূর্তেই সবাই অবাক হয়ে গেলো।
ভাবিঃ বাবা আমি আর এই বাসায় থাকবো না, আমাকে নিয়ে চলো (কাঁদতে কাঁদতে)
ভাইয়া আমার কান্ড দেখে ডাইরেক্ট আমার উপর আক্রমণ করে, একটা লাথি দিয়ে মারতে থাকে। একবারের জন্যও ভাইয়ার চোখের দিকে তাকাই নি।
যে ভাই জীবনে কোনো দিন আমার গায়ে হাত তুলে নি সেই ভাই আজকে ভাবির মিথ্যা কথা শুনে আমার গায়ে হাত দিল
আব্বু আর ভাইয়া দুজনেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিলো।

বের হওয়ার সময় ভাইয়াকে বললাম- একদিন সত্যিটা ঠিকই জানবি, মনে রাখিস আমাকে আর পাবি না।

আর কোনো কথা না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আসার সময় ভাবির মুখে স্পস্ট হাসির চিহ্ন দেখলাম। ভাইয়ার আচরনে আমার কোনো দুঃখ নেই কিন্তু নিশিতা? নিশিতা আমার সাথে এমনটা করতে পারলো? আরে আমি তো অর জন্যই মার খেলাম, এতো অপমানিত হলাম। সত্যিটা বললে কি এমন হয়ে যেতো? বাসায় না থাকতে দিলে নাই, আমি নিশিতাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতাম। আসলে মেয়েদের চেনা জীবনেও সম্ভব না। স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।
আমার সাথে নিশিতা এমন করবে আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। সে যদি সত্যি কথাটা বলতো তাহলে ভাবি ছাড়া সবাই পজেটিভ থাকতো। ওয়াদা করলাম আর জীবনে কোনো দিন ওই বাসায় গিয়ে থাকবো না, কোনো দরকার ছাড়া যাবো না। আর আব্বু আম্মু ছাড়া ওদের কারো সাথে কোনো দিন কথা বলবো না।

বাসা থেকে বের হয়ে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে বসে রইলাম। বসে বসে কান্না করতেছি এমন সময় কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রাখে। পেছনে তাকাতেই….

To be Continue………
যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০৩

যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০৩


নিশিতা আর আমি হাত ধরাধরি করে হাটতেছি এমন সময় ভাবি আমাদের দেখে ফেলে।
আমি নিশিতার হাত ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেলাম।
ভাবি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
রাতে খেতে গেলাম সবাই, নিশিতাও আছে।
ভাবিঃ নিশিতা, আম্মু সকালে কল করেছিলো, তোকে চলে যাওয়ার জন্য বলেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসায় চলে যাবি
ভাইয়াঃ সে কি সে আসছে কয়েকদিন থাকুক।
ভাবিঃ নাহ অনেক দিন থেকেছে, আর থাকার দরকার নেই।
ভাইয়াঃ এই তুষার!!!!
আমিঃ হুম ভাইয়া বল।
ভাইয়াঃ সকালে নিশিতাকে বাসায় দিয়ে আসিস। আমি বাইক রেখে যাবো,,,
ভাবিঃ সেটার কোনো দরকার নেই, নিশিতা CNG নিয়ে চলে যাবে। অথবা তুমি যাওয়ার সময় নামিয়ে দিও।
ভাইয়াঃ কিন্তু আমার অফিস।
ভাবিঃ তাহলে নিশিতা গাড়ি নিয়ে চলে যাবে।


আমি বুঝছি ভাবি কেন এমন করছে, নিশিতাও বুঝছে। সে বার বার আমার দিকে তাকাতে লাগলো। আমি কিছু না বলে সোজা রুমে চলে গেলাম।
পরেরদিন ছাদে গিয়ে বসে আছি, ভাবি নিশিতাকে একরকম জোর করেই বাসা থেকে বের করে দিলো।
মেয়েটা বার বার আমার দিকে তাকাতে থাকলো।
ইচ্ছা করছে নিশিতার হাত ধরে টেনে আবার বাসায় নিয়ে আসি, কিন্তু সেটা আর পসিবল না।
ভাবির চোখমুখ লাল হয়ে আছে।
নিশিতা চলে যাওয়ার পর আমারও মন খারাপ হয়ে গেলো।
দুপুরে খেয়ে শুয়ে আছি এমন সময় ভাবি আমার রুমে আসলো।
তখন আব্বু আম্মু ঘুমে ছিলো, ভাইয়াও অফিসে। আমার রুমে আসার পর….
ভাবিঃ তুষার তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমিঃ জ্বি বলুন।
ভাবিঃ দেখো তুষার! আমি ভেবেছিলাম তুমি নিশিতার পেছনে পেছনে ঘুরবে সে জীবনেও তোমাকে মেনে নিবে না,
 কিন্তু কেন তোমাকে মিনে নিয়েছে সেটাই বুঝছি না।
আচ্ছা যাইহোক আসল কথা হচ্ছে তুমি নিশিতার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবেনা।
আমিঃ কিন্তু ভাবি আমি সত্যি সত্যিই নিশিতাকে অনেক ভালোবাসি।
ভাবিঃ দেখো এগুলো হচ্ছে আবেগ, ভালোবাসা বোঝার মতো বয়স তোমাদের এখনো হয়নি।
আমিঃ ভাবি ভুলে যাবে না আপনি আমার থেকে মাত্র ১ বছরের বড়। আর অনার্সে পড়ুয়া একটা ছেলে ভালোবাসা বুঝবে না এটা হতে পারে না।
ভাবিঃ দেখো এতো কিছু আমি বুঝি না, আমি চাই না তুমি নিশিতার সাথে আর কোনো রকম সম্পর্ক রাখো।
আমিঃ ভাবি এটা আপনি কি বলছেন?
ভাবিঃ ঠিকই বলছি। আর যদি বাড়াবাড়ি করো তাহলে আমি সবাইকে বলে দিবো।
আমিঃ ভাবি আমার কথা টা শোনো।
ভাবি আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে চলে গেলো।
বুঝলাম না ভাবি এমন কেন করলো।
আমি তো অতটা খারাপ ছেলে না যে নিশিতার পাশে আমাকে কখনো মানাবে না।
 বা আমি নিশিতার যোগ্য হয়ে উঠবো না।
ভাবতে ভাবতে নিশিতার নাম্বারে কল দিলাম। নাম্বার টা বন্ধ।
আরো টেনশনে পড়ে গেলাম, কি করবো কিছুই বুঝতেছি না।
বিকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম,
 রাশেদ আর জলিলকে কল দিলাম।
 ওদের সাথে আড্ডা দিলাম সব কিছু শেয়ার করলাম।
মোটামুটি নিজেকে হালকা লাগছে।
বাসায় যেতে যেতে প্রায় ১১ টা বেজে যায়, দেখলাম টেবিলে খাবার রেখে সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
আমি খাওয়াদাওয়া করে যেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম তখন ভাইয়া আর ভাবির কথা শুনতে পেলাম।
আমি দরজার আড়াল হয়ে সব শুনতে লাগলাম।
ভাবিঃ এই তুমি তুষারকে এতো টাকা হাত খরচ দাও কেন?
ভাইয়াঃ মানে কি? আমি না দিলে কে দেবে,,,,
ভাবিঃ সে নিজে ইনকাম করতে পারে না?
ভাইয়াঃ সে এখনো লেখাপড়া করছে, শেষ করুক তারপর ইনকাম করবে।
পুরুষ মানুষ তো আর বসে থাকতে পারবে না, একটানা একটা কিছু করতেই হবে।
ভাবিঃ তাই বলে এতো বড় হয়েও বসে বসে খাবে?
ভাবির কথা গুলো শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো। বিয়ে হয়েছে এখনো ১ বছর হয়নি।
 তারমধ্যেই হিসাবনিকাশ শুরু করে দিছে?
 আব্বু যখন আমাদের দুই ভাইকে টাকা দিতো আমি নিজের জন্য অল্প রেখে বাকি গুলো ভাইয়াকে দিয়ে দিতাম যাতে সে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভালো ভাবে থাকতে পারে আর সেই ভাইকে ভাবি এসব উল্টাপাল্টা বুঝাচ্ছে।
আর এক সেকেন্ডও ওদের রুমের সামনে দাঁড়ালাম না, নিজের রুমে চলে গেলাম।
 পরে আর কি কি বলেছে কিছুই শুনিনি।
পরেরদিন সকালে ভাইয়া রেড়ি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য…..
আমিঃ ভাইয়া কিছু টাকা দে, বাইরে যাবো।
ভাইয়াঃ কতো দিতাম?
আমিঃ দে তোর যা মন চায়।
ভাইয়া ২ হাজার টাকা আমার হাতে দিলো, এমন সময় ভাবি রান্না ঘর থেকে এক রকম দৌড় দিয়েই আসলো….
ভাবিঃ বলছিলাম কি, এতো টাকা দিয়ে ও কি করবে?
 ও ছোট মানুষ এতো টাকা হাত খরচ লাগে নাকি?
৫০০ দিলেই তো হয়।
ভাইয়াঃ আরে না, কি ৫০০ টাকা দিবে।
 সব গুলাই নিয়ে যা, শেষ হলে আমাকে বলিস।
ভাবি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গাতে শুরু করলো।
আমি বিষয়টা খেয়াল করলাম।
তারপর টাকা গুলো ভাইয়ার হাতে দিয়ে বললাম….
আমিঃ ভাইয়া, ভাবি আসলেই ঠিক বলেছে। আমি বাচ্ছা ছেলে এতো গুলো টাকা দিয়ে কি করবো?
 বাইরে নিয়ে গেলে হারিয়ে ফেলবো।
তুই এক কাজ কর, টাকা গুলো তোর কাছে রেখে দে। আমি লাগলে তোকে বলবো।
ভাইয়া কিছু একটা বলতে চাইছিলো কিন্তু আমি সোজা রুমে চলে গেলাম।
তারপর থেকে ভাবির সামনে তেমন একটা যাই না। ভাইয়ার সাথেও খুব একটা কথা বলি না।
পরেরদিন শুক্রবার ছিলো, ভাইয়া বসে বসে টিভি দেখতেছে, আমি রুমে বসে গান শুনতেছিলাম এমন সময় জলিল কল দিয়ে বললো বাইক নিয়ে বের হইতে, রাশেদ ও আছে।
ভাইয়ার কাছে গেলাম…
ভাইয়াঃ কিরে, কোথায় থাকস। আয় বস এখানে,,,,
আমিঃ না ভাইয়া, বাইরে যাবো। বাইকের চাবিটা দে।
ভাইয়াঃ ঘুরতে যাবি নাকি?
আমিঃ হুম, জলিল আর রাশেদ নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
ভাইয়াঃ তোর ভাবিকে বল দিতে। কালকে রাতে তোর ভাবিই বাইকের চাবি আমার থেকে নিয়ে কোথায় রাখছে।
আমার আর ভাইয়ার কথা গুলো ভাবি দরজার পাশে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনতেছিলো।
আমি আলমারির আয়নায় সব কিছু দেখেছি। আমি ভাউয়াদের রুমের সামনে গেলাম, দেখলাম ভাবি তাড়াতাড়ি করে বাইকের চাবিটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেললো।
আমিঃ ভাবি চাবি টা দেন।
ভাবিঃ কিসের চাবি?
আমিঃ বাইকের।
ভাবি এদিকওদিক চাবির খুঁজার ভান ধরলো, কিন্তু একবারও বালিশের নিচে হাত দিলো না।
ভাবিঃ তুষার!!! চাবি তো খুঁজে পাচ্ছি না।
তোমার ভাই কোথায় রেখেছে কে জানে।
আমি ভাবছি একবার বলে দিবো চাবিতো আপনি বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখেছেন,
পাবেন কি করে?
কিন্তু এখন যদি এই কথাটা বলি তখন ভাবি বলবে তুমি দেখি আমার বালিশের নিচের খবরও জানো।
কিছু না বলে বাইরে চলে গেলাম।
 মন খারাপ দেখে জলিল আর রাশেদ বার বার জিজ্ঞেস করলো কি হইছে কিন্তু আমি কিছু বললাম না।
যতোই হোক, ঘরের কথা বাইরে বলা উচিত হবে না।
তারপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।
পরেরদিন আমি কলেজে চলে গেলাম। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় ভাবির নাম্বার থেকে কল আসলো,আমি ধরলাম না।
বার বার কল দিতে লাগলো, আমি সুইচ অফ করে রেখে দিলাম।
প্রায় ৩০ মিনিট পর মোবাইল ওপেন করলাম। দেখলাম অনেক গুলো কল এসে জমা হলো,,,,,
একটু পর ভাইয়া কল দিলো….
ভাইয়াঃ কিরে তুই কল ধরিস না কেন, আবার নাম্বারও বন্ধ।
আমিঃ ভাইয়া ক্লাসে ছিলাম। বল কি হইছে?
ভাইয়াঃ তাড়াতাড়ি বাসায় যা, তোর ভাবি নাকি মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।

কল কেটে দিয়ে জলিল আর রাশেদকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় গেলাম। ভাবি শুয়ে আছে, তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
ভর্তি করিয়ে আমরা বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম, একটু পর ভাইয়াও চলে আসলো।
ভাইয়াঃ কিরে কি হইছে?
আমিঃ তেমন কিছু না, মনে হয় মাথা ঘুরেছে।
ভাইয়াঃ ডাক্তার কিছু বলেছে।
আমিঃ না।
সানিঃ ওই যে ডাক্তার আসছে, চলেন গিয়ে কথা বলি।
ভাইয়াঃ ডাক্তার সাহেব ইশিতার কি অবস্থা?
ডাক্তারঃ ভালোই, তেমন কিছু হয়নি। রুগি আপনার কি হয়?
ভাইয়াঃ জ্বি আমার ওয়াইফ।
ডাক্তারঃ Congratulations. আপনি বাবা হতে চলেছেন।
ডাক্তারের কথা শুনে ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
আসলে এটা খুশির কান্না।
তারপর ভাবিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। আমি খুব একটা ভাবির সাথে কথা বলি না। আর হে ভাইয়ার কাছেও তেমন হাত পাতি না।

সারাদিন ঘরে বসেই থাকি, কলেজেও হেটে হেটে যাই।
মাঝেমাঝে নিশিতার কথা অনেক মনে পড়তো, কিন্তু চাইলেও ওর সাথে কথা বলতে পারতাম না। প্রতিদিন অনেকবার কল দিতাম কিন্তু নাম্বার অফ থাকতো।
এভাবে কিছুদিন গেলো, ভাবিও মোটামুটি সুস্থ, তবে একটা সমস্যা হচ্ছে ভাবি কোনো কাজ ঠিক মতো করতে পারছে না, আম্মুও অসুস্থ তাই ঘরের কাজ গুলো ঠিক ভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাধ্য হয়ে নিশিতাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলো।
ওরে দেখেই আমার ভিতরটা কেঁদে উঠলো, ভাবি সামনে থাকায় কিছু বললাম না।
রাতের বেলা নিশিতা আমার রুমের সামনে আসে, ওরে দেখেই আমি দৌড় দিয়ে ওরে জড়িয়ে ধরি।
নিশিতাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

হঠ্যাৎ করে নিশিতা আমাকে ছেড়ে দেয়,
কিন্তু আমি তখনও নিশিতাকে জড়িয়ে ধরে আছি, নিশিতার এই অবস্থা দেখে আমি পেছনে তাকাই, তাকাতেই আমি অনেক বড় একটা ধাক্কা খেলাম,
কারন পেছনে……..

To be Continue……
যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০২

যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০২


ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ওয়াশ রুমের দরজা খুলেই একটা টাসকি খেলাম।
ভিতরে একটা মেয়ে গোসল করতেছে, আমাকে দেখেই একটা চিৎকার দিলো। চিৎকার শুনে আমি দিলাম এক দৌড়।
মেয়েটা দরজা লাগিয়ে দিলো। চিৎকার শুনে সবাই রুমে আসলো, একটু পর মেয়েটাও বাহিরে আসলো। দেখতে মাশাল্লা,,,,
ভাইয়াঃ কিরে কি হইছে?
আমিঃ কিছু না।
ভাবিঃ তাহলে এতো জোরে চিৎকার দিলো কে?
আমিঃ উনি…(মেয়েটাকে দেখিয়ে দিলাম)
মেয়েঃ এই আপু এই ছেলেটা কে? আমার বেডরুমে কি করে!
ভাবিঃ আরে ও আমার দেবর। কেন কি করছে?
আমিঃ ভাবি আমি বলছি।
মেয়েঃ এই না না,,, (মেয়েটা আমার মুখ ধরে ফেললো)
কারন আমি যা দেখেছি সেটা যদি সবাইকে বলি তাহলে মেয়েটার মান ইজ্জতের ১২ টা বাজবে।
মেয়েঃ না আপু কিছু হয়নি, তেলাপোকা দেখেই আমি চিৎকার দিয়েছি। তোরা যা,,,
ভাবিঃ সেজন্য এইভাবে চিল্লাবি? আচ্ছা ডাইনিং রুমে আয়।
সবাই একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, আমিও বেরিয়ে গেলাম। আসলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে। আমি ডাইনিং রুমে চলে গেলাম।
সবার সাথে কথা বললাম, নাস্তা করে ভাইয়া আর ভাবি একটা রুমে গেলো। আমি ছাদে চলে গেলাম।
কেমন জানি বিরক্তি লাগছে এই বাসায়। ছাদে গিয়ে এক কোনে বসে আছি, কিছুক্ষণ পর ভাবি আসলো…
ভাবিঃ কি ব্যাপার ছোট মিয়া! মন খারাপ নাকি??
আমিঃ না ভাবি ঠিক আছি।
ভাবিঃ কিছু তো একটা হইছে, আমাকে বলো সমস্যা নাই।
আমিঃ আসলে ওই মেয়েটার চিল্লানি শুনে নার্ভাস হয়ে গেছি।
ভাবিঃ আরে ওটা মেয়ে না, আমার বোন। ওর নাম হচ্ছে নিশিতা।
আমিঃ আপনার বোন আছে আগে তো বলেন নি? আর বিয়ের সময় ওতো দেখিনি।
ভাবিঃ আসলে ও হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করে আর বিয়ের সময় ওর এক্সাম ছিলো তাই আসেনি।
আমিঃ ও আচ্ছা।
ভাবিঃ নিশিতা  কি তোমাকে কিছু বলেছে?
আমিঃ নাহ।
ভাবিঃ আচ্ছা নিচে চলো।
ভাবির সাথে নিচে চলে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি মেয়েটা মানে নিশিতা ভাইয়ার সাথে ভাব জমাইছে। বসে বসে টিভি দেখতেছে।
আমি গিয়ে ভাইয়ার সাথে বসলাম….
ভাইয়াঃ কোথায় গিয়েছিলি?
আমিঃ ছাদে।
ভাইয়াঃ আচ্ছা পরিচয় করিয়ে দিই এই হচ্ছে আমার একমাত্র শালি নিশিতা ।
 আর নিশিতা  এ হচ্ছে আমার আদরের ছোট ভাই, কলিজার টুকরা তুষার।
আমিঃ হ্যালো বেয়ান!
ইকরাঃ হুহ! (গাল ভেটকি দিয়ে)
আমিঃ আমি কিছু বললাম না।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া করলাম, গিয়ে সোফায় বসলাম।
আমিঃ ভাইয়া শোন!
ভাইয়াঃ কিছু বলবি?
আমিঃ আমার ভালো লাগছে না, আমি বাসায় চলে যাবো।
ভাইয়াঃ পাগল হলি নাকি, তুই আমাদের সাথেই থাকবি। আর আমাদের সাথেই বাসায় যাবি।
আমিঃ নারে তোরা থাক আমি গেলাম।
ভাইয়াঃ চুপ কর, আব্বুকে বলে দিলে মাইর দিবে। কয়েকদিন গেলে ভালো লাগবে।
কিছু বললাম না, এভাবে বিকাল টা কাটলো। রাতে আমি ছাদে গেলাম। বসে বসে গান গাইতেছি এমন সময় নিশিতা  আসলো।
নিশিতাঃ গান তো ভালোই গাইতে পারেন।
আমিঃ…. (উঠে চলে যাচ্ছিলাম)
নিশিতাঃ এই বসুন। কোথায় যাচ্ছেন।
আমিঃ নিচে।
নিশিতাঃ নিচে কি?
 বসুন এখানে।আবারও বসলাম।
নিশিতাঃ সরি!
আমিঃ সরি কেন?
নিশিতাঃ দুলাভাইর সামনে আপনার সাথে এমন ভিহ্যাব করার জন্য।
আমিঃ ইটস ওকে।
নিশিতাঃ আপনার নামটা যেন কি?
আমিঃ তুষার!
নিশিতাঃ পড়ালেখা কিসে করেন?
আমিঃ অনার্স ২য় বর্ষ (নোয়াখালী সরকারি কলেজ)
নিশিতাঃ গুড। আপনি বোকা নাকি?
আমিঃ হঠ্যাৎ এই প্রশ্ন?
নিশিতাঃ আমি সব কিছু বলছি আপনি তো কিছুই বলছেন না।
আমিঃ না এমনি, আচ্ছা আপনার সম্পর্কে বলেন।
নিশিতাঃ আপুর থেকে জেনে নিয়েন।
এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম, মোটামুটি ভালোই লাগলো।
পরের দিন নিশিতা আর আমি ঘুরতে বের হলাম, একটা রিক্সা নিয়ে ঘুরেছি। আস্তে আস্তে আমি মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছি।
এভাবে মজা মাস্তিতে ৫ দিন গেলো। আসার সময় নিশিতার জন্য খুব খারাপ লাগলো, অনেক বার বললাম আমাদের বাসায় আসার জন্য।
বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
ভাবিঃ ছোট মিয়া কি অবস্থা?
আমিঃ অবস্থা তো ভালোই।
ভাবিঃ সেটা তো দেখতেছি। ভিতরে ভিতরে লাড্ডু ফুটতেছে। ঘটনা কি?
আমিঃ কিছু না।
ভাবিঃ আমাকে বলা যায় না?
আমিঃ হুম, ঘটনা হচ্ছে আপনার বোন আমার মন টা রেখে দিয়েছে।
হঠাৎ করে ভাবির মুখটা কালো হয়ে গেলো, মাইন্ড করলো কিনা কে জানে। মুখে হাসি রেখে বললো….
ভাবিঃ এতো সহজে নিশিতা প্রেমে পড়বে না।
আমিঃ চেষ্টা করতে তো বাধা নেই।
ভাবিঃ তুমি জীবনেও পারবে না। ওরে পটানো এতো সহজ না।
আমিঃ আচ্ছা সময় হলে দেখা যাবে।
এভাবেই দিন যেতে লাগলো আমি বার বার নিশিতা সরন করতে লাগলাম। আসার সময় ওর মোবাইল নাম্বার টা আনতে ভুলে গেছি।
ভাবির কাছে লজ্জায় চাইতেও পারছি না।
কিছুদিন পর.........
ভাবির আব্বু আম্মু আর নিশিতা আমাদের বাসায় আসে। আমি তো মহা খুশি।
 আংকেল আন্টি চলে যায় নিশিতা বাসায় থেকে যায়।
নিশিতাকে দেখলে আমি স্পিকারে রোমান্টিক সব গান ছেড়ে দিতাম।
ভাবি একবার বলেছিলো নীল শার্টে নাকি আমাকে অনেক সুন্দর দেখায়।
সেই থেকে নীল শার্ট টা পড়েই নিশিতার সামনে ঘুরাফেরা করতাম।
 কিন্তু নিশিতার মাঝে একটা পরিবর্তন খেয়াল করলাম।
সেদিন রাতে নিশিতা  বললো
নিশিতাঃ এই যে মি. তুষার???
আমিঃ হুম বলেন।
নিশিতাঃ আপনার কাছে কি শুধু একটাই শার্ট?
আমিঃ না। কেন?
নিশিতাঃ তাহলে সারাদিন এটা গায়ে দিয়ে রাখেন কেন?
এরপর থেকে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় শার্ট চেইঞ্জ করতাম। শুধু নিশিতার চোখে পড়ার জন্য।
একদিন রাতে নিশিতাকে ছাদে ডেকে নিয়ে গেলাম।
আমিঃ আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।
নিশিতাঃ কি কথা বলেন।
আমি কোনো রকম ইতস্ত না করে ডাইরেক্ট বলে দিলাম।
আমিঃ আপনাকে আমি ভালোবাসি।
নিশিতাঃ এটা সম্ভব নয়।
আমিঃ কেন?
নিশিতাঃ এক ঘরে দুই বোন জীবনেও পসিবল না।
আমিঃ সেটা নাহয় আমার উপর ছেড়ে দেন। আপনি শুধু হ্যা অথবা না বলে দেন।
নিশিতাঃ এখন না।
আমিঃ তো কখন?
নিশিতাঃ দুই দিন পর।
আমিঃ এখন বললে সমস্যা কি?
নিশিতাঃ আমাকে দুই দিন ভাবতে দেন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর নিশিতা নিচে চলে যায় আমি টেনশনে পড়ে গেলাম। নিশিতা কি রাজি হবে নাকি হবে না সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
যাইহোক দুই দিন অনেক কষ্টে কাটালাম। তারপর নিশিতাকে বললাম,
আমিঃ দুই দিন তো চলে গেলো। এবার উত্তর টা দেন।
নিশিতাঃ আপনি যদি আমাকে একটু অন্যরকম ভাবে প্রপোজ করেন তাহলে একসেপ্ট করবো।
আমিঃ অন্যরকম মানে?
নিশিতাঃ মানে যেই স্টাইলে কেউ কখনো কাওকে প্রপোজ করেনি আপনি আমাকে সেই স্টাইলে প্রপোজ করবেন। তাহলে আমি রাজি হবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,
আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম কিন্তু কিছুতেই কোনো কিছু মাথায় আসছে না।
অবশেষে একটা নতুন পদ্ধতি মাথায় আসলো, আমি সেই স্টাইলে প্রপোজ করে দিলাম।
নিশিতা কয়েকদিন পর একসেপ্ট করলো,
আমি খুশিতে শেষ।
ফাইনালি নিশিতা রাজি হলো।
নিশিতা আর আমি হাত ধরাধরি করে হাটতেছি এমন সময় ভাবি দেখে ফেললো, তারপরেই….

To be Continue…..
যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০১

যে গল্পে তুমি নেই - পর্ব: ০১



মাইজদি পৌর পার্কের মধ্যে হাটতেছি এমন সময় একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম। আসলে আমি মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাটতেছি তাই খুব একটা খেয়াল করিনি। ধাক্কা খেয়ে আমার মোবাইলটা নিচে পড়ে যায়, আর খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটাও পড়ে যায়, পায়ে হাই হিল থাকায় নিজেকে সামলাতে পারেনি।

আমিঃ এই সরি সরি, আমি আসলে খে…….
পুরোটা বলার আগেই বাক রুদ্ধ হয়ে যাই। কারন যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে আর কেউ নয়, সে হচ্ছে নিশিতা , এক সময় যাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম। এখনো বাসি কিন্তু সেটা নিজের মনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নিশিতাও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আসলে ৫ বছর পর দেখা, সব কিছু পালটে গেছে। দুজন দুজনের দিকেই তাকিয়ে রইলাম, কেউ কাওকে কিছু বললাম না।



কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে নিশিতাকে নিয়ে যায়, সে হাটছে আর আমার দিকে চেয়ে আছে, আমিও আর একবারের জন্য অন্য দিকে তাকাইনি। 
নিশিতা সেই আগের মতোই আছে, আগে থেকে আরো সুন্দর হয়ে গেছে। আসলে হওয়ারই কথা, আমার কথা এতো দিনে ভুলে গেছে। আমি মোবাইলটা মাটি থেকে নিলাম, দেখলাম মোবাইলটা ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা মোবাইল টা নিয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে গেলাম। একটা দোকানে গেলাম, এক প্যাকেট সিগারেট নিলাম। কারন নিশিতার স্মৃতি গুলো আজকে আমাকে ঠিক রাখতে দিবে না।

নিশিতাকে ভুলার জন্য একমাত্র সিগারেট আমার সঙ্গি। সিগারেট নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। গোসল করে ঘুমাতে গেলাম কিন্তু ঘুম আসছে না। বার বার ওর স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো। ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম চলে আসলো, ঘুম থেকে উঠে দেখি মাগরিবের আজান দিয়ে দিছে। আমি অজু করে নামাজ পড়ে নিলাম।
নামাজের মধ্যেও আজকের ঘটনাটা মনে পড়তে লাগলো। নামাজ শেষ করে ছাদে চলে গেলাম, এক কোনায় গিয়ে বসলাম, তারপর একটা সিগারেট ধরালাম আর টানতে লাগলাম।

চলেন এবার আপনাদের পরিচয় টা দিয়ে দিই, আমি আব্দুর রহমান তুষার। পড়ালেখা শেষ করে আপাতত একটা প্রাইভেট কোম্পানির এমডি। বাসায় শুধু আমি নিজেই, হুম পরিবার আছে, কিন্তু থেকেও নেই। আর আমিও মনে করি আমার কেউ নেই। একা একা থাকি, আর আজকে যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে হচ্ছে আমার এক সময়ের ভালোবাসা, অনেক ভালোবাসতাম নিশিতাকে। নিজের চাইতেও বেশি, সেও আমাকে ভালোবাসতো। কিন্তু মন থেকে বাসতো কিনা সেটা আজও অজানা। নিশিতার আরো একটা পরিচয় আছে সেটা হচ্ছে  ভাইয়ার শালি মানে ভাবির ছোট বোন, আর সেজন্যই দুজনের মাধ্যে এতো দূরত্ব।

চলেন আপনাদের পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলি, তাহলে বুঝবেন…. আজ থেকে ৫ বছর আগের কথা

রাতে পড়তেছি এমন সময় ভাইয়া রুমে আসলো…
ভাইয়াঃ কিরে তুষার কি করিস?
আমিঃ কিছু না, পড়তেছি। কখন আসলি বাসায়?
ভাইয়াঃ এই তো এই মাত্র। পড়ালেখার কি অবস্থা?
আমিঃ ভালোই। তোর জন্য তো খুশির খবর আছে।
ভাইয়াঃ তাই নাকি? কি সেটা শুনি একটু।
আমিঃ আগে ৫০০ টাকা দে, তারপর।
ভাইয়াঃ তোর সব জায়গায় ধান্ধাবাজি না করলে হয় না।
আমিঃ আচ্ছা যা তোর কোনো খবর শুনতে হবে না।
ভাইয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো, বল এখন কি খুশির খবর।
আমিঃ তোর বিয়ে!
ভাইয়াঃ বিয়ে মানে?
আমিঃ বিয়ে মানে বিয়ে।
ভাইয়াঃ কই আমি তো কিছু জানি না। তুই কেমনে জানলি।
আমিঃ আরে আমিও জানতাম না, আব্বু আম্মু বলাবলি করছিলো তখন শুনে ফেলেছি।
ভাইয়াঃ ওও।
আমিঃ কিরে তোর মুখ কালো হয়ে গেলো? পছন্দ আছে নাকি?
ভাইয়াঃ আরে না, থাকলে তো সবার আগে তুই নিজেই জানতি।
আমিঃ হুম সেটাও ঠিক, তুই কাওকে না বললেও আমাকে বলতি। তাহলে এমন মুখ করে আছিস কেন?
ভাইয়াঃ আসলে বিয়ে করতে ইচ্ছা করছে না।
আমিঃ তুই পাগল নাকি? আমাকে যদি আব্বু আম্মু বলতো এক্ষুনি বিয়ে করে ফেলতাম। ইশ কতো স্বপ্ন আছে বিয়ে নিয়ে।
ভাইয়াঃ তাই নাকি? তাহলে তুই বিয়েটা করে ফেল।
আমিঃ পাগল নাকি, আব্বু আম্মু মাইর দিবে।
ভাইয়াঃ আমি উনাদের বলে দিবো।
আমিঃ দরকার নেই তোর এতো কষ্ট করার, সময় হলে সব হবে।
ভাইয়াঃ যাক অবশেষে,,,
আমিঃ অবশেষে কি?
ভাইয়াঃ কিছু না (মুছকি হাসি দিয়ে)
আমিঃ বাহ! এখন থেকেই তোর লাড্ডু ফুটতে শুরু করলো।
ভাইয়াঃ এই তুই বেশি ফাজিল হয়ে গেছিস। আমি তোর বড়, সম্মান দিবি।
আমিঃ কচু দিবো। তোর বউয়ের সামনে তোকে পিটাবো দেখিস।
ভাইয়াঃ তোর ভাবি তোকে মাইর দিবে।
আমিঃ মাইর দিবে না, ভাবি আদর দিবে। বলবে আমার ছোট্ট ভাইয়া টা, হিহিহি।
আচ্ছা আপনাদের তো ফ্যামিলির কথা কিছুই বলা হয়নি।
ফ্যামিলিতে আমি আব্বু আম্মু আর ভাইয়া। আব্বু আগে ছোট একটা চাকরি করতো, অসুস্থতার জন্য ছেড়ে দিয়েছে। আসলে আব্বু ছাড়তে চায় নি। ভাইয়া পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি পায়, সে থেকে আব্বুকে আর কিছু করতে দেয় না। ভাইয়া চাকরি পেয়েছে ১ বছরের মতো হবে।
আব্বুকে সবাই অনেক ভয় পায়, আব্বুর ভয়ে ভাইয়া কখনো কোনো মেয়ের সাথে মিশেনি ফ্রেন্ডশিপ তো দূরের কথা। ভাইয়া আর আমি ফ্রেন্ডের মতোই চলি। এতো বড় হয়েছে তারপরেও আমার সাথে ঘুমায়। আর ওর যত কথা আছে সব আমার সাথে শেয়ার করে, আমিও করি।
দুই ভাই সারা দিন টম&জেরির মতো লেগে থাকি।
ভাইয়ার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় আম্মু রুমে আসলো…
আম্মুঃ এই তোরা এখানো বসে আছিস? সেই কখন থেকে ডাকছি।
ভাইয়াঃ আচ্ছা আসছি, তুমি যাও।
আম্মুঃ তাড়াতাড়ি আয়।
ভাইয়াঃ হুম, এই ওঠ, পরে পড়িস।
উঠে খেতে গেলাম। খাওয়ার মাঝখানে আব্বু বললো…
আব্বুঃ হৃদয় (ভাইয়ার নাম)
ভাইয়াঃ জ্বি আব্বু বলেন।
আব্বুঃ পড়ালেখা তো অনেক আগেই শেষ করলি, চাকরিও পাইছিস। আর কতো বসে থাকবি, তোর আম্মুও অসুস্থ হয়ে গেছে, এবার অন্তত বিয়েটা কর।
ভাইয়াঃ আব্বু আর কিছু দিন যাক তারপর।
আম্মুঃ তুই এই কথা সব সময় বলিস। শোন আমরা তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি।
আব্বুঃ মেয়েটা দেখতে শুনতে অনেক সুন্দর, ভালো ভদ্র মেয়ে। শিক্ষিত। আমার মনে হয় তোর জন্য পারফেক্ট হবে।
ভাইয়াঃ কিন্তু আব্বু!
আব্বুঃ কোনো কিন্তু না। কালকে আমরা ওদের বাসায় যাবো, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কালকেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলবো।
ভাইয়াঃ তোমরা যেটা ভালো মনে করো।
আম্মুঃ কালকে একটু তাড়াতাড়ি আসিস।
ভাইয়াঃ…. (হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো)
আমিঃ আমার কথা কিছু চিন্তাভাবনা করছো?
আম্মুঃ তোর কথা কি চিন্তা করবো?
আমিঃ না মানে, ভাইয়ার জন্য তো ঠিক করলে, এখন আমার জন্যও যদি কিছু একটা করতে।


আব্বুঃ হৃদয় আমার লাঠি টা নিয়ে আয়তো
আমিঃ এই না না, আমি তো মজা করছি।
তারপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুমে গেলাম। ভাইয়াও আসলো, কেমন খুশি খুশি লাগছে। আমি বুঝছি কেন এতো খুশি, কিছু বললাম না।
রাতে ঘুমিয়ে গেলাম, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে গেলাম।
কলেজ থেকে এসেই খাওয়াদাওয়া করলাম, কিছুক্ষণ পর ভাইয়াও আসলো। তারপর সবাই রেড়ি হয়ে নিলাম।
এরপর মেয়ে দেখতে বেরিয়ে গেলাম। গাড়িতে আমি আর ভাইয়া একসাথে বসলাম, এটা ওটা বলে ভাইয়াকে ক্ষেপাতে লাগলাম।
যাইহোক অনেকক্ষণ পর একটা বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো, মনে হয় এটাই ভাবিদের বাসা।
গাড়িতে থেকে নামলাম, বাড়িটা খুব সুন্দর, তারপর আব্বুর পিছু পিছু বাসার সামনে গেলাম। কলিং বেল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর একটা মাঝ বয়সি মহিলা এসে দরজা খুলে দেয়, মনে হয় উনিই মেয়ের মা। সবাই সালাম দিলাম।
উনি আমাদের হাসিমুখে ভিতরে নিয়ে গেলেন। বাসার ভিতর টা খুব সুন্দর করে সাজানো। মনে হয় আমরা আসবো জেনে আরো বেশি করে সাজিয়ে রেখেছে।
আমাদেরকে সোফায় বসতে বলে উনি ভিতরে চলে গেলেন।
ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলাম, আমি আর ভাইয়া একসাথে বসে আছি, ভাইয়া এদিকওদিক চটপট করতে লাগলো…
আমিঃ কিরে কি হইছে?
ভাইয়াঃ কই কিছু না।
আমিঃ তাহলে এমন করিস কেন? ভাবি আসবে তো একটু ওয়েট কর। এতো তাড়া কিসের।
ভাইয়াঃ সব জায়গায় ফাজলামি না করলে হয় না?
আব্বুঃ কি হইছে তোদের, এখানেও এমন করতেছিস। ওরা কেউ দেখেল কি বলবে?
আমি আবার চুপ করে রইলাম। কিছুক্ষণ পর একটা আংকেল আসলো, বাবাকে দেখেই কোলাকোলি শুরু করে দিলো। এমন ভাবে কথা বলছে যেন মেলায় হারিয়ে যাওয়া দুই ভাই।
আমরাও আংকেল এর সাথে কথা বলে নিলাম। আমি এদিকওদিক তাকাচ্ছি কোনো মেয়ে আছে কিনা খুঁজতেছি।
প্রায় ১ ঘন্টা পর মেয়ে মানে ভাবিকে নিয়ে আসা হলো, ভাবি চা হাতে নিয়ে আসলো। ভাবিকে দেখে আমি নিজেই ক্রাশ খেলাম। ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে,,,
আমি একটা টোকা দিয়ে বললাম।
আমিঃ এই মুখ বন্ধ কর, মশা ডুকবে মুখে।
ভাইয়া এবার নিজেকে সামলে নিলো। মেয়ে আমাদের সামনে বসলো, এরপর চূড়ান্ত কথাবার্তা শুরু হলো। এক পর্যায়ে ভাইয়া আর ভাবিকে ভিতরে পাঠালো আলাদা কথা বলার জন্য।
ভাইয়া আমাকেও ডাকতেছে। আব্বু চোখ রাঙ্গানো দেখে তাড়াতাড়ি মেয়েটার সাথে ভিতরে গেলো।
এরপর আংকেল আর আন্টি আমার বায়োডাটা নিলো, কি করি, কি খাই। মনে হচ্ছে দুলা ভাইয়া না, দুলা আমি নিজেই।
যাইহোক ভাইয়ারা কথা বলে আসলো। দেখলাম ভাইয়া অনেক খুশি, ভাইয়ার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমাদের মেয়ে পছন্দ হলো। উনাদেরও ভাইয়াকে পছন্দ হলো।
এবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার ফালা। অবশেষে ১ মাস পর বিয়ে ঠিক হলো।
তারপর আরো কিছুক্ষণ বসে বাসায় চলে আসলাম।
যাইহোক অবশেষে ভাইয়ার বিয়েটা ঠিক হলো, ভাইয়া আসার ভাবির মোবাইল নাম্বার নিয়ে আসলো, দিন রাত শুধু ভাবির সাথেই কথা বলে। আসলে অল্প পানির মাছ বেশি পানিতে গেলে যা হয় আরকি।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন খুব নিকটে চলে আসলো, বিকালবেলা আমি ছাদে বসে আছি এমন সময় ভাইয়া আসলো।
ভাইয়াঃ কিরে কি করিস।
আমিঃ সেটা তোর না জানলেও চলবে। যাহ তোর বউয়ের সাথে কথা বল।
ভাইয়াঃ নারে ও শুধু কল দেয়, তাই কথা না বলেও পারি না।
আমিঃ বিয়ের আগেই তোর এই অবস্থা বিয়ের পর কি করবি।
ভাইয়াঃ আচ্ছা বাদ দে চল।বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
আমিঃ তুই যা, আমি যাবো না।
ভাইয়াঃ আরে চলতো।
ভাইয়া জোর করে বাইরে নিয়ে গেলো। বাইক নিয়ে বের হয়ে কিছুক্ষণ ঘুরলাম। তারপর একটা রেস্টুরেন্ট এর ভিতর গেলাম।
ভাইয়াঃ কি খাবি?
আমিঃ তোর যেটা মন চায় অর্ডার দে।
ভাইয়াঃ আচ্ছা দিতেছি।
ভাইয়া অর্ডার দিলো। খাওয়ার সামনে আসলো, খেতে খেতে ভাইয়া বললো…
ভাইয়াঃ তোর বন্ধুদের দাওয়াত দিয়েছিস?
আমিঃ না দিই নি।
ভাইয়াঃ কখন দিবি, আর তো বেশি দেরি নেই। কেনাকাটা আর কাজের চাপে সময় পাবি না।
আমিঃ হুম কালকে কলেজে গেলে দিয়ে দিবো।
ভাইয়াঃ হুম, তোর সব বন্ধুদের দিস। আর কালকে একটু কাজ করতে হবে।
আমিঃ কি কাজ?
ভাইয়াঃ কালকে তুই কার্ড বানাতে দিয়ে আসবি। তারপর তোর ফ্রেন্ড দুইটা আছে না কি যেন নাম, সারাদিন তোর সাথে থাকে যে?
আমিঃ ইউনুছ , জলিল।
ভাইয়াঃ ওদের কে নিয়ে কয়েক জায়গায় গিয়ে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে আসবি মানে কার্ড গুলো দিয়ে আসবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
ভাইয়াঃ হুম।
এরপর আরো কিছুক্ষন কথাবার্তা বলে বাসায় চলে আসলাম।
অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসলো। সব মেহমান একের পর এক আসতে লাগলো। আমার বন্ধুরা সবাই আসলো। রাশেদ,জলিল,আফছার,সুমন,বেলাল,রুবেল,
আরিফ,সাদ্দাম,একরাম,রাজু, ইউনুছ সবাই আসলো।
বিয়েতে ওদের সাথে অনেক মজা করলাম,
রাশেদ আর সুমন কয়েকটা মেয়েও পটাই ফেলছে। মহা ধুমধামে ভাইয়ার বিয়েটা শেষ হলো।
বিয়ের কিছুদিন পর ভাইয়া আর ভাবি কক্সবাজার গেলো ঘুরতে, আমাকেও যেতে বলেছে কিন্তু আমি যাই নি।
আমার সাথে মোবাইলে কথা হয় সব সময়, ভাবির সাথেও অনেক মস্করা করি, ভাবি আদর করে ছোট মিয়া ডাকে।
প্রায় ৮ দিন পর ভাইয়া আর ভাবি বাসায় আসলো। তারপর খুব সুন্দর ভাবেই দিন যেতে লাগলো।
বিয়ের প্রায় এক মাস পর, ভাবি আম্মুকে বললো….
ভাবিঃ আম্মু একটা কথা বলতাম?
আম্মুঃ হে মা বল।
ভাবিঃ আসলে বিয়ের পর থেকে তো আমাদের বাসায় যাই নি, সকালে আম্মু কল দিয়েছিলো আপনাদের সবাইকে নিয়ে যেতে বলেছে।
আম্মুঃ সবাই তো আর যাওয়া সম্ভব না, বাসা খালি হয়ে যাবে। তুই আর হৃদয়  যা।
কয়েকদিন থেকে আয়। ভালো লাগবে।
ভাবিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রাতে ভাইয়া আসলো, আম্মু ভাইয়াকে সব বুঝিয়ে বললো, ভাইয়া বললো ছুটি পেলে যাবে।
পরের দিন ভাইয়া অফিসে গিয়ে ৫ দিনের ছুটি নিলো। এরপর বাসায় আসলো।
ভাইয়াঃ আম্মু তুষার কই?
আম্মুঃ মনে হয় রুমে আছে, গিয়ে দেখ।
ভাইয়াঃ আচ্ছা।
ভাইয়া রুমে আসলো…..
ভাইয়াঃ কিরে কি করিস?
আমিঃ কিছু না। কখন আসলি?
ভাইয়াঃ এই মাত্র। শোন কালকে কাপড়চোপড় সব কিছু নিয়ে রেড়ি থাকবি।
আমিঃ কেন?
ভাইয়াঃ ইশিতাদের (ভাবির নাম) বাসায় যাবো।
আমিঃ তোর শ্বশুর বাড়ি তুই যা, আমি গিয়ে কি করবো?
ভাইয়াঃ যেতে বলেছি যাবি, এতো কথা বলিস কেন?
আমিঃ না আমি যাবো না।
ভাইয়াঃ ওকে তুই না গেলে আমিও যাবো না।
এমন সময় ভাবি রুমে আসলো…
ভাবিঃ কি ছোট মিয়া যাবে না কেন? বাসায় বউ আছে নাকি।

আমিঃ আসলে ভাবি,,,
ভাবিঃ এসব বলে লাভ নেই, তোমার কাপড়চোপড় আমি ব্যাগে নিয়ে নিচ্ছি। সকালবেলা রেড়ি থাকবে।
ভাবি আর কোনো কথা বলতে দিলো না। তারপর খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। দেখি ভাইয়া আর ভাবি রেড়ি হয়ে বসে আছে। আমিও তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।
তারপর বাইরে আসলাম, দেখলাম ভাইতা ব্যাগপত্র গুলো গাড়িতে উঠালো, তারপর ভাইয়া আর ভাবি দুজনে আব্বু আম্মুকে সালাম করে গাড়িতে উঠলো। আমি আম্মুকে বললাম “আমাকেও বিয়ে দাও, এভাবে সালাম করে শ্বশুর বাড়ি যাবো।””
সবাই হাসতে লাগলো।
তারপর গিয়ে গাড়িতে বসলাম। ভাইয়া আর ভাবি পেছনে, আমি ড্রাইভারের সাথে। ড্রাইভার আগে থেকে পরিচিত, আমরা কোথাও গেলে উনার গাড়ি রিজার্ভ করি।
কথা বলতে বলতে ভাবিদের বাসায় চলে গেলাম। গাড়িতে থেকে নামলাম।
আমিঃ ভাইয়া তোরা যা,আমি ব্যাগপত্র নিয়ে আসছি।
ভাইয়াঃ তুই পারবি না। আমিও নিই,
আমিঃ পারবো তোরা যা।
ভাইয়াঃ আচ্ছা আয়।
ভাইয়া আর ভাবি হাটা দিলো, আমি গাড়ি থেকে ব্যাগ দুইটা নামালাম। তারপর ওগুলো নিয়ে ভিতরে গেলাম। বিয়ের পর এই প্রথম ভাবির বাসায় আসলাম। আগে এসেছিলাম বিয়ের আগে,,,,
ভিতরে গিয়ে ব্যাগ গুলো রাখলাম।
ভাইয়াঃ তুষার! তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
আমিঃ কোন রুমে।
ভাইয়াঃ ডান পাশের ওটাতেই যাও। ওখানে কেউ থাকে না।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর আমি ওই রুমটাতে গেলাম,,,,
ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
ওয়াশ রুমের দরজা খুলেই একটা টাসকি খেলাম……

To be Continue….