Showing posts with label আমি খুনি. Show all posts
Showing posts with label আমি খুনি. Show all posts
আমি খুনি - ছোটগল্প

আমি খুনি - ছোটগল্প

মধ্যরাতে একটি মেয়ের মেসেজ।

- ভাইয়া কেমন আছেন?
- ভালো, কিন্তুু...
- আপনি আমাকে চিনবেন না, আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।

- হ্যা বলুন।
- মেসেজে বলা যাবে না, আপনার মোবাইল নাম্বারটা পেতে পারি?
- নাম্বার......?
- ভয় নেই আমি বিবাহিতা।
- ০১ ................

(অতঃপর মেয়েটির ফোন আসলো)
- হ্যা বলুন।
- আপনিতো গল্প লিখেন, আমার জীবনের একটা গল্প লিখে দিবেন?
- ভাবলাম দাম্পত্য জীবনের রোমান্টিক গল্প লিখতে বলবে, ভালোই হবে। আচ্ছা বলুন, আমি চেষ্টা করবো
- আমি খুন করছি,আমি খুনী।গল্পটা খুনের।
- কি বলেন! গল্পটা পাবলিশ করলে তো আপনাকে কারাগারে বন্দী করতে পারে।
- আমি কারাগারেই আছি, ভয় নেই।
- আচ্ছা বলুন। (একটু থমকে গিয়ে মেয়েটি এক নাগাড়ে বলতে শুরু করলো)

বিয়ের আগে আমার একটা রিলেশন ছিলো। ছেলেটি বেশ মিশুক এবং অনেক ভালো ছিলো। রাত জেগে চেটিং করতাম। অনেক রাতের জ্যোৎস্না পোহানোর সাথে সাথে মোবাইলে কণ্ঠস্বর বিনিময় করতাম। তবে হ্যাঁ মন তো ছেলেটি দিয়েছিলো। আমি শুধু সময় দিয়েছিলাম। ইংরেজিতে যাকে বলে টাইম পাস।
ওর সাথে করা কিছু চেটিং এমন ছিলো।
- কেমন আছো বাবু? (সে)
- ভালো।
- খেয়েছো?
- হুম।
- কি করছো?
- শুয়ে আছি বা যা করতাম তাই বলতাম। কখনও সে কেমন আছে। কি করছে। খেয়েছে কি না এসব জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করতাম না। একটা সকালেও আমি ওর ঘুম ভাঙিয়ে বলিনি শুভ সকাল। একটা রাতেও মিষ্টি সুরে বলিনি অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও না হলে শরীর খারাপ করবে।

- কিন্তু ও আমার খুব কেয়ার করতো। সবসময় আমার খোঁজ নিতো।ওর ভালোবাসার মধ্যে কোন কমতি ছিলো না বরং অনেক বেশি ই ছিলো। তারপর সচরাসচর সব রিলেশনে যা হয় আমাদেরও তাই হলো। ওকে বললাম আমার পরিবার এসব পছন্দ করে না, আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করোনা। সেদিন ও ওপাশ থেকে খুব কেঁদেছিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম ও কাঁদছিলো।

- অনেক রিকুয়েস্ট করেছিলো আমায়। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। একটু সময় দাও কিছুদিন পরেই তো আমি পাশ করে বের হবো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার মতো করে কেউ তোমায় ভালোবাসবে না, প্লিজ যেও না।

- উত্তরে আমি একটা কথায় বলেছিলাম, এসব সিনেমাটিক ডায়ালোগ বলা বন্ধ করো, অসহ্য লাগে আমার। বাই, আমাকে আর ডিস্টার্ব করবা না। আমার কাছে সেদিন ওর কথাগুলোর কোনো মুল্য ছিলো না। ওর বুক চাপা কান্নায় বাঁধ ভাঙা চোখের জল আমার হৃদয়ে একটুও রেখাপাত করছিলো না।
- আজ বছর দুই আমার বিয়ে হয়েছে। আমার বর একজন সরকারি চাকুরীজিবি। মোটামুটি বেশ ভালো বেতন পায়।আমার পরিবার এমন সরকারি চাকরিওয়ালা ভালো ছেলে হাত ছাড়া করতে চেয়েছিলো না।আমিও ভালো থাকার আশায় রাজি হইয়েছিলাম। ভালোবাসা নয় অর্থকে সুখের উৎস ভেবে আনান্দে বৈবাহিক জীবনে পা বাড়াইলাম। কিন্তু আমি সুখে নেই।আমার বর একজন পারফেক্ট চাকুরীজীবী ঠিকি কিন্তু সে পারফেক্ট জীবন সঙ্গী কখনোও হতে পারেনি।


- ছেলেটি বলতো বিয়ের পর আমাদের প্রতিটি সকাল হবে মিষ্টি সকাল। ঘুমের আলসিমিতে খোলা জানালা দিয়ে আসা মিষ্টি রোদ চোখের পাতায় এসে ধরা দিলে চোখ খুলে দেখবো আমার পিঠে তুমি।আমরা একসাথে ঘুম থেকে উঠবো একসাথে সকালের নাস্তা বানাবো, রান্না শেষে নাস্তার টেবিলে বসে দুজন দুজনকে খাইয়ে দিবো। ঝালে যখন তোমার মায়াবি মুখে লাল লাভার মত রুপ নিয়ে ঠোঁট দুটি কাঁপবে তখন তোমার গোলাপি ঠোঁটে ভালোবাসার লাল চুম্বন একে দিবো। নাস্তা শেষে কাজে বের হওয়ার আগে তোমার কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিতে একদিনও মিস হবে না। আর আমার বর অফিসের তাড়ায় "খেয়ে নিও" এই কথা টা বলতেই ভুলে যায়। ছেলেটি প্রতি ঘন্টাই আমার খোজ নিতো।ও বলতো তুমি মিষ্টি হাতে আমার জন্য দুপুরের খাবার বানিয়ে দিবে। দুপুরে ফোন দিয়ে যখন জানবে আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিয়েছে ইচ্ছে মত বকে দিও।আমি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলতাম আমি তো রান্নায় করতে পারি না।

এখন আমি রাঁধতে শিখে নিয়েছি। খুব ইচ্ছে করে বর টার জন্য টিফিন করে খাবার দিয়ে দিতে আর না খেলে বলতে বাসায় এসো আজ খবর আছে। কিন্তু বর মশাই তো অফিস টাইমে ফোন দিতে নিষেধ করছে, অযথা ফোন দিয়ে খোজ নিলেও বকা দেয়। দুপুরে বাইরে খেয়ে অভ্যস্ত সে। আমার ইচ্ছে পুরোন থেকে তার কাছে সামান্য অভ্যাস মূল্যবান। ছেলেটি বলতো ছুটির দিনের প্রতিটি পড়ন্ত বিকালে ভেজা ঘাস পিছনে ফেলে হাটবো আমরা দুইজনে।সুযোগ পেলেই তোমাকে কাছে নিয়ে রোমাঞ্চিত হবো। ওর কথাগুলো ফিল্মি টাইপ লাগতো।

- কিন্তু এখন ইচ্ছে হয় বরটার সাথে ছুটির বিকালবেলা নিরিবিলি রাস্তাতে ওর মাসল দু হাতে শক্ত করে ধরে কাঁধে মাথা রেখে হাটতে,একটু ফিল্মি টাইপ হতে। এই আশায় ছুটির বিকেল গুলিতে ওর দেয়া নীল শাড়িটা পরে অপেক্ষা করি এই বুঝি বরটা বলবে চলো দুজনে হাত ধরে কোথাও হেঁটে আসি। হ্যা, আমি ইচ্ছা করলে কিছু সময় ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারতাম।
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম।
মেয়েটি আবার বলতে লাগলো।
ভুল বুঝতে পারার পর ছেলেটির সাথে দেখা করে ক্ষমা চাইতে চেয়েছিলাম।
ওর নাম্বার বন্ধ পাওয়ার পর ওর বন্ধুর মাধ্যমে যোগাযোগ করে একবার দেখা করার জন্য বলেছিলাম। সেদিন ও একটা কথা বলেই আমার সব চেষ্টা থামিয়ে দিয়েছিলো- "আমাকে খুজে আর লাভ নেই প্রিয়, আমি তোমার অবহেলায় হারিয়ে গেছি"
.
- তারপরেও অনেক খুজেছিলাম কিন্তু ছেলেটির কোনো খোঁজ পাইনি।
অবশেষে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বললো_
- আমার এই পরিস্থিতির জন্য আমিই নিজেই দায়ি।
- আমি সত্যিকারের ভালোবাসাকে খুন করছি,
- আমি খুন করছি একজন ছেলের "সপ্নকে"
- আমি খুন করছি আমার প্রাপ্য সুখ কে,
- আমি খুনি,
- তাইতো আজ প্রচুর অর্থে গড়া কারাগারে বন্দী।
- আমি লোভি “আমি পাপী” “আমি খুনি”......

মেয়েটি কাদছে। আর আমি শুনছি। হয়ত দুরের অই আকাশ টা আমাদের কথোপকথন শুনে মুখ গোমড়া করে আছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।