আমার জানামতে প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে ফেসবুক কখনো কাউকে নিরাশ করে না। একটু চেষ্টা করলেই ফেসবুক থেকে একটা না একটা প্রেমিকা সবাই ই পেয়ে যায়। একটু ধুরন্ধর হইলে চার পাঁচটাও পাওয়া যায়৷ লেগুনার হেল্পার থেকে বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার, রাজমিস্ত্রীর সহকারী থেকে বিসিএস ক্যাডার, এই জায়গায় সবার জন্যই প্রেমিকা আছে। এখনো যদি আপনি ফেসবুকে কোনো প্রেমিকা না পেয়ে থাকেন, তো হয় আপনি ভার্চুয়ালি প্রেম করতে চান না, নাহয় আপনি ফেরেশতা লেভেলের ভালো মানুষ। আমি এই ফেসবুক থেকেই এমন এমন মানুষকে একাধিক প্রেম করতে দেখেছি, বাস্তবে যারা হিরো আলম থেকেও বেশি অশিক্ষিত, কান হেলাল থেকেও বেশি গাঞ্জাখোর। আমাদের এলাকায় সেলুনের নাপিত একদিন চুল কাটতে কাটতে বলতেছে, 'মামা হেবি সুন্দরী এক মাইয়ার সাথে প্রেম করতেছি৷'
মেয়ের ছবি দেখাইলো। সুন্দর আছে, বাট দেখেই বোঝা যায় অতিমাত্রায় এডিট করা।
জিজ্ঞেস করলাম, 'এতো সুন্দর মাইয়া পটাইলা ক্যামনে?'
বললো, 'হে হে মামা, একটু বুদ্ধি থাকলে সবই হয়। আমি নাপিত সেইটা তো আর বলিনাই। বলছি আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্চিটির টিচার।'
অসাধারণ। কিন্তু আমি ভাবতেছি এমন কোন অশিক্ষিত মাইয়া যে নাপিতের সাথে দীর্ঘদিন কথা বলেও টের পায়নাই যে সে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির টিচার হতেই পারে না।
জিজ্ঞেস করলাম, 'মেয়ে কি করে?'
যা ভাবছিলাম তাই। মেয়েও কম না। সে মেডিকেল ভার্চিটির টিচার।
কি সুন্দরভাবে আল্লাহ দুই 'ভার্চিটির' টিচারকে ফেসবুকের মাধ্যমে মিলায় দিছে। মাশাল্লাহ।
এলাকার আরেক পোলা আছে, সিরিয়াস লেভেলের গাঞ্জাখোর। খুব সম্ভবত ভাত তার তৃতীয় প্রধান খাদ্য। প্রথম দুইটা হলো গাজা আর ইয়াবা। একদিন আমার কাছে আসছে ফেসবুক ঠিক করাইতে। এলাকার সবার ধারণা আমি এই বিষয়ে খুব ভালো বুঝি। তো ঐ পোলার ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখি প্রথম তিনজনের নিকনেম যথাক্রমে, জানপাখি, ময়নাপাখি, সোনাপাখি।
জিজ্ঞেস করলাম, পাখির বিজনেস শুরু করলি কবে থেইকা।
লাজুক হেসে বললো, ভাই যে কি কন না। এরা আপনার ভাবী। আমাদের ধর্মে চার বিয়ে জায়েজ, তিন পাখি না।
তো সে কথায় কথায় বললো, সব পাখিই ফেসবুকের মাধ্যমে পাওয়া।
আমি জিগাইলাম, এতো পাখি কই পাওয়া যায়৷ আমি তো পাই না।
পোলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ভাই এইগুলা কোনো ব্যাপার না। আপনার জন্য তো আরো সহজ। খালি আমি যা যা বলব তাই তাই করবেন।
- কি কি করব?
- একটা আইডি খুলে নাম দেবেন এলোন বয় সোহাইল। ডিএসএলার দিয়ে ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেবেন। এবাউটে লিখবেন ওয়ার্কস এট বাপের হোটেলে খাই মায়ের হোটেলে ঘুমাই, রাইটার এট রেডিও মুন্না, হ্যাকার এট ফেসবুক, ম্যানেজার এট টো টো কোম্পানি, বস এট ভিআইপি একাউন্ট।
- এতেই কাজ হবে?
- শুরুতে হবে না, কিন্তু মেলা ফ্রেন্ড এড করবেন এক্টিভ লাইকার দেখে। তারপর যখনই আপনি প্রোফাইল পিকচারে দুইশো মত লাইক পাবেন তখনই মেয়ে পটাতে পারবেন। একশো মত মেয়েরে মেসেজ দিবেন, আমার তোমাকে অনেক ভালো লাগে। আমরা কি বন্দু হতে পারি?
একশোজনের মধ্যে যদি দশজনও রিপ্লাই দেয় তো আপনার কাজ শেষ।
- কিন্তু আমি তো 'বন্দু' চাইনি। পাখি চাইছি।
- আরে ভাই বন্দু হতে চাওয়া তো টোপ। একবার বন্দু হতে রাজি হলেই এক সপ্তাহ চ্যাট করে প্রপোজ করে দিবেন। দশজনের অন্তত একজন রাজি হবেই।
ফেসবুকে মেয়ে পটানোর এতো অসাধারণ টিপস পেয়ে আমি ধন্য। সময়ের অভাবে খালি এলোন বয় সোহাইল আইডিটা খুলতে পারতেছিনা। সিঙ্গেল থাকার দিন শেষ। একবার আইডিটা খুলতে পারলেই কাটাবনের থেকে বড় পাখির দোকান বসাবো মেসেঞ্জারে।
তবে এখন আমার এই আইডির কথা বলি। আপনারা ভাবেন আমার মেলা ফলোয়ার এজন্য মেয়েরা প্রেম করার জন্য এক পায়ে রাজি। আসল কাহিনী শুনেন।
আগে যখন আমার এক হাজার ফলোয়ার ছিলো তখন কোনো মেয়ে আমার কোনো গল্পে কমেন্ট করলে তাকে রিকুয়েস্ট দিতাম সাথে সাথে। মেয়ে একসেপ্ট করত না। আর এখন আমার ফলোয়ার সত্তর হাজার প্লাস। আমার পোস্টে কোনো মেয়ে কমেন্ট করলে আমি তাকে রিকুয়েস্ট দিলে কি করে জানেন?
- কি করে? একসেপ্ট করে?
- উহু, স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট দেয়, 'এতো ফলোয়ার হওয়ার পরও হালার লুচ্চামি যায়নাই। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই রিকুয়েস্ট দেয়!'
লাস্ট একটা কাহিনী দিয়ে স্ট্যাটাস শেষ করি। সত্যি কাহিনী।
সেদিন গভীর রাতে ফ্রেন্ডলিস্টের এক ক্লোজ ছোটো বোন আমারে মেসেজ দিয়ে বলে, 'স্যরি ভাইয়া।'
আমি তো অবাক, স্যরি কেন হঠ্যাৎ?
মেয়ে বললো, 'আসলে আপনাকে একটা সিক্রেট বলি। আপনি দুই মাস আগে ফোনে যে মেয়ের সাথে কথা বলতেন সেই মেয়ে আমি ছিলাম!'
- ওএমজি, কি বলো? কোন মেয়ে?
- ঐ যে মেডিকেল পড়ুয়া। ফাবিহা ইসলাম। ঐটা আমি ছিলাম। মানে আমার ফেইক আইডি!
- ওহ শিট, ঐ আইডির ছবি কার ছিলো?
- আমার বড় আপুর এক ফ্রেন্ডের।
- তো এতোদিন পর এখন এটা কেন বলছো?
- এমনিই। আপনার একটা পোস্ট পড়তেছিলাম হঠ্যাৎ করে মনে হলো লুকিয়ে না রেখে বলেই ফেলি। মনে আছে আমাদের রিলেশন হতে গিয়েও হয়নি? আপনার জন্যই। একদিন সারারাত ফোন ওয়েটিং পাওয়াতে রেগে গিয়ে আপনি যদি ব্লক না দিতেন তাহলে হয়তো আজ আমরা বিএফ জিএফ থাকতাম।
- যাক সেদিন ব্লক দিছিলাম ভালো হইছিলো। বাঁইচা গেছিলাম। নাইলে অন্য একজনকে ভেবে একটা ফেইক আইডির সাথে রিলেশন করে ফেলতাম।
- হুম। এই যে এখন বলে দিলাম আপনি কি রাগ করলেন?
- একটু তো করেছিই। কাজটা তুমি ঠিক করোনি। কয়দিন আগে জানলেও এভাবে ধোকা দেয়ার জন্য আমি তোমাকে ব্লক দিতাম। বাট এখন আর ওসব ভাবিনা। নতুন প্রেমিকা হইছে আমার। আমি ওকে নিয়েই হ্যাপি।
- তাই নাকি? কনগ্রাচুলেশনস। নাম কি আপুর?
- ওর নাম রোজ। আর হ্যা, আমাদের মধ্যে যা হইছিলো আমি ভুলে গেছি তুমিও ভুলে যাও। রোজ যেন না জানতে পারে। তাইলে আমি শেষ! ওকে?
মেয়েটা অনেক্ষন চুপ করে থেকে বললো, 'ইয়ে মানে ভাইয়া রোজ আপু জানলেও আসলে সমস্যা হবে না।
- মানে কি? কেন?
- কারন ঐটাও আমারই আরেকটা ফেক আইডি!
লেখা: সোহাইল রহমান
0 Comments:
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।