বাংলাদেশের উপর হানা দিয়েছে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়!


ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে উঠে এসেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফান৷ দেশের কিছু অংশে ভয়াবহ ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার দুপুরের পর বঙ্গোপসাগরের পূর্বদিকে সুন্দরবন ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়ে৷ স্থলভাগে উঠে আসার প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চালাতে চালাতে আমফান বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়৷

ঘূর্ণিঝড় আমফান বিকাল ৫টার দিকে উপকূলের বাংলাদেশ অংশে পৌঁছায় বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান৷ বলেন, এটি ভারতের সাগারদ্বীপের পাশ দিয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভূভাগে উঠে আসে৷

ওই সময় এর কেন্দ্রের কাছে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝেড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল৷

ঘূর্ণিঝড় আমফানের ব্যস প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জানিয়ে মান্নান বলেন, ‘‘পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসতে এটির ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে৷ এর প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে৷’’

স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে আমফানের শক্তিক্ষয় শুরু হলেও এখনো গতি কমেনি৷ গত ১৬ মে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া আমফান এক পর্যায়ে শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছিল৷ বঙ্গোপসাগরের এ শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন ছিল এটি৷ কিন্তু উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে আসতে কিছুটা শক্তি হারিয়ে তা আবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়৷

ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে আমফান পশ্চিমবঙ্গের দিঘার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে৷ সে সময় এর অবস্থান ছিল ভারতের সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫ কিলোমিটার, দিঘা থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে৷

এদিকে, আমফানের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে ভোলায় গাছ চাপায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

ছিদ্দিক ফকির (৭০) নামের ওই বৃদ্ধ মোটরসাইকেল ভাড়া করে বয়স্ক ভাতা তুলতে যাচ্ছিলেন৷ পথে গাছ ভেঙে তার উপর পড়ে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়৷

আমফানের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বলেশ্বর নদের মাঝের চরে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে৷

পাশের জেলা বরগুনার তিনটি প্রধান নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ স্বাভাবিকের তুলনায় নদীর পানি অন্তত ৬/৭ ফুট বেড়ে গেছে৷ নোয়াখালীতে ‘অস্বাভাবিক জোয়ারে’ বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে৷

আমফান বাংলাদেশে আঘাত হানার আগেই উপকূলের বিপদজনক এলাকা থেকে প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়৷ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে উপকূলীয় এলাকার স্কুল-কলেজ ভবনও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ পাঁচ লাখের বেশি গাবাদীপশুকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার মধ্যে ভয়াবহ ঝড়ের সংবাদ পাওয়া গেছে। এলাকার মানুষের মুখে একটাই কথা, “এরকম ঝড় আগে কখনো দেখেনি”।

ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের সাহায্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এক হাজার ৯৩৩টি দল কাজ করছে বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।