চাকরি পাওয়ার ১০টি সেরা কৌশল






চাকরি পাওয়ার ১০টি সেরা কৌশল

বেকারত্ব ঘোচাতে অনেকেই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বহুদিন যাবত। পড়াশোনা শেষ, রেজাল্টও মাশাল্লা ভালো অথচ চাকরিনামক সোনার হরিনের দর্শন মিলেনি এখনো। আর সেও সোনার হরিনটি খুজে পেতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে তবুও কোন হদিস নেই। ব্যপারটি পীড়াদায়ক। আর এই পীড়ার তিক্ততায় রিক্ত হতে হয়ে অনেক চাকরী সন্ধানী মানুষদের।
 




চাকরী পাওয়ার ফর্মুলা চেঞ্জ হয়েছে। দেশ উন্নত হচ্ছে সাথে সাথে সিস্টেমের পরিবর্তনও এসেছে। ক্লাসের ফার্স্ট বয় কিংবা ফার্স্ট গার্ল হলেই যে ভালো চাকরিটা সবার আগে পাবেন এমন ধারণা গত হয়েছে ঢের আগে। একটা সময় ছিল যখন অভিভাবক বলতেন, অঙ্ক আর ইংরেজিটা ভালো করে শেখো, নইলে ভালো চাকরি পাবে না। “অই দিন এখন আর নেই” এমনকি ইংরেজি ও কম্পিউটারজ্ঞানের ওপর ভরসা করেও আর এগোনো যাচ্ছে না। নয়া জমানার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাকরির বাজারেও হাল আমলে যোগ হয়েছে নতুন নতুন চাহিদা। তার সঙ্গে মিল রেখে নতুন সব যোগ্যতায় নিজেকে সাজাতে হচ্ছে নবীন চাকরিপ্রার্থীদের।

নিচে চাকরি পাওয়ার ১০ টি কৌশল বর্ণনা করা হলো।
চাকরী-পাওয়ার-কৌশল

১। নতুন তরিকা ও নেটওয়ার্কিং

ধরুন, কোনো একটি পদে হুট করে গুটিকয়েক কর্মীর দরকার হয়ে পড়ল। অল্প কয়েকটি পদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়াটা অনেক সময় চাকরিদাতার কাছে হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। আশপাশের পরিচিতজনদের মধ্যে যোগ্য কেউ থাকলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। কী দরকার এ মহাযজ্ঞের! বিশ্বাস করুন, কোম্পানির মালিক হলে আপনিও এমনটা ভাববেন, এতে দোষের কিছু নেই। তো, পরিচিত গ-ির মধ্যে পাওয়া না গেলে ডাক পড়ে আশপাশের সহকর্মী ও অধস্তনদের। তাদের বলা হয়, আপনারাই খুঁজে বের করুন না! বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর বেশি আর গড়ায় না চাকরির পানি। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ চাকরিই বিজ্ঞপ্তির মুখ দেখে না। তাই বলে ওই বেশিরভাগ চাকরি কি আপনার নাগালের বাইরে থাকবে? যদি তা না চান তবে আপনাকে কৌশলে স্থান করে নিতে হবে সেই দ্বিতীয় স্তরটিতে, যেখানে আপনার চেনা গ-ির মধ্যে থাকবেন দেশের সেরা চাকরিদাতা কিংবা কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভরা। আধুনিক কেতাবি ভাষায় যাকে বলা যায় ‘নেটওয়ার্কিং’। চাকরির বাজারে ভালো অবস্থান ধরে রাখতে অবশ্যই আপনাকে গড়ে তুলতে হবে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

২। সিভির দিকে মনোযোগ দিন

সিভিতে অবশ্যই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সুন্দরভাবে তুলে ধরা অবজেক্টিভ অবশ্যই নিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে। সর্বোচ্চ দুই-তিন লাইনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী নিজের শক্তিশালী দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। অবশ্যই তা যেন নিয়োগকারীদের বিরক্তির উদ্রেক না করে। সিভি যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করা ভালো। পরীক্ষার ফল সিজিপিএ ব্যাংকিং ৩-এর নিচে হলে না লেখাই ভালো, তবে সে ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও সমস্যা নেই। বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা, ধর্ম, ওজন, উচ্চতা, এসব তথ্যও খুব জরুরি নয়। রেফারেন্স হিসেবে ফ্রেশারদের অবশ্যই তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষককেই নির্বাচন করা উচিত। আরেকজন হতে পারেন, যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছেন সেখানকার সুপরিচিত কেউ। রক্তের সম্পর্কের কাউকে এখানে উল্লেখ না করাই উচিত। তবে রেফারেন্স যাদের দেয়া হবে তাদের জানিয়ে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় তাদের কাছে সিভির একটি কপি থাকলে।

৩। এক্সট্রা কারিকুলার

এখনকার করপোরেট অফিসগুলোতে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজের ওপর খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়। সিভিতে যত বেশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করতে পারবেন, চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি হবে। ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশন’ শিরোনামে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে রসায়নে নোবেল বিজয়ী তাইওয়ানের প্রফেসর লি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘বি ইউজফুল, বি ইউজফুল ফর দ্য সোসাইটি’। সমাজের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলার মাধ্যমে ক্যারিয়ারকেও বর্ণাঢ্য করা সম্ভব। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজগুলো আপনাকে নানাভাবে সাহায্য করবে। ভালো বিতার্কিক হওয়া মানে আপনি ভালো প্রেজেন্টেশন করতে পারবেন। এই গুণগুলো সব চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানই আশা করে। যোগ দিতে পারেন ফটোগ্রাফি কিংবা ড্রামা ক্লাবে। এতে আপনার পাবলিক রিলেশন গুণাবলী আরো উন্নত হবে।

৪। স্বেচ্ছাসেবক

নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য একটি সরল পদক্ষেপ হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা। এর সুবাদে অনেক গুণী লোকের সঙ্গে পরিচয় হতে পারে। এমন অনেকেই তখন আপনাকে চিনবেন, যারা কি না অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত। ফলে যখন তাদের কর্মীর দরকার হবে তখন তারাই হয়তো আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

৫। আপডেটেড থাকুন

সময়টাই এগিয়ে থাকার। শত মানুষের মধ্যেও চাকরিদাতার চোখ যেন আপনার ওপরই পড়ে। যদি তিনি আপনার মধ্যে বিশেষ গুণের সন্ধান পান তবে চাকরিটা আপনার ঝুলিতেই পড়বে। এ জন্য দরকার চাকরিদাতার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু জেনে রাখা। এ কাজে ঢের উপকারে লাগে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট। ওইসব ওয়েবসাইটে নিয়মিত ঢুঁ মারলেই যথেষ্ট। পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে রাখুন। তাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন। চাকরির ধরন বুঝে তৈরি করুন আবেদনপত্র। অনলাইনেও আবেদন করা যায়। আধুনিক সব প্রযুক্তিকেই কাজে লাগান। বিবিসির মতো অনেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নতুন চাকরির খবর ই-মেইলেও জানিয়ে দেয়। সেসব মেইলিং লিস্টের সদস্য হতে পারেন। এনজিওগুলোর ক্ষেত্রে তাদের প্রজেক্টগুলো সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে রাখুন। সুযোগ বুঝে তাদের কোনো একটি প্রজেক্ট সম্পর্কে আপনার আগ্রহ ও পরামর্শের কথা মেইল করতে পারেন।

৬। রেফারেন্স তৈরি

বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুগলে ইন্টার্নশিপ করেছেন বাংলাদেশের রাগিব হাসান। তিনি জানান, গুগল শতকরা ৬০ ভাগ কর্মীই রেফারেন্সের মাধ্যমে নেয়। এমনি এমনি রেফারেন্স তৈরি হয়ে যাবে, এমনটি ভাবা অযৌক্তিক। এ জন্য নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ যার সঙ্গেই পরিচয় হবে, তার ভিজিটিং কার্ড সংরক্ষণ করুন। নানা উৎসব আয়োজনে তাদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতে পারেন। তার দুঃখের খবর জানলে সমবেদনা জানান। সম্ভব হলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। রেফারেন্স বাড়ানোর এটিই সহজ তরিকা।

৭। জব মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান

প্রত্যাশিত চাকরি পেতে হলে চাকরির বাজার সম্পর্কে অবশ্যই ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। কখন কোন কাজের চাহিদা বেশি, সেটা আঁচ করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।


আগ্রহ অনুযায়ী পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণঃ

২০০১ সালে আমেরিকার বিখ্যাত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তৃতায় অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘ভালোবাসার কাজটি খুঁজে নিতে হবে।’ আপনার ভালোবাসার কাজ কোনটি তা অন্য কেউ ঠিক করে দেবে না। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই বুঝে নিন আপনার পছন্দের কাজ কোনটি। আর পছন্দের চাকরির জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগও আছে যথেষ্ট। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ফটোগ্রাফি, ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে আছে রেডিও জকি তৈরির কারখানাও। পাশাপাশি শিখতে পারেন বিভিন্ন ভাষাও।

৮। চাকরি মেলায় যান

প্রতি বছরই নানা পরিসরে জব ফেয়ার হয়। সেখানে চাকরির ডালি নিয়ে হাজির হয় চাকরিদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। জব ফেয়ারে যাওয়ার আগে সুন্দর গোছানো সিভি নিয়ে যেতে ভুল করবেন না। মেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সেমিনারেরও আয়োজন করে। চাকরির হালহকিকত জানতে ওই সেমিনারে অংশ নিতেই হবে।

৯। ‘প্লিজ আমাকে ডাকুন’

প্রয়োজনটা যেহেতু আপনার, তাই আগ বাড়িয়ে আপনাকেই বলতে হবে ‘প্লিজ আমাকে ডাকুন’। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আগেই সেখানে সিভি জমা দিতে পারেন। আপনার যোগ্যতা ও চাহিদামতো পদের কথাও উল্লেখ করতে পারেন আবেদনপত্রে। যোগ্যতা একাধিক পদে হলে ভিন্ন ভিন্ন পদের কথা উল্লেখ করতে পারেন। এখন বড় করপোরেট হাউসগুলো প্রার্থী বাছাই পর্যন্ত পুরো কাজটি তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইবিএ ডিপার্টমেন্ট, এমজিএইচ গ্রুপ, গ্রো অ্যান্ড এক্সেলের মতো নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগাযোগ করে আপনার সিভি জমা দিতে পারেন।

১০। জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে দেন। পরে নিতান্তই শখের বসে রিড কলেজ থেকে ক্যালিগ্রাফির ওপর একটি কোর্স করেন। এ ক্যালিগ্রাফি যে কাজে আসতে পারে তা ভাবেননি। এর ১০ বছর পর স্টিভ যখন ম্যাকিন্টস কম্পিউটারের ডিজাইন করছিলেন তখন কাজে লাগে তার ক্যালিগ্রাফি-বিদ্যা। ম্যাক কম্পিউটারের ফন্ট জবসের ক্যালিগ্রাফি-বিদ্যার ফসল। পরবর্তী সময়ে উইন্ডোজ ম্যাকের ফন্ট ব্যবহার করে। তাই বলা হয়, জবস যদি ক্যালিগ্রাফি না শিখতেন তাহলে হয়তো কম্পিউটারে এত সুন্দর ফন্ট থাকত না। স্টিভ জবসের মতোই জীবনের সব জ্ঞান আপনার জন্য একেকটি বিন্দুর মতো কাজ করবে। সুতরাং যতটা সম্ভব নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিকে ভরে তুলুন। সেসব জুড়ে দিয়ে পেয়ে যাবেন জীবনের সরল সমাধান।

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।