যে দোষে আজ আমি অপরাধী - পর্ব (৯)



আমার থেকে ওয়াদা নিয়ে মাইশা চলে গেল। অনেক দিন পর বোনটাকে দেখে নিজেকে বেশ হাল্কা লাগলো। আবার কাল মার সাথেও কথা বলতে পারবো।দারিয়ে দারিয়ে কথা গুলা ভাবছিল।হঠাৎ করে জান্নাতি আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো।
- কি হচ্ছে টা কি, তুমি এভাবে আমার হাত ধরে টানতাছো কেন??
- চুপপপ, কথা না বলে আমার সাথে আসেন।



আমাকে হাত ধরে বাড়ির ভিতর নিয়ে আসলো। দেখলাম অনেক মানুষ এসে। কিন্তু জান্নাতি সেই যে আমার হাত ধরেছে ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই। এদিকে সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ওখানে থাকা কয় জন আমাদের কাছে এসে-
- কিরে জান্নাতি এ কে দুলাভাই নাকি। ওদের মধ্যে থাকা একটি মেয়ে কথাটি বললো তার সাথে বাকি সবাই হাসতে লাগলো।
- হুম তোরা যেমন টি ভাবিস। (জান্নাতি)
- জান্নাতির কথা শুনে আমার রাগ বেড়ে গেল। ওখানে আর এক মুহূর্ত থাকলাম চলে আসলাম। আমি চলে আসার পর-

কিরে জান্নাতি দুলাভাই ওই রকম কেন রে?
- ও তোরা কিছু মনে করিস না। ও একটু ওই রকমী। (জান্নাতি)

এদিকে বিয়ের কাজ শেষ বর বউকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। সারা দিনের ক্লান্তি তাই সবাই যে যার রুমে ঘুমাতে গেলাম। কাল আবার মেয়ে পক্ষের লোক ছেলের বাড়ি যাবে।

পরের দিনঃ....
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য খুব ভোরেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। এখনো সূর্য উদয় হয়নি। পূর্ব আকাশে গাছের পাতার আড়ালে সূর্য মামার কিছুটা দেখা মিলেছে। বাড়ির ভিতর দেখলাম সবাই রেডি হচ্ছে ছেলের বাড়ি যাবে বলে। তাই আমিও রেডি হতে গেলাম।

কিন্তু রুমে এসে ভাবছি আজ কি পড়ে যাব। তখনি জান্নাতির দেওয়া পাঞ্জাবির কথা মনে পড়লো। জান্নাতি তো দুইটা পাঞ্জাবি দিয়েছে। আজ না হয় নিল কালারের টা পরবো।

আমি পাঞ্জাবি টা পরে নিলাম। রুম থেকে বের হতে না হতেই আসিক সামনে এসে দাড়ালো।

- আচ্ছা তোর হয়েছে টা কি বলতো?(আসিক)
- কই আমি তো ঠিকই আছি।
- নাহ কিচ্ছু ঠিক নেই। আচ্ছা তোর আর জান্নাতির মধ্যে কি হয়েছে রে। (আসিক)
- কই। কিছু তো হয় নি।
- কাল দেখলাম তোর ড্রেস আর জান্নাতির ড্রেস এক। আবার বিয়ে বাড়িতে আসা লোকেদের বিনা পয়সায় সিনামা দেখালি। দুজন পাশাপাশি হাত ধরে দাড়িয়ে ছিলি। আজ আবার ম্যাচিং করা ড্রেস। (আসিক)
- আ..আ.আমি  কি করে বলবো!
- আমি বুঝতে পেরেছি। তুই যদি চাস তাইলে আমি নিলা আর লিলার বাবা মা কে কথাটা বলতে পারি।
- দেখ আসিক তুই ভালো করে জানিস আমি লিজা কে ভালোবাসি। এই মন জুড়ে শুধু লিজা আর কেউ না। আমি কোন ভাবেই পারবো না।
- তুই লিজাকে ভেবে আর কতো কষ্ট করবি বল? তার চেয়ে বরং সব ভুলে নতুন করে শুরু কর। আর জান্নাতি মেয়েটাও অনেক ভালো।
- আমি আর কিছু বললাম না আসিকের কাছ থেকে চলে আসলাম।

ওমা একি! পরী আসলো কোথা থেকে? মনে হয় আকাশ থেকে ভুল করে নেমে এসেছে! আমি সিড়ি দিয়ে নামছিলাম আর তখনি দেখি আমার সামনে একটা নীল পরী, সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। এই পরি টা আর কেও না জান্নাতি। হ্যা জান্নাতি নীল একটা শাড়ী পরেছে চোখে কাজল হাল্কা মেকাপ, হাল্কা লিপিস্টিক, আর ম্যাচিং করা নীল কাচের চুরি, এ যেন সত্যি একটা নীল পরী।

- ভাইয়া তুমি এখানে ওই ভাবে দাড়িয়ে আছো কেন সবাই তো গাড়িতে ওঠছে। কথা গুলো বলছে আর মিটি মিটি হাসছে। (নিলা)
- অহ হুম, হ্যা যাচ্ছি। নিলার কথায় ঘোর কাটলো। কেন জানি এক মুহূর্তে আমি কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলাম। (এদিকে নিলার কথায় বেশ লজ্জাও পেলাম। মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে আসলাম)
- বাইরে এসে দেখলাম অনেক গুলো মাইক্রো রাখা আছে। ভাবলাম যে কোন একটায় ঢুকে পড়ি। কাল তো জান্নাতির জন্য একটুও শান্তিতে থাকতে পারিনি। এটা ভেবে মাইকোতে ওঠতে যাব তখনি...

- ভাইয়া তুমি আমাদের সাথে আমাদের গাড়িতে যাবে (নিলা)

কি আর করার, হাজার হলেও বোন। তাই নিলা যে গাড়িতে যাবে সেই গাড়িতে পিছনে ওঠে আমি তো অবাক একি জান্নাতি এখানে কেন? এদিকে সামনে আসিক আর নিলা। এখন কি করবো! ভালো না লাগা স্বত্ত্বেও থাকতে হলো। বরের বাড়ির সামনে এসে আমাদের গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই জান্নাতি এসে আমার হাত শক্ত করে ধরলো যেন আমি কোথাও হারিয়ে না যায়।
- কি করছোটা কি হ্যা?
- কই কিছু তো করি নাই। (জান্নাতি)
- এভাবে হাত ধরেছো কেন।
- ছোট বাচ্চা, অনেক মানুষ এসেছে হারিয়ে যেতে পারেন।
- আমাকে দেখে কি তোমার বাচ্চা মনে হয়।
- হুম তা নয়তো কি।
- দেখো সবাই মনে করবে যে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড আর নয়তো স্বামী।
- আমার কোন আপত্তি নায়, হলে হতে পারেন। (আস্তে আস্তে বললো)
- কি কিছু বললে।
জান্নাতি আর কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ও বাড়িতে ভিতরে না গিয়ে বাড়ির ওল্টা দিকে যাচ্ছে।

- এই তুমি এই দিকে যাচ্ছো কেন? সবাই তো ওই দিকে যাচ্ছে।
- চুপ কোন কথা না বলে আমার আসুন (জান্নাতি)



ও আল্লাহ গো এই মেয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। এই মেয়ে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি বাচ্ছা ছেলে আমাকে কি আবার বিক্রি করে দিবে নাকি। আমি এখনো বিয়ে করি নাই আমি এতিম আমার বাপ মা ছাড়া কেও নায়। কথা গুলা মনে মনে বলছি আর দোয়া পড়ছি। কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখলাম কিছু দূরে দুই জন মহিলা দাড়িয়ে আছে।

আর একটু সামনে যেতেই বুঝতে পারলাম দুজন আর কেও না, আমার বোন মাইশা আর তার সাথে আমার মা দাড়িয়ে আছে। আমি ওখানে যেতে না যেতেই মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। বাবা তুই এতদিন কোথায় ছিলি বল। আমার কথা কি তোর মনে পরে না? কি করে এতদিন তুই আমাকে ছেড়ে থাকলি?

আমি মাকে জড়িয়ে শুধু নীরবে কেঁদে যাচ্ছি। কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না। যাদের ছাড়া এক মুহূর্ত আমি থাকতাম না। সেই আমি কি করে ৮ বছর দূরে থাকলাম!
- বাবা তুই কথা দে, আমাকে ছেড়ে আর যাবি না বল। (আমার গালে মা দুটি হাত রেখে কথাটি বললো)
- মা আমি তোমাদের রেখে কোথায় যাবো বলো?
- তাইলে তুই এত দিন আসলি না কেন? আমি আর মাইশা তোকে কত খুজেছি
- আর খুজতে হবে না মা দেখ আমি ফিরে এসেছি।
এভাবে মার সাথে অনেক কথা হলো। এদিকে মা আমার সাথে জান্নাতিকে দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো।
- বাবা এই মেয়েটা কে?

আমি বলার আগেই জান্নাতি বলে দিলো,,,
- মা আমি আপনার ছেলের বউ (জান্নাতি)
জান্নাতির কথা শুনে তো আমি আকাশ থেকে পাতালে পড়লাম থুড়ি জমিনে পড়লাম!

- আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আমার ছেলের বউ আমি নিজে পছন্দ করে আনবো। কিন্তু তা আর হলো না। তবে আমার ছেলের পছন্দ আছে দেখছি আমি এই রকমি একটা বউমা চেয়েছিলাম। (মা)
- কি যে বলেন না মা। আপনার ছেলের পছন্দ আছে না ছাই আছে। শুধু আমাকে ছাড়া একটা পছন্দ ভালো না। (কথার মাঝে জান্নাতি মাইশাকে চোখ মারল)
- হ্যা মা ভাবি ঠিকই বলেছে ভাইয়ার কোন পছন্দ নায় (মাইশা)

যাহ সালা! আমার বোন টাকেও ওর নিজের দলে করে নিল! আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দর্শকের মতো ওদের কথা শুনছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে যেন শান্তা এসে


.......To be continue

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।