যে দোষে আজ আমি অপরাধী - পর্ব (৪)

 
পরের দিনঃ আমি বসে আছি একটা খোলা জায়গায়। এই সেই স্পেশাল জায়গা যেখানে আমরা ৮ বন্ধু বসে আড্ডা দিতাম। আমরা ঠিক করে ছিলাম পড়াশুনা শেষ হলে তো আগের মতো প্রতিদিন একসাথে হতে পারবো না তাই বছরের এইদিনটা এখানে এক সাথে হবো। ৮ বছরে জায়গাটা অনেক পাল্টে গেছে। আজও ওরা আসে এখানে। কিছুদুরে দেখলাম তিন জন পুরুষ আর তিন জজন মহিলা আর সাথে চারটি বাচ্চা বসে আসে। আমি এগিয়ে গেলাম। কাছে যেতেই শুনতে পেলাম।

- আরে কতদিন এখানে আসবো। প্রতিবছর এইদিনটাই এখানে আসি। কিন্তু যে এসব ঠিক করে ছিল সেই নেই। ৮ বছর পেরিয়ে গেছে। কোথায় আছে কেউ জানে না। (একজন পুরুষ)
.
- ঠিক বলেছিস ইমদাদুল, ৮ বছর ধরে ইয়াছিনের কোন খোজ নেই। অভিমান তো লিজার উপর করা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের উপর কেন করলো। আমরা কি দোষ করেছি যে আমাদের কে বিনা অপরাধেরর সাজা পেতে হচ্ছে। (অন্যজন পুরুষ)
.
- তোরা চুপ করবি একটু। তোরা দেখে নিস ইয়াছিন ঠিক একদিন ফিরে আসবে, ও লিজাকে অপরাধি ভাবতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে ইয়াছিন কখনোই অপরাধি ভাববে না। (আরেক জন পুরুষ)
.
- লিজা তো বেস ভালোই আছে। ও এখন বলে যদি সেইদিন ওর বাবার কথা মতো বিয়ে না করতো তাহলে সব চেয়ে বড় ভুল করতো। ইয়াছিন ওকে কি দিতে পারতো। এখন ওর কাছে দামি গাড়ি, বাড়ি সব আছে যা ইয়াছিন দিতে পারতো না। (ওদের মধ্য একজন মহিলা)

.
- এই লিজা এক সময় ইয়াছিন কে ছাড়া কিছু বুজতো না। আজ তার উল্টা। সবাই স্বার্থপর। (অন্যজন মহিলা)
.
- রাবেয়া থামতো ওই স্বার্থপর বেঈমান লিজার নাম বলিশ না। যখন ইয়াছিনের কাছে সব ছিল তখন লিজা ইয়াছিন কে ছাড়া কিছু বুঝতো না। কিন্তু যখন ইয়াছিন হলো নিস্ব তখন স্বার্থপরের মতো দূরে চলে গেল। (আরেকটি মহিলা)
.
ওদের কথা শুনে এটা বুজতে পারলাম ওরাই আমার বন্ধু ইমদাদুল, রিতু, আরাফাত, রাবেয়া, আব্দুল্লাহ, সুচি।
.
-আরাফাত, ইয়াছিনের পরিবারের কাছে জানার চেষ্টা করেছিলিস কি ইয়াছিন কোথায়। (ইমদাদুল)
.
- ইয়াছিনের নাম ওর পরিবারের কেউ শুনতে পারে না। শুনেছি ৯ বছর আগেই ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। আমি আর রাবেয়া গিয়েছিলাম ওর পরিবারে কাছে জানতে কিন্তু যখন জানলো আমরা ইয়াছিনের বন্ধু আমাদের বাড়িতে ঢুকতে পর্যন্ত দেয়নি। (আরাফাত)
.
- ইয়াছিনের ভাগ্য দেখ, একসাথে সব কিছু হারালো। (আব্দুল্লাহ)
.
- ইয়াছিন তো কথা দিয়েছিল ও এখানে আসবে। কিন্তু প্রতিবছর আমরা এখানে আসি কিন্তু ও আসে না। (সুচি)
.
আমি ওদের কাছে গেলাম।
- কথা দিয়েছি তাইতো ফিরে এসেছি। (আমি)
.
ওরা সবাই আমার দিকে তাকলো।
.
- কে আপনি?? (ইমদাদুল)
.
- ভালো ভাবে দেখ বুজতে পারবি কে আমি। (আমি)
.
আব্দুল্লাহ ভালোভাবে দেখল আর উঠে এসে আমাকে জাড়িয় ধরলো। ওর এই আচরণ দেখে বাকি সবাই অবাক।
.
- আব্দুল্লাহ কে ইনি? আর এনাকে দেখে এই রকম আচরন করেছিস কেন?? (আরাফাত)
.
- আরে ভালোভাবে দেখ এটা ইয়াছিন (আব্দুল্লাহ)
.
- বাদে তো আব্দুল্লাহ আমাকে ওরা চিনতে পারবে না। ( আমি)
.
বাকি সবাই আমার কাছে এল। কিছুক্ষন দেখে আরাফাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। এই কান্না হারানো বন্ধুকে ফিরে পাবার। বাকি সবারও একই অবস্থা। রিতু আগে থেকে অনেক রাগি। এসে আমাকে থাপ্পর মারলো।
.
- এত গুলো বছর কোথায় ছিলিস। একটা মেয়ে ছেড়ে গিয়েছে বলে দেবদাস হয়ে যাবি। দেবদাস হওয়ার খুব ইচ্ছা।
.
- আরো কয়েকটা দে। একজন ছেড়ে গিয়েছে বলে আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে। (রাবেয়া)
.
- এত মারলো মরে যাবো। (আমি)
.
- তোকে মেরে ফেলবো। (রিতু)
.
- ইমদাদুল, বাচা আমাকে মেরে ফেললো রে।(আমি)
.
- তোকে আমরাও মারবো। (ইমদাদুল)
.
- তোদের জন্য ফিরে এলাম আর তোরাই মেরে ফেলবি। (আমি)
.
- এতদিন কোন প্রকার যোগাযোগ করিসনি কেন??( সুচি)
.
- আসলে বিদেশে যাওয়ার আগে আমার মোবাইলটা হারিয়ে গিয়েছিল। তাই যোগাযোগ করতে পারিনি। (আমি)
.
- তারমানে এতদিন তুই দেশের বাইরে ছিলিস আর আমরা তোকে দেশে খুজে তন্নতন্ন করেছি।(আরাফাত)
.
- আচ্ছা, এখন তো ফিরে এসেছি। আচ্ছা এই বাচ্ছা গুলো কার। (আমি)
.
- ওই ছেলেটা আমার আর রিতুর (ইমদাদুল)
.
- আর এই মেয়েটা আমার আর সুচির (আব্দুল্লাহ)

- আর বাকি দুইটা আমার আর রাবেয়ার(আরাফাত)
.
- তোদের ছেলে মেয়ে গুলোতো অনেক কিউট। (বাচাগুলোকে আমার কাছে ডাকলাম। দেখে বুজলাম বাচ্চা গুলোর বয়স বেশি নয়। একজনের ৫ আরেক জনের ৪ হবে আর বাকি দুইজনের ৩ হবে) আরাফাত ওরা জোড়া??
.

- হ্যা, এখন তুই বল তোর স্ত্রী কোথায়?? ( আরাফাত)
.
- আমি বিয়ে করি নি।
.
- কেন?? (রাবেয়া)
.
- লিজার পর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি তাই। (আমি)
.
- ও তো বিয়ে করে সুখে আছে। আর তুই দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। ওর জন্য কি তুই কোন দিন বিয়ে করবি না। (রিতু)
.
- করবো তো, যেইদিন আবার কাউকে ভালোবাসতে পারবো। (আমি)
.
- তুই আজও বদলাস নি। (ইমদাদুল)
.
- বদলানো আমার স্বভাব নয়। (আমি)
.
- তার জন্য তো সব সময় কষ্ট পেয়ে গেলি। (আব্দুল্লাহ)
.
- ওইসব বাদ দে। কতদিন পরে একসাথে হলাম। আড্ডা দিবো না। (আমি)
.
অনেক সময় আড্ডা দিলাম। ওদের বিয়ের গল্প শুনলাম। কারন বিয়ে সময় আমি থাকতে পারিনি। অনেক সময় পর দেখলাম আসিক ফোন দিয়েছে। তাই...
.
- আমি আসি। (আমি)
.
- কোথায় যাবি?? (সুচি)
.
- আসলে এখানে আরো কিছু কাজের জন্য এসেছি। সেটা করতে হবে। (আমি)
.
- তুই থাকছিস কোথায়?? (ইমদাদুল)
.
- তোদের তো বললাম আমার ছেলে বেলার বন্ধু বাড়িতে। এখন ওর সাথে আমার গ্রামে যাবো। আর তোদের নাম্বার দে। আমি সেইখান থেকে এসে তোদের সাথে যোগাযোগ করবো।
.
ওদের নাম্বার নিয়ে চলে এলাম। ওরা আসতে দিতে চাইলো না। কিন্তু ৮ বছর ধরে যে মুখ গুলো দেখিনি সেগুলো দেখতে হবে। যে গ্রামের ধুলোই পা পরেনি সেখানে পা ফেলতে হবে। আমি এসে দেখলাম আসিকও রেডি হয়ে বসে আছে। ওদের সাথে বেরিয়ে পড়লাম বগুড়ার উদেশ্য।

......... To Be Continue

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।