যে দোষে আজ আমি অপরাধী - পর্ব (২)



তারপর থেকে আসিকের সাথে ফোনে কথা হলেও আমাদের তেমন দেখা হতো না। আসিকের বাসায় আসতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল। এখানে এখন শুধু আসিক আর ওর স্ত্রী রয়েছে। বাকি সবাই গ্রামে চলে গেছে। আমার থাকার জন্য একটা রুম দেখিয়ে দিল। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম। রাতে বেশি ঘুম হয়নি। তাই ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি গিয়ে বারান্দায় দাড়ালাম। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুলে পড়েছে। এখন ওতটা তেজ নেই। পশ্চিম আকাশটা লাল বর্ন ধারন করেছে আর কিছুক্ষন পরেই অস্ত যাবে। এই সময় আগে পাশে একজন ছিল। যার সাথে দাড়িয়ে রোজ এই আকাশটাকে দেখতাম। আজও মনে পড়ে সেইদিন গুলো। জানি না সে কেমন আছে। হয়তো স্বামী সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। খুব জানতে ইচ্ছা হয় সে আমার কথা মনে করে কি?? সে তো বলেছিল আমাকে কখনও ভুলবে না। লিজা আজও কি তোমার এই পাগলটার কথা মনে পড়ে। আমার মতো কেউ কি তোমার সাথে পাগলামি করে। লিজা আমার প্রথম ভালোবাসা। আজ মনে পড়ে ভার্সিটির সেই দিন গুলো।

.
আমরা ৮ জন বন্ধু ছিলাম। চার জন ছেলে চার জন মেয়ে। আমি, লিজা, ইমদাদুল, রিতু, আরাফাত, রাবেয়া, আব্দুল্লাহ, সুচি ইসলাম। বলতে গেলে জোড়ায় জোড়ায়। লিজা আমার গার্লফ্রেন্ড। ইমদাদুলের ছিল রিতু। আরাফাতের ছিল রাবেয়া আর আব্দুল্লার গার্লফ্রেন্ড ছিল সুচি। এই ৮ জন কাউকে ছাড়া কেউ থাকতে পারতাম না। কিন্তু এই ৮ বছর কিভাবে থাকলাম বুজতেই পারলাম না।
.
লিজা সব সময় বলতো কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না। অনেক ভালোবাসতো আমাকে। ওর সাথে শীতের সকালে নরম ঘাসের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাটা, বসন্তের ফুলের আগমনে, সব মনে আছে। কিন্তু জীবন বড় অদ্ভুত। পরিবারের মতো লিজাও আমাকে ছেড়ে গেল। ঘর ছেড়ে বেবিয়ে আসার পর লিজা আমার পাশে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। আমি ওর বাবার সাথে দেখা করেছিলাম। কিন্তু ওনি আমাকে অনেক অপমান করে। করারই কথা যাকে তার পরিবার ঘর থেকে বের করে দিয়েছে তাকে তো অন্য কেউ সম্মান দেবেই না। আমি পারিনি লিজাকে আমার করতে। লিজা বলেছিল পালিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে তো আর সুখি হওয়া যায় না। আমি যখন দেশ ছাড়ি তার ৭ দিন পরে লিজার  বিয়ে হল। লিজার জন্য দেশ ছেড়ে ছিলাম। কারন ও অন্যকারো হবে এটা আমি সহ্য করতে পারতাম না। অতীত বড্ড বেহায়া। না চাইলেও বার বার মনে পড়ে।

- এই আপনি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন।
কারো আওয়াজে ঘোর ভাঙ্গলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি নিলা।

- আরে আপু আপনি??
- প্লিজ,, আপনি বলবেন না। আমি আপনার অনেক ছোট। (নিলা)
- আপু তো বলতে পারি।
- তা পারেন।
- আসিক কোথায়??
- বাইরে গেছে।
- ও
- আমি একটা কথা জানতে চাই। বলবেন?
- কি??
- আসিকের কাছে আমি শুনেছি আপনি অনেক হাসি-খুশি একজন মানুষ ছিলেন, আর অনেক দুষ্টু কিন্তু আপনার কথা শুনে তা মনে হচ্ছে না।

- (একরাশ হেসে) জীবনে কিছু অধ্যায় থাকে যা অনেক দুষ্টু মানুষটাকে শান্ত করে দেয়। অনেক হাসি-খুশি মানুষটাকে নিশ্চুপ করিয়ে দেয়। আমি ওই অধ্যায় পার করে এসেছি।

- ওই অধ্যায়টাকি জানতে পারি।
- এখন নয় অন্য এক সময়।
- আচ্ছা আজ রাতে। প্লিজ বলবেন কথা দিন।
নিলার বায়না শুনে আমার ছোট বোন মাইশার কথা মনে পড়ে গেল। ও ঠিক এভাবে বায়না ধরতো। জানি না আজ কত বড় হয়ে গেছে। খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। মাইশার সাথে নিলার অনেকটা মিল।


- তোমার এই বায়না শুনে আমার ছোট বোনটা কথা মনে পড়ে গেল। কিন্তু ওকে ধরে দেখি না। আচ্ছা বলবো।
- কেন আমি আপনার বোন নই। আজ থেকে আমি আপনার বোন।
- তাহলে ভাইকে কেউ আপনি করে বলে।
- আচ্ছা এখন থেকে তুমি আর ভাইয়া বলে ডাকবো। আমি যাই আমার অনেক কাজ আছে। তুমি কফিটা খেয়ে নাও।

কিছু সময় পর রাত নেমে এল। আসিক বাইরে থেকে ফিরে এল। অনেক সময় পর দুই বন্ধু একসাথে হয়েছি তাই গল্প করছি। কিছুক্ষন পর নিলা ডাকলো খাওয়ার জন্য। সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম। পরে সবাই একসাথে গল্প করতে বসলাম।
.
- ভাইয়া তুমি ভুলে গেলে আমাকে তুমি কি যেন বলতে চেয়ে ছিলে। (নিলা)
- কি যেন??
- তোমার অতীত?? (নিলা)
- নিলা তুমি কেন ওর কষ্ট বাড়াতে চাও (আসিক)
- তুই চুপ কর। আমার বোন শুনতে চেয়েছে শুনবে। আর কষ্ট ভাগ করলে কমে।
- বাহ! এর মধ্যে ও তোর বোন হয়ে গেল। আমি যে এত দিনের বন্ধু তাকে ভুলে গেলি। (অভিমান করে আসিক)
- তুমি চুপ কর ভাইয়াকে বলতে দাও। ভাইয়া তুমি শুরু করো।

আমি শুরু করলাম।
আমার পরিবার শহরেই থাকতো। গ্রামে কম যেত। সেখানে শুধু দাদা-দাদি ছিল। দাদা-দাদির দুই ছেলে। আমার বাবা বড়, আর চাচা ছোট। চাচাও শহরে থাকতো। আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিল। আমি ছিলাম পরিবারের বড় ছেলে। আমি গ্রামে বেশি থাকতাম। কারন আমার শহর পছন্দ ছিল না। শহরের মানুষকে ইট পাথরে গড়া মনে হতো। বাবা সব সময় শহরে থাকতে বলতে আমি শুনতাম না। এর জন্য বাবা আর আমার মধ্য সমস্যা হতো। শহরে না থাকার আরেটা কারন ছিল। চাচার এক মাত্র মেয়ে শান্তা, ও সব সময় আমাকে খারাপ বানানোর চেষ্ট করতো। জানি না কেন করতো। সবাই ওর কথা বিশ্বাস করতো। কারন ও আমার থেকে ৫ বছরের ছোট ছিল। কিন্তু আমার ছোট বোন মাইশা সব সময় আমার পাশে থাকতো। মধ্যমিক শেষ করার পর গ্রামে থেকে আমাকে শহরে আসতে হয়। না চাইলেও সেখানেই থাকতে হয়।


.........To Be Continue


SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।