আপুর বান্ধবী যখন বউ - শেষ পর্ব


মা ঃ কিছুই করার নেই তোমারটা তুমি বুঝে নাও।
আমি ঃ ঠিক আছে আমি রাজি।
এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এলাম।
আরিফা ঃ ফোন দিলো।
আরিফা ঃ এই ।
আমি ঃ কি ।
আরিফা ঃ খাওয়া দাওয়া শেষ করছো।
আমি ঃ হুম তুমি করছো।
আরিফা ঃ হুম।
আমি ঃ আচ্চা তাহলে এখন ঘুমাও ।
আরিফা ঃ এত তাড়াতাড়ি ঘুমাবে।
আমি ঃ হ্যা কারণ আমার সকালে কাজ আছে।
আরিফা ঃ বাববাহ, তোমার আবার কিসের কাজ।
আমি ঃ আগামীকাল থেকে অফিসের সব কাজ দেখার দায়িত্ব আমার উপর।
আরিফা ঃ বিয়ের কয়েকটা দিন পর দায়িত্ব নিতে।
আমি ঃ বাবা যা ভালো মনে করেছে তাই করেছে।
আরিফা ঃ আংকেল যদি দিয়ে থাকে তাহলে আমাদের ভালোর জন্যেই করেছে।
আমি ঃ হুম, আচ্চা এখন রাখি।
আরিফা ঃ ঠিক আছে।


তারপর একটা ঘুম দিলাম, সকালে বেলা ঘুম থেকে উঠেই হাল্কা নাস্তা করে বাবার সাথে রওনা দিলাম।
বাবা এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দিলো।
এরপর বাবা বাসায় চলে গেলেন।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কিভাবে কি করবো,
একটু পর একজন বললো স্যার অফিসের জুনিয়র ম্যানেজার নেওয়া হবে, আপনি যদি একটু দেখতেন।
আমরা প্রাথমিক কয়েকজন কে সিলেক্ট করেছি,
আপনি ভাইভা নিলে বেশি ভালো হতো।
আমি ঃ ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।
একটু পরে গেলাম,
সবাই বেশ ভালো উত্তর দিচ্ছে।
একজন কে বললাম।
আমি ঃ যদি দেখেন অফিসে কোন টাকা নেই তাহলে কিভাবে কর্মচারীদের বেতন দিবেন।
সে উত্তর দিলো, কর্জ করে।
আমি ঃ আপনাকে কে টাকা কর্জ দিবে।
এভাবে কয়েক জন কে বলার পর একজন আসলো আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।
এইটা তো রূপা।
রূপা প্রথমে আমাকে দেখে একটু কোতুহলী হয়ে গিয়েছিল, তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিলো।
আমি ঃ যদি দেখেন অফিসে টাকা নেই তাহলে কর্মচারীদের বেতন দিবেন কিভাবে।
রূপা ঃ অফিসের চেক বইয়ে টাকার পরিমাণ লিখে দিবো।
এরপর দুই একজন প্রশ্ন করলো ।
আমি ঃ বললাম এর চাকরি কনফ্রাম করুন।
এরপর রূপা কে বললাম যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে যেতে। একটু পর রূপা আসলো।
রূপা ঃ ভিতরে আসতে পারি।
আমি ঃ হ্যা আসো।
রূপা ঃ কিছু বলবেন স্যার।
আমি ঃ মজা করো আমার সাথে।
রূপা ঃ এইটা অফিস তাই বললাম।
আমি ঃ আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে তুমি কিন্তু আসবে,।
রূপা ঃ দাওয়াত যেহেতু পেয়েছি, তখন আসবো।
আমি ঃ তাহলে এখন আসি, আর শোন একটা কথা বেতন পেলে আমার ট্রিট কিন্তু দিতে হবে।
রূপা ঃ অবশ্যই দিবো।
আমি ঃ তাহলে এখন আসি বাসায় যেতে হবে।
এমন সময় আরিফা আমার রুমে এলো।
আরিফা ঃ এই রূপা তোমার অফিসে কেন।
আমি ঃ ও এই অফিসে চাকরি নিয়েছে, আর আমাদের বিয়ের দাওয়াত দিলাম,।
আরিফা ঃ অফিসিয়ালি দাওয়াত দিলেই হতো পার্সোনাল ভাবে দেওয়ার কি আছে।
আমি ঃ রূপা তুমি এখন আসো।
রূপা চলে গেল, বেশ কিছুক্ষণ চলল আরিফার বকবক।
আমি ঃ আরিফা, তুমি কিন্তু কথা দিয়ে ছিলে আমার সাথে আর বাজে ব্যবহার করবে না।
আরিফা ঃ তুমি অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলবে না।
আমি ঃ তুমি আমার বন্ধুদের কে অপমান করছো‌, আচ্চা রূপা কি ভাববে, ভাববে আমাকে ভালবাসার চেয়ে বেশি বেশি সন্দেহ করো।
আরিফা ঃ কে কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
আমি ঃ অফিসে আসসো কেন ‌।
আরিফা ঃ তুমি নাকি খাওয়া দাওয়া করোনি তাই আসছি, দুজন মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করবো।
আমি ঃ ঠিক আছে বসো আমি ব্যবস্থা করছি ।
এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরিফা কে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি বাসায় ফিরলাম।
রাতে আরিফা ফোন দিলো।
আমি ঃ কিছু বলবা।
আরিফা ঃ আগামীকাল গায়ে হলুদ, তুমি কি একটু বাড়িতে আসতে পারবা।
আমি ঃ আজকেই তো দেখা হলো।
আরিফা ঃ যখন মন চাইবে তখন দেখা করবে কোন সমস্যা আছে তোমার।
আমি ঃ না কোন সমস্যা নাই, তবে আমার একটা পার্সোনালিটি আছে।
আরিফা ঃ আমার সাথে তোমার কোন পারসোনালিটি চলবে না।
আমি ঃ ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো।
একটা ঘুম দিলাম, সকালে মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো,
বাড়িটা সাজানো হচ্ছে।
অনেক মেহমান আসছে,,
তানিশার জামাই বাড়ি থেকে অনেক মানুষ আসছে।
মা ঃ আমিরুল ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করেনে।
আমি ঃ আছে ।
নাস্তা করে বসে আছি।
এদিক সেদিক বাচ্চাদের ছোটাছুটি, বিয়ের আমেজ কিছুটা অনুভব করতে পারলাম।
একটু পর মিজান সাইদ ওদের বউ নিয়ে এলো।
আমি মিজান মিজানের স্ত্রী  সাইদ স্ত্রী দুলাভাই তানিশা মিলে আডডা দিচ্ছি।
এমন সময় আরিফা ফোন দিলো।
আমি ঃ কি হলো কিছু বলবা।
আরিফা ঃ তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমি ঃ পাগলামী করছো কেন।
আরিফা ঃ তুমি যেভাবেই হোক একটু আসবা ।
আমি ঃ লোকে জানলে কি বলবে।
আরিফা ঃ আমি এত কিছু বুঝিনা, আর শোন আসার সময় আইসক্রিম নিয়ে আসবে।
আমি ঃ তানিশা তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে যাবে।
আরিফা ঃ আমি বলছি আসতে তো আসবে না আসলে খবর আছে।
আমি ঃ চেষ্টা করবো।
আরিফা ঃ না এলে খবর করে ছাড়বো।
সন্ধ্যায় আরিফাদের ওখান  গায়ে হলুদ দেওয়ার জন্য অনেক মেহমান এলোহ সাথে আফিফা আর রাব্বানীও এসেছে‌।
তারপর গায়ে হলুদ দেওয়া শেষ হলো।
এখন আমাদের এখান থেকে যেতে হবে।
আরিফা তো ফোনের উপর ফোন করছে।
আমি ঃ আমি কিভাবে যাবো বলো, এইটা সম্ভব নয়।
আরিফা ঃ আমি তো এত কিছু জানলে চাইছি না, আমি মেনে নিতে পারলে কার কি সমস্যা,
আমি ঃ চেষ্টা করবো ।
আরিফা ঃ না এলে খবর আছে।
এরপর অনেকেই গেল কিন্তু আমি যেতে পারলাম না, আমার সাথে কিছু বাচ্চা বসে আছে।
আরিফা আবার ফোন করলো।
আমি ঃ কি হয়েছে আমার সাথে অনেক বাচ্চা বসে আছে আমার কিছু করার নাই, ক্ষমা করো আর আগামীকাল তো দেখা হচ্ছে।
আরিফা ঃ তোরে দেখা করতে বলছি তুই দেখা করবি, তুই আমার কোন কথা শুনিস না, তরে তো আমি খাইছি।
আমি ঃ এমন পাগলামি করছো কেন।
আরিফা ঃ আজকে আমার সাথে দেখা না করলে খবর আছে বলে দিলাম।
আমি ঃ ঠিক আছে, একটু রাত হোক আমি সব ব্যবস্থা করছি।
আরিফা ঃ ভালো করে বলি ছিলাম বাবু তখন শুনো নি এখন লাইনে আসছো তো, একটু তেরা হয়ে।
আমি ঃ আল্লাহ যদি আমারে উঠাই নিতো তাহলে মনে হয় বেঁচে যেতাম।
আরিফা ঃ এত সহজে ছাড়ছি না আমিও সাথে সাথে মরে যাবো আর তোমার কবরের পাশে কবর দিতে বলে যাবো।

আমি ঃ ঠিক আছে, দেখা যাবে।
গায়ে হলুদ দিয়ে সবাই চলে আসছে।
আমি ঃ মিজান সাইদ আমার সাথে এক যায়গায় যেতে হবে।
মিজান ঃ কয়,।
আমি ঃ আরিফা দেখা করতে বলছে।
সাইদ ঃ ঠিক আছে, তুই বাহিরে আয়।
তারপর বাহিরে গিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলাম,
আমি মাক্স লাগিয়ে মিজান আর সাইদের সাথে ভিতরে গেলাম,
মিজান ঃ  একটু আগে এখানে আমি আমার ফোনটা ফেলে গেছি কোথায় রেখেছি একটু খুঁজে দেখতে হবে,তাই এলাম।
 সাইদ তুই ঐ দিকে দেখ আমি ছাদে যায়, আর তুই বউয়ের ঘরের দিকে যা ।
আমি মনে মনে বলি মিজানের ভালো বুদ্ধি আছে।
এরপর আরিফার রুমে গেলাম, আমার মুখে মাক্স লাগানো থাকলেও আরিফা চিনে ফেলেছে।
আরিফা ঃ তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাও।
সবাই বাহিরে গেলে আরিফা বলে।
আমার আইসক্রিম কোথায়।
আমি ঃ আনতে পারিনি গো।
আরিফা ঃ কেন,
আমি ঃ এখন আমি আইসক্রিম খেতে আসছি খাওয়াতে না।
আরিফা ঃ ধারাও দেখাচ্ছি মজা, এই বলে আন্টিকে ডাকতে শুরু করলো ।
আমি ঃ এই কি করছ, ।
আরিফা ঃ আবার চিৎকার দিলো।
আমি আর কোন কিছু না বলে কিস করে বসলাম।
আরিফা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
একটু পরে ছাড়লাম।
আরিফা ঃ আরেকটু হলে আমি মরেই যেতাম।
আমি ঃ এখন আমি আসি,
আরিফা ঃ ধন্যবাদ আসার জন্য।
আমি ঃ হুম চলি,
তারপর বাসায় ফিরে এলাম, আজকে আর তেমন ঘুম হলো না, সকাল বেলা নাস্তা করার পর
মজা করতে সবাই ব্যস্ত আমি আরিফার সাথে কথা বলছি।
জুমার নামাজের পর বর সেজে রওনা দিলাম,
সব আজকে তো আরিফাকে দেখতে পাচ্ছি না, খাওয়া দাওয়া বিয়ের কাজ শেষ, এতক্ষণ আমি আরিফা কে দেখতে পাইনি।
সব এর যখন আসার সময় হলো তখন দেখলাম, বাপরে বাপ এইটা তো আরিফা না, মনে হচ্ছে একটা পরী, বেনারশি  শাড়িতে দারুন মানিয়েছে, চোখ ফিরাতে পারছি না, মনে হচ্ছে কোন পরী জগতের রানী,,,
বিদায় নেওয়ার সময় কান্না করছে,
অনেক কান্না করলো,
ওর কষ্টটা বুঝতে পারলাম
বিদায় নিয়ে বাসায় এলাম, সবাই নতুন বউ দেখতে, কিন্তু ওকে সবাই আগেও দেখেছে, এখন অন্ন ভাবে দেখছে, এখন বউ হিসেবে দেখছে।
আমি ছাদে চলে এসেছি, রাতের 11 দিকে দুলাভাই আমাকে নিয়ে আমার রুমে দিয়ে গেলেন,
আমি ভিতরে যেতেই সবাই রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
আমি আরিফার পাসে গিয়ে বসে আছি,
আরিফা ঃ তুমি গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে আসো।
আমি ঃ ঠিক আছে, এরপর দরজা বন্ধ করে, খাটে গেলাম, ।
আরিফা ঃ এবার খাটের নিচে নামো।
আমি ঃ মানে কি, মজা করছো নাকি আমার সাথে।
আরিফা ঃ না, তুমি নিচে যাও।
আমি ঃ খাটের নিচে নামলাম, ।
আরিফাও খাটের নিচে নামলো।
আমি ঃ কি মতলব তোমার।
আরিফা ঃ একদম চুপ করো।
তারপর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় আরিফা এসে পায়ে ধরে সালাম করলো, আমি মনে মনে অনেক খুশি হয়েছি।
তারপর আরিফা বলল তুমি এবার খাটে যাও, আমি একটু আসছি, ডেসিন টেবিলের কাছে গিয়ে গহনা গুলো খুলে খাট আসলো।
আরিফা ঃ আমি আর কখনো তোমাকে তুই তুই করে বলবো না, তোমার উপর হাত তুলবো না।
আমি ঃ আহ আরো আগে বিয়ে করলে এতদিন তাহলে কোন সমস্যাই ছিলো না।
আরিফা ঃ তবে কোন মেয়ের সাথে কথা বললে একবারে খুন করে ফেলবো।
আমি ঃ ঠিক আছে কখনো তাকাবো না , যাও এখন ঘুমাও,
আরিফা ঃ ঘুমাবো মানে।
আমি ঃ তুমি উত্তর দিকে তাকিয়ে ঘুমাও আমি দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে ঘুমাই কারণ তুমি বলছো কোন মেয়ের দিকে না তাকাতে।
আরিফা ঃ এই মজা করো আমার সাথে।
আমি ঃ তুমি বলছ মেরে ফেলবে তাই জীবন বাঁচাতে এইটাই করতে হবে।
আরিফা ঃ কোন কথার সুযোগ দিলো না আগেই ঝড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো
তারপর
তারপর
কি হলো না জানলেও চলবে।
তবে।
আজকে আমাদের বিয়ের দুই বছর হয়েছে,
আমরা দুজন মিলে ফেইসবুক থেকে একটা বাচ্চা ডাউনলোড দিছি,
নাম আরিফ।

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।