নাগকন্যা - পর্ব (১)

হাসপাতালে আমার বাচ্চাটা বদল হয়ে যায়।আমার ছেলে বাচ্চা হয়েছিল কিন্তু বাচ্চা যখন আমার কাছে প্রদান করা হল তখন আমাকে মেয়ে বাচ্চা প্রদান করা হয়।ডাক্তার এবং নার্স কে বলার পর তারা বলল আমার নাকি মেয়ে বাচ্চায় হয়েছে।অথচ বাচ্চা ডেলিভারী করার পর আমাকে বাচ্চা দেখোনো হয় আর আমাকে বলা হয়েছিল আমার ছেলে বাচ্চা হয়েছে আর আমি নিজেও দেখেছি আমার একটা ছেলে বাচ্চা হয়েছে।মা হয়ে নিজের সন্তান না চিনার মত ভুল আমি করব না।কোন মা এই তার সন্তান কে চিনতে ভুল করবে না।তার উপর আমার সব আল্ট্রা রিপোর্ট এ ও আমাকে বলা হয়েছিল আমার ছেলে বাচ্চা হবে। আমার কোলে যখন মেয়ে বাচ্চা দেওয়া হয় তখন একটু হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু বাচ্চাটা ভয়ানক রকমের সুন্দর ছিল।অদ্ভুত একটা মায়া তৈরী হয়ে গেল বাচ্চাটার প্রতি। 






জানি না কার বাচ্চাটা আমার সাথে পাল্টে গেল।কি জানি সে মায়ের অবস্থা কেমন। হয়ত সে মা ও আমার মত হতাশ। আমি বাচ্চাকে কোলো নিয়ে দুধ খাওয়াতে লাগলাম।খুব ক্ষুধার্ত মনে হল বাচ্চাটাকে।কিন্তু ভিতরে ভিতরে শুধু আমার বাচ্চাটাকে খুঁজতে ছিলাম।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয় টা জানানো হয়। তারা বিষয়টা খতিয়ে দেখার কথা বলল।কিন্তু বিষয়টার উপর তেমন নজর দেওয়া হল না।ফলে আমাকে অন্যের বাচ্চা নিয়েই হতাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হল। বিয়ের ১২ বছর পর বাচ্চার মুখ দেখলাম।নিজের বাচ্চার পরিবর্তে অন্যের বাচ্চা পেলাম।কিন্তু কষ্ট হচ্ছে শুধু আমার ছেলেটা কি হালে আছে কে জানে এটা ভেবে।খুব খারাপ লাগছে।কিন্তু মেয়েটার মুখ দেখে কেন জানি না আমি সব কষ্ট ভুলে যাই। আমার স্বামি ও আমাকে শাত্বণা দিয়ে বলল -অধরা আল্লাহ যা চেয়েছে তাই হয়েছে। এখন ঐ এই আমাদের মেয়ে।নিয়তি মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ১২ বছর পর বাচ্চার মুখ তো দেখতে পেয়েছি। হয়ত এটাই আমাদের নিয়তি ছিল। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম -যা কপালে ছিল হয়েছে।এতে আমি মোটেও হতাশ না। বাচ্চা যারেই হোক ও এখন আমার বাচ্চা।আমি ওকে পেয়ে হতাশ না।আমি হতাশ এটা ভেবে যে না জানি আমার বাচ্চাটা কার কাছে আছে।সে মা কি আমার বাচ্চার দেখা শোনা করবে ঠিক করে? আমার স্বামী আমাকে বলল -মা তো মা এই।হয়ত সে ও তোমার মত কোন মা পেয়েছে।চিন্তা কর না।যা হবে ভালোর জন্য। আমি একটি নিঃশ্বাস নিলাম।নিঃশ্বাস টা নিয়ে বললাম -ওর একটা নাম রাখা দরকার।কি নাম রাখা যায় বলতো। শাদাফ বেশ চিন্তা করে বলল -ওর দিকে তাকিয়ে দেখ ও কত সুন্দর।আর চোখগুলা দেখ একদম অন্যরকম।দেখেই যেন মন জুড়িয়ে যায়।আচ্ছা ওর নাম কি দেওয়া যায় তুমিই বলতো।
আমিও কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলাম।কোন নামেই যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না।কারন সব নাম যেন ওর সাথে বেমানান লাগতেছিল।অনেক ভেবে মনে হল ওর নাম আলো রাখি।আলো নামটা আমার মনে আসতেই আমার স্বামী শাদাফকে বললাম -আমার মনে হচ্ছে ওর নাম আলো রাখলে ভালো হবে। শাদাফ আমার নামটা শুনে বেশ খুশি হয়ে বলল -সত্যি এ নামটাই ওর সাথে মানানসই। সেদিনের পর থেকে আলোকে একবারও অন্য কারও মেয়ে মনে করে নি।আলোকে আমার নিজের ময়ের মতই লালন পালন করতে লাগলাম। আলো আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল।আলোর হাসি দেখে সবটা ভুলে যেতাম।মনের সব দুঃখ যেন আলোর হাসির কাছে হার মেনে যেত।আস্তে আস্তে আলোর বয়স ৬ মাস হল।৬ মাস বয়স থেকেই আলোর মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে লাগলাম।যা সাধারণ বাচ্চাগুলোর মধ্যে ছিল না।কিছুটা অদ্ভূত লাগত মাঝে মাঝে। তবুও নিজেকে সামলে নিতাম।ভাবতাম হয়ত এটা আমার মনের ভুল।সবার মধ্যেই ব্যাতিক্রম কিছু থাকে।হয়ত আলোর মধ্যে তার পরিমাণটা বেশি। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার মত ছিল না।আবার এড়িয়ে না গিয়েও পারতাম না।কারন আলোকে প্রায়ই খেয়াল করলে দেখতাম আলোর চোখের লেন্সটা চারপাশে ফুটবলের মত ঘুরছে।তখন আলো বেশ নিস্তব্ধ হয়ে ঝিম ধরে শুয়ে থাকে।মিনিট খানেক এরকম হওয়ার পর চোখ স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং আলো ও আগের মত পুনরায় খেলতে থাকে।প্রায়ই এমন খেয়াল করতাম।আর এ বিষয়টা ঘটত সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্তের সময়।ব্যাপার টা প্রথম দিন দেখে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু পর পর পুনরায় এভাবে দেখতে লাগলাম এরপর থেকে বিষয় গুলো কেন জানি না স্বাভাবিকভাবে মানতে পারছিলাম না।
এর মধ্যে আরেকটা কাহিনী ঘটার পর নিজের মনটাকে শাত্বণা কেন জানি না, দিতে পারছিলাম না। কারন একদিন আলোকে রেখে আমি রান্না ঘরে যাই আলোর জন্য খিচুড়ি আনতে।এসে যা দেখি তা দেখার পর আমার চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না।কারন দেখি আলো দাড়িঁয়ে খিল খিল করে হাসছে।হয়ত ভাবছেন বাচ্চা দাঁড়িয়ে হাসার মধ্যে কি এমন অদ্ভূত বিষয় আছে এটা তো নরমাল।সত্যি বলতে অদ্ভূত বিষয়টা এটা ছিল যে আলোর বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস।আর একটা ছয় মাসের বাচ্চা দাড়িঁয়ে এরকম বিদঘুটে হাসি দিলে যে কারও মনেই অশান্ত হয়ে যাবে।এটা দেখার পর নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারছিলাম না।মাথাটা হঠাৎ করে ঝিম ধরে গেল।তারপর কি হল বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারালাম।শাদাফের পানির ঝাপটায় আমার জ্ঞান ফিরল।আমি কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম শাদাফ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল -অধরা কি হয়েছে তোমার? এভাবে হঠাৎ করে পড়ে গেলে যে। আমি শাদাফের কথার জবাব না দিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম আলো ঘুমাচ্ছে।শাদাফকে বললাম -একটু আগে আলোকে দেখলাম দাঁড়িয়ে খিল খিল করে হাসছে।কেন এমন দেখলাম। একটা ৬ মাসের বাচ্চা হুট করে দাঁড়িয়ে গেল কিভাবে? শাদাফ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগল -অধরা এগুলো তোমার অতিরিক্ত চিন্তার ফল।আলোকে নিয়ে এত কাহিনী ঘটল তো তাই ট্রমা থেকে বের হতে পারছ না। -নাহ শাদাফ তাই যদি হত তাহলে আলোর চোখ এমন ঘুরে কেন সূর্য অস্তের সময় আবার সূর্যদ্বয়ের সময়? শাদাফ একটু নিরাশ কন্ঠে জবাব দিয়ে বলল -কত মানুষের তো কত ব্যাতিক্রম কিছু থাকে।হয়ত আলো যার বংশধর তার বংশে এরকম কেউ ছিল।আলো তো আর আমাদের বংশের কেউ না।এসব জ্বীনগতভাবে পেয়ে থাকে বাচ্চারা।তুমি চিন্তা কর না।আলো ঠিক আছে। শাদাফের কথায় নিজেকে বেশ শান্তনা দিতে চাইলেও শান্তনা দিতে পারছিলাম না। তবুও কেন জানি না মনের মধ্যে মনে হচ্ছে এসব কিছুর পিছনে কোন রহস্য আছে।আমি কি সে রহস্য ভেদ করতে পারব নাকি সেটা আমার অন্তরালেই থাকবে।ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলাম। এর মধ্যে শাদাফ আমাকে.....চলবে



গল্পটির পরবর্তী পর্ব পেতে গল্পটি নিচের শেয়ার অপশন থেকে অথবা লিংক কপি করে ফেসেবুকে শেয়ার করুন ........

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।