ফেসবুক প্রেম বিড়ম্বনা - না পড়লে মিস করবেন

facebook love

ফেসবুকে প্রেমে পড়ার সমস্যা কি আমি বলি। সেদিন সেইরকম সুন্দরী এক মেয়ের ছবি দেখে ক্রাশ খেয়ে পটাতে গেছি। মেয়ে আমার লেখার ফ্যান। পটেও গেছে প্রায়। লাস্ট মোমেন্টে বলতেছে, 'দেখ সোহাইল, আমি রাজি৷ কিন্তু আমার একটাই শর্ত আছে।'
আমি তখন সেই মুডে আছি। বললাম, 'তোমার সব শর্তে আমি রাজি।'
মেয়ে তাও নাছোড়বান্দা। বললো, 'শুনে তো দেখ শর্তটা।'
বললাম, 'বলো কি শর্ত।'
মেয়ে অনেক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, 'তোমার একটা প্রমিজ করতে হবে যে তুমি আমার দুটো মেয়েকে মেনে নিবা। ওদেরকে বাবার আদর দিয়ে বড় করবা। আমার আর তোমার সন্তান হলে সবাইকে সমানভাবে দেখবা।'
আমি আমতা আমতা করে বললাম, 'তোমার যে বাচ্চা আছে৷ তুমি বিবাহিত। এটা আগে তো বলোনি।'
- তুমি তো জানতে চাওনি। আর এখন তো বললাম। রাজি থাকলে বলো৷ ওদের আব্বুকে আমি ডিভোর্স দিব।'
.
বিশ্বাস করেন, তখন পর্যন্তও সব ঠিক ছিলো। কিন্তু একটু পর জানলাম তার বড় মেয়েটা জাহাঙ্গীরনগরে মাস্টার্স করতেছে। ছোটটা হলিক্রসে পড়ে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
আমি আস্তে আস্তে বললাম, 'আসলে আপনার ছবি দেখে বোঝা যায় না।'
বললো, 'তুমি যেটা দেখেছ ওটা আমার বিয়ের আগের ছবি। এখনের ছবি দিব?'
আমি ভয়ে আর চাইলাম না। বললাম, 'না থাক মানে আমি একটু ভাবি। কয়টাদিন টাইম দেন আমাকে।'
- উফ, সোহাইল। আপনি কেন বলছ? তুমি করে বলো। একটা সম্পর্কে যখন আমরা গেছি তখন আর আপনি বলার কি দরকার!
সেই প্রায় হয়ে যাওয়া প্রেম কত উপায়ে যে আমি ব্রেকাপ করার চেষ্টা করেছি সেটা শুধুমাত্র আমিই জানি। এদিকে উনার বর আবার পুলিশ অফিসার৷ ঢাকার কোন থানার ওসি যেন। ব্লকও দিতে পারিনা। মহিলা কান্নাকাটি শুরু করেছে। বলেছে, 'দেখ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কিন্তু আমি মরে যাব। আমার অনাগত সন্তানের কসম।'
- ইয়ে মানে অনাগত সন্তান?
- হ্যা, তোমার আরেকটা বাচ্চা আসছে৷ আট মাসের প্রেগন্যান্ট আমি।
- আমার বাচ্চা? আমি তো দেখিইনি আপনাকে।
- আবার আপনি! প্লিজ তুমি করে বলো সোনা।
.
এদিকে আমি রিস্কে আছি কোনোভাবে উনার হাজবেন্ট জানতে পারলেই আমি শেষ। জেলেও নিবে না। সোজা ক্রসফায়ারের সম্ভাবনা।
কিছু একটা তো ভেবে বের করতে হবে। বললাম, 'দেখেন আমি অনেক খারাপ। নেশা করি৷ গাজা খাই, ইয়াবা খাই৷ নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য ছোটোখাটো চুরিও করি।'
মহিলা হার্ট ইমো দিয়ে বললো, 'এগুলো কোনো ব্যাপারই না। আমার আগের হাজবেন্টেরও এসব খারাপ অভ্যাস ছিলো। বিয়ের পর আমি ভালোবাসা দিয়ে সব ছাড়াতে পেরেছিলাম।'
- আ আ আগের হাজবেন্ট?
- হ্যা, আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো। তার সাথে আট বছর সংসারের পর পুলিশ অফিসার দেখে প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু বুঝিনি যাকে ভালোবেসেছিলাম সে তার কাজকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসবে। আমাকে টাইমই দেয় না এখন।
- টাইম না দিলে তিনটা বাচ্চা কি অনলাইন অর্ডার করে পেয়েছেন?
- এইজন্যই তোমাকে আমি ভালোবাসি সোহাইল। তোমার সেন্স অফ হিউমার অনেক জোস। আমার বড় ছেলেটার সেন্স অফ হিউমারও অসাধারণ। তোমার সাথে পরিচয় করায় দেব।
- বড় ছেলে?
- হ্যা বাবা, আগের বিয়ে থেকে ঐ একটাই ছেলে আমার।
- সে আবার কত বড়? কি করে?
- সে ব্যবসা করে৷ রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছে। ঢাকা মহানগর যুবলীগের অনেক বড় নেতা।
- খাইছে আমারে।
- কি বলো এসব?
- কিছুনা।
- হুম, আচ্ছা তুমি আমার সাথে দেখা তো করো। তোমাকে সরাসরি দেখার জন্য আমার বুকটা ছটফট করছে।
- ইয়ে মানে আমি আপনার অনেক ছোট।
- এটা কোনো ব্যাপার? আমি জানি তুমি ছোট। সেটা জেনেই আমার হৃদয় দিয়েছি তোমাকে। প্রেম ভালোবাসায় বয়স কোনো ফ্যাক্ট না।
.
পরে মহিলার থেকে উনার বড় মেয়ের ফেসবুক আইডি নিলাম। ফেসবুকে সেই মেয়েকে ফেক আইডি দিয়ে মেসেজ দিয়ে বললাম, 'দেখেন আপনার আম্মু এই বয়সে কোনো এক ফেসবুক রাইটারের প্রেমে পড়েছে। আপনি কিছু করেন।'
মেয়ে বললো, 'আমি মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমার আম্মা যদি এরকম কোনো ডিসিশন নেয় তো আমি তার পাশেই থাকবো। বয়স হয়ে গেলেই যে একটা মানুষ প্রেম করতে পারবে না এরকম পুরাতন ধ্যান ধারণা আমি মানি না। আমি নিজে থেকে আমার মায়ের বিয়ে দিতে চাই। আপনি প্লিজ সেই রাইটারের নাম বলুন।'
আমি আমতা আমতা করে বললাম, 'জয়নাল আবেদীন সম্ভবত উনার নাম৷ আমি শিওর জানি না। আচ্ছা বাদ দেন।'
- কিন্তু আপনি কে?
- আমি কেউ না ভাই। গুড নাইট।
.
মেয়েটাকে ব্লক দিয়ে বাঁচলাম। এদিকে জয়নাল ভাইয়ের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। প্রায়ই কথাবার্তা হয়। আড্ডা দেই। গ্রুপ চ্যাট আছে আমাদের৷ তো ভাই সেদিন বলতেছে, 'আমি বিরাট এক ঝামেলায় পড়ে গেছি। জাহাঙ্গীরনগরের এক মেয়ে হুট করে মেসেজ দিয়ে বলতেছে তার আম্মাকে আমার বিয়ে করতে হবে৷ কি একটা অবস্থা বলো তো। সে মেয়ে নাছোড়বান্দা। আমার কোনো কথাই বিশ্বাস করে না। তার আম্মাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে এরকম একটা অবস্থা। কি করি বলো তো?'
আমি পরামর্শ দিলাম, 'আপনার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। বিয়ে করে ফেলেন।'
- আরে কি বলো এসব? ঐ মহিলা আমার আম্মার থেকে তিন বছরের বড়। তাছাড়া আমি চিনিও না। ঐ মেয়ে আমাকে কেন এসব বলছে বলতে পারো?'
আমি অবাক হলাম, 'আমি কিভাবে বলব? আমি তো আর ঐ মহিলার প্রেমিক না। আমি কিছুই জানিনা। আপনার ব্যাপার আপনিই দেখেন। আমাকে এইসব ঝামেলার মধ্যে আনবেন না প্লিজ।'
.
তারপর থেকে জয়নাল ভাইয়ের কোনো খোজ নেই। আইডি ডিএক্টিভ করে গ্রামে গিয়ে বসে আছে। উনার পরিচিত এক ছোটভাই বললো, 'উনার কাছে নাকি থ্রেট কল আসতেছে। কোনো এক বিয়ের ব্যাপারে। কাহিনী কিছুই খুলে বলে না। আপনি জানেন নাকি?'
আমি মাথা নাড়ি, 'আশ্চর্য, আমি কিভাবে জানব? জয়নাল ভাইয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। ফেসবুকে একদিন কথা হইছিলো এর বেশি চিনিই না উনাকে।'
.
এদিকে ঐ মহিলা তো আমাকে ছাড়তেছে না। দেখা না করলে হাত কাটার হুমকি দিচ্ছে। বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনোভাবেই এই অসম রিলেশন থেকে ব্রেকাপ করতে পারতেছিনা। শেষমেশ বলে দিলাম, 'দেখেন আপনাকে আমার আর ভালো লাগছে না। আমি অন্য কারো প্রেমে পড়েছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন।'
.
মহিলা শুধু, আচ্ছা ঠিক আছে সোহাইল, এটুকু বলেই আমাকে ব্লক দিয়ে দিলো। আমি তো খুবই অবাক। এতো সহজে নিস্তার পাওয়া যাবে জানলে কি এতো ঝামেলা করি?
.
দুইদিন পর শুনি জয়নাল আবেদীন ভাইকে সিলেট থেকে এক ঝটিকা অভিজানের মাধ্যমে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উনি নাকি কোনো ওসির বউএর সাথে পরকিয়ায় জড়াইছিলো। সেই মহিলা সুইসাইড করতে গেছে। সুইসাইড নোটে লিখে গেছে, 'ফেসবুকে তোমার সুন্দর লেখা পড়ে ভেবেছিলাম তোমার মনটাও সুন্দর হবে। কিন্তু ভাবিনি ভার্চুয়াল ভালোবাসা এই দুনিয়াটার মতই ফেক।'
ওদিকে মহিলার বড় মেয়ে বলেছে, 'তার মা নাকি জয়নাল আবেদীন নামের কারো সাথে প্রেম করেছিলো। পরে পুলিশ সিলেটে আত্মগোপন করে থাকা ঐ ফেসবুক রাইটারকে গ্রেফতার করেছে।'
.
টিভিতে নিউজটা দেখে জয়নাল ভাইয়ের প্রতি আমার খুবই মায়া হলো। আহারে বেচারা!
.
এদিকে মহিলা সুইসাইড করতে চেয়েছিলো। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। কিন্তু সফল হয়নি। আইসিইউতে আছে। দ্রুত অপারেশন করে পেটের বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেছে অবশ্য। কিন্তু মহিলার ব্যাপারে ডাক্তাররা কোনো কথা দিতে পারেনি। বাঁচতেও পারে আবার মরতেও পারে।
.
অবস্থা এখন এরকম দাঁড়িয়েছে যে, মহিলা যদি মরে যায় তো জয়নাল ভাই শেষ। আর মহিলা বেঁচে গেলে আমি শেষ।
.
এদিকে আমি মহিলার মৃত্যুও কামনা করতে পারিনা। আবার বেঁচে যাবে ভাবলেও জ্বর চলে আসে।
.
এর মধ্যে একদিন মহিলার জাহাঙ্গীরনগরে পড়া মেয়ে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিছে। মেসেজ রিকুয়েস্টের নোটিফিকেশনে শিউলি আক্তার নাম দেখেই আমার গা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে৷ এবার আমি শেষ। সব জেনে গেছে মনেহয়। আমি শেষ। উল্লেখ্য মহিলার বড় মেয়ের নাম শিউলি আক্তার।
.
কিন্তু মেসেজটা দেখার পর আমার ধড়ে প্রান আসলো। মেয়েটা লিখেছে, 'পারিবারিক সমস্যার কারণে মনটা খুব খারাপ ছিলো বেশ কিছুদিন ধরেই। আজ আপনার কিছু লেখা পড়ে প্রথবারের মত হেসেছি। অনেক ভালো লিখেন আপনি। থ্যাংক ইউ সো মাচ!'
.
শিউলির সাথে সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত কথা বললাম। সে তার আম্মার প্রেমের কাহিনী জানালো। আমি সান্তনা দিলাম। বললাম, 'আমি বহু লেখায় বহুবার বলেছি ফেসবুকে লেখা পড়ে কারো প্রেমে পড়তে হয় না। কিন্তু মানুষ শুনলে তো। আর এই লেখকরাও আছে। মেয়ে নাকি মহিলা দেখাশোনা নেই লুচ্চামি শুরু করে দেয়। মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে সবাইকে ফাসায়। জয়নালের মত এইসব রাইটারদের জন্যই আমরা ফেসবুকে যারা লেখালেখি করি সবার দূর্নাম হয়।'
.
শিউলির সাথে একদিন জাহাঙ্গীরনগরে গিয়ে দেখা হলো। আড্ডা দিলাম। আরেকদিন নিজেরাই রেস্টুরেন্টে মিট করলাম। বললো, 'ডাক্তাররা বলেছে আম্মুর অবস্থা একটু ভালোর দিকে।'
- ওহ শিট।
- আপনার আবার কি হলো!
- না মানে আমি খুশি হলাম। খুশি হলে ওহ শিট বলি। এটাই সিস্টেম আমার।
শিউলি অবাক হলো, 'আজব সিস্টেম তো।'
- ইয়ে মানে এই আরকি। তো আন্টির জ্ঞান ফিরবে নাকি?
- বলা যায় না, দেখা যাক। দোয়া করবেন।
আমি ওর হাতের ওপর হাত রাখলাম। বললাম, 'দোয়া তো করিই সবসময়।'
কি দোয়া করি সেটা আর বললাম না অবশ্য।
.
এর মধ্যে শিউলির সাথে আমার খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওর এরকম খারাপ সময়ে আমি পাশে দাঁড়িয়েছি। এটাতে মেয়েটা খুব ইমপ্রেস৷ একদিন ওর আম্মুকেও দেখে আসলাম। এর মধ্যে আইসিইউ থেকে বের করে দিয়েছে। কিন্তু কোমাতে আছে এখনো। ডাক্তার বলেছে, 'কবে জ্ঞান ফিরবে কিছুই ঠিক নেই। আজও ফিরতে পারে আবার দশ বছর পরও ফিরতে পারে। আবার কোনোদিন নাও ফিরতে পারে।'
.
ওদিকে তৃতীয়বারের মত জয়নাল ভাইয়ের জামিন খারিজ হয়ে গেছে। এখনো জেল খাটতেছেন। আমি দুইবার গিয়ে দেখেও আসছি৷ একবার এক হাজার টাকা দিয়ে আসছি। জেলের মধ্যে ভালোমন্দ খাইতে ইচ্ছা করলে খাবে। ভাই খুব খুশি। বললো, 'তুমি বাইরের মানুষ হয়ে আমার জন্য যা করো আমি ভুলতে পারবো না কখনো। এবার শুধু একটু দোয়া করো ঐ মহিলার যাতে জ্ঞান ফিরে আসে। শুধু শুধু আমি ফেসে গেছি।'
আমি আস্তে আস্তে মাথা নাড়ি। দোয়া তো সবসময়ই করি ভাই।
.
এদিকে শিউলির আম্মু অর্থ্যাৎ আমার প্রেমিকাকে বাসায় নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে রেখে আর লাভ নাই নাকি। বাসাতেই একজন নার্স রেখে দিয়েছে যত্ন নেয়ার জন্য। জ্ঞান ফেরার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷
.
আরো বছরখানেক কেটে গেল। এর মধ্যে একদিন শিউলি আমাকে প্রপোজ করে ফেললো। মেয়ে সুন্দরী, শিক্ষিতা। না বলার কোনো কারণই নেই। আমিও রাজি হলাম।
সুন্দর এক বিকালে শিউলি আমার কাধে মাথা রেখে বললো, 'আম্মুর ঐ ঘটনার পর থেকে ফেসবুক লেখকদের প্রতি আমার ভীষণ রাগ ছিলো। কিন্তু তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমার কি যে হয়ে গেল। আমি ভাবিনি আমিও কোনো ফেসবুক লেখকের প্রেমে পড়ব শেষপর্যন্ত।'
আমি আলতো করে ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললাম, 'ধুর পাগলী, সবাই তো আর জয়নাল আবেদীন হয় না৷ কেউ কেউ সোহাইল রহমানও হয়।'
.
ওর বাবার সাথে দেখা করলাম। ওর বড় ভাইয়ের সাথেও। ওরাই শিউলিকে বললো, 'মায়ের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় তুই তোর জীবন নষ্ট করিস না। বিয়ে করে ফেল।'
আমিও সম্মতি জানালাম। এতোদিনে আমার মধ্যে একটা কনফিডেন্স চলে এসেছে যে, 'ঐ মহিলা আর কোমা থেকে বের হবে না।'
.
আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক হলো। কোলকাতা থেকে শপিং করে আসলাম। প্রি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করলাম। গায়ে হলুদ হলো। আগামীকাল বিয়ে। আগের রাতে শিউলি আমাকে মেসেজ দিয়ে বললো, 'তুমি খুব লাকি, জানো?'
- কি হয়েছে?
- তুমিও আমার লাইফে আসছো আর এদিকে আমার আম্মুরও জ্ঞান ফিরেছে৷ মাত্র একঘন্টা আগেই পানি খেতে চেয়েছে। উঠে বসেছে।
- ওহ শিট, শিট, শিট, শিট!
- আমি জানতাম তুমি অনেক খুশি হবা৷ আর তুমি খুশি হলে এই যে ওহ শিট বলো এটা খুব কিউট লাগে আমার।
- শিট ম্যান শিট!
- থাক, এতো খুশি দেখাতে হবে না৷ ফোন রাখো। কাল বিয়ে করতে চলে এসো। তোমার শ্বাশুড়ির সাথে দেখা হবে তোমার। আম্মা নিজের জামাইকে দেখলে কত খুশি হবে আমি ভাবতেও পারছি না।
.
আমিও ভাবতে পারছিনা আসলে। কি যে হবে। আমি তো পুরাই শেষ। একবার ভাবলাম পালায়ে ইন্ডিয়া চলে যাই, আরেকবার ভাবলাম সুইসাইড করি। সারারাত ঘুম হলো না।
বাসাভর্তি বিয়ের মেহমান। সকালে চোখের নীচে কালি দেখে এক চাচা বললো, 'আমার বিয়ের আগে আমারও এরকম ঘুম হইছিলো না। টেনশন হয় সবারই। তবে চিন্তার কিছুই নাই। বুঝলে ভাতিজা। বাসর রাতে কয়েক ঘন্টা যাওয়ার পরই সব ঠিক হয়ে যাবে।'
বলে চাচা চোখ টিপ দিলো। আমি বুঝলাম না কি বুঝাতে চেয়েছে। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না এখন।
শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, যা হওয়ার হবে। সবই ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমি যাবো বিয়ে করতে।
.
বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে বাড়িতে পৌছে দেখি সব শুনশান। কোনো সাড়াশব্দ নেই। আমার হৃৎপিণ্ড একশো মাইল পার স্পিডে ধুকপুক করা শুরু করলো। নিশ্চয় সবাই সব জেনে গিয়েছে৷ এখন আমার কি হবে৷
আমাদের দেখে শিউলির বাবা ওসি সাহেব এগিয়ে আসলেন। চোখমুখ শক্ত। আমাকে বললেন, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমার সারা শরীর কাপা শুরু করেছে। মুখে কিছু বলার অবস্থা নেই৷ হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। ওসি সাহেব বললেন, 'আসলে গতকাল তোমার শ্বাশুড়ির জ্ঞান ফেরাতে আমরা খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু আজ সকালে বুঝতে পেরেছি সে কাউকে চিনতে পারছেন না। তাই সবার মন খারাপ। তোমাদের সেভাবে আপ্যায়ন করতে পারছি না। তোমরা কিছু মনে কোরো না।'
.
এতো উত্তেজনা হঠ্যাৎ করে রিলিজ হয়ে যাওয়াটা আমার শরীর সহ্য করতে পারলো না। আমি আল্লাহু আকবার বলে বিশাল এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
.
পরিশিষ্টঃ বাসর রাতে শিউলি আদুরে গলায় বললো, 'আমার আম্মুর খারাপ সংবাদ শুনে তুমি যে ভীষণ কষ্ট পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে এটা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি অনেক গর্বিত তোমার মত কাউকে স্বামী হিসাবে পেয়ে।'
আমি হাত দিয়ে ওর মুখটা আলতো করে তুলে ধরে বললাম, 'কি যে বলো! তোমার আম্মু কি শুধু তোমার আম্মু? উনি কি আমার আম্মু না?'
.
সপ্তাহখানেক পর আমি জেলখানায় জয়নাল ভাইকে দেখতে গেলাম। উনি আমাকে দেখে বললেন, 'মহিলার জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে চিনতে পারছে না জানার পর মনে হচ্ছে মরে যাই। কোন পাপের শাস্তি যে আমি ভোগ করছি কে জানে!'
আমি বললাম, 'আমার নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছা হয়েছিলো। আপনার কথা আর কি বলব।'
.
ফেরার সময় ভাইকে জেলখানায় দুই হাজার টাকা দিয়ে আসলাম। বললাম, 'আমার বিয়ের ট্রিট। ভালোমন্দ কিছু খেয়ে নিয়েন।'
ভাইয়ের চোখ ছলছল করে উঠলো। বললো, 'তুমি আমার জন্য যা করছ আমার নিজের ভাইয়েরাও করেনা।'
আমি ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে বললাম, 'এভাবে কেন বলছেন? আমি কি আপনার ভাই না?' 
.
(সমাপ্ত)


লেখা: সোহাইল রহমান

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।