যে দোষে আজ আমি অপরাধী - পর্ব (৬)


রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসলাম। খাবার টেবিলে জান্নাতি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমি সেদিকে খেয়াল না করে খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাইরে দাড়িয়ে সূর্য উদয়ের অপেক্ষা করছি। পরিবেশ একদম সতেজ লাগছে। চারপাশের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে। পাখিরা ঘর থেকে বের হচ্ছে খাবারের খোজে। আসিক আমার পাশে এসে দাড়ালো।

- কিরে এখানে কি করছিস?? (আসিক)
- এই সকালটাকে দেখছি অনেক দিন ধরে দেখা হয় না।
- চল একটু হাটা-হাটি করি।
- না চল, দাদা-দাদির সাথে দেখা করতে যাবো। অনেক দিন ধরে দেখি না। যেহেতু গ্রামে কেউ নেই তাহলে সমস্যা হবে না।
- আচ্ছা চল।(আসিক)



আসিকের সাথে চলা শুরু করলাম বাড়ির দিকে। কিন্তু আসিক উল্টো দিকে যাচ্ছে। আমি বুজতে পরছি না।

- কিরে ওই দিকে যাচ্ছিস কেন??
- আস আমার সাথে।
- আরে ওই দিকে তো গ্রামের গোরস্থান।
- আসতে বলছি আসই।

কিছুক্ষন পর আমরা গোরস্থানে পৌছে গেলাম। আসিক আমাকে দুটো কবরের সামনে দাড় করালো।

- তুই চলে যাওয়া এক বছর পর তোর দাদা মারা যায়। উনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। যখন জানতে পারে তোর বাবা তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর তার এক বছর পর তোর  দাদিও মারা যায়। আমি মাঝে মাঝে তোর দাদির সাথে দেখা করতে যেতাম। অনেক কান্না করতেন তিনি। (আসিক)

কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না। আমাকে সব চেয়ে বেশি ভালোবাসতো ওনারা। তার জন্য সব সময় ওনাদের কাছে থাকতাম। কিন্তু আজ যখন ফিরে এলাম তখন দেখি তারা কেউ নেই। আমি আর ওখানে থাকতে পারলাম না। তাই চলে এলাম। আমার পিছনে আসিকও চলে এল। আসিকের বাড়ির ফেরার পরঃ

- দুলাভাই তুমি কোথায় গিয়ে ছিলে আপু তোমাকে খুজছে। (জান্নাতি)
- ইয়াছিন কে নিয়ে একটু ঘুরতে গিয়ে ছিলাম। (আসিক)
- ইয়াছিন কে??
- আসিক বুজতে পেরেছে ও আমার আসল নাম বলে ফেলেছে। আসহায়ের মতো আমার দিকে তাকালো।
- বললে না তো ইয়াছিন কে?? তুমি এনার সাথে (আমাকে দেখিয়ে) গিয়েছিলে। আর ওনার নাম তো আরফান।
- হ্যা, আসলে ওর আরেক নাম ইয়াছিন। আমি ওকে ইয়াছিন বলে ডাকি। (আসিক)

এবারের মতো বাচা গেল। আসিকের আবার ভুল করার অভাস আছ,,না জানি আবার কখন ভুল করে ফেলে।
সকালের খাওয়া শেষ করে হাল্কা রেষ্ট নিলাম। তারপরঃ

- আসিক আমি একটু গ্রামটা ঘুরে আসি।
- আচ্ছা যা। (আসিক)
- দুলাভাই উনি গ্রাম চিনে না কি একা যাবে। আমি সাথে নিয়ে যাই। (জান্নাতি)

আসিক কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। কারন সবাই জানে আমি এখানে নতুন। কেউ তো আর আমার আসল পরিচয় জানে না।

- আচ্ছা যাও। (আসিক)

আসিক আমাকে ইশারা করে বলল রাগ না করতে। না চাইতেও এই মেয়েকে নিয়ে বের হতে হলো। আমি যাচ্ছি আমার বাড়ির দিকে সেখানে হয়তো কেউ থাকে না। না জানি বাড়ির অবস্থা কেমন।

- আপনি এমন ভাবে হাটছেন মনে হচ্ছে গ্রামটা আপনার পরিচিত! কি কোন কথা বলছেন না কেন? আপনি এমন কেন? কারো সাথে কথা বলেন না কেন? সবাই আপনাকে বোবা ভাবে।
- আমি পিচ্চি বাচ্চাদের সাথে কথা বলি না।
- আমি বাচ্চা নয়। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি
- আমি ৮ বছর আগে অনার্স কম্পিলিট করেছি। তুমি এখন নিতান্তই বাচ্চা।
- শেষ বারের মতো বলেছি বাচ্চা বলবেন না।
- আমি কম করেও তোমার থেকে ১০-১২ বছরের বড়।
- তাই বলে আমাকে বাচ্চা বলবেন।

আমি বাড়ির কাছে এসে পৌছালাম। বাড়িটাকে দেখছি। একেবারে অযত্নে পড়ে আছে। কেউ নেই যত্ন নেবার। থাকবেই বা কেমন করে যত্ন নেওয়ার জন্য যারা ছিল তারা নেই।

- কি দেখছেন?? (জান্নাতি)
- ফেলে আসা অতীত।
- কি বললেন বুজলাম না।
- কিছু কথা না বোঝাই ভালো।
- কি মানুষ কখন কি বলে কিছু বুজতে পারি না। (মনে মনে) (জান্নাতি)



বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। আর তার সাথে পুরনো স্মৃতি তাজা হয়ে গেছে। এই বাড়িতে খেলে বড় হয়েছি। এখন মনে হচ্ছে দাদু ডাকছে। বলছে সন্ধ্যা হয়ে এল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফের। আর আমি বলছি এত তাড়াতাড়ি ফিরে কি করবো। এই বাড়ির গাছ গুলোর সাথে আমার গভীর সম্পর্ক। কত এই গাছ গুলোতে উঠে বেরিয়েছি।

- আপনি কারো অনুমতি ছাড়া বাড়িতে ডুকলেন কেন?? (জান্নাতি)
- তুমি জানো এই বাড়ি কার??
- এটা আমার ক্লাসমেট মাইশাদের বাড়ি।
- তুমি মাইশাকে চিনো??
- আপনি চিনেন??
- আমারটা নাই জানলে তুমি কিভাবে চেন??
- আমি আর মাইশা একই ডিপাটমেন্টে পড়ি। সেই হিসাবে চিনি। কিন্তু আপনি কিভাবে চিনেন??
- তুমি মাইশার  সাথে আমার দেখা করাতে পারবে।
- পারবো, কিন্তু কিভাবে চিনেন তা তো বললেন না।
- সেটা না হয় তখনি যেন।
- ওকে করাবো।
- কবে।
- সেটা না হয় সেই দিনই জানবেন।

কি মেয়েরে বাবা। আমার কথা আমাকেই ফেরত দিলো। কিন্তু খুব আনন্দ লাগছে। অনেক বছর পর আমার ছোট্ট বোনটাকে দেখতে পারবো। না জানি কত বড় হয়ে গেছে। আমাকে মনে রেখেছে কিনা তাই জানি না। কিন্তু আমার বিশ্বাস সবাই ভুলে গেলও আমার বোন আমাকে ভুলবে না। শুধু সময়ে অপেক্ষা কবে দেখতে পারবো। সবাইকে একবার দেখার পর আবার ফিরে যাবে যেখান থেকে এসে ছিলাম। কারন এখানে থাকার ভাগ্য আমার নেই।


.............. To Be Continue

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।