জংলি সর্দার ইয়া বড় বড় চোখ দুটি দিয়ে তাকিয়ে ওদের দেখছে। নিধিয়া বলছে বাবারে এটা কি আবার আমাদের জ্যান্ত খেয়ে ফেলবে নাকি রে। নিশাত বললো দেখুন আমরা আপনাদের কোন ক্ষতি করতে আসিনি আমরা পথ ভুলে চলে এসেছি। কে শোনে কার কথা। ওরা তো ভাষায় বোঝেনা তা কি বলবে। দুটি মেয়ে এসে নিধিয়াকে নিয়ে গেলো আর দুটি জংলি ছেলে এসে নিশাতকে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষন পর নিধিয়াকে নিশাতের সামনে আনলো মেয়েগুলা। নিশাত চোখ উপরে তুলতেই এক ছিদ্রভাঙ্গা সুচ তার হৃদয়ে গেথে গেলো। নিধিয়াকে কি রুপে দেখছে নিশাত। বেচারা নিধিয়া একবার পা ঢাকতে যাচ্ছে একবার গলা ঢাকতে যাচ্ছে।
বেচারার হাল দেখে নিশাত হা হা করে হেসে ফেললো।
আপনাকে তো লতাপাতা জড়ানো গাছ বানিয়ে দিয়েছে।
নিধিয়া : কি!!!!!তাতে আপনার কি!!!!!
নিধিয়াও হাসতে লাগলো কারন নিশাতের তো ওরা লতাপাতার পোশাক পড়িয়ে দিয়েছে।
দুইজনকেই জঙ্গলিদের মতো সাজিয়ে এনেছে।ওরা দুজন দুজনকে দেখে হাসতে হাসতে সামনে তাকাতেই চুপ।
নিধিয়া কান্না শুরু করে দেয়।আমার আর যাওয়া হলোনা।
সার আপনি কোথায় পাঠালেন।এখন তো আমাকে বলি দেবে।
সত্যি তো বলির সমস্ত কিছু আয়োজন করেছে।
এবার আর কিচ্ছু করার নাই।
নিশ্চিত মৃত্যু।
এই আপনি থামেন তো।
খালি প্যা প্যা করে কাদতে জানেন। এত ভয় তা আপনাকে কে আসতে বলেছিলো ট্যুরে।
যত্তসব।
জঙ্গলিরা নাচ, গান ওদের মতো অনেক আনন্দ করছে।
আচ্ছা আমরা তো মারা যাবো তাইনা,
তাহলে তো আর কেউ কাউকে দেখবোনা।
নিশাত কিন্তু এতোটাও দুর্বল না।
জঙলিরা মদ্যপান করছিলো যেটাকে বলে ভাং।
জঙ্গিলিরা মেয়ে ছেলে একে অপরকে চুম্বন করছিলো কেমন এক নেশা নেশা যেনো ওরা চুম্বন প্রেমে ডুবে যেতে চাই সবাই।
নিশাত বলে উঠলো নে বাবা আর কত কি দেখবো মাই গড।
এই মেয়েটার জন্য এখন এইসব দেখতে......
বাকি কথা বলার আগেই নিধিয়া নিশাতের দুই ঠোটে ঠোট লাগিয়ে ওদের মতই চুম্বন করছিলো।
হঠাৎ করেই জোরে জোরে গান বাজনা বাজাতে থাকলো ওরা।
নিধিয়া একভাবে নিশাতের ঠোট আকৃষ্ট করে আছে
এই প্রথম কোন মেয়ে নিশাতকে চুম্বন করলো। নিশাতের সারা দেহ শিহরিত হয়ে গেলো।একভাবে নিধিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে ফেলে।বাধা দেয়ার শক্তি ছিলো না নিশাতের।দুইজনে চোখ বুজে।
চোখ খুলেই দুইজন দুইজনকে দেখে আর তাড়াতাড়ি করে সরে যায় কাছ থেকে।
হায় হাই আমি এই মেয়েটার সাথে কিস....
গেট লস্ট।
আচ্ছা আপনার সমস্যা কি আপনি এইসব কেন করলেন।
হি.......শ
চুপ কথা বলেননা।
ওরা মদ্যপান করে নারী পুরুষ চুম্বন করছিলো তাই আমি ট্রাই করেছি ওদের মতো যদি এরকম কিছু করি অবশ্যই ওরা হয়তো আমাদের ছেড়ে দেবে।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন।
নিশাত অবাক।
সবাই ওদেরকে মাথা নুইয়ে হিড্ডিবিড্ডি করে কি বলছে।
আসলে নিশাত নিধিয়া যখন চুম্বণে লিপ্ত ছিলো তখন আকাশ থেকে আলোর ছটায় ওদের চারিদিকে ছড়িয়ে গেছিলো।
ওরা সবাই নিশাত আর নিধিয়াকে ঘাড়ে তুলে নাচাচ্ছিলো।
জঙ্গলিরা অনেক খুশি মনে হচ্ছে।
কিন্তু কারন কি।
নিধিয়া নিশাত এতই ক্লান্ত ছিলো যে আর এইসব নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করেনি।।প্রায় ভোর।চারিদিকে পাখি ডাকছে।
জঙ্গলিরা অনেক ফল,কাচা মাংশ পুড়িয়ে নিশাত আর নিধিয়ার সামনে পরিবেশন করলো।
নিধিয়ার তো বমি আসছে। দুর এরা উফ.......
আচ্ছা আমাদের কি ওরা ছেড়ে দেবে??
জানিনা আপনিও যেখানে আমিও সেখানে কেমন।
সো প্লিজ স্টপ।
নিধিয়া মনে মনে খুব রেগে গেলো। কি লোক রে বাবা একটু কথা বলে শান্তিও নেই।
ওরা সবাই ওদেরকে বিদায় দিলো অত্যান্ত সম্মানের সাথে।
এবার বলি, জঙ্গলিরা আলোর ছটাকে বিশ্বাস করে।
তাদের বিশ্বাস যদি চুম্বনের মাধ্যমে আকাশ থেকে আলোর গতি আসে তাহলে সবকিছু শুভ।
নিশাতের জন্ম আর নিধিয়ার জন্ম সাধারন কিছু না।
ওদের জন্ম নেবার জন্য এক বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।
কোনরকম জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
এদিকে সার ম্যাম তো চিন্তায় অস্হির।
কি জবাব দিবে গার্ডিয়ানদের।
নিশাত নিধিয়াকে দেখে সবার যেনো চিন্তা দুর হলো।
নিশাত তো টনির দেখে এগিয়ে গিয়ে এক ঘুষি দিবে তার আগে নিশাতের পা জড়িয়ে বললো আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।
আমার ভুল হয়ে গেছে।
আকাশ নিশাতকে ঠেকিয়ে নিলো।
নিশাত চিৎকার করে বললো রাসকেল তুই জানিস তোর জন্য নিধিয়ার কত বড় ক্ষতি হতে পারতো।
নিধিয়া তো অবাক।
বাব্বা ওনি সত্যি আমার কথা চিন্তা করেন।
সবাই তো অবাক।
নিশাত কথা বলে চারিদিকে সবার দিকে তাকাতেই দেখে সবাই ওর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
নিধিয়ার দিকে তাকাতেই নিধিয়া মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
নিশাত ভ্রূ দুইটা কুচকিয়ে নিজেই ভাবলো উফ এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেললাম।
সবাই ওদেরকে জিঙ্গাসা করলো কি হয়েছিলো নিশাত বললো দেখ স্টপ।
ওই মেয়েটাকে জিঙ্গেস কর কেমন!!!
মিনু এসে বললো বাব্বা হ্যান্ডসাম কিছুক্ষন আগে নিধিয়া বলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলে যে.........
নিধিয়াকে তো সবাই ছেকে ধরেছে।
ও এক এক করে বিস্তারিত সবাইকে বলতে লাগলো।
জংলী সর্দার একটা কৌটা দিয়েছিলো নিধিয়াকে।
কি কি যেনো বলেছিলো। ও ভাষাটা বুঝতে পারিনি।
তবে নিধিয়া বুঝেছিলো এটা নিশ্চয় ভালোকিছু যা আমার উপকারে আসতে পারে।
সবাই ট্যুরের শেষে কলেজে ফিরে গেলো।
দুইদিন পর গ্রীষ্মের ছুটি।
ভার্সিটিতে ছুটি দিয়েছে লং টাইমের জন্য।
এদিকে নন্দিনীর অনেকগুলা চিঠি জমা হয়েছে।
আকাশ ইচ্ছে করে চিঠিগুলা নিশাতকে দেয়না।
নিশাত জানতে চিলে বলে,
কোন চিঠি আসেনি।
দরজায় কড়া নাড়তে দেখে পিয়ন।
একটা চিঠি হাতে ধরিয়ে দিলো।
চিঠি খুলতেই মায়ের হাহাজারি।
নন্দিনী লিখেছে মনে হচ্ছে তোকে গতকাল দেখিনি বাবা।তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।
তোকে ছাড়া ঘুম নেই।
পিয়নকে জিঙ্গেস করলো চিঠি কি আর পাঠিয়েছে বললো প্রতিমাসেই তো চিঠি দিয়ে যাই নিয়ে যাই।
হোয়াট!!!!!!
আকাশ আকাশ??
হ্যা বল।চিঠিগুলা কই আর।
হঠাৎ চিঠি নিয়ে পড়লি কেন?নিশাত।
এই পর্যন্ত ১১২ টা চিঠি এসেছে একটাও আমাকে কেন দিসনি।
কারন তুই থাকতে পারতিক না তাই দেইনি।
একটা থাপ্পর দিলো।
তুই কি বুঝবি মায়ের কস্ট তোর কি মা আছে??
আকাশ ফুপিয়ে কেদে ফেললো।
ঠিক বলেছিস আমার কি বাবা মা আছে।
আমাকে কেন দয়া করিস।
আমি তোকে মার কস্ট বুঝতে দিতে চাইনি।
মা নিষেধ করেছিলো চিঠির বেপারে তোকে না জানাতে, তাহলে তুই পড়ালেখায় মন দিতে পারবিনা।
সমস্ত খবর দিয়েছি মাকে আমি।
বলেই বাইরে বেড়িয়ে গেল কাদতে কাদতে।
নিশাত নিজেকে কন্ট্রোল করে আকাশের কাছে চলে গেলো। আকাশকে বুকে নিয়ে বললো ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দে। মার চিঠির জন্য আমি অনেক অপেক্ষা করেছি। রাগ হয়েছিলো খুব মার চিঠিগুলো দিসনি বলে। সরি রে তুই আমার জন্য এতো ভাবিস বুঝিনিরে ভাই। আমার তো বাবা মা নেই তাই আমি হতভাগা বলেই কাদতে লাগলো আকাশ। নিশাতও কেদে ফেললো দুর বললাম তো মাফ করে দে। আর এমন হবেনা।তুই আমার সব। দুইভাই জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো। নেক্সট সপ্তাহে নিশাত আকাশ দেশের বাড়ি যাচ্ছে। ব্যাগ পার্টি গোছানো শেষ আকাশের। দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। খুলে দিতেই দেখে নিধিয়া।এই আকাশ আমরা দেশের বাড়ি যাচ্ছি। গ্রামে অনুষ্ঠান আছে আমার জন্মদিন। বাবা প্রতিবার গ্রামে জন্মদিন করে আমার পরিবারের সাথে। তাই বলতে এসেছিলাম আমরাও যাচ্ছি। ও ভালো কথা খুব। কোথায় তোমার দেশের বাড়ি। পরিচয় দিলো নিধিয়া। আকাশ কি বলো, তার পাশের এলাকাই তো আমাদের বাসা। খুব ভালো হয়েছে আকাশকে জানানোর দরকার নাই বুঝলে নিধিয়া... ঠিক ওনি অনেক রাগি। হেসে আকাশ বললো ও রাগি নাই। আচ্ছা আমরা তো তুই করেও কথা বলতে পারি। ইশ নিধিয়া আমার মনের কথা বলেছিস তোকে এটাই বলতে চাইছিলাম। ওকে ডান। আচ্ছা ওনি কোথায়। কে নিশাত??? হ্যা। ও তো স্নানে গেছে। আচ্ছা আমি আসি। বাবা চলে আসবে আমাকে নিতে এখনি। বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। আচ্ছা। নিশাত আকাশ রেডি। ফ্লাইটে উঠে পড়েছে। কতবছর পর মনে হচ্ছে নিশাতকে দেখবে নন্দিনী। অস্হির হয়ে আছে নন্দিনির মন। একা একা এই দুই বছর খুব কস্টে গিয়েছে নন্দিনির। কিন্তু নিশাতের তো ২৩ বছর পূর্ন হতে আর ৯ মাস বাকি। এটাই যেনো নন্দিনির মনে ভয়ে ঢুকে গেছিলো। সাধুর কথা যদি সত্যি হয় তবে আমার নিশাত কিভাবে বাচবে।
চলবে............
0 Comments:
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।