নাগকন্যা - পর্ব (৫)

কারন আমি খেয়াল করলাম আমি একটা সুন্দর স্বাভাবিক রুমে শুয়ে আছি। আমার পাশে মিস শিলা বসে আছে।তার পাশে আলোর বয়সী একটা মেয়ে। চারপাশে নজর দিয়ে আলোকে খুঁজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আলোকে খুঁজে পেলাম না। আলোকে না পেয়ে মনে মনে বেশ ব্যাহত হলাম।মনের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল আলোর কিছু হল না তো এটা ভেবে। মুহুর্তের মধ্যে আমি উদ্ধিঘ্ন হয়ে গেলাম।আলোর জন্য অস্থির হয়ে মিস শিলাকে জিজ্ঞেস করলাম






-আলো কোথায়?আমার মেয়ে এখানে নেই কেন।
মিস শিলা ধীর গলায় আমাকে শাত্বণা দিয়ে বলল
-আপনি শান্ত হন আগে।
আমি মিস শিলার কথা শুনে বেশ রাগান্বিত হলাম।আমার মেয়েকে পাচ্ছি না।আর উনি শান্ত হওয়ার কথা বলছে কি করে।কিছুটা রাগী হয়েই বললাম

-আমার মেয়ের খুঁজ পাচ্ছি না।আর আপনি আমাকে শান্ত হতে বলতেছেন।আমার মেয়ে কোথায় বলুন।আমারেই ভুল হয়েছে এত কিছুতে আসা।আমার মেয়ে যেমনেই ছিল আমার কাছে ছিল।আজকে যদি আলোর কিছু হয় আমি কাউকে ছাড়ব না।কোন রহস্য বের করার দরকার নেই আর।আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন শুধু।আমি আমার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারব না।কি থেকে কি হচ্ছে কিছুই আমার মাথায় আসছে না।আপনার জন্যই এত খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি।যেমন ছিলাম আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভালোই ছিলাম।এতটা জটিলতায় আসতে হবে জানলে আমি রহস্য জানার চেষ্টায় করতাম না।আমার মেয়েকে চাই।আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।আমি এসব আর নিতে পারছি না।আমার সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সব।


মিস শিলা পাশে থাকা মেয়েটিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন
-এটা আপনার মেয়ে আলো।আপনি অস্থির হবেন না।আমি তো আলোকে কেড়ে নিতে চাচ্ছি না।রহস্য উদঘাটন এজন্য করতে চাচ্ছি যে আলোর জন্মের কারন জানতে না পারলে ওর প্রাণ সংশয় হতে পারে।ওর জীবনের জন্য হলেও জটিলতা পার হয়ে সব জানতে হবে।আলোর আচরণ আরও অস্বাভাবিক হবে আর সেটার কারন জানতে না পারলে অনেকেই বিপদের সম্মুখীন হবে। আপনি তো মা। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না আলোর ক্ষতি হোক।এই যে দেখুন আপনার মেয়ে অক্ষত আছে।আপনার মেয়ের কিছু হয় নি।শুধু শুধু চিন্তা করছিলেন।সহজ বিষয়টাকে জটিল করে তুলছিলেন।বিপদে মন স্থির রাখা জরুরি।অস্থির মন নিয়ে কখনও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না।সুতরাং মনটাকে স্থির রাখুন।

আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আলোর চেহারার সাথে এ মেয়ের চেহারার কোন মিল নেই।কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-কিন্তু আলোর চেহারা তো এটা ছিল না?আলোর চেহারা এমন হল কি করে?এটা তো আমার আলো না।আপনি কাকে আমার আলো বলতেছেন।আমার আলো তো দেখতে এমন ছিল না।কিসব যা তা বলছেন।আমার আলো কোথায় সেটা বলেন।

মিস শিলা শান্ত হয়ে জবাব দিলেন

-আলোর রূপ বদল হয়ে গিয়েছে।আলোর এ সময়টাতে রূপ বদলে যাওয়ার কথা।এটা নাগ-নাগিনের ইতিকথা বইটিতে লিখা ছিল যে নাগকন্যারা ৬ বছর ১মাস ১৫ দিন বয়স হলে রূপ বদল হবে।তাই আলোর রূপ বদলে গিয়েছে।আপনি তো মা নিশ্চয় সন্তান চিনতে ভুল করবেন না।আলোকে ভালো করে খেয়াল করুন।আশাকরি বুঝতে ভুল হবে না।
আমি আলোর দিকে তাকিয়ে চোখ দেখেই বুঝলাম এটা আমার আলো।কারন মায়ের মন সন্তান চিনতে কখনও ভুল করে না।তবে আমি ঐ প্রাসাদ থেকে এখানে কিভাবে আসলাম।ব্যাপারটা বেশ ধোয়াশা লাগল আমার কাছে।ধোয়াশাটা কাটানোর জন্য মিস শিলাকে বললাম


-আচ্ছা আমরা তো এখানে ছিলাম না।আমরা তো ছিলাম ঐ প্রাসাদে।তাহলে এখানে কি করে আসলাম?এতকিছু কি করে ঘটল?আমাকে খুলে বলুন।নাকি আমি এখনও কোন মায়ায় ফেঁসে আছি।আমাকে খুলে বলুন।আমার কাছে সব ধোয়াশা লাগছে।মনে হচ্ছে যাদু মায়া কাটিয়ে এখনও উঠতে পারি নি।আমাকে সবটা গুছিয়ে বলুন।
মিস শিলা শান্ত গলায় আমাকে বললেন

-আপনি অস্থির হবেন না।শান্ত হয়ে বসুন আর শরবতটা পান করুন।আপনি অনেক দুর্বল আমি আপনাকে সবটা খুলে বলতেছি।
শরবতটা খাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না।কারন এতে যদি কোন মায়া থাকে।এমনিতেই অনেক মায়ার জালে ফেঁসে আছি।নতুন করে কোন ফাঁদে যেন না পড়ি তাই শরবত খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখলাম আর বললাম
-আমার এখন কিছুই খেতে মন চাচ্ছে না।আপনি আমাকে সবটা বলুন তারপর আমি কিছু খাব। না হয় আমার গলা দিয়ে কিছু নামবে না

মিস শিলা স্থির হয়ে ধীর গলায় বললেন
-আপনি আলোর চোখের দিকে তাকান তাহলেই সবটা বুঝতে পারবেন।
মিস শিলার কথাগুলো আমার তেমন বোধগম্য হল না।তাই কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-আলোর চোখের দিকে তাকালে বুঝতে পারব মানে কি?হেয়ালি রেখে আপনি আমাকে বলুন।
বিরক্ত গলায় কথাগুলো বলে আমি বেশ বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে বসে রইলাম।মিস শিলা তার গলার আওয়াজটা নীচু করে আমাকে বললেন

-আলোর চোখের দিকে তাকালেই ঘটনাটা ভেসে উঠবে।কারন আলো তো নাগকন্যা।রূপ পাল্টানোর সাথে সাথে ওর মধ্যে কিছু মায়াবী শক্তি ও জমা হয়েছে।আর সে শক্তির ফলেই আপনি আলোর চোখের দিকে তাকালেই বুঝবেন ঐখানে কি হয়েছিল।আপনি নিজেকে বড্ড অস্থির করে ফেলছেন।তাই সত্য মিথ্যার ফারাকটা ধরতে পারছেন না।সেজন্যই বলছি আপনি আলোর চোখের দিকে তাকান।আমার কথাগুলো আপনার বোধগম্য হবে না।কিন্তু ঘটনাটা আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠলে সেটা আপনার বোধগম্য হবে আমার মনে হয়।তাই আলোর চোখের দিকে তাকান।দেখুন কি হয়েছিল।মনে করে নিন বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।


এবার মিস শিলার কথা শুনে কিছুটা স্থির হয়ে আলোর চোখের দিকে তাকালাম।আলোর চোখের দিকে তাকাতেই একটা আলোক রশ্নি আমার চোখে প্রবেশ করল।নিমিষের মধ্যেই মাথাটা বেশ ঘুরে গেল।বাড়িটাও কয়েক সেকেন্ডে পাল্টে গেল।মনে হল আমি সেই প্রাসাদে আছি আর আগের অবস্থানে আছি।সামনে দুজন মিস শিলা দাঁড়িয়ে আছে আর আমার পাশে আলো মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর আলো বলে উঠল

-এ মালাটায় দুজন হাত রাখ। এ মালাটায় হাত রাখলেই সব মায়া শক্তি বিলীন হয়ে যাবে।এতে করে যে শিলার রূপ ধরে আছে সে বিনষ্ট হয়ে যাবে।
কিন্তু আলোর কথার কন্ঠটা ছিল একদম বড় মানুষের মত।মনে হচ্ছিল আলোর ভিতরে অন্য কেউ প্রবেশ করেছে।
অপরদিকে আলো মালাটা বাড়িয়ে দিল।আশ্চর্য জনক ভাবে দুজনেই মালাটা হাত দিলেও কারও রূপের কোন পরিবর্তন হল না।এতে করে কে আসল শিলা বুঝার উপায় পেলাম না।আলোও একটু চমকাল।কিন্তু পরক্ষণেই আলো একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল

-আমি বুঝতে পেরেছি কে আসল শিলা।আমি শুধু কথার প্রেক্ষিতে বলেছিলাম যে রূপ পাল্টে যাবে।যাতে করে নকল শিলার মনোযোগ টা রূপ যেন না পাল্টে যায় সে দিকে চলে যায়।আর নকল শিলা সেই কাজটায় করল।আর মায়াবী শক্তি আরও প্রখর করল ফলে তার রূপ পাল্টালো না।কিন্তু কাহিনী হচ্ছে যে আসল শিলা তার ঘাড়ের তীরচিন্হটা এ মালাটার স্পর্শ করার সাথে সাথে জ্বলে উঠবে।আলোকিত হয়ে উঠবে একটু।আর এখন আর আমার বুঝতে বাকি রইল না কে আসল শিলা।
পাশ থেকে দুজন শিলায় বলে উঠল আমি আসল শিলা।আলো শুধু মুচকি মুচকি হাসল।আর বলল
-কিছুক্ষণ এর মধ্যে একটা শিলার মুখ পুরে নষ্ট হয়ে যাবে।

পরক্ষণেই খেয়াল করলাম যে শিলাটা আমাদের খুপরিটায় যেতে বাঁধা দিচ্ছিল সে শিলার মুখেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে বিনষ্ট হয়ে গেল।অথচ আমি একটা মুহুর্তে ২য় শিলাকেই আসল শিলা ভেবেছিলাম।আর প্রথম শিলাকেই মায়াবী শিলা ভেবেছিলাম।এবার আসল শিলা আমাকে আর আলোকে ধরে নিয়ে সুরঙ্গটায় পা দিল।

সুরঙ্গটায় পা দেওয়ার সাথে সাথে একটা নদী তৈরী হল।নদীটার উপর একটা ভেলা ভাসতে লাগল।আমি তখন অচেতন অবস্থায় ছিলাম।আলো আর শিলা আমাকে নিয়ে ভেলাটায় উঠল আর ভাসতে লাগল।আাস্তে আাস্তে অন্ধকার জায়গা আলোকিত হল।মুহুর্তেই সব অন্ধকার গুচে গেল।খুপরিটা একটা বাড়িতে পরিণত হল।এ বাড়িটাকেই দূর থেকে খুপরি মনে হয়েছিল।আর আমাকে নিয়ে বাড়িটায় ঢুকল।বাড়িটার ভিতরের এক কোণায় একটা ছিদ্র দিয়ে আলোক রেখা প্রবেশ করল।আলোক রেখা প্রবেশ করার সাথে সাথে আমার মেয়ে আলোর মুখ পরিবর্তন হতে লাগল।আলো শুধু ছটফট করতে লাগল।আলোর চামড়া পরিবর্তন হতে লাগল।কিছুক্ষণ পরেই আলোর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল।সাপের খোলসের মত কিছু একটা আলোর শরীর থেকে নীচে পড়ল।

এখন আবার অন্ধকার হতে লাগল।আমার মাথাটা বেশ ঝিমাতে লাগল কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল।আমি আলোর চোখের মায়া থেকে বের হয়ে গেলাম।সবটা কাহিনী অণুধাবন করতে পারলাম।তবে একটা প্রশ্ন মনে আসল আলোকে কেন এ পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে এটা ভেবে।তাই মিস শিলাকে জিজ্ঞেস করলাম

-তাহলে আলোকে কেন এখানে পাঠানো হয়েছে সেটা তো জানতে পারলাম না।আপনি সেটার কারন তো বলেন।
জবাবে মিস শিলা বলল

-সেটা তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।সেটা বলতে পারবেন ঐ উপরের রুমে থাকা বৃদ্ধা।আপনি আমার সাথে উপরের রূমে চলুন।
আমি আর দেড়ি না করে আলোকে নিয়ে উপরের রুমে গেলাম।খেয়াল করলাম এক জরাজীর্ণ বৃদ্ধা চুপ করে বসে আছে।আলোকে দেখেই বললেন

-কি রে মা আগমণ হয়েছিস।তোর জীবনে তো অনেক পথ পারি দিতে হবে।তোকে অনেক বড় কাজ করতে হবে।তোর জীবনের পদে পদে পরীক্ষা দিতে হবে।এত সহজে তো তুই এ জীবন থেকে মুক্তি পাবি না।তোকে যে তোর উদ্দেশ্যে সফল হতে হবে।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম এসব কথার মানে তাই সাহস করে উনাকে প্রশ্ন করে বসলাম
-আপনি যদি কথাগুলো আমাকে সহজ করে বলতেন তাহলে ভালো হত।
তারপর উনি যা বললেন আমার কথাগুলে শুনে গা গুলাতে লাগল শরীরের লোম শিউরে উঠল,

কারন...

গল্পটির পরবর্তী পর্ব পেতে গল্পটি নিচের শেয়ার অপশন থেকে অথবা লিংক কপি করে ফেসেবুকে শেয়ার করুন

SHARE THIS

Author:

0 Comments:

আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।