কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আসিকদের বাড়ি ফিরে এলাম। বিয়ে প্রস্তুতি খুব তাড়াতাড়ি চলছে। আমি দাড়িয়ে দেখছিলাম। তখন একটা ফোন এল।
- হ্যালো কেমন আছিস?? (ওইপাশ থেকে)
- ভালো আঙ্কেল।
- ফিরবি কবে??
- খুব তাড়াতাড়ি।
- দেখা হয়েছে।
- না এখনো হয় নি।
- ভালোবাবে থাকিস।
- বাই
ফোনটা কেটে দেখি পিছনে আসিক দাড়িয়ে।
- কিরে কিছু বলবি।
- কার সাথে কথা বলছিলিস। খুব তাড়াতাড়ি, না এখনও হয় নি। কি বলছিলিস এইসব?
- এই আমার প্রতিবেশি, জানতে চাইছিল কবে ফিরবো।
- তোর প্রতিবেশি বাঙ্গালি?
- কেন অন্যদেশে কোন বাঙ্গালি থাকতে পারেনা।
- পারবে না কেন? ওটা বাদ দে তুই আবার ফিরে যাবি কেন?
- তাহলে কি এখানে তোর বাড়িতে থাকবো।
- আরে আমার মনে হয় এত বছর পর তুই ফিরে এসেছিল সবাই তোকে ক্ষমা করে দিবে।
- আমি কি কোন দোষ করেছিলাম?
- না তা করিস নি। কিন্তু সবার চোখে তুই তো দোষী।
- আমার মনে হয় না।
- আমি তোর পরিবারের সাথে কথা বলি।
- শোন তোকে একটা কথা বলি "আমি যা চেয়েছি তা কখনও পাই নি, আর যা পেয়েছি
তা কখননো চাই নি"। আমিও পরিবার নিয়ে জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু
পেয়েছি একা জীবন। সুখের আশা করেছিলাম কিন্তু দুঃখ ছাড়া কিছু পাই না। তাই
আর মিথ্যে স্বপ্ন দেখি না।
আমি ওইখান থেকে চলে এলাম। আসিক দাড়িয়ে ভাবছে যে করেই হোক ইয়াছিনকে ওর
পরিবারের সাথে মেলাবো। ইয়াছিন অনেক কষ্ট পেয়েছে আর পেতে দিবো না।
সবাই ব্যস্ত শুধু আমি ছাড়া। আকাশে গোধুলি নেমেছে। বরাবর এই সময়ের আকাশটা আমার পছন্দ। তাই আকাশটাকে দেখছি।
- এই সময় আকাশটাকে অনেক সুন্দর দেখা যায়। ঠিক বলছি কিনা।
পাশে দেখি জান্নাতি। আমি এতটাই মগ্ন ছিলাম যে পাশে কে আছে সেটা দেখতে পাইনি।
- আচ্ছা আপনি কি বরাবরি এত নিশ্চুপ ছিলেন?
- কেন নিশ্চুপ থাকা মানা নাকি?
- না ওটা কেন থাকবে। কিন্তু আপনার আচরন দেখে মনে হয় আপনি এমন কোন সময় পার করে এসেছেন যা আপনাকে নিশ্চুপ করে দিয়েছে।
(আমি অবাক হলাম এই মেয়ে কিভাবে বুঝলো?)
- নিরবতাই সম্মতির লক্ষন। মানে আমি যা বলেছি সব সত্যি। আপনার মনে হয়ত
প্রশ্ন আমি কিভাবে বুঝলাম। আমার দাদু বলতেন যারা নিশ্চুপ থাকে তাতে দুইটা
কারন থাকে। এক, সে যে ছোট থেকে নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করে। আর দুই, সে
যাকে জীবনের কোন এক পার করা সময় নিশ্চুপ করে দিয়েছে। আপনি দুই
নাম্বারটা
- সব প্রশ্নের উত্তর থাকে না। সেটা জানার চেষ্ট না করাই ভালো।
সূর্য অস্ত গিয়েছে,, তাই আমিও ফিরে এলাম।
জান্নাতি বুঝতে পেরেছে ওই ঠিক। জান্নাতি ভেবেছিল ইয়াছিন কে জ্বালাবে। কিন্তু
নিলার (মানে ওর বোন) কাছে যখন ইয়াছিনের অতীত জানতে পারলো সব চিন্তা বাদ দিল।
জান্নাতি শুধু ভাবছে এত কষ্ট নিয়ে কিভাবে বেচে আছে। আজ সকালে যখন নিলা
রুমে যায় তখন এই সব জানতে পারে।
- আপু তোর বরের বন্ধু এমন কেন?? এমন ভাব নেয় যেন ওনার মতো কেউ নেই। ওনিই সেরা। (জান্নাতি)
- ভাইয়া মোটেও এমন নয়। (নিলা)
- বুঝিনা তোর এমন কি হয়েছে সব সময় ভাইয়া ভাইয়া করিস। তোর ভাইয়াকে নিজেকে বড় ভাবা বন্ধ করবো। সবার সামনে এমন ছোট করবো না যে কেঁদে কুল পাবে
না। (জান্নাতি)
- তুই এসব কিছুই করবি না।
- কেন তোর এতে কি সমস্যা? এর আগে অনেকের সাথে এমন করেছি, তখন তো মানা করিসনি? (জান্নাতি)
- যাদের সাথে করেছিস তাদের সাথে ভাইয়ার অনেক পাথর্ক্য।
- কি পাথর্ক্য আছে??
- আচ্ছা ধর, তুই কোন দোষ করিসনি তারপরেও তোকে বিনা দোষে শাস্তি দেওয়া
হলো। পরিবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হলো। তুই যাকে ভালোবাসিস সেও তখন তোর
হাত ছেড়ে দিল। আর তুই সব ছেড়ে অন্য দেশে চলে যেতে হলো তাহলে তুই কি করবি?
(নিলা)
- আমি তো মরেই যাবো। কারন আমি বাবা- মাকে না দেখে থাকতেই পারবো না।
- তাহলে যে মানুষটা ৮ বছর ধরে তার প্রিয়জনদের মুখ না দেখে থেকে। যাদের
ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারতো না। তাকে আরো কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে।
- না একদমি না।
- তাহলে তাকে কেন কষ্ট দিতে চাচ্ছিস।
- মানে তুই কার কথা বলছিস?
- ভাইয়া কথা,,
- মানে দুলাভাইয়ের বন্ধু আরফানের কথা বলছিস।(জান্নাতি)
- হ্যা, কিন্তু নাম আরফান না ইয়াছিন, তাসরিফ আদিয়াত ইয়াছিন।
- মানে...
নিলা আমার জীবনে ঘটা সব ঘটনা জান্নাতিকে বলল।
- এত কিছু হারিয়ে, কিভাবে বেচেঁ আছে তাই ভাবছি। (জান্নাতি)
- তুই তো তাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছিলিস।
- তার মানে এর জন্য ওনি মাইশার সাথে দেখা করতে চাইলো
- মাইশা কে??
- আমার ক্লাস-মেট আর তোর ভাইয়ার বোন।
- ইয়াছিন ভাইয়াকে তুইতো ভাইয়া ডাকতে পারিস।
- তুই ভাইয়া ডাকিস বলে আমাকেও ডাকতে হবে?
এটা বলে জান্নাতি চলে এল। জান্নাতি আজ যদি জানতে না পারতো তাহলে এমন কোন
কাজে ইয়াছিনকে দোষী বানাতো সেটার জন্য কি হতো জান্নাতি সেটা নিজেও জানে না।
কিন্তু জান্নাতি এটা ঠিক করেছে মাইশার সাথে ইয়াছিনের দেখা করাবে। এক ভাইকে
অনেক সময় পর তার বোনের সাথে দেখা করাবে।
জান্নাতির মনে ইয়াছিনের জন্য একটা অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। যেটা কখনও কারো
জন্য হয়নি। জান্নাতি জানেনা এই অনুভূতির নাম কি? হয়তো ভালোবাসা।
জান্নাতির জানা নেই ইয়াছিন কখনও এটা মানবে কিনা। কিন্তু এই অনুভূতিকে যে
কেউ কন্ট্রোল করতে পারে না। জান্নাতি শুধু ওর জন্য ইয়াছিনের মনে অনুভূতির
সৃষ্টি করাতে হবে সেটা যে করেই হোক। ইয়াছিনের অতীত থেকে এটা বুঝতে পেরেছে
একবার ইয়াছিনের মনে জায়গা করতে পারলে ইয়াছিন কোন দিন ছেড়ে যাবে না।
কাল বিয়ে সবাই রাতে আড্ডা দিচ্ছে। জান্নাতি লক্ষ্য করলো এখানে ইয়াছিন নেই।
তাই ওইখান থেকে উঠে ইয়াছিন কে খুজতে গেল। জান্নাতি দেখলো যে ইয়াছিন সবার
থেকে দুরে বসে আছে।
আগে আমার কোলাহল ভালো লাগতো। কিন্তু এখন লাগে না। আমার জীবনের সব খুশি
হারিয়ে গেছে। তাই আলোর চেয়ে অন্ধকারটাই বেশি পছন্দ। আমি বসে আছি হঠাৎ কে
যেন হাত ধরে টানা শুরু করলো। অন্ধকার হওয়ার কারনে ভালো ভাবে দেখতে পারছি
না। টানতে টানতে যখন আলোতে নিয়ে এসেছে তখন বুজতে পেরেছি জান্নাতি।
- আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
- সবাই যেখানে আছে।
- তা আমাকে নিয়ে যাচ্ছ কেন??
- দুলাভাই আপনাকে খুজছে তাই।(জান্নাতি)
আমাকে সবার কাছে নিয়ে গেল।
- আসিক তুই আমাকে খুজছিস??
- কই নাতো। (আসিক)
- তাহলে জান্নাতি যে বলল তুই আমাকে খুজছিস।
- আরে আমি তো আপনাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য বলেছি। আমি অপরিচিত বলে আসতে চাচ্ছিলেন না। তাই এইভাবে নিয়ে আসলাম।
- আরে এখানে বস। (আসিক)
কিছু বলতে পারলাম না। ইচ্ছা না থাকার পরেও বসতে হলো। জান্নাতি এর মধ্যে আরেক সমস্যা বাধিয়ে দিল।
- দুলাভাই তুমি বলেছিলে তোমার বন্ধু ভালো গান গাইতে পারে। একটা গান গাইতে বল না। (জান্নাতি)
- আসিক। ওদের সাথে তাল মিলিয়ে
- হ্যা, একটা গান গা।
- আরে আমি ৮ বছরের উপরে হয়ে গেছে গান গাই না। এখন মনে হয় পারবো না।
- প্লিজ ভাইয়া গাও না, আমার জন্য। (নিলা)
নিলার কথা ফেলতে পারলাম না। তাই একটা গান গাইলাম। অনেক সময় পর গান গাইলাম।
জানি না কেমন হয়েছে। কিন্তু সবাই বলল অনেক ভালো হয়েছে। আগে লিজার
অনুপ্রেরনায় গান গাওয়া শুরু করেছিলাম। তারপর এত বছর আর গাইনি। অনেক সময়
পর আবার গাইলাম।
........... To Be Continue
0 Comments:
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।