রুদ্র জামান একজন শখের গোয়েন্দা। এলাকায় বেশ নামডাক। নিকটস্থ থানার পুলিশকে কয়েকটা কেস সলভ করতে সাহায্য করে অলরেডি গোয়েন্দা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। থানার ওসি সাহেবও রুদ্রকে বেশ পছন্দ করেন। কোনো কেস পেলেই ডাক দেন। যেমন আজও কল দিয়ে শিল্পপতি আনিসুল হকের বাসায় যেতে বলেছেন দশ মিনিটের মধ্যে।
'কেউ কি খুন হলো?' মনে মনে ভাবে রুদ্র। সেটা গেলেই দেখা যাবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সম্বলিত একটা ব্যাগ রেডিই থাকে সবসময়। সেটা কাধে নিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে মায়ের গলা।
'কিরে নেয়ামত, এই ভরদুপুরে কোথায় বেরোলি?'
.
রুদ্রের মেজাজ হুট করে খারাপ হয়ে যায়। কতবার ও সবাইকে বলেছে রুদ্র নামে ডাকতে, কিন্তু বাসার কেউ শুনলে তো। রুদ্রের আসল নাম নেয়ামত আলী। ইস, শুনলেই গা গুলায়। এই নাম চেঞ্জ না করলে গোয়েন্দাগিরি করে খাওয়া লাগতো না জীবনেও। নেয়ামত আলী নামের মানুষ শাড়ির দোকানের ক্যাশিয়ার হিসাবে ভালো মানায়। বেশি উপরে চিন্তা করলেও সর্বোচ্চ ব্যাংকের ক্লার্ক। গোয়েন্দা জিনিসটা এই নামের সাথে যায় না। তাই টাইম থাকতেই নেয়ামত আলী হয়ে গেছে গোয়েন্দা রুদ্র জামান।
'একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি মা। বিরক্ত কইরো না এখন।' বাইকের চাবিটা টেবিল থেকে উঠিয়ে দ্রুত বের হয়ে যায় নেয়ামত আলী ওরফে রুদ্র জামান।
.
শিল্পপতি আনিসুল হকের বিশাল ড্রইংরুমে বসে লোকটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত ও। আনিসুল হকের মেয়ে আসে চা আর নাস্তা নিয়ে৷ অপূর্ব সুন্দরী। দেখেই প্রেমে পড়ে যায় রুদ্র। এই মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারলে লাইফটাই ধন্য হয়ে যেত। রাজ্য আর রাজকন্যা একসাথে। মেয়েটার চোখে কি অদ্ভুত একটা মায়া। এরকম চোখকেই বুঝি কাজল চক্ষু বলে? রুদ্র বড়সড় একটা শ্বাস নেয়। এই বাড়িতে জীবনে আর আসা হবে কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আজই সুযোগ৷ এখনি। কিছু একটা করতে হবে। অন্তত মেয়েটার নাম জানলেও ফেসবুকে খুজে বের করা যেত।
সাহস টাহস সঞ্চয় করে রুদ্র মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে, 'হ্যালো, এক্সকিউজ মি, ক্যান আই আস্ক ইউ সামথিং?'
মেয়েটা টানা টানা চোখ মেলে তাকায় রুদ্রের দিকে। শুভদৃষ্টি হওয়ার মত অনুভূতি হয় ওর। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে মেয়েটা রুদ্রের দিকে এগিয়ে আসে কয়েক পা। কাছাকাছি এসে হঠাৎ কর্কশ গলায় বলে ওঠে, 'কাক কচ্ছিস? আমাক কচ্চিস? আমাক কয়া লাব নাই। খালুজান আইতাছে। হের লগে কথা কইস।'
'ওহ শিট, এইটা বাসার কাজের মেয়ে। ধুর। প্রেমে পড়ার আগেই এতোবড় ছ্যাকা। এই জীবন আর রাখবে না রুদ্র। ওর ভাগ্যটাই আসলে খারাপ।'
.
আনিসুল হক রুমে ঢোকেন। সাথে ওসি সাহেব। রুদ্র উঠে দাঁড়ায়।
'এই বসো বসো, আনিসুল হক নিজেও বসেন।'
ওসি সাহেবের দিকে ফিরে বলেন, 'আপনার বিখ্যাত গোয়েন্দা তো একদমই ছেলেমানুষ। আমার ছোট মেয়েটার বয়সী। কি নাম তোমার, রুদ্র না?'
- হ্যা, জ্বী স্যার।
- তোমার প্রসংশায় তো ওসি সাহেব একদম পঞ্চমুখ। আমি আরেকটু বয়স্ক ভেবেছিলাম। কিসে পড়ো তুমি?'
- এবার মাস্টার্স ভর্তি হয়েছি।
- ঠিক ধরেছি, আমার ছোট মেয়ে সাজিয়া এবার অনার্স ফাইনাল দিবে৷ প্রায় একই বয়েস।'
.
ইয়েস, আবারো লাড্ডু ফোটে রুদ্রের মনে। মেয়ের নাম নিজেই বলে দিলো ব্যাটা৷ এবার শুধু ফেসবুকে সার্চ দেয়ার অপেক্ষা। আর যে বাড়ির কাজের বুয়া এতো সুন্দরী, সেই বাড়ির মেয়ে না জানি কত সুন্দর হবে। ভাবতে ভাবতে দিবাস্বপ্ন দেখা শুরু করে রুদ্র। চেতনা ফেরে আনিসুল হকের কণ্ঠে।
.
'তাহলে কাজের কথায় আসি মিস্টার রুদ্র। এই যে এই চিঠিটা৷ পকেট থেকে খাম বের করেন একটা আনিসুল হক। এই চিঠিটা সকালে কে যেন দিয়ে গেছে। পত্রিকা আনতে গিয়ে গেটের সামনে এটাকেও পেয়েছে আমার ছোট মেয়ে।'
'ওটাতে কি লেখা?' প্রশ্ন করে রুদ্র। এখন সে পুরোদস্তুর গোয়েন্দা। প্রেমের চিন্তাভাবনা মাথায় নেই একদম।
'সেটা নাহয় তুমিই পড়ো, চিঠিটা রুদ্রের দিকে বাড়িয়ে ধরেন আনিসুল হক।'
.
চিঠি খুলে উচ্চস্বরে পড়া শুরু করে রুদ্র,
"ডিয়ার স্যার, আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে একটা তথ্য দেই। আপনার সবথেকে বড় সোনার যে দোকান, 'মামনি জুয়েলার্স'। ওটাতে আজ রাত বারোটার পর আমি আসব কিছু গয়না নিজের মনে করে নিয়ে যেতে। আমি লোক ভালো তাই আগেই জানালাম। বাকিটা আপনার ইচ্ছা। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সফল হই। আল্লাহ হাফেজ।"
.
চিঠির ভাষা পড়ে কেন যেন হাসি পেয়ে যায় রুদ্রের। অনেক কষ্টে নিজেকে কণ্ট্রোল করে। বলে, 'এই তবে ব্যাপার। চিঠি দিয়ে চুরির থ্রেট। একদম সিনেমার মতন।'
পাশ থেকে ওসি সাহেব বলেন, 'স্যার আমার মনে হয় কোনো ছোকরা মজা করছে৷ এতো সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই।'
আনিসুল হক হ্যা সূচক মাথা নাড়েন, 'আমিও সেটাই ভাবছি। মজা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটা তো কোনো সিনেমা চলতেছে না যে চিঠি দিয়ে ডাকাতি করবে। আজকালকার পোলাপান বিরাট ফাজিল হইছে।'
.
'স্যরি স্যার, কিন্তু আমার মনে হয় এটা কোনো মজা না। এটা সিরিয়াস।' রুদ্রের শীতল কণ্ঠে চমকে যান ওসি সাহেবও।
- কেন এমনটা মনে হচ্ছে?
- দেখুন, চিঠিটা পত্রিকার অক্ষর কেটে কেটে বানানো হয়েছে। যাতে হাতের লেখা দেখে কেউ খুঁজে বের করতে না পারে। আর পত্রিকার অক্ষর কেটে এতো বড় একটা চিঠি মিলিয়ে মিলিয়ে লেখা খুবই সময়সাপেক্ষ আর পরিশ্রমের ব্যাপার৷ শুধু মজা নেয়ার জন্য কেউ এমনটা করবে না। আজকাল চোর ডাকাতরা হিন্দি সিনেমা দেখে দেখে নানান ফ্যান্টাসিতে ভোগে। কেউ অগ্রীম চিঠি দিয়ে চুরির প্লান করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।'
- হ্যা কিন্তু...
- কোনো কিন্তু না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ সবার আগে, এই চিঠিতে যে পত্রিকা কেটে বসানো হয়েছে সেটা সকালের খবর পত্রিকা খুব সম্ভবত।
.
'অবাক হন আনিসুল হক, 'তুমি কিভাবে বুঝলে?'
হাসে রুদ্র, 'বুঝিনি, ধারণা করছি। সকালের খবরের ফন্ট এরকম। আমাদের বাসায় রাখতাম বেশ আগে৷ পত্রিকাটা খুব বেশি জনপ্রিয় না। অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ বা সমকাল রাখে। সকালের খবর আমাদের এই ছোট শহরে হাতেগোনা কয়েকজনের রাখার কথা।'
ওসির দিকে ফেরে রুদ্র, 'স্যার আপনি পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নিন এই পত্রিকার কয়জন গ্রাহক আছে পুরো এলাকায়। তাদের নাম ঠিকানা সহ একটা লিস্ট আমাকে এনে দেন।'
- ওকে ওকে, শিওর। আমি ব্যবস্থা করছি। আর কিছু?
- হ্যা, আমি আনিসুক হক স্যারের মেয়ে সাজিয়ার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই।
- তার কি কোনো দরকার আছে?
- হ্যা অবশ্যই, যেহেতু পত্রিকা আনতে গিয়ে চিঠিটা সে প্রথম দেখে সেহেতু কোনো ক্লু থাকলে তার চোখে পড়ার কথা। প্লিজ, ব্যবস্থা করুন।'
'এ আর এমন কি, আনিসুল হক উঠে দাঁড়ান। তুমি বসো আমি সাজিয়াকে পাঠাচ্ছি। ওসি সাহেব আসেন আমার সাথে, নাস্তা করবেন।'
.
রুদ্র বেশ কিছুক্ষণ ভাবে৷ তারপর সাজিয়াকে প্রথম প্রশ্ন করে, 'আচ্ছা, আপনার চোখ এতো সুন্দর কেন?'
- হোয়াট, কি বলছেন?
- আই মিন টু সে, আপনিই প্রথম চিঠিটা দেখেছেন। তার মানে আপনার দৃষ্টিশক্তি বেশ তীক্ষ্ণ।
- ওহ থ্যাংকস।
- আপনাকে কি তুমি করে বলতে পারি?
- হ্যা শিওর।
- সারাজীবনের জন্য?
- জ্বী?
- না মানে, তুমি চিঠিটা যখন পত্রিকা আনতে যাও গেটের সামনে থেকে তখন দেখো। রাইট?
- হ্যা।
- ওটা পত্রিকার ওপরে ছিল, ভেতরে ছিল, নাকি পাশে?
- ওপরে ছিল।
- আচ্ছা,তোমার ফেসবুক আইডির নাম কি?
- স্যরি? এর সাথে চিঠির কি সম্পর্ক?
- অবশ্যই সম্পর্ক আছে। একটা জিনিস শুনে রাখো। আমাদের গোয়েন্দাগিরিতে কোনো প্রশ্নই অপ্রাসঙ্গিক না। সময়মতো ঠিকই বুঝতে পারবা।
- আচ্ছা, আমার আইডির নাম সাজিয়া হক।
- রুদ্র জামান নামের একটা আইডি থেকে রিকুয়েস্ট যাচ্ছে। একসেপ্ট করো।
- বাট..
- কোনো কিন্তু না। আমরা গোয়েন্দারা শুধু শুধু কিছু করিনা। সবই কেস সলভ করতে জরুরি। সময় মত বুঝবে।
- ঠিক আছে, করলাম।
- গুড। এখন যেতে পারো। তোমার আব্বুকে পাঠাও। বাকি কথা উনার সাথে।
.
আনিসুল হক আসেন রুমে, সাথে ওসি সাহেব।
রুদ্র মুখ খোলে, 'স্যার, আমার মনে হয় চোর সত্যিই চুরি করতে আসবে।'
- তুমি শিওর?
- মোটামুটি ৯০ পার্সেন্ট।
- এখন আমার করণীয় কি?
রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। যেন মনে মনে অংক মিলাচ্ছে। তারপর বলে, 'আপনি রাজি হলে আজ রাতটা আমি নিজে আপনার জুয়েলারি দোকানের মধ্যে কাটাতে চাই। আমার সাথে আপনি আপনার বিশ্বস্ত দুইজন কর্মচারী দিবেন যারা দোকান সম্পর্কে সব জানে। আর ওসি স্যার, আপনি আমাকে ৫ জন পুলিশ কনস্টেবল দিবেন যারা সারারাত পাহারায় থাকবে। আমি হাতেনাতে চোরটাকে ধরতে চাই। আপনার কোনো আপত্তি আছে?'
ওসি সাহেব মাথা নাড়েন, 'কোনো আপত্তি নেই। আমি ৫ জন পুলিশই দিব। আর কিছু?'
- হ্যা, এই চিঠিটা ল্যাবে পাঠিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেস্ট করার ব্যবস্থা করুন। আর আমি এখন উঠব। বাসায় গিয়ে ঘুম দেই। রাতে দেখা হচ্ছে।
.
রাত এগারোটা তেইশ। মামনি জুয়েলার্সের সামনে সতর্ক পাহারায় ৫ জন পুলিশ কনস্টেবল। এছাড়াও আছে নিয়মিত দুই সিকিউরিটি গার্ড আর মার্কেটের নাইট গার্ড। ভেতরে রুদ্রর সাথে পুলিশের এসআই জয়নাল আর দুই কর্মচারী নিখিল এবং শরিফ। আরো ঘন্টাখানেক সময় যায়। চোরের কোনো খোজ নেই।
নিখিল হাই তোলে।
রুদ্র হাসে, 'এতো দ্রুত ঘুম এসে গেল?'
- না আসলে রাত জেগে অভ্যাস নেই তো।
- না থাকলেও জাগতে হবে। যাও সবার জন্য চা করে আনো। চা খেয়ে খেয়ে সারা রাত জেগে থাকবা আজ।
দোকানের সাথেই ছোট্ট কিচেন। শরিফ চা বানাতে চায়৷ চা বানানো শেষ হওয়ার আগেই আনিসুল হকের বাসা থেকে ড্রাইভারের মাধ্যমে সবার জন্য নাস্তা চলে আসে।
সবাই গোল হয়ে বসে চা নাস্তা খায়।
.
সকালে ওসি সাহেবের ডাকে ঘুম ভাঙে রুদ্রের। বাকিরা তখনো গভীর ঘুমে৷ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন আনিসুল হক। প্রায় এক কোটি টাকার গহনা গায়েব।
মাথা ঘুরে ওঠে রুদ্রের। অস্ফুট স্বরে শুধু বলে, 'চায়ের মধ্যে ঘুমের ঔষধ!'
.
বেশ কিছু সময় একা একা বসে থাকে রুদ্র। যেন গভীর কোনো ভাবনায় নিমগ্ন। ততক্ষণে পুলিশ তাদের রুটিন ওয়ার্ক করে। ঘন্টাখানেক বাদে রুদ্র ওসি সাহেবকে ডেকে বলে, আমি সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে চাই আলাদা আলাদা। কয়েকটা প্রশ্ন করব জাস্ট। এমনকি আনিসুল হক সাহেবের সাথেও। আর সবশেষে উনার ছোট মেয়ে সাজিয়ার সাথে।
- সেটার কি খুব দরকার আছে?
- অবশ্যই আছে। আপনি প্লিজ আমার ওপর ভরসা রাখেন।
.
সবার আগে রুদ্রের মুখোমুখি মামনি জুয়েলার্সের কর্মচারী নিখিল।
- আপনিই তো সবার হাতে চা নাস্তা তুলে দিয়েছিলেন।
- হ্যা।
- আপনি কত বছর কাজ করছেন এখানে?
- প্রায় ৬/৭ বছর হবে।
- কারো ওপর সন্দেহ হয়?
- নাহ।
- সবাই নর্মাল চা খেলেও আপনার চায়ের কাপে আদা ছিলো?
- হ্যা, আমিই শরিফকে দিতে বলেছিলাম। গলাটা খুসখুস করছিল সকাল থেকেই।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
.
তারপর শরিফ।
- চা আপনি বানিয়েছিলেন?
- হ্যা।
- চায়ে হিট একটু কম হয়েছিলো। লিকারও পারফেক্ট হয়নি। কেন?
- কারণ আমার চা বানানোর অভ্যাস নেই। দোকানে বেশিরভাগ নিখিলই চা বানায়।
- নিখিল লোকটা কেমন?
- আমার খুব একটা সুবিধার মনে হয় না।
- নিখিল কি সবসময় ই আদা চা খায়?
- আগে খেতে দেখিনি। কালই বলল গলাটা খুসখুস করছে।
- হুম, ওকে।
.
এবারে এসআই জয়নাল।
- কাল জুয়েলার্সে ডিউটি আপনাকে দেয়া হয় নাকি আপনি নিজে চেয়ে নেন।
- আমাকে দেয়া হয়।
- আপনাকেই কেন দেয়া হয়?
- কারণ বাকি তিন এসআই এর দুইজন ছুটিতে ছিল। আরেকজনের নাইট ডিউটি ছিল না।
- তার মানে কাল আপনিই ফ্রি ছিলেন?
- হ্যা।
- আনিসুল হক সাহেবের ড্রাইভারের থেকে নাস্তা আপনিই নিয়ে এসেছিলেন ভেতরে, তাইনা?
- হ্যা, আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?
- কেউ ই আমাদের সন্দেহের বাইরে না জয়নাল সাহেব। এমনকি আনিসুল হকও না।
.
আনিসুল হকের ড্রাইভার।
- নাস্তার প্যাকেট আপনি কিনেছিলেন দোকান থেকে?
- না, আনিসুল স্যার কিনে আমার হাতে দিয়েছিল নিয়ে আসার জন্য।
- পানির বোতল পুরো ভরা ছিল না কেন?
- ইয়ে মানে আমি আসার সময় এক ঢোক খেয়েছিলাম।
- পত্রিকা পড়েন?
- মাঝে মাঝে।
- আনিসুল হকের বাসায় আজ থেকে এক বছর আগে সকালের খবর পত্রিকা নিতো?
- আমি শিওর জানিনা।
- ওকে, আসতে পারেন।
.
শিল্পপতি আনিসুল হক।
- স্যার আপনার গোয়েন্দা গল্প খুব প্রিয়?
- হ্যা তুমি কিভাবে জানলে?
- ধারণা করেছি। প্রিয় চরিত্র কি ফেলুদা?
- হ্যা হ্যা। তুমি কিভাবে?
- আপনার বাসায় ফেলুদা সমগ্র দেখেছিলাম।
- ওহ তাই বলো। এর সাথে আমার গহনা চুরির কি সম্পর্ক।
- তেমন কিছু না। আপনি কাউকে সন্দেহ করেন?
- কাউকেই করিনা, আবার সবাইকেই করি।
- চিঠিতে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে জানেন?
- হ্যা, কারণ আমিই ওটা খুলে পড়েছি। আগে জানতাম যদি ওটাতে হুমকি আছে তাহলে গ্লাভস পরে নিতাম।
.
সবশেষে সাজিয়া হক।
- তোমার হাসি এতো সুন্দর কেন?
- আপনার মাথা ঠিক আছে? এগুলো কিসব কথা বলছেন?
- একচুয়ালি, আই মিন টু সে, বাবার এতো বড় ক্ষতি সত্বেও তুমি সুন্দরভাবে হাসছো।
- ও আচ্ছাহ। তো আমি কাঁদব নাকি?
- নাহ, তা বলিনি। তুমি এক কাজ করতে পারবে? বিকালে আমার সাথে একটু রেস্টুরেন্টে দেখা করতে পারবে?
- হোয়াট?
- এটা কেস সলভের জন্য জরুরি।
- এটাও জরুরি?
- হ্যা, আমরা গোয়েন্দারা কোনো কাজই শুধু শুধু করিনা। ব্যোমকেশ বকশি সত্যবতিকে বিয়ে করেছিলেন। আমারো এমন কিছু করার দরকার হলে করব।
- কি বলেন এসব।
- সব পরে বুঝাবো। তুমি বিকালে দেখা করো। আর কাউকে বোলো না এই কথা। খুব সিক্রেট। গোয়েন্দাদের সিক্রেটলি কাজ করতে হয়।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
.
রুদ্র ওসিকে ডেকে বললো, 'স্যার আমি বাসায় যাচ্ছি। আমি কাল যা যা বলেছিলাম, মানে ফিঙ্গার প্রিন্ট ডিটেইল আর 'সকালের খবর' গ্রাহকদের লিস্ট আমার বাসায় পাঠান কাউকে দিয়ে। আরেকটা জিনিস পাঠাবেন, সেটা হলো আনিসুল হক স্যারের বুকশেলফে যে ফেলুদা সমগ্র আছে সেটা। আর ঠিক দুই ঘন্টা বাদে আপনি আমার বাসায় আসবেন। আশা করি আমি আপনাকে বলতে পারব কে চুরি করেছে।
- সিরিয়াসলি?
- হ্যা, আমি সেরকমই ধারণা করছি। আপাতত ৮০% শিওর। আরো বিশ পার্সেন্ট শিওর হওয়ার জন্য একটু একা একা ভাবতে হবে।
.
.
দুই ঘন্টা পর।
ওসি সাহেব চা খাচ্ছেন রুদ্রদের বসার রুমে। রুদ্র গোসল করছিলো, বের হলো মিনিট চারেকের মধ্যেই।
- স্যার, আমার রুমে আসুন।
ওসি সাহেব আসলেন।
- চেয়ারে বসার দরকার নাই। চেয়ারটা ভাঙ্গা। খাটে বসুন।
ওসি সাহেব খাটে বসলেন। রুদ্রকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেলেন। রুদ্র ড্রয়ার খুলে একটা ব্যাগ বের করে ওসি সাহেবের সামনে মেলে ধরে আস্তে আস্তে বললো, 'এই নিন আপনার ভাগের অর্ধেক গয়না। মিশন সাকসেসফুল।'
হাসলেন ওসি সাহেব, 'তোমার বুদ্ধির তুলনা নেই। রুদ্র। এমনভাবে সব প্লানিং করলে যে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না৷ চিঠি দিয়ে ভয় দেখিয়ে রাতে দোকানে ঢুকে চায়ের ফ্লাক্সের মধ্যে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রাখা, পুরা মাস্টারমাইন্ড তুমি। হ্যাটস অফ।'
- আরে স্যার, আপনি হেল্প না করলে তো কিছুই হতো না। আপনি বলাতেই সবাই আমাকে বিশ্বাস করেছে। আপনি সাথে না থাকলে আনিসুল হকের জুয়েলার্স তো দূরের কথা, বাসাতেই কখনো ঢুকতে পারতাম না আমি।'
- আচ্ছা ঠিক আছে, এখন উঠি তবে। আমার আবার সন্দেহভাজন দুই একজনকে ধরে থানায় নিয়ে মারপিট করতে হবে আনিসুল হকের মন রক্ষার জন্য।
.
ওসি সাহেব যেতেই রুদ্র রেডি হয়। বিকাল হয়ে আসছে। সাজিয়ার সাথে দেখা করতে যেতে হবে। বের হওয়ার সময় মা পেছন থেকে ডাক দেয়।
- কিরে নেয়ামত, কোথায় বেরোলি?
উফ, রাগ হয় রুদ্রের। নেয়ামত কোনো নাম হলো? শুনলে মনে হয় কোনো ছিঁচকে চোর। বেশি হলেও ডাকাত দলের সর্দার। ভাগ্যিস ও নাম চেঞ্জ করে রুদ্র রেখেছিলো। নাহয় ঐ নাম থাকলে আর যাই হোক, গোয়েন্দাগিরি করে খাওয়া লাগতো না!
.
(সমাপ্ত)
লেখা: সোহাইল রহমান
0 Comments:
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।