ফ্রিল্যান্সার শামীম ভাই আত্মহত্যা করেছেন। এমন হাসোজ্জল মানুষ। বুকের
ভেতর এতো কষ্ট বেদনা নিয়েও নিজেকে মানিয়ে চলছেন। অবশেষে এভাবে প্রস্থান।
এভাবে চলে যেতে হয় না। মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখলাম অনেকেই। তার স্ট্যাটাস পড়ে
চোখে জল পড়ছে অনবরত। আপনার পাশেরজনকে বুঝুন। শুধু সুখে নয়, দুখেও থাকুন
তার পাশে। এভাবে কেউ যেনো কখনো না চলে যায়।
তার ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়াঃ-
বাবা-মা, বোন-দুলাভাই, চাচা-চাচি, ফুফু-ফুপ্পা, মামা-মামি, খালা-খালু এই
সব আত্মীয় স্বজন যদি কাজেই না আসে তাহলে ওদের সাথে থেকে কি লাভ। জীবনের
কঠিন সময় গুলোতে কাউকে পাশে পাইনি। কেউ এসে বলেনি কেমন আছি বা সমস্যা গুলোর
সমাধানের বৃন্দ মাত্র চেষ্টা করে নি। কাউকে বোঝাতে পারি নাই আমার সমস্যা।
বাবা-মায়ের অহংকার, রাগ, জেদের কাছে আমার ভালোবাসা মূল্যহীন।
হালসার
মানুষ গুলোকে বলতে চাই। ছেলের সুখের কাছে কি রাগ, জেদ বড় হয়ে গেলো।
আপনাদের পছন্দেই তো বিয়ে করলাম। তাহলে বিয়ের পরে কেন এত ঝামেলা। বিয়ের ১৭
দিনের দিন কেনই বা ধর্মদহতে কল দিয়ে বললেন এই ছেলে আমার না পালিত ছেলে।
মানলাম হয়ত মজা করে বলেছেন কই তার পরে কখনও তো এই বিষয়টা সমাধান করলেন না।
বিয়ের পর থেকেই এরকম ছোট বড় সমস্যা করেছেন যেটার কোন সমাধান করার চেষ্টা
করেন নাই। ছোট হয়ে যাবেন বলেই তো সমাধান করেন নাই। ছেলের বাবা হয়ে যে
অহংকার দেখান বর্তমান সময়ে এই অহংকার চলে না। এখন একটাই প্রশ্ন সত্যিই কি
আমি আপনাদের সন্তান?
ধর্মদহ এর মানুষ গুলোকে বলতে চাই। মানুষের
অবস্থান সব সময় এক রকম থাকে না। একটা সময় আমার ব্যাগ প্যাক এ ৩,৭০,৫০০ টাকা
সমমূল্য পরিমানের গ্যাজেট (ম্যাক, ডিএসএলআর, আইফোন, আইওয়াচ) থাকত। আমি সব
সময়ই চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। আপনাদের ঘরেও তো একটা ছেলে বসে আছে
চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু চাকুরী কি পেয়েছে পাই নাই কারণ চাকুরী এত
সহজ না। বিয়ের পর থেকে কি শুধু আমার ভুল বা দোষ, আপনাদের কোন ভুল নাই? দুই
পরিবারের ছোট ছোট ভুল গুলোই বড় হয়েছে। এই ভুল গুলো কেও সমাধান করে নাই। আমি
সব সময়ই চেষ্টা করেছি দুই পরিবারকে বোঝাতে পারি নাই।
২৬
সেপ্টেম্বর, ২০১৭ এ বিয়ের কথা বার্তা হওয়া। ২ অক্টোবর, ২০১৭ রিং পরানো আর
২২ অক্টোবর, ২০১৭ বিয়ে। আমি ভালো ইনকাম ও ভালো পজিশন ছিল বলেই এরকম ছেলে
দেখে বিয়ে দিতে এক মূহুর্ত দেরি করেন নি। কিন্তু যখনই আমার অবস্থান খারাপ
হলো তখন থেকেই আমি খারাপ হয়ে গেলাম। আসলে আপনারা জামাই চান না টাকা চান।
ঈশিতার চাকুরীর জন্য এপ্রিল, ২০১৯ এ মাওনাতে বাসা নেওয়া এবং আমার যাওয়া
আসা। আপনারা হয়ত ভাবেন মেয়ের ইনকাম জামাই এসে খাই আর চলে যায়। এটা ভাবা
স্বাভাবিক কারণ ঈশিতা মনে হয় বলতো না আমিও সংসার এ খরচ করি। খরচ এর বিষয়
গুলো না বলে ঈশিতা নিজেকে বড় করেছে। কিন্তু মাসে আমার চার থেকে পাঁচ হাজার
টাকা খরচ হতো সংসারে। যেটা আপনারা জানেন না। ওই সময় এর বেশি সংসারে খরচ করা
আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না কারণ আমার ঢাকাতেও থাকা খাওয়ার খরচ ছিল। যেভাবেই
হোক দু'জনের ইনকাম এ আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু শাশুড়ি আম্মা আমাদের
সংসারে একটু বেশিই নাক গুলিয়েছেন। সংসারে তোমাকে কখনও একা কষ্ট করতে
দেইনি। তুমি যখন রান্না করেছো তোমাকে সহযোগিতা করেছি। খাওয়া শেষে পাতিল
গুলোও সকালে আমি পরিষ্কার করেছি যাতে তোমার অফিস থেকে এসে না করতে হয়।
তোমার কাপড় পর্যন্ত ওয়াশ করে দিয়েছি। কখনও ভাবি নি সংসার তোমার সব সময়
চিন্তা করেছি সংসার দু'জনেরই। এরপরও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
বিয়ের
সময় আপনাদের এলাকার মানুষ গুলো বলেছে এরকম ছেলে পাওয়া যান না। কিন্তু যখনই
ডিভোর্জ হয়ে গেলো সেই মানুষ গুলোই আমার বদনাম ও খারাপ ছেলে বলা শুরু করলো।
তখন থেকেই ঈশিতাকে বলতেন এই ছেলেকে ডিভোর্জ দিয়ে দিতে। বিয়ে কি পুতুল খেলা
মন চাইলো না ডিভোর্জ দিয়ে দিলাম। দুই পরিবার এক সাথে বসে কি একটা সমাধান
করা যেতো না?
ঈশিতা তোমাকে বলতে চাই। স্বামী হিসেবে তুমি আমাকে
কখনই আপন করে নিতে পারো নাই, সব সময়ই দুরুত্ব রেখেছো। অনেক কথাই আমাকে বলো
নাই যেটা বলা প্রয়োজন ছিল। অনেক কথায় আমি অনেক পরে শুনেছি। আমাদের মাঝে যা
হয় তুমি তোমার আম্মুর সাথে শেয়ার করো যেটা একদম ঠিক না। তুমি বলতে মিথ্যা
কথা বলতে পারো না কিন্তু সময় মতো ঠিকই আমাকে মিথ্যা বলেছো। বিয়ের পর থেকেই
আমার প্রতি তোমার উদাসীন। তুমি ঢাকা থেকে বাড়িতে যাও বাড়িতে যাওয়ার পরে কল
দিয়ে কখনই বলো না আমি ভালো ভাবে বাড়িতে চলে এসেছি। যেটা আমি বিয়ের দুই
বছরেও পাই নি তোমার থেকে। আমার প্রতি তোমার কোন ভালোবাসায় ছিল না। তারপরও
আমি ম্যানেজ করে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম হয়ত একদিন তুমি বুঝতে পারবে।
ঈশিতা ডিভোর্জ দেওয়ার জন্য তোমার আত্মীয়-স্বজনরা সব সময়ই তোমাকে সাপোর্ট
দিয়েছে কিন্তু ডিভোর্জ দেওয়ার পরে কিন্তু সেই আত্মীয়-স্বজনরা এক দিনও খোঁজ
নেয়নি তোমার। চাকুরী নাই চলছো কিভাবে, খাচ্ছো কি কেউ জানতে চাইনি। কারণ
আমরা মানুষরাই এরকম স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলি।
ডিভোর্জ এর
পরেও তোমাকে যেভাবে পেরেছি সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তুমি তোমার মায়ের কথাতে
আমাকে ডিভোর্জ দিয়ে দিলে। সত্যিই কি আমাকে ভালোবাসতে?
তোমার অভিযোগ
ছিল আমি কেয়ারলেস। আমি কেয়ারলেস বলেই ঘরে বাজার আছে কি না সব সময়ই খোজ
নিয়েছি। না বলতেই ফোনে রিচার্জ ও ইন্টারনেট দিয়েছি। তোমার বাড়ির মানুষ
গুলোর খবর নিয়েছি। তুমি সারা দিন অফিস করে বাসায় গিয়ে রেষ্ট করেছো কখন বলি
নাই আজকে সারা রাত গল্প করব। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই তুমি অফিসে থাকলেও নিজে
রান্না করে খেয়েছি। চুল ভেজা নিয়ে সকালে অফিসে যেতে হবে বলে তোমাকে কখনও
সেক্স এর জন্য পেশার দিইনি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই কুমিল্লা থেকে এনে রসমালাই
খাওয়াইছি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই ডিভোর্জ এর পরেও থ্রি-পিচ, বাজার, ফোনে
রিচার্জ ও ইন্টারনেট দিয়েছি। কেয়ারলেস ছিলাম বলেই ঢাকা থেকে ভোর ৫ টায় বের
হয়ে মাওনাতে গিয়ে তোমাকে নিয়ে চন্দ্রাতে বাসে তুলে দিয়ে এসেছি। কেয়ারলেস
ছিলাম বলেই ডিভোর্জ এর পরেও বাইক এক্সিডেন্ট করার পরেও বাইক চালাতে কষ্ট
হয়েছে এরপরও তোমাকে ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে গিয়েছি। এতটুকুই আফসোস এত কিছু
করার পরেও কেয়ারলেস।
যাইহোক, আমার থেকে ভালো কারও সাথে বিয়ে করে
সুখে সংসার করো। তোমার ইচ্ছে গুলো পূরুন করো। আমার একটা রিকোয়েস্ট তোমার
যদি মেয়ে হয় অবশ্যই মেয়ের নাম সামাইরা রাখবে।
জীবনে কখনও প্রেম করি
নাই। বিয়ের পরে সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবেসেছি যেটা তুমি কখনও বুঝো নাই।
কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় আমি জানি না তাই হয়ত তোমাকে বোঝাতে পারি
নাই।
আমার কাছে আপনারা যারা টাকা পান যদি সম্ভব হয় ক্ষমা করে দিয়েন।
এই পর্যন্ত চলার পথে যদি আপনাদের কে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা করে
দিয়েন।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে হয়ত তোমাকে ঘৃণা করতে হবে। যাকে
ভালোবেসেছি তাকে ঘৃণা করতে পারব না। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে একদিনও ঠিক
মতো ঘুমাতে পারি নাই শুধু তোমার স্মৃতি সামনে চলে এসেছে।
শেষ সময়
ঈশিতা তোমাকে বলতে চাই একদিন তোমাকে থাপ্পর মেরেছিলাম সত্যিই মন থেকে
তোমাকে আঘাত করতে চাই নি কিন্তু ওই সময় মাথা কন্ট্রোল করতে পারি নাই। আমার
খারাপ আচরনের জন্য অনুতপ্ত। অনুগ্রহ করে ক্ষমা করে দিও।
কষ্ট গুলো বড় হয়ে গেছে আর নিতে পারছি না।
ভালো থাক ভালোবাসা...
0 Comments:
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।